নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Tuesday, September 3, 2019

হাদিসের দৃষ্টিতে মেসওয়াকের গুরুত্ব উপকারিতা

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত মেসওয়াকের ব্যবহার করা, যদিও বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষের দেখা যায় দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করে থাকে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কিন্তু এখনো মেসওয়াক ব্যবহার করে থাকেন। কারণ ইসলামে মেসওয়াকের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মেসওয়াকের। বিষয়ে ইসলাম কি বলছে, তার আলোচনা নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।


মিসওয়াক কি? মিসওয়াক হলো গাছের ডাল বা শিকড়। যা দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিষ্কার করা হয়। দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলা হয়।

মিসওয়াকের গুুরুত্ব : মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়। (বুখারি, নাসাঈ, মিশকাত) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমনটি কখনা হয়নি যে, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মিসওয়াকের কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

কি দ্বারা মিসওয়াক করবো : যেসব গাছের স্বাদ তিতাসেসব গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। যায়তুনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। মিসওয়াক হাতের আঙ্গুলের মতো মোটা ও নরম হওয়া ভালো। লম্বায় হবে এক বিঘাত।
মিসওয়াক করার নিয়ম : মুখের ডানদিক থেকে শুরু করে দাঁতের প্রস্থের দিক থেকে মিসওয়াক করা। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে নয়। ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলী মিসওয়াকের নিচে আর মধ্যমা ও তর্জনী মিসওয়াকের ওপর এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা এর মাখার নিচ ভালভাবে ধরা। এ নিয়মটি হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে।

মিসওয়াক কখন করবো : অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে, ওজুতে কুলি করার পূর্বে কোনো কোন আলিম ওজুর পূর্বে মিসওয়াক করার কথা বলেছেন। নামাজের পূর্বে। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর। কোনো মজলিসে যাওয়ার পূর্বে। কুরআন ও হাদিস তিলাওয়াতের পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।

মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত : মেসওয়াক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ সুন্নাত। বিভিন্ন হাদিস শরীফে মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে বেশি বেশি মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিস শরীফে হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখনই জিবরাঈল (আ.) আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দিতেন। আমার ভয় হতে লাগলো যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি। আমার মুখের সম্মুক দিক ক্ষয় করে দিব। (মেশকাত শরীফ- ১/৪৫) রাসূল (সা.)ও উম্মতগণকে মেসওয়াকের গুরুত্ব বোঝাতে, যেয়ে বলেন, “যদি উম্মতের কষ্ট ও অসুবিধার কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক তাদের ওপর আবশ্যক করে দিতাম।” (মুসলিম শরীফ- ১/১২৮),
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মিসওয়াক সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে অতি গুরুত্বারোপ করছি।” (নাসাঈ শরীফ পৃ. ৩)। মিসওয়াক সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের শরীয়তে সুন্নাত ছিলো। যেমন, হাদিস শরীফে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, চারটি বস্তু সকল নবীগণের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। (১) মন্দ কাজ থেকে লজ্জা করা (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা (৩) মিসওয়াক করা (৪) বিবাহ করা। (তিরমিযি শরীফ-১/২০৬) রাসূল (সা.) উম্মতগণকে মিসওয়াকের প্রতি গুরুত্বারোপ করার সাথে সাথে নিজেও মিসওয়াকের আমলের প্রতি অধিক যত্নবান ছিলেন। যেমন হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, তাবেয়ী হযরত শুরাইহ ইবনে হানী (রাযি.) বলেন, একবার আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাযি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন কোন কাজ সর্বপ্রথম করতেন? হযরত আয়েশা (রাযি.) বললেন, মিসওয়াক। (মুসলিম শরীফ-১/১২৮) অন্যত্রে হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই ঘুমাতেন রাতে হোক বা দিনে, অতঃপর জাগ্রত হতেন, তখনই মিসওয়াক করতেন ওযু করার পূর্বে।’ (আবুদাউদ-১/৪)

