নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Showing posts with label অন্যান্য পোস্ট. Show all posts
Showing posts with label অন্যান্য পোস্ট. Show all posts

Friday, July 10, 2020

স্বামীকে খুশি রাখার ও শুধু নিজের করে রাখার জন্য কার্যকারী টিপসঃ-


১) স্বামীর ঘুম থেকে উঠার আগে নিজে উঠে পরিপাটি হয়ে নেওয়া যাতে স্বামী আপনাকে সকাল বেলাই অপরিপাটি না দেখে। তার সাথে সুগন্ধি ব্যবহার করুন। যাতে সকালে আপনাকে দেখেই আপনার স্বামীর মন ভরে যায়।

২) তার ঘুম যেভাবে ভাঙ্গালে সে পছন্দ করবে, সেভাবে তাকে ঘুম থেকে জেগে তুলুন।

৩) তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে তবেই অন্য কাজে যাবেন। এবং সে তার কাজে যাওয়ার সময় কপালে আর বুকে দুইটা......... দিয়ে দিন।

৪) সে কখন বাসায় আসতে পারে তা অনুমান করে পরিপাটি হয়ে থেকে তার অপেক্ষা করুন এবং সে ডাকার সাথে সাথে দরজা খুলে দিন এক মুচকি হাসি দিয়ে। এবং তার সাথে কথা বলার সময় সর্বদা হাসি মুখে কথা বলুন।

৫)তার সামনে কখনো গন্ধ নিয়ে যাবেন না। সবসময় একটা সুঘ্রাণ রাখুন নিজের শরীরে।

৬) পরিপূর্ণ পর্দা করুন।

৭)স্বামীকে তাহাজ্জুদ এবং ফজরের নামাজের জন্য ডেকে দিন। আল্লাহর তরফ হতে স্বামীর হৃদয়ে আপনার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা জন্ম নিবে।

৮) স্বামীর মনে কখনো আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না।

৯) কখনো স্বামীকে নিজের উপর রাগ হতে দিবেন না বরং স্বামী যে ইশারায় চালাতে চায় সে ইশারায় চলুন( নাফরমানীর কাজ ব্যতিত)।

১০)স্বামী কোন কাজ করতে আদেশ করলে সাথে সাথে হাসি ও খুশির সহিত কাজ করে দিন।

১১)স্বামীর কাছে থাকাকালীন তার অনুমতি ব্যতিত কোন নফল ইবাদাত করবেন না। স্বামীর খেদমত অন্যান্য নফল ইবাদাত থেকেও উওম।

১২)পৃথিবীর কোন মানুষের গিবত না করা।

১৩)স্বামীর হুকুম ছাড়া স্বামীর মাল থেকে কাউকে দান বা হাওলাত না করা। এটা জায়েজ নেই।

১৪)স্বামীর কোন দোষের কথা পৃথিবীর কোন মানুষকে না বলা। বরং স্বামীর মাথা যখন একদম ঠান্ডা থাকবে তখন স্বামীকে হাসিমুখে বিনয়ের সহিত তার ভুল ধরিয়ে ও সুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা।

১৫)স্বামীর কোন কাজ নিজের মতের বিরুদ্ধে হলেও তর্ক না করা।

১৬)স্বামী যা আনুক তা ১ টাকার হলেও এমন একটা ভাব করুন যেন এটা আপনার কাছে ভিষণ পছন্দ হয়েছে। এতে পুরুষেরা স্বস্তি পায়।

১৭)স্বামীর বাড়িতে যতই কষ্ট থাকুক, স্বামীর সাথে সমাধামের চেষ্টা করুন। তবে হাই হতাশা করে স্বামীকে কষ্ট দিবেন না।

১৮)স্বানীর মেজাজ বুঝে ব্যবহার। তার মুখে হাসি থাকলে আপনিও হাসুন। আর তার মন কোন কারণে খারাপ থাকলে আপনিও তার মন খারাপের ভাগিদার হোন, মন খারাপের সময় হেসে এটা প্রকাশ করবেন না যে তার মন খারাপে আপনার কিছু যায় আসে না। আর মেজাজ খারাপ থাকলে একদম চুপ থাকবেন।

১৯)স্বামী আপনাকে যে টাকা দিবে তা ১০০% তাকে হিসাব দিয়ে দিন।আপনার ওপর একটা অন্যরকম বিশ্বাস সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ।

২০)শশুড়-শাশুড়ির সেবা করুন। এবং শশুড় বাড়ীর সকলকে ভালোবাসুন।

২১)স্বামীকে মনের ভুলেও কাজ করতে দিবেন না। বরং তাকে ঠিক কাচের পুতুলের মতো রাখার চেষ্টা করুন।

২২)ঘরের কাজ কারো জন্য ফেলে রাখবেন না।

২৩)স্বামী বাবা-মা এর কাছে টাকা দিলে তা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। তাদের ছেলের টাকা তারা নিবে না তো কে নিবে?

২৪) স্বামী কোন সফর থেকে ফিরলে তাকে খেদমত করুন, প্রশ্ন করুন পরে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোনদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন.....আমীন!

Wednesday, September 11, 2019

কুর’আনের অর্থ না বুঝার কারণে আপনি প্রতিদিন যে ১০টি জিনিস হারাচ্ছেন

১-কুর’আন নাযিলের উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন !
আপনি যদি কুর’আনের অর্থ না বুঝেই কেবল উচ্চারণ করে পড়তে থাকেন, তাহলে কুর’আন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
“এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে”। সূরা সা’দ ২৯
কিভাবে এই উদ্দেশ্য আমাদের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে যদি আমরা কুর’আন কি বলছে তা বুঝতে না পারি!
কোন ব্যক্তির পক্ষে কি সর্বদা অনুবাদ বহন করা সম্ভব, কিংবা সালাতে যখন কুর’আন তিলাওয়াত করা হয় তখন কি আমাদের পক্ষে কুর’আনের অনুবাদ বহন করা সম্ভব?.


২- আপনার মন হতে পারতো একটি সজ্জিত উদ্যান !
আমাদের মন যেন একটি সজ্জিত উদ্যান। আর সেই উদ্যানে যদি আমরা কোন গাছ না লাগাই, তাহলে সেখানে জন্মাবে আগাছা। এমনকি যদি আমরা ফুলের গাছ লাগাই, কিন্তু পরিচর্যা না করি তাহলেও সেখানে আগাছা জন্মাতে থাকবে। আমাদেরকে সর্বদাই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, কেবল তখনই আমরা আমাদের উদ্যানের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারব।
মনের ফুল হচ্ছে হেদায়াত,আল্লাহর বাণী,আল্লাহর দেখানো পথ, আর আগাছা হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা, কুচিন্তাসমূহ। প্রতিবার যখন আমরা কুর’আন তিলাওয়াত শুনি সালাতে কিংবা অন্যত্র তখন আমাদের মনে একটি ভালো অনুভূতি জন্ম নেয়, আমরা যদি সেই আয়াতসমূহের প্রতি মনোযোগ না দেই, কি বলা হচ্ছে তা বুঝার চেষ্টা না করি, আল্লাহর আয়াত-নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করি তাহলে তা হবে ফুল গাছ লাগানো বাগানে পানি না দেওয়ার মত, সেখানে জন্মাবে আগাছা আর সেই উদ্যান নষ্ট হয়ে যাবে।


৩- আপনি হারাচ্ছেন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য !
কুর’আন পাঠের পাঁচটি উদ্দেশ্য হতে পারে
১) আল্লাহর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ
২) ইলম অর্জন
৩) আল্লাহ যা করতে বলছেন তা বাস্তবায়িত করা
৪) আমাদের মন ও অন্তরের আরোগ্য-শিফা
৫) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে কথোপকথন .
অর্থ না বুঝার কারণে আপনি এ সকল উদ্দেশ্য থেকে উপকার লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।


৪-আপনি হারাচ্ছেন রুগ্ন ও ব্যধিগ্রস্ত অন্তর থেকে আরোগ্য লাভের সুযোগ !
আমরা সবাই জানি ফযরের সালাত আদায় করা ফরয। কিন্তু এরপরেও খুব অল্প কিছু মানুষ মসজিদের জামাতে অংশ নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু কেন? এমন নয় যে, তারা এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়, মূল কারণ হচ্ছে আমাদের অন্তর রুগ্ন ও ব্যধিগ্রস্ত, মরিচা ধরা ।
অধিকাংশ লোকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কুর’আন শুধুমাত্র একটি আদেশ-নিষেধের কিতাব।
কি করা যাবে, আর কি করা যাবে না ; সে বিষয়ের কিতাব।
অথচ বিধি-নিষেধের আলোচনা করা হয়েছে এমন আয়াতের সংখ্যা মোট আয়াতের শতকরা ১০ ভাগেরও কম !
বাকি ৯০ ভাগেরও বেশি আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে এমন বিষয় সম্পর্কে যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কের খোরাক, এগুলো আমাদের মনকে সতেজ ও পুষ্ট রাখে। আমাদের অন্তর দুর্বল ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে আমাদের পাপের কারণে। কাজেই এই মরিচা পড়া অন্তরে ঘষা মাজা এবং মজবুত করতে চাই কুর’আন।
আদম আলাইহি সালাম কে নিষেধ করা হয়েছিল তিনি যেন নিষিদ্ধ গাছের নিকটবর্তী না হন। আল্লাহ বলেন, “আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি”। ত্বহা ১১৫ ।আমরা মানুষ, আর আমাদের রয়েছে নানাবিধ দুর্বলতা। আমাদের চারপাশে আছে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষা। কাজেই এগুলো থেকে বাঁচতে আমাদের সদা সর্বদা তাযকিরাহ ( এমন উপদেশ যা আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) ও সতর্কবাণী মনে রাখা প্রয়োজন, যা আমরা লাভ করতে পারি দৈনিক তিলাওয়াত এর মাধ্যমে।
আল্লাহ এ কারণেই বলছেন,
“হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য”। [ইউনুস ৫৭]
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত…”।ইসরা ৮২
অন্তরের ব্যধি থেকে মুক্তির এর চেয়ে ভালো ঔষধ আর কে দিতে পারে, আল্লাহ ছাড়া?


৫– আপনি হারাচ্ছেন অন্তরে দৃঢ়তা লাভের সুযোগ !
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুর’আন একবারে নাযিল হয়নি, বরং তা ২৩ বছর সময় ধরে ধীরে ধীরে নাযিল হয়েছে।
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর প্রতি সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন? আমি এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে”।ফুরকান ৩২
অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও সতর্কতার খবর লাভ করে, ঈমান বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ বলেন,
“আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সূরা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো? অতএব যারা ঈমানদার, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে”। তাওবা ১২৪
প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে সালাতে কিংবা কিরাতে অর্থ বুঝে কুর’আন তিলাওয়াত ও আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর চিন্তা গবেষণা দ্বারা আমাদের অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে। অর্থ বুঝে কুর’আন তিলাওয়াত না করে আপনি এ সু্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।

৬-প্রতিদিন সালাতে আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সুযোগ হারাচ্ছেন !
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুর’আনের আয়াতের সাথে যেন কথা বলতেন !
প্রিয় পাঠক ! ভেবে দেখুন, আমরা যখন আমাদের প্রিয়জনদের কাছাকাছি থাকি, তখন কি আমরা মিনিট পাঁচেকের জন্যেও কথা না বলে চুপ করে থাকতে পারি? আর আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে হতে পারে?
তিনি আমাদেরকে আমাদের আপন মায়ের চেয়েও সত্তর গুণ বেশি ভালোবাসেন।
এরপরও আমরা জানার প্রয়োজন মনে করি না, আজকে সালাতে কি তিলাওয়াত করা হল!
আল্লাহ কি বিষয়ে কথা বলেছেন!
এমনকি কিছুমাত্র অর্থ না বুঝে আমরা কাটিয়ে দেই পুরো রামাদানের তারাবীহ’র সালাত !


৭-সরাসরি হেদায়াত ও পথ নির্দেশনা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন !
আমরা যখন কুর’আন পাঠ করি কিংবা এর তিলাওয়াত শুনে থাকি তখন আমরা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারি,পথ চলার বাতি লাভ করি। হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি।
“এবং যে আমার স্মরণ (কুর’আন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,
তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো (দুনিয়াতে) চক্ষুমান ছিলাম।
আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল,
অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব”। ত্বহা ১২৪-১২৬
“…আমি আমার কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ।
যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে”। ত্বহা ৯৯-১০০


৮-আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন !
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে- তাঁর প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, তাঁর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে স্মরণ করা সরাসরি কিংবা যখন আমরা তাঁর কোন আয়াত তথা সৃষ্টি নিদর্শন দেখতে পাই, তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা, তাঁর গুণবাচক উত্তম নামসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় রয়েছে। এই সম্পর্ক কেবল সময়ের সাথে সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আর এজন্য প্রয়োজন অল্প করে হলেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দৈনন্দিন কিছু না কিছু আল্লাহর কালামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।


৯– আপনার চরিত্র হতে পারতো আল-কুর’আন এর মত !
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “কুর’আনই হল আল্লাহর রাসূল(সা) এর আখলাক” ।
কুর’আন যদি হয় তত্ত্বকথা (থিওরি) তাহলে তার ব্যবহারিক হাতে কলমে প্রদর্শনী দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সমগ্র জীবনের মাধ্যমে। আমাদের উচিত নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জীবনীগ্রন্থ পাঠ করা এবং সেই ঘটনাপ্রবাহের সাথে আয়াতসমূহের মিল খুঁজে বের করা।
যেমন, হিজরতের সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একান্ত মনে নিবিষ্ট চিত্তে, নির্ভাবনায় সাথে পাঠ করে যাচ্ছিলেন একটি আয়াত, অপরদিকে সাথী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সংগীর নিরাপত্তা চিন্তায় উদ্বিগ্ন। সেটি হল,
“…হে আমার রব! (আমাকে যেখানেই নিয়ে যাও না কেন) তুমি আমাকে সত্যের সাথে নিয়ে যেও এবং (যেখান থেকেই আমাকে বের করো না কেন) সত্যের সাথেই বের করো এবং দান করো আমাকে তোমার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য”। [ইসরা ৮০]


১০- কুর’আনের চোখে বিশ্ব দেখার সুযোগ হারাচ্ছেন !
এ পৃথিবী একটি মায়ার জগত, যেন এক মস্ত কুহেলিকা আর ধোঁকা, যার অন্তরে কুর’আন নেই তার অন্তর একটি শূণ্য ঘরের মত যে ঘরে কোন আসবাব নেই। কুর’আনের শিক্ষা না থাকার কারণে সে দুনিয়ার জগতকেই বড় ও আসল বলে মনে করে, ফলে সে পরকালের প্রতি হয়ে পড়ে উদাসীন। এরূপ ব্যক্তির জীবন যতই সুখকর হোক না কেন তা শুধুই স্বপ্নের মত, যা ঘুম ভেঙ্গে গেলে হারিয়ে যায়।
যখন একজন ডাক্তারের কাছে এসে কোন রোগী নিজের সমস্যা ও অসুস্থতার বর্ণনা দিতে থাকে তখন অভিজ্ঞ ডাক্তার সেই লক্ষণসমূহ শুনতে থাকেন এবং রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন, পরিশেষে তিনি নিরাময়ের জন্য ঔষধ কিংবা পরামর্শ দান করেন। একইভাবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিচিত্র ঘটনার সামনে এসে দাঁড়াই।
আমাদের উচিত আমরা যেন সেই সমস্যাগুলোর সমাধান আল্লাহর কালামের কাছ থেকে নেয়ার মত সক্ষমতা অর্জন করি। এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন আমরা নিয়মিতভাবে কুর’আনের অর্থ শিক্ষা লাভ করব এবং সেই শিক্ষার সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতির মিল খুঁজে বের করতে পারব।


Monday, September 9, 2019

আজ ১০ মহাররম, কি ঘটেছিল এই দিনে? জানুন বিস্তারিত

এটা বলাই বাহুল্য যে, মহররম মাস ও আশুরার (১০ই মুহররম) দিনটা মুসলিম জাহানের উপর চেপে বসা রাজা-বাদশাহ শেখ ও আমির শাসিত রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্যে একটা চরম বিব্রতকর দিন। রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারনে স্বৈরাচারী শাসক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে ৬১ হিজরীতে এদিন মহানবীর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) শাহাদাত বরন করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে অনেক নবী রসুলসহ খলিফা হযরত উসমান, হযরত আলীসহ হুসাইনের চাইতেও বেশী মর্যাদাপূর্ণ আরো অনেক বড় বড় মহান ব্যক্তির হত্যাকান্ডের ঘটনা থাকলেও ৬১ হিজরীর কারবালার ঘটনা এতোটাই পৈচাশিক ও নির্মমতম ছিল যে এটা যুগে যুগে কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দিয়েছে, এখনো দেয় এবং নিঃসন্দেহ তা কেয়ামত পর্যন্ত জালিমদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাতে ও ইসলামী শক্তির পক্ষে মুমীনদের উদ্ভূদ্ধ করায় নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে।


মহানবী(দঃ) ইন্তেকালের পূর্বে কাউকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যাননি। তিনি জনগনের উপর তার উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ভার ছেড়ে দিয়ে যান। সেইমতে প্রথম চারজন উত্তরাধিকারী তথা খোলাফায়ে রাশেদীন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগন কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু উমাইয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মর্মমুলে চরম কুঠারাঘাত করেন। হযরত মুয়াবিয়া এবং হযরত মুগীরা উভয়েই সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। যেহেতু তারা কোন নবী বা রসুল ছিলেন না, স্বাভাবিক কারনেই তারা ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না। কিন্তু তাদের এই ভুল ইসলামের ইতিহাসকে ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করে। ইসলামের শাসন পদ্ধতির মুলে চরম কুঠারাঘাত করে। ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে।এই ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন মেনে নিলেন না। হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর, আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর, আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর সমর্থন করেন।



ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইনের মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হোসাইনের (রা.) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে।



ইরাকের লোকেরা তার কাছে চিঠি/দূত পাঠিয়ে জানাল তারা তাকে খলিফা হিসেবে চায়, ইয়াজিদকে নয়। সমর্থকদের চিঠি পেয়ে হুসাইন (রা: ) তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে কুফায় পাঠালেন অবস্থা দেখার জন্য। মুসলিম দেখলেন যে আসলেই অনেক মানুষ হুসাইনকে (রা: ) কে খলিফা হিসেবে চাচ্ছে। তিনি হুসাইন (রা: ) কে সেটা জানিয়েও দিলেন। ইতমধ্যে কিছু অত্যুৎসাহী লোকেরা হানী বিন উরওয়ার ঘরে মুসলিমের হাতে হুসাইনের পক্ষে বায়াত নেওয়া শুরু করল। সিরিয়াতে ইয়াজিদের কাছে এ খবর পৌছালে সে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পাঠাল কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করতে।



উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে দেখে ঘটনা সত্যি। মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময় উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিয়ে মানুষকে ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখাল। কুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, তথাকথিত হুসাইন সমর্থকদের কেউই অবশিষ্ট নেই। তাকে গ্রেপ্তার করে হত্যার আদেশ দিল উবাইদুল্লাহ। মুসলিম মৃত্যুর আগে হুসাইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান –



“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না। কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি।”


এদিকে মুসলিম বিন আকীলের মৃত্যু হলেও তার প্রথম চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অনেক সাহাবী তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর,আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।



সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছিলেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেন: হুসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে,যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?



যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছল। চিঠি পড়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন। পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের (রা:) গতিরোধ করল। তিনি আগত সৈন্যদলকে আল্লাহর দোহাই এবং নিজের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনটি প্রস্তাব দেন –



১. তাকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করবেন।



২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।



৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি জিহাদ করবেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা পাহারা দেবেন।



ইয়াজিদের সৈন্যরা উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ফয়সালা ছাড়া কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না। এ কথা শুনে উবাইদুল্লাহর এক সেনাপতি হুর বিন ইয়াজিদ বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা খুব যৌক্তিক এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়নি।



অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবেন যিয়াদের ৪ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইনকে (রা.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। মাত্র ২০০ মানুষের বিপক্ষে ৪০০০ সৈন্য। পানি সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়ায় ইমামের কচি সন্তানেরা প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লে হযরত আব্বাস ফোরাতে যান পানি আনতে। নিজেও তিনি ভীষণ তৃষ্ণার্ত ছিলেন। আঁজলা ভরে পানি তুলে খেতে যাবেন এমন সময় তাঁর মনে পড়ে যায় ইমাম হোসেন এর তৃষ্ণার্ত শিশু সন্তানের কথা। পানি ফেলে দিয়ে মশক ভর্তি করে তাঁবুর উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই শত্রুপক্ষের তীরে তাঁর এক হাত কেটে যায়। মশকটাকে তিনি অপর হাতে নিয়ে ইমামের তাঁবুর দিকে ছুটলেন। এবার অপর হাতটিও কাটা পড়ে। মশকটাকে এবার তিনি মুখে নিয়ে তাঁবুর দিকে যেতে চাইলেন। শত্রুর তীর এবার সরাসরি তার দেহে আঘাত হানে। এভাবে শহীদ হয়ে যান তিনি। এরপর অসম এই যুদ্ধে আলী আকবর শহীদ হয়ে যান। কারবালায় আরো যাঁরা শহিদ হন তাদেঁর মধ্যে রাসূলের প্রিয় সাহাবা হাবিব ইবনে মাজাহের, তাঁর প্রাচীন বন্ধু মুসলিম ইবনে আওসাজা, নওমুসলিম ওহাবসহ আরো অনেকেই।



নিরুপায় হুসাইন শেষবারের মত অনুরোধ করলেও, পাষান্ডদের মন গলেনি। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর কারবালার প্রান্তরে এক অসম যুদ্ধ শুরু হলো। হুসাইনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম সর্বপ্রথম শত্রুর আঘাতে শাহাদাত বরন করলেন। তৃষ্ণার্ত হুসাইন শিশুপুত্র আসগরকে কোলে নিয়ে ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হলেন কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর শিশুপুত্রের শরীরে বিদ্ধ হয়ে শিশুপুত্রটি শাহাদাত বরন করলে একাকী অবসন্ন হুসাইন তাবুর সামনে বসে পড়লেন। এমন সময় এক মহিলা তাকে এক পেয়ালা পানি এনে দিলো। কিন্তু শত্রুর তীর তার মুখ বিদীর্ণ করে দিলো।



সীমার বিন যুল জাওশান নামের এক নরপশু বর্শা দিয়ে হুসাইনের (রা:) শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। শেষে ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নির্ভীক এই বীর আল্লাহর লিখে রাখা ভাগ্যানুযায়ী শহীদ হলেন। হুসাইন (রা:) অন্যায় কিছু বলেন নি, অন্যায় কিছু করেন নি। তার হত্যাকারী ও হত্যায় সাহায্যকারীদের আল্লাহর ক্রোধ ঘেরাও করুক, এরা ধ্বংস হোক! আল্লাহ্‌ তায়ালা শহীদ হুসাইন (রা:) এবং তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা আচ্ছাদিত করুন।



ইতিহাসের পরবর্তী বিশ্লেষণঃ



ইয়াজিদ বেঁচে নেই। কিন্তু ইয়াজিদের প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র এখনো শীর্ষ মুসলিম দেশগুলো কব্জা করে রেখেছে। স্বৈরাচাররা মুসলমানদের বুকে চেপে বসে আছে। মুসলমানদের বোকা বানাবার জন্যে তাদেরও কিছু গৃহপালিত আলেম ইমাম পীর জাতীয় লোক আছেন। এরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নামে নানাভাবে চেষ্টা করছে কারবালার ইতিহাসকে ম্লান করে এর গুরুত্বকে খাটো করার। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কায়দা করে বলতে চায়, ইমাম হুসাইন ক্ষমতার লোভেই নাকি কুফায় গমন করেছিলেন। তার এই যাওয়াতে নাকি ইসলামের কোন কল্যাণ ছিল না। এটা নাকি হক আর বাতিলের যুদ্ধ ছিল না। (নাউজুবিল্লাহ)।আল্লাহর লানত এইসব দরবারীর উপর। তারা ইয়াজিদের নৃশংসতাকে এবং ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ বন্ধকে সহি নয় মর্মে প্রতিপন্ন করতে তৎপর। কেউ কেউ কারবালার এ ঘটনাকে কেচ্ছা কাহিনী বলতেও দ্বিধা করেনি। ইনিয়ে বিনিয়ে তারা দলীল পেশ করে কেবল দরবারী আলেমদের। 

তারা বুঝাতে চান, কারবালার ঘটনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এ নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই। ইয়াজিদ হুসাইনের হত্যাকারী নয়। ইমাম হুসাইন মুসলিম জাতির নির্বাচিত আমীর বা খলীফা ছিলেন না। তাকে হত্যা করা জায়েজ ছিল বলেও তারা কৌশলে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। কোন কোন আলেম তো ইয়াজিদের প্রতি অতিরিক্ত লিখতে গিয়ে তাকে ‘রাহমতুল্লাহ’বলতেও কুন্ঠিত হননি। তবে এইসব দরবারী আলেমরা বড়ই ধূর্ত। তারা প্রথমেই হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর পক্ষে এমনভাবে বন্দনা করেন যে পড়ে মনে হবে তারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর খুবই ভক্ত এবং পক্ষের লোক। প্রথমেই বোঝাতে চেষ্টা করেন ইমাম হুসাইনের মহব্বতে তাদের কলিজা ভরপুর। কিন্তু ধূর্তামীর আশ্রয়ে 'প্রকৃত ইতিহাস' শেখাবার নামে এবং বড়ই চাতুর্য্যপূর্ণভাবে তারা ইয়াজিদের সাফাই গায়। তারা হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যার জন্য হযরত ইমাম হুসাইনকেই দায়ী করেন। কেউ কেউ শীয়াদের দায়ী করেন। অথচ ঐসময় শীয়া মতবাদের সৃষ্টিই হয়নি। মোট কথা, যে কোনভাবেই যেন ইয়াজিদকে দায়ী করা না হয়। ইমাম হুসাইনের হত্যার দায় কুফাবাসীর উপরও চাপাতে চান। তারা বোঝাতে চান, ইমাম হুসাইন কুফাবাসীর ফাঁদে পড়ে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। 

অথচ কুফাবাসীদের প্ররোচনায় হুসাইন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন-এমনটা কোন মুসলমান মনে করতে পারে না। বরং ইমাম হুসাইন ইসলামী খেলাফতের পক্ষে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। এটা ঠিক কুফাবাসীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তারা ইমাম পরিবারের সাথে চরম গাদ্দারী করেছে।দরবারী আলেমরা চরম ধূর্ততার আশ্রয়ে ইয়াজিদকে ভাল শাসক, ইসলামের খেদমতগার বলেও প্রতিপন্ন করতে চান। তাদের মতে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নাকি সহি নয়। তারা মানুষকে বোঝাতে চান, ইয়াজিদ হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দিলেও হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দেয়নি। পাঠক খেয়াল করুন ফাঁকিবাজিটা কোথায়। ইয়াজিদ যখন হুসাইনকে হত্যার ঘটনা শুনলো তখন ইয়াজিদ ব্যথিত হয়েছিল বা হত্যাকারীকে শাস্তি দিয়েছিল এমন কোন দলীল তো পাওয়া যায় না। দরবারীরা বলে বেড়ান যে, হুসাইনের ছিন্ন মস্তক ইয়াজিদের দরবারে এলে সেখানে নাকি কান্নার রোল পড়ে যায়। কিন্তু হত্যাকারীকে তো ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দেয়নি এবং কোন শাস্তিও দেয়নি। গর্ভনর ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ তো তার স্বপদে বহাল তবিয়তেই ছিল। তাহলে কি বোঝা গেলো? দরবারীরা আরো বুঝাতে চান রাজতন্ত্র তেমন খারাপ কিছু নয়। যুগে যুগে এইসব দরবারীরা নানাভাবে মুসলমানদের সত্য ইতিহাস শেখাবার নামে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে।



যরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) কেন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গেলেন, মদিনা থেকে কেন বের হলেন নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে তার জন্য ইমাম হুসাইনকে ক্ষমতালোভী আখ্যায়িত করে প্রকারান্তে তাকেই দোষী সাব্যস্থ্য করার অপচেষ্টাও কম হয়নি। তারা বলেন কুফায় যাওয়ার কারণেই ইয়াজিদ ইমাম হুসাইনকে শহীদ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা বুঝাতে চান, অন্যায়ের বিরোধিতা করে হুসাইন ঠিক কাজ করেননি। ইয়াজিদের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে হুসাইনই অন্যায় কাজ করেছেন। তারা বলতে চান, মুসলিমরা ইয়াজিদের শাসনের উপর ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। হুসাইন এসে সেই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কিছু সুবিধাবাদী আলেম বলেছেন, ইয়াজিদকে ভালও বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না। গোঁজামিলটা খেয়াল করুন। নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারী জালিম শাসককে নাকি ভাল খারাপ কোনটাই বলা যাবে না। এই না বলার অর্থ কিন্তু ইয়াজিদকে সমর্থণ করাই। অনেকে কারবালার যুদ্ধকে হক ও বাতিলের যুদ্ধ নয় বলে অভিমত দিতেও কুন্ঠিত হলেন না। প্রকারান্তরে তারা বলতে চান, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) হকের পক্ষে ছিলেন না (নাউজুবিল্লাহ)।



সম্মানীত সাহাবীরা কেন ইমামকে কুফা যা্ওয়া রুখতে চেয়েছিলেন ?




ইমাম হুসাইন যখন কুফাবাসীর পত্র পেয়ে কুফায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অনেক সম্মানীত সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তারা কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন বলেই হুসাইনকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কোনভাবেই ইয়াজিদকে সমর্থণ করে নয়।



হুসাইন (রাঃ)-কে কেন ইমাম বলা হয়?




পুরো মুসলিম বিশ্ব এক কথায় তাকে ইমাম বা নেতা মেনে নিয়েছেন। ইয়াজিদ জনতার উপর চেপে বসেছিল। ইয়াজিদ মুসলিম বিশ্বের নির্বাচিত নেতা ছিল না। সেই সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা ইয়াজিদকে ইমাম বা নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি নেবেও না। হুসাইনকে ইমাম বলার অর্থ ইয়াজিদকে স্বীকার না করা। ইমাম বা নেতা হুসাইনই। সেকারনে তখন থেকেই যুগে যুগে হুসাইন-এর নাম নেয়ার আগে 'ইমাম' বলা হয়। ইমাম হাসানকেও বিষ প্রয়োগে অত্যন্ত কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল। তিনিও মুসলিম জাতির ইমাম। ইয়াজিদের বংশধরদের যতই গা জ্বলুক, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা হাসান এবং হুসাইনকে ‘ইমাম’ হিসাবেই ঘোষনা দেবেন।



মুয়াবিয়া(রাঃ) সম্পর্কে আমাদের ধারনা কিরুপ হওয়া উচিত ?



দুরাচারী ইয়াজিদকে খলিফা হিসাবে মনোনয়ন দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া একটা বড় রকমের ভুল করেছেন-এতে কোনই সন্দেহ নেই। ঐসময়টা ছিল সাহাবী, তাবেইনদের যুগ, খলিফা মনোনয়নের জন্যে অনেক যোগ্য লোক থাকা সত্বেও তিনি কি কারনে পুত্র ইয়াজিদকে মনোনীত করেছিলেন, সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে তার বর্তমানে কারবালার এই ঘটনা ঘটেনি। তিনি হযরত আলীর খেলাফতের বিরুদ্ধেও অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। তিনি চাইছিলেন ওসমান হত্যার প্রতিশোধ আগে নিতে, কিন্তু আলী চাইছিলেন আগে খিলাফত ঠিক করতে। দু’জনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে হয়তো সঠিক ছিলেন, যদিও পথ ছিল ভিন্ন। তাদের উভয়েরই ইজতেহাদী অনেক ভুল ছিল। সবার উপরে যে কথা, তাহলো, উভয়েই ছিলেন সম্মানিত সাহাবী। হযরত আলী ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী। সাহাবীদের সম্পর্কে কোন খারাপ ধারনা কোন মুসলমানের থাকতে পারে না। মুয়াবিয়ার ভুলে পরবর্তীতে ইসলামের চরম ক্ষতি হয়েছে।ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, তথাপি একজন সম্মানিত সাহাবী হিসাবে তিনি মুসলমানদের শ্রদ্ধার পাত্রই থাকবেন। কারবালার ঘটনার জন্যে তিনি দায়ী ছিলেন না। দায়ী ছিল তার দুরাচারী পুত্র ইয়াজিদ। নবীর দৌহিত্রকে এমন নৃশংশভাবে হত্যাকান্ডে যার সামান্যতম সম্পর্কও থাকবে, তেমনটা জানলে তিনি নিশ্চয়ই ইয়াজিদকে খলিফা হিসাবে মনোনয়ন দিতেন না।



আশুরার দিন যা বর্জনীয়



সুন্নি নামধারী কিছু লোক এদিন নানা জাতের খানাপিনা করেন, মহরম-এর বাদ্য বাজান, এদিনটাকে খুশীর আমেজে পালন করেন। আবার শীয়া নামধারী কিছু কুলাঙ্গার এদিন নানা জাতের মাতম করেন, বুকে পিঠে ছুরি মারেন, তাজিয়া মিছিল করেন। এসব কাজ অবশ্যই বর্জনীয়। এসব কখনোই ইসলাম অনুমোদন করেনি। কাজেই এগুলো বিদআত। এদের কিছু কিছু কর্মকান্ড শির্কের পর্যায়ভূক্ত। মুসলমানদেরকে অবশ্যই এসব বর্জণ করতে হবে।



যা করনীয়



১। রোজা রাখুন। কেননা কারবালার এই মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও এদিনটি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: রামাযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররামের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায।” (মুসলিম)ইব্ন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আশুরার দিনের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে এত গুরুত্বসহকারে অন্য কোন দিন রোযা পালন করতে দেখিনি। (অর্থাৎ রামাযান মাস ছাড়া) (বুখারী)।



২। কারবালার এ বিয়োগান্ত ঘটনা স্মরন করে ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তার পরিবার বর্গের জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘যাঁরা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় শহীদ হন তাঁদেরকে কখনও মৃত মনে করো না। বরং তাঁরা নিজেদের রব তায়ালার নিকট জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত।’ (সূরা আলে ইমরান-১৬৯)



৩। কারবালার ঘটনার চেতনায় উদ্ভূদ্ধ হয়ে রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, পীরবাদ, জালিম শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে মনেপ্রাণে ঘৃণা প্রকাশ করুন, ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় নিজ করনীয় ঠিক করুন এবং তা পালনের দৃঢ় শপথ নিন। কবি’র এ অমর বাণীটা স্মরণ রাখুন, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ।

Sunday, September 8, 2019

কেমন হবে জান্নাত??? আসুন জেনে নেই

★ জান্নাতী_রমণী
জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ নতুন ভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অবস্থায় জান্নাতে যাবে। জান্নাতি রমণীগণ যদি একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি দেয় তবে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত জায়গা আলোকিত হয়ে যাবে। রমণীগণ এতো সুন্দর হবে যে তাদের দেহের ভিতরের হাড্ডির মজ্জা বাহির থেকে দৃষ্টিগোচর হবে। জান্নাতী মহিলারা তাদের স্বামীর সাথে মিলনের পরো চিরকাল কুমারী থাকবে।

★ হুরেঈন
হুরেরা ডিমের ভিতর লুকায়িত সূক্ষ্ম চামড়ার চেয়েও অধিক নরম হবে। (সূরা আস সাফফাত ৪৮-৪৯
হুরগণ তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। হুরেরা এতো লজ্জাশীল হবে যে স্বীয় স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবেনা। হুরগণ ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট হবে, চোখের কালো অংশ একেবারে কালো, এবং সাদা অংশ একেবারে সাদা হবে।

★ জান্নাতের গাছপালা
জান্নাতের সব ধরনের ফলের গাছ থাকবে, তবে খেজুর, ডালিম, আংগুরের গাছ অধিক পরিমাণে থাকবে। জান্নাতের বৃক্ষ কন্টকমুক্ত হবে। কলা ও কুল জান্নাতের বৃক্ষ। জান্নাতে বৃক্ষ সমূহের ছায়া অনেক দীর্ঘ হবে। জান্নাতের সব গাছের মূল স্বর্ণের হবে।

(তিরমিযি)
তুবা জান্নাতের একটি গাছের নাম যার ছায়া শত বছরের রাস্তার সমান দৈর্ঘ্য। এই বৃক্ষের ফলের খোসা দিয়ে জান্নাতিদের বস্ত্র তৈরি করা হবে।

# জান্নাতের_ফল_ফলাদিঃ
জান্নাতে মৌসুমি সর্বপ্রকার ফল থাকবে। কলা ও কুল জান্নাতের ফল। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ ২৭-৩২)
জান্নাতি ফলের শীষ এত বড় হবে যে, তা যদি দুনিয়াতে আসত তবে সাহাবাগণ কিয়ামত পর্যন্ত তা
খেয়ে শেষ করতে পারতো না! (মুসলিম-কিতাব সালাতিন খুসুফ) আঙ্গুর, খেজুর, ডালিম জান্নাতি ফল। (সূরা নাবা ৩১-৩১)

জান্নাতি যখন কোনো বৃক্ষের ফল পাড়বে তখন সঙ্গে সঙ্গে উক্ত স্থানে অপর এক নতুন ফল ধরবে। (তাবারানি) জান্নাতের ফলমূল কখনো ফুড়িয়ে যাবে না এবং নষ্টও হবে না। সুবহানাল্লাহ।

★ জান্নাতের_প্রাসাদসমূহঃ
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত হবে। জান্নাতের কংকরসমূহ হবে মোতি ও
ইয়াকুতের, আর মাটি হবে জাফরানের । সকল জান্নাতির অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে, আর
সেখানে হুরেরা অবস্থান করবে। জান্নাতের প্রতিটি তাঁবু ৬০ মাইল বিস্তৃত হবে। ভিতরে খুব সুন্দর মোতি খোদিত থাকবে।

★ জান্নাতের নদীসমূহ
জান্নাতে সুস্বাদু পানি, সুস্বাদু দুধ, সুমিষ্ট শরাব ও স্বচ্ছ মধুর নদী প্রবাহিত হবে। জান্নাতের নদীসমূহের পানির রঙ ও স্বাদ সবসময় একই থাকবে। সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল জান্নাতি নদী।
(মুসলিম) কাওসার আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল  কে প্রদত্ত উপহার। কাওসার নদীর পানি দুধ অপেক্ষা শুভ্র এবং মধু অপেক্ষা মিষ্টি! জান্নাতি এক নদীর নাম হায়াত, যার পানি জাহান্নাম হতে মুক্তিপ্রাপ্তদের শরীরে ঢালা হবে, ফলে তারা দ্বিতীয়বার চারা গাছের ন্যায় সজিব হয়ে উঠবে।

★ জান্নাতের_ঝর্ণাসমূহঃ
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সালসাবিল যার পানিতে আদা মিশ্রিত স্বাদ পাওয়া যাবে৷ জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম "কাফুর", যার পানি পানে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে।

★ তাসনিম জান্নাতের আরেকটি ঝর্ণা। যার স্বচ্ছ পানি শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য বরাদ্দ হবে।

★ জান্নাতির বাজারঃ
জান্নাতে প্রত্যেক জুমু'আর দিন বাজার জমবে। জুমুয়ার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী জান্নাতীগণের সৌন্দর্য পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। মহিলারা শুক্রবারের বাজারে উপস্থিত হবে না তবে বসে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তাদের লাবণ্যতা বৃদ্ধি করবেন। (মুসলিম)

★ জান্নাতিদের খানাপিনাঃ
জান্নাতিদের সর্বপ্রথম খাদ্য হলো মাছ, এরপর গরুর গোশত। জান্নাতে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয় হলো তাসনীম যা শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের পরিবেশন করা হবে। জান্নাতের পরিষ্কার ও স্বচ্ছ শরাব " রাহিক" পানে সকল জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। রাহিক পান করার পর জান্নাতির মুখে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ অনুভব করবে। শরাব পানে তাদের মাথায় কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। সকল জান্নাতিদের একশো ব্যক্তির খাবারের শক্তি দেওয়া হবে। (তাবারানি) হাউজে কাউসারে উড়ে বেড়ানো পাখির গোশত ভক্ষণে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতিদের খাবার পরিবেশনের নিয়ম চালু থাকবে। (সূরা মারইয়াম ৬২)।

★ জান্নাতিদের_পোশকঃ
জান্নাতিরা সূক্ষ্ম ও পুরু সবুজ রেশমের কাপড় পড়বে। জান্নাতিরা হাতে সোনার অলংকার পড়বে।
খাঁটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাঁটি স্বর্ণের অলংকার, খাঁটি মোতির অলংকার এবং মোতিখচিত
স্বর্ণের অলংকারও জান্নাতিরা পড়বে। পোশাক কখনো পুরাতন হবেনা। জান্নাতি মহিলাদের ওড়না মান ও দামের দিক থেকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থেকে মূল্যবান হবে। জান্নাতিরা রেশমি রুমাল ব্যবহার করবে।(বুখারী)

★ জান্নাতিদের_সেবকঃ
জান্নাতিদের সেবকরা কৈশর বয়সী হবে। জান্নাতিদের সেবক এমন সুন্দর হবে যে,চলতে ফিরতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মোতি। সুরক্ষিত মোতি সদৃশ কিশোররা জান্নাতিদের সেবা করার জন্য ঘুরাফেরা করতে থাকবে।

★ আল্লাহর দর্শন
আল্লাহর দর্শনের সময় জান্নাতিদের চেহারা খুশিতে চককিতে থাকবে। জান্নাতে জান্নাতিরা এর স্পষ্টভাবে আল্লাহকে দেখবে যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদকে স্পষ্ট দেখা যায়। সুবহানাল্লাহ। জান্নাতের সকল বর্ণনা লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। এর প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ'ই ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছেন, যা কোনো মানব কল্পনাও করতে পারবে না৷ সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের জান্নাতের এসব নিয়ামত লাভ করার তাওফিক দিন-আমীন।

Friday, September 6, 2019

নাস্তিকের কঠিন প্রশ্নের দাঁত ভাঙা জবাব আলেমের





এক নাস্তিক এক আলেম কে বলেছিল, ৩টা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আমি মুসলমান হয়ে যাব।

প্রশ্ন ১: আল্লাহ কোথায় আছে?
আল্লাহকে আমাকে দেখান?



প্রশ্ন ২: আল্লাহ নাকি জ্বিন জাতিকে জাহান্নামে শাস্তি দিবেন, কিন্তু জ্বিনজাতি তো আগুনের সৃষ্টি! তো আগুন কে আগুন দ্বারা কিভাবে শাস্তি দিবেন?



প্রশ্ন ৩: দুনিয়ায় যা হয় তা নাকি সব আল্লাহর নির্দেশে হয়। তাহলে আবার তিনি পাপের শাস্তি দিবেন কেন? পাপ ও তো তার নির্দেশেই হয়। তার প্রশ্ন শোনার পর আলেম কিছুই বললেন না, বরং শক্ত মাটির একটা টুকরা নিয়ে তার কপালে ঢিল মারলেন। এতে করে লোকটি আঘাত পেয়ে কাজী সাহেবের নিকট গিয়ে বিচার চাইলো যে, আমি তাকে প্রশ্ন করায় সে আমাকে আঘাত করেছে। এতে আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি। কাজী তখন আলেমকে ডেকে পাঠালেন এবং অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন।



আলেম বললেনঃ
তার প্রথম প্রশ্ন ছিল আল্লাহ কোথায়? আল্লাহকে দেখান? তো তাকে আমার প্রশ্ন হল, তার ব্যাথা কোথায়? ব্যাথা আমাকে দেখাক?

তার ২য় প্রশ্ন ছিল, আগুনের জাতিকে আল্লাহ আগুন দিয়ে কিভাবে শাস্তি দিবেন?

তো সে মাটির সৃষ্টি হয়ে মাটির আঘাতে ব্যাথা পেল কিভাবে? তার ৩য় প্রশ্ন ছিল, সব আল্লাহর নির্দেশে হওয়া সত্তেও তিনি শাস্তি দিবেন কেন?

তাহলে আমিও তো তাকে আল্লাহর নির্দেশে ঢিল মেরেছি, সে আপনার দরবারে বিচার দায়ের করল কেন? অসাধারণ যুক্তি।

Thursday, September 5, 2019

পবিত্র জুমার দিনে করনীয় (বিস্তারিত)


১। জুম’আর দিন গোসল করা।
২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩,

৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)

১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
১৮। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
১৯। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২০। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)

২১। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২২। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৩। জুম’আর আযান দেওয়া।(বুখারীঃ ৯১২)
২৪।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের আগে ও পরে মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)

Wednesday, September 4, 2019

জার্মানিতে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ লাখ!


বর্তমানে জার্মানিতে মুসলিমদের সংখ্যা চল্লিশ লাখের মতো, এই বিশাল সংখ্যক মুসলিম তাও আবার এমন একটি ইহুদি খ্রিষ্টানদের দেশে এলো কিভাবে ?

১৯৬০ এর দশক থেকে মুসলমানরা তুরস্ক থেকে জার্মানিতে হিজরত বা অভিবাসন করেন এবং মুসলমান সমাজ গঠন করেন। এখন সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা চল্লিশ লাখের মতো।
মুসলমানরা জার্মানিতে বহু মসজিদ, ইসলামী সংস্থা এবং ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। হামবুর্গে ইসলামিক সেন্টারের মতো মিউনিখ এবং আঁচে’তেও বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছে। জার্মানিতে তৎপর এইসব ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রমগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুরস্ক থেকে আসা মুসলমানরাই চালিয়ে থাকে। তুরস্কের ইসলামপন্থী দলগুলো সেদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে তারা তুরস্কের বাইরে চলে যায় এবং তাদের কর্মতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে। বিশেষ করে তারা ইউরোপের দিকে যেতে পছন্দ করতো। এভাবেই তারা জার্মানি চলে যায় এবং নিজ দেশে কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা জার্মানিতে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে।

জার্মানিতে তাদের এরকম কার্যক্রম পরিচালনার একটি প্রতিষ্ঠান হলো ‘গোরুশ’ জাতীয় সংস্থা। ইরানেও ইসলামী বিপ্লবের বিজয় জার্মানিতে তৎপর ইসলামী দল ও সংস্থাগুলোর ভেতরে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। মুসলমানদের কর্মতৎপরতার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক ছিল তাদের সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া। জার্মানিতে মুসলমান ছাত্রদের শতকরা নব্বুই ভাগ ইসলামী শিক্ষার ক্লাসগুলোতে যায় এবং শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ছাত্র অংশ নেয় কুরআন শিক্ষার ক্লাসে। জার্মানির স্থানীয় মুসলমানরা বিশেষ করে যুবক শ্রেণী সেদেশে ইসলামী সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জার্মানির একজন খ্যাতিমান মুসলিমের নাম হলো মুরাদ বেলফার্ড হফম্যান। তিনি মরক্কোতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মুসলমান হবার পর তিনি জার্মানির সমাজে ইসলামকে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

বেলজিয়ামের মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিন ভাগই ছিলো মুসলমানরা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্ক থেকে এই দেশে হিজরত করে। ১৯৭০ সালের প্রথম দশকগুলোতে ব্রাসেললে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৮০ সালের শেষ নাগাদ ৩০০ মসজিদ এবং হোসাইনিয়া তৈরি হয়েছিল বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের মুসলমানরা প্রধানত মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড এবং মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের কাছ থেকে প্রেরণা লাভ করেছে।

হল্যান্ডেও ১০ লাখের মতো মুসলমান রয়েছে। এই সংখ্যা হল্যান্ডের মূল জনসংখ্যার ছয় ভাগ। এখানকার মুসলমানরাও উত্তর আফি্রকা এবং তুরস্ক থেকে এসেছে। ১৯৭৯ সালে হল্যান্ডে তুর্কিদের সাংস্কৃতিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে ইসলামী বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার ধারা সৃষ্টি হয়। মসজিদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইসলামিক সেন্টার এতো বেশি গড়ে ওঠে যে ১৯৮০’র দশকে সেখানে মসজিদের সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাশে। হেগের মুসলমানরা মুসলিম তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে ‘কেবলা’ নামক ম্যাগাজিন ছাপেন। এই কেবলা ইসলামী আদর্শ ও বিধি বিধানগুলোর প্রচার প্রসারে নানামুখি প্রভাব ফেলেছিল।

ইউরোপের একটিমাত্র দেশ আলবেনিয়া, যেখানে পুরো জনসংখ্যার সত্তুর ভাগই হলো মুসলমান। বলকানের ওপর ওসমানী আধিপত্যের সময় তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এদিক থেকে আলবেনিয়ার মুসলমানদের ভিত যথেষ্ট মজবুত। সেখানে কমিউনিজমের পতনের ফলে ধর্মীয় বা মাযহাবি কর্মকাণ্ড পরিচালনার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। সাবেক যুগোস্লাভিয়াতেও ত্রিশ লাখেরও বেশি মুসলমান বসবাস করতেন। দেশটি ওসমানী সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্যাপক চাপের মুখে পড়ায় বেশিরভাগ মুসলমানই তুরস্কে চলে গিয়েছিল।




দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর মুসলমানরা তরুণ মুসলিম বহু সংস্থা গড়ে তুলেছিল। আলহেদায়া এবং মারহামাত নামের দুটি যুব সংগঠন চেষ্টা করেছিল বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনার মতো দেশ দুটোর আদলে স্বাধীনতা অর্জন করতে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের শক্তি খর্ব হয়ে যায় এবং তাদের নেতাদের কেউ কারাবন্দী হয় আবার কারো বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়। ১৯৬০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দূরত্ব বজায় রাখার পর এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে ওঠার পর যুগোস্লাভিয়ায় মুসলমানদের অবস্থার উন্নতি ঘটে। এ সময় বহু মাদ্রাসা এবং মসজিদ গড়ে উঠেছিল। মুসলিম বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আলি ইযযাত বেগোভিচ ইসলামী বিবৃতি প্রকাশ করার পর ইসলামী কর্মতৎপরতা উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়।

ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের ফলেও যুগোস্লাভিয়া সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই ১৯৮৩ সালে বেগোভিচ আরো ১২জন মুসলিম নেতাসহ দীর্ঘ মেয়াদে কারাবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। যুগোস্লাভিয়া আলাদা হবার পর বেশিরভাগ দেশ বিশেষ করে সার্বিয়ার মতো দেশ চেষ্টা করেছিল ইউরোপের ভেতর যেন কোনো মুসলিম দেশ গড়ে উঠতে না পারে। এই লক্ষ্যে বসনিয়ার মুসলমানদের ওপর তারা গণহত্যা চালিয়েছিল। এই গণহত্যার ফলে বসনিয় মুসলমানরা উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বসনিয় মুসলমানদের মাঝে যেমন তেমনি বিশ্ব মুসলমানদের মাঝেও আত্মসচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

আমেরিকায় প্রথম পর্যায়ের মুসলমানরা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। দাস ব্যবসার জন্যে তাদেরকে আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই বাধ্য হয়েছিল নিজেদের নাম পরিচয় পরিবর্তন করতে। এর ফলে সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এক্স ফ্যামিলি’র পক্ষ থেকে এরকম একটি আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। মালকুল এক্স নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নেতার নেতৃত্বে আন্দোলনটি গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনটি ছিল মূলত মার্কিন সমাজে কৃষ্ণাঙ্গদের মর্যাদাহানী করার বিরুদ্ধে এবং তাদের ওপর বিচিত্র জুলুম নির্যাতন চালানোর বিরুদ্ধে এক ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। তিনি তাঁর নিজ ধর্ম ইসলামের জায়গায় খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। সেইসাথে ফ্যামিলি নেইম ‘লিটল’ তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না, কেননা এই নামটি শ্বেতাঙ্গ দাস ব্যবসায়ীরাই তাঁকে দিয়েছিল।

১৯৮০’র দশকে বহু মুসলমান আমেরিকায় গিয়েছিল একটা ইসলামী পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। তাঁরা চেষ্টা করেছিল তাবলিগ বা প্রচারের মাধ্যমে এবং মসজিদ মাদ্রাসা, ছাপাখানা, প্রকাশনাসহ ব্যাংকের মতো অর্থনৈতিক অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছিল। এসবের পেছনে সবচেয়ে বেশি শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছিলেন ভার্সিটি ছাত্ররা। এরপর একের পর এক গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বহু সংগঠন। এমস, এস, এ, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনগুলো এ সময়ই গড়ে উঠেছিল।