নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Tuesday, September 3, 2019

হাদিসের দৃষ্টিতে মেসওয়াকের গুরুত্ব উপকারিতা

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত মেসওয়াকের ব্যবহার করা, যদিও বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষের দেখা যায় দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করে থাকে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কিন্তু এখনো মেসওয়াক ব্যবহার করে থাকেন। কারণ ইসলামে মেসওয়াকের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মেসওয়াকের। বিষয়ে ইসলাম কি বলছে, তার আলোচনা নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।


মিসওয়াক কি? মিসওয়াক হলো গাছের ডাল বা শিকড়। যা দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিষ্কার করা হয়। দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলা হয়।

মিসওয়াকের গুুরুত্ব : মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়। (বুখারি, নাসাঈ, মিশকাত) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমনটি কখনা হয়নি যে, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মিসওয়াকের কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

কি দ্বারা মিসওয়াক করবো : যেসব গাছের স্বাদ তিতাসেসব গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। যায়তুনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। মিসওয়াক হাতের আঙ্গুলের মতো মোটা ও নরম হওয়া ভালো। লম্বায় হবে এক বিঘাত।
মিসওয়াক করার নিয়ম : মুখের ডানদিক থেকে শুরু করে দাঁতের প্রস্থের দিক থেকে মিসওয়াক করা। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে নয়। ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলী মিসওয়াকের নিচে আর মধ্যমা ও তর্জনী মিসওয়াকের ওপর এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা এর মাখার নিচ ভালভাবে ধরা। এ নিয়মটি হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে।

মিসওয়াক কখন করবো : অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে, ওজুতে কুলি করার পূর্বে কোনো কোন আলিম ওজুর পূর্বে মিসওয়াক করার কথা বলেছেন। নামাজের পূর্বে। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর। কোনো মজলিসে যাওয়ার পূর্বে। কুরআন ও হাদিস তিলাওয়াতের পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।

মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত : মেসওয়াক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ সুন্নাত। বিভিন্ন হাদিস শরীফে মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে বেশি বেশি মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিস শরীফে হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখনই জিবরাঈল (আ.) আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দিতেন। আমার ভয় হতে লাগলো যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি। আমার মুখের সম্মুক দিক ক্ষয় করে দিব। (মেশকাত শরীফ- ১/৪৫) রাসূল (সা.)ও উম্মতগণকে মেসওয়াকের গুরুত্ব বোঝাতে, যেয়ে বলেন, “যদি উম্মতের কষ্ট ও অসুবিধার কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক তাদের ওপর আবশ্যক করে দিতাম।” (মুসলিম শরীফ- ১/১২৮),
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মিসওয়াক সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে অতি গুরুত্বারোপ করছি।” (নাসাঈ শরীফ পৃ. ৩)। মিসওয়াক সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের শরীয়তে সুন্নাত ছিলো। যেমন, হাদিস শরীফে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, চারটি বস্তু সকল নবীগণের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। (১) মন্দ কাজ থেকে লজ্জা করা (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা (৩) মিসওয়াক করা (৪) বিবাহ করা। (তিরমিযি শরীফ-১/২০৬) রাসূল (সা.) উম্মতগণকে মিসওয়াকের প্রতি গুরুত্বারোপ করার সাথে সাথে নিজেও মিসওয়াকের আমলের প্রতি অধিক যত্নবান ছিলেন। যেমন হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, তাবেয়ী হযরত শুরাইহ ইবনে হানী (রাযি.) বলেন, একবার আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাযি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন কোন কাজ সর্বপ্রথম করতেন? হযরত আয়েশা (রাযি.) বললেন, মিসওয়াক। (মুসলিম শরীফ-১/১২৮) অন্যত্রে হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই ঘুমাতেন রাতে হোক বা দিনে, অতঃপর জাগ্রত হতেন, তখনই মিসওয়াক করতেন ওযু করার পূর্বে।’ (আবুদাউদ-১/৪)

ইসলামী শরীয়তে মিসওয়াক করার মধ্যে অনেক বরকত ও ফজিলত রযেছেঃ ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন যে, মিসওয়াকের ফজিলত প্রসঙ্গে প্রায় চল্লিশটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখ করা হলো, হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রযেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।(নাসাঈ শরীফ-পৃ:৩) অন্যত্রে হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে নামাজের জন্য মিসওয়াক করা হয়, তার ফজিলত মিসওয়াকবিহীন আদায় কৃত নামাজের তুলনায় সত্তর গুণ অধিক। (মেশকাত শরীফ-১/৪৫) অন্য এক হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করছি। এ সময় আমার নিকট দুজন ব্যক্তি আসলো, তাদের মধ্যে একজন অপর জন থেকে বড়। আমি ছোট ব্যক্তিকেই আমার মিসওয়াকটি দিয়েছিলাম।

তখন আমাকে বলা হলো, (ওহীর মাধ্যমে) বড় ব্যক্তিকেই মিসওয়াকটি দিন। অতঃপর আমি মিসওয়াকটি বড় ব্যক্তিকে দিলাম। (মুসলিম শরীফ ২/২৪৪) হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমার নিকট মিসওয়াক সহকারে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাকাআতের চেয়েও পছন্দীয়। (আবু নাঈম) বেনেয়া গ্রন্থে আল্লামা আয়নী রাহ. উল্লেখ করেছেন, হযরত ওমর (রাযি.) বলেন, মিসওয়াকের ফজিলতের ব্যাপারে সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত। এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি। সকলের নিকট মিসওয়াক সহকারে নামাজ আদায় করা মিসওয়াকবিহীন নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এছাড়া মিসওয়াকের উপকারিতাও অনেক বেশি। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহ.) উল্লেখ করেছেন, মিসওয়াকের উপকারিতা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করার দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় আর সর্বেŸাচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নছিব হয়। (ফাতাওযে শামী-১/২৩৯)

মেসওয়াক ব্যবহারে শারীরিক উপকারীতা

গলগন্ড রোগে মেসওয়াকের গুরুত্ব : টনসিলের রোগীদের নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহার করানো হলে তারা খুব শীঘ্র রোগমুক্ত হয়ে যায়। গলগন্ড রোগ কষ্ট পাওয়া একজন রোগীকে তুঁতের শরবত পান করতে এবং পিলুর (এক প্রকার গাছের ডাক) তাজা মেসওয়াক ব্যবহার করতে বলা হলো। মেসওয়াক কেটে টুকরো করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে গরগরা করানো হলো। অল্প দিনের মধ্যে রোগী গলগ- রোগ থেকে মুক্তি লাভ করলো।

মেসওয়াক ব্যবহারে দাঁত ও মস্তিষ্ক রোগের উপকার : অপরিচছন্ন, ময়লা এবং পুঁজযুক্ত দাঁত মস্তিষ্ক রোগের কারণ হয়। মানসিক রোগসমূহ যেমন উন্মাদনা, মস্তিষ্ক বিকৃতি এবং অন্যান্য ধ্বংসকর রোগসমূহ এসবের শামিল। এক ভদ্রলোকের স্ত্রীর সস্তিষ্কের সমস্যা ছিলো। জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তার মস্তিষ্কের পর্দার ওপর পূঁজ জমে গেছে এবং রোগিনী র্দীর্ঘদিন থেকে পাইওরিয়া রোগে ভুগছিলো। আর পাইওরিয়াজনিত পুঁজই তার মস্তিষ্ক রোগের কারণ হয়েছে। অনুরুপ পুঁজের প্রতিক্রিয়া অস্থিমজ্জা অথবা পিষ্টুরি গ্ল্যান্ডের জন্যে ধ্বংসকর হয়।
স্থায়ী সর্দি রোগে মেসওয়াকের গুরুত্ব : যেসব রোগীর সর্দি লেগেই থাকে, মেসওয়াক ব্যবহার করলে তাদের সর্দি বেরিয়ে যায় এবং মগজ হালকা হয়। একজন প্যাথলজিষ্ট বলেছেন, আমার অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, স্থায়ী সর্দির রোগীর জন্য মেসওয়াক বিশেষ ফলপ্রসু। মেসওয়াক ব্যবহার করা হলে এ রকম রোগীদের নাক এবং গলার অপারেশনের প্রয়োজন কমে যায়।

মেসওয়াক ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ: ইঞ্জিনিয়ার নকশাবন্দী তাঁর ওয়াজে বলেছেন, ‘আমেরিকান ওয়াশিংটনে একজন ডাক্তার তাকে বলেছেন রাতে ঘুমানোর আগে মেসওয়াক করে ঘুমানোর জন্য। তখন উনি ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার তাকে বললেন, মানুষ যা কিছু খায় সেসব মুখের ভিতর প্লাজমা হয়ে থাকে। সে প্লাজমা শুধু কুলি করলে পরিষ্কার হয় না। সাধারণত রাতে ঘুমানের মধ্যে দাঁতের খারাপের যত অসুখ দেখা যায়।
কারণ মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন মুখ বন্ধ থাকে। তখন মুখের নড়াচড়া বন্ধ থাকে। দিনের বেলা মানুষ কথা বলে খাবার খায় পানি পান করে। রাতে মুখ বন্ধ থাকে। এর ফলে প্লাজমা মুখের ভিতর কাজ করার সুযোগ পায়। এতে দাঁতের অসুখ অধিকাংশ রাতে দেখা যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেসওয়াক করলে দাঁতের জন্য ভাল।

পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্কের উপকারিতা : হযরত আলী (রা) বলেছেন, মেসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব ও সতেজ হয়। প্রকৃতপক্ষে মেসওয়াকের মধ্যে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে। পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করলে দাঁতের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের যে অভাব থাকে তা পূরণ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতা প্রমাণিত হয়েছে, পিলুর মেসওয়াক রোগ জীবাণুর উৎপাদন বন্ধ করে ও দাঁতকে রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। পিলুর মেসওয়াক ব্যবহার করার সময় আঁশ কাটতে হবে। তাহলে নতুন আঁশ ব্যবহ্নত হবে তেতো উৎপাদন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মেসওয়াক ব্যবহারে সামাজিক উপকারিতা : মানুষ যখন কোনো সামাজিক মজলিসে কথা বলে বা কোনো যানবাহনের যাত্রী হয়, তখন তার মুখে যদি দুর্গন্ধ থাকে তাহলে তা অন্যদের জন্যে বেশ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত জাহাজে আলোহী হলে তার শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে দুর্গন্ধ অনুভূত হয়। এরকম সহযাত্রীর যদি হাঁচি শুরু হয়ে যায়, তাহলে তো পুরো পরিবেশই দুর্গন্ধ অনুভূত হয়।
সর্বাগ্রে দাঁতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ দাঁতই অধিকাংশ দুর্গন্ধের কারণ হয়ে থাকে। নয় তো পাকস্থলীর চিকিৎসা সম্ভব।

ব্রাশ ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিবরণ : জীবাণু বিশেষজ্ঞদের বছরের পর বছর গবেষণায় একথা পূর্ণতার স্তরে উপনীত হয়েছে যে, যে ব্রাশ একবার ব্যবহার করা হয়, পুনরায় তা ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। কেননা, একবার ব্যবহারের পরই তাতে রোগ-জীবাণুর স্তর জমে যায়। তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেললেও ক্রিয়াশীল থাকে। তাছাড়া ব্রাশ ব্যহার করা হলে দাঁতের ওপরের চমকদার সাদা স্তর নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দাঁতের মাঝে ফাঁক তৈরী হয় এবং ধীরে ধীরে দাঁত মাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যায়। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা আটকে গিয়ে মাড়ি এবং দাঁতের ক্ষতির কারণ হয়।

0 coment�rios:

Post a Comment