ইসলামী শরীয়তে মিসওয়াক করার মধ্যে অনেক বরকত ও ফজিলত রযেছেঃ ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন যে, মিসওয়াকের ফজিলত প্রসঙ্গে প্রায় চল্লিশটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখ করা হলো, হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রযেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।(নাসাঈ শরীফ-পৃ:৩) অন্যত্রে হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে নামাজের জন্য মিসওয়াক করা হয়, তার ফজিলত মিসওয়াকবিহীন আদায় কৃত নামাজের তুলনায় সত্তর গুণ অধিক। (মেশকাত শরীফ-১/৪৫) অন্য এক হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করছি। এ সময় আমার নিকট দুজন ব্যক্তি আসলো, তাদের মধ্যে একজন অপর জন থেকে বড়। আমি ছোট ব্যক্তিকেই আমার মিসওয়াকটি দিয়েছিলাম।

তখন আমাকে বলা হলো, (ওহীর মাধ্যমে) বড় ব্যক্তিকেই মিসওয়াকটি দিন। অতঃপর আমি মিসওয়াকটি বড় ব্যক্তিকে দিলাম। (মুসলিম শরীফ ২/২৪৪) হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমার নিকট মিসওয়াক সহকারে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাকাআতের চেয়েও পছন্দীয়। (আবু নাঈম) বেনেয়া গ্রন্থে আল্লামা আয়নী রাহ. উল্লেখ করেছেন, হযরত ওমর (রাযি.) বলেন, মিসওয়াকের ফজিলতের ব্যাপারে সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত। এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি। সকলের নিকট মিসওয়াক সহকারে নামাজ আদায় করা মিসওয়াকবিহীন নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এছাড়া মিসওয়াকের উপকারিতাও অনেক বেশি। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহ.) উল্লেখ করেছেন, মিসওয়াকের উপকারিতা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করার দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় আর সর্বেŸাচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নছিব হয়। (ফাতাওযে শামী-১/২৩৯)

মেসওয়াক ব্যবহারে শারীরিক উপকারীতা

গলগন্ড রোগে মেসওয়াকের গুরুত্ব : টনসিলের রোগীদের নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহার করানো হলে তারা খুব শীঘ্র রোগমুক্ত হয়ে যায়। গলগন্ড রোগ কষ্ট পাওয়া একজন রোগীকে তুঁতের শরবত পান করতে এবং পিলুর (এক প্রকার গাছের ডাক) তাজা মেসওয়াক ব্যবহার করতে বলা হলো। মেসওয়াক কেটে টুকরো করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে গরগরা করানো হলো। অল্প দিনের মধ্যে রোগী গলগ- রোগ থেকে মুক্তি লাভ করলো।

মেসওয়াক ব্যবহারে দাঁত ও মস্তিষ্ক রোগের উপকার : অপরিচছন্ন, ময়লা এবং পুঁজযুক্ত দাঁত মস্তিষ্ক রোগের কারণ হয়। মানসিক রোগসমূহ যেমন উন্মাদনা, মস্তিষ্ক বিকৃতি এবং অন্যান্য ধ্বংসকর রোগসমূহ এসবের শামিল। এক ভদ্রলোকের স্ত্রীর সস্তিষ্কের সমস্যা ছিলো। জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তার মস্তিষ্কের পর্দার ওপর পূঁজ জমে গেছে এবং রোগিনী র্দীর্ঘদিন থেকে পাইওরিয়া রোগে ভুগছিলো। আর পাইওরিয়াজনিত পুঁজই তার মস্তিষ্ক রোগের কারণ হয়েছে। অনুরুপ পুঁজের প্রতিক্রিয়া অস্থিমজ্জা অথবা পিষ্টুরি গ্ল্যান্ডের জন্যে ধ্বংসকর হয়।
স্থায়ী সর্দি রোগে মেসওয়াকের গুরুত্ব : যেসব রোগীর সর্দি লেগেই থাকে, মেসওয়াক ব্যবহার করলে তাদের সর্দি বেরিয়ে যায় এবং মগজ হালকা হয়। একজন প্যাথলজিষ্ট বলেছেন, আমার অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, স্থায়ী সর্দির রোগীর জন্য মেসওয়াক বিশেষ ফলপ্রসু। মেসওয়াক ব্যবহার করা হলে এ রকম রোগীদের নাক এবং গলার অপারেশনের প্রয়োজন কমে যায়।

মেসওয়াক ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ: ইঞ্জিনিয়ার নকশাবন্দী তাঁর ওয়াজে বলেছেন, ‘আমেরিকান ওয়াশিংটনে একজন ডাক্তার তাকে বলেছেন রাতে ঘুমানোর আগে মেসওয়াক করে ঘুমানোর জন্য। তখন উনি ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার তাকে বললেন, মানুষ যা কিছু খায় সেসব মুখের ভিতর প্লাজমা হয়ে থাকে। সে প্লাজমা শুধু কুলি করলে পরিষ্কার হয় না। সাধারণত রাতে ঘুমানের মধ্যে দাঁতের খারাপের যত অসুখ দেখা যায়।
কারণ মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন মুখ বন্ধ থাকে। তখন মুখের নড়াচড়া বন্ধ থাকে। দিনের বেলা মানুষ কথা বলে খাবার খায় পানি পান করে। রাতে মুখ বন্ধ থাকে। এর ফলে প্লাজমা মুখের ভিতর কাজ করার সুযোগ পায়। এতে দাঁতের অসুখ অধিকাংশ রাতে দেখা যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেসওয়াক করলে দাঁতের জন্য ভাল।

পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্কের উপকারিতা : হযরত আলী (রা) বলেছেন, মেসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব ও সতেজ হয়। প্রকৃতপক্ষে মেসওয়াকের মধ্যে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে। পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করলে দাঁতের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের যে অভাব থাকে তা পূরণ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতা প্রমাণিত হয়েছে, পিলুর মেসওয়াক রোগ জীবাণুর উৎপাদন বন্ধ করে ও দাঁতকে রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। পিলুর মেসওয়াক ব্যবহার করার সময় আঁশ কাটতে হবে। তাহলে নতুন আঁশ ব্যবহ্নত হবে তেতো উৎপাদন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মেসওয়াক ব্যবহারে সামাজিক উপকারিতা : মানুষ যখন কোনো সামাজিক মজলিসে কথা বলে বা কোনো যানবাহনের যাত্রী হয়, তখন তার মুখে যদি দুর্গন্ধ থাকে তাহলে তা অন্যদের জন্যে বেশ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত জাহাজে আলোহী হলে তার শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে দুর্গন্ধ অনুভূত হয়। এরকম সহযাত্রীর যদি হাঁচি শুরু হয়ে যায়, তাহলে তো পুরো পরিবেশই দুর্গন্ধ অনুভূত হয়।
সর্বাগ্রে দাঁতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ দাঁতই অধিকাংশ দুর্গন্ধের কারণ হয়ে থাকে। নয় তো পাকস্থলীর চিকিৎসা সম্ভব।

ব্রাশ ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিবরণ : জীবাণু বিশেষজ্ঞদের বছরের পর বছর গবেষণায় একথা পূর্ণতার স্তরে উপনীত হয়েছে যে, যে ব্রাশ একবার ব্যবহার করা হয়, পুনরায় তা ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। কেননা, একবার ব্যবহারের পরই তাতে রোগ-জীবাণুর স্তর জমে যায়। তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেললেও ক্রিয়াশীল থাকে। তাছাড়া ব্রাশ ব্যহার করা হলে দাঁতের ওপরের চমকদার সাদা স্তর নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দাঁতের মাঝে ফাঁক তৈরী হয় এবং ধীরে ধীরে দাঁত মাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যায়। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা আটকে গিয়ে মাড়ি এবং দাঁতের ক্ষতির কারণ হয়।

দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হয়?


দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:

১. আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণীর মর্মার্থ “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্‌রই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্‌, আয়াত: ১৮] দোয়ার শর্তগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন দোয়া কবুল হবে না, কোন আমল গৃহীত হবে না। অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মৃতব্যক্তিদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে। তাদের ধারণা যেহেতু তারা পাপী ও গুনাহগার, আল্লাহ্‌র কাছে তাদের কোন মর্যাদা নেই; তাই এসব নেককার লোকেরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এবং তাদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মধ্যস্থতা করবে। এ বিশ্বাসের কারণে তারা এদের মধ্যস্থতা ধরে এবং আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এ মৃতব্যক্তিদেরকে ডাকে। অথচ আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন আপনি বলে দিন) নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। দোয়াকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি ডাকে সাড়া দিই।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

২. শরিয়ত অনুমোদিত কোন একটি মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে ওসিলা দেয়া।

৩. দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) আরও এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।”

৪. দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না হওয়া; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিসে এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে।”

৫. আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া কর।”[সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (২৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্‌ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।

৬. দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে (২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

৭. খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্‌ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] এ কারণে যে ব্যক্তির পানাহার ও পরিধেয় হারাম সে ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদূরপরাহত বিবেচনা করেছেন। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?[সহিহ মুসলিম, (১০১৫)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, হারাম ভক্ষণ করা দোয়ার শক্তিকে নষ্ট করে দেয় ও দুর্বল করে দেয়।

৮. দোয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন না করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়ার মধ্যে সীমালঙ্ঘন করাটা অপছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫]

৯. ফরয আমল বাদ দিয়ে দোয়াতে মশগুল না হওয়া। যেমন, ফরয নামাযের ওয়াক্তে ফরয নামায বাদ দিয়ে দোয়া করা কিংবা দোয়া করতে গিয়ে মাতাপিতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। খুব সম্ভব বিশিষ্ট ইবাদতগুজার জুরাইজ (রহঃ) এর কাহিনী থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ জুরাইজ (রহঃ) তার মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। ফলে মা তাকে বদদোয়া করেন; এতে করে জুরাইজ (রহঃ) আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন: এতে প্রমাণ রয়েছে যে, জুরাইজের জন্য সঠিক ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া। কেননা তিনি নফল নামায আদায় করছিলেন। নফল নামায চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে- নফল কাজ; ফরয নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব এবং মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম....”[শারহু সহিহু মুসলিম (১৬/৮২)]

৩ টি শিক্ষনীয় হাদিস

*আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি হেবা (দান, উপহার) করে তা ফেরত নেয় সে এমন কুকুরের সমতুল্য যে বমি করে তা পুনরায় গলাধঃকরণ করে।” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, বুখারী: ২৫৮৯, মুসলিম: ১৬২২]
*আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ বলেন: কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা ও চুক্তি করে তা ভঙ্গ করেছে, যে ব্যক্তি মুক্ত-স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে এবং যে ব্যক্তি কাউকে মজুর নিয়োগ করে পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে কিন্তু তাকে মজুরী প্রদান করেনি।” [বুখারী: ২২২৭]
*আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এমন দু’টি বাক্য আছে যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, ওজন-দণ্ডের পরিমাপে খুবই ভারী, দয়াময় আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয়। (বাক্য দু’টি হলো-) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম’। (অর্থ: মহা পবিত্র আল্লাহ্, তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা। মহা পবিত্র আল্লাহ্, তিনি মহামহিম।)” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, বুখারী: ৬৪০৬, মুসলিম: ২৬৯৪]

আবু হোরায়রা (রাঃ) এর একটি শিক্ষণীয় গল্প

একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ?" হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, আমার মা
আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, "কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ?" হযরত আবু হোরায়রা ( রাঃ ) বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার
রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আরআপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না
হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবার ছাড়বি।

আমি বললাম, ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলুল্লাহ্ ﷺ কে ছাড়তে পারবো না। তখন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই।

রাসুল (সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? হযরত আবু হোরায়রা( রাঃ ) বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী ( সাঃ)। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, "হে আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।”

রাসুল (সাঃ) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন হযরত আবু হোরায়রা ( রাঃ ) বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও।আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইতেছি এই কারণে যে, আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা ( রাঃ ) দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন হযরত আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি।

মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর
দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই # পবিত্র_কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।

জাপানি নওমুসলিম নাকাতার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

জাপানি নওমুসলিম নারী 'কাওয়ারায়ি নাকাতা' কখনও স্রস্টা সম্পর্কে তেমন মনোযোগ দিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেননি। এমন ভাবনার দরকার ছিল বলেও ভাবেননি কখনও। তিনি সত্যকে পেয়েছিলেন অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর। নাকাতা কখনও ভাবেননি যে সত্যকে এভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'আমার জীবনের সব কিছুই চলছিল ভালভাবে। আমি সৌভাগ্য অনুভব করতাম। কখনও আল্লাহর অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। কিন্তু হঠাৎ আবিস্কার করি যে, আমার জীবন পুনরাবৃত্তিতে একঘেয়ে হয়ে আছে ও জীবনের কোনো অর্থ নেই। তখন থেকেই সত্যকে খুঁজতে থাকি। নানা ধর্মের প্রচারকরা আমার বাসায় এসেছেন বেশ কয়েকবার। সে সময় খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য একজন মহিলা নিয়মিত আমার বাসায় আসতেন। তিনি আমাকে বাইবেল শেখাতেন ও আমিও খুব আগ্রহ নিয়ে তা শিখতাম। কিন্তু আমি যার খোঁজ করছিলাম তা পেলাম না।”

নওমুসলিম মিসেস নাকাতা আরো বলেছেন: 'আমি বসবাস করতাম কিয়েটো নামক ঐতিহাসিক শহরে। এই শহরে রয়েছে নানা ধরনের উপাসনালয়। আমাদের বাসভবনের কাছেই ছিল একটি ইবাদতকেন্দ্র বা উপাসনালয়। আমি প্রতিদিন সকালে সেখানে যেতাম ও প্রার্থনা করতাম। তিন মাস ধরে প্রতিদিন এই প্রার্থনা অব্যাহত রেখেছিলাম। সত্যের সন্ধানেই এই প্রার্থনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দোয়ায় মনোযোগ নিবিষ্ট বা কেন্দ্রীভুত করা ছিল বেশ কঠিন। তবে তা ছিল খুবই আনন্দদায়ক। কিন্তু কিছুদিন পরই অনুভব করলাম যে আমার ভেতরের জগত ও বাইরের বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ব্যবধান। তাই আমি হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। অথচ আমি উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে জীবন যাপন করতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমার প্রচেষ্টায় কোনো ফল হয়নি।'



এর কিছুকাল পর নওমুসলিম মিসেস নাকাতা জীবনের গতিপথ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। পড়াশোনা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ফ্রান্সে যান। আর এখানেই ঘটে তার জীবনে যুগান্তকারী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ প্রসঙ্গে নাকাতা বলেছেন:

'ফ্রান্সে পরিচিত হই এক মুসলমানের সঙ্গে। তিনি নিজের ধর্ম ইসলামকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন ও সমস্ত শক্তি আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এ ধর্মের পক্ষে কথা বলতেন। তার ওই দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দেখে আমার নিজের জন্য অনুশোচনা হত। কারণ, আমি দীর্ঘ বহু বছর ধরে আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। আর এ জন্য অনেক গবেষণা ও পড়াশুনার পর যখন হতাশায় ডুবে ছিলাম তখন দেখলাম যে এই মুসলমান ইসলামকে ভালবাসতেন গভীরভাবে ও এর ছায়াতলে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছেন। তাই আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে গবেষণার সিদ্ধান্ত নিলাম যাতে এ ধর্মের অনুসারীদের এত গভীর আত্মিক প্রশান্তির উৎস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হই। সে সময় পর্যন্ত অনেক ধর্ম আমাকে আকৃষ্ট করলেও ইসলামের প্রতি একবারও আকৃষ্ট হইনি।'

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা ফরাসি ভাষায় অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহ করেন ও তা পড়তে থাকেন। এ মহাগ্রন্থ পড়ার সময় তিনি অনুভব করেন যে, এ আসমানি বই পড়ার জন্য কারো সাহায্য নেয়া জরুরি। ফলে হঠাৎ বিদ্যুতের মতই নাকাতার মাথায় এক ঝলকের মধ্যে ভেসে উঠল সেই মুসলিম মহিলার মুখখানি। ফলে তিনি মুসলমানদের ইবাদত-কেন্দ্র তথা মসজিদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নাকাতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

'অবশেষে একদিন মসজিদে গেলাম। মসজিদের পরিবেশ ছিল আমার জন্য এক অচেনা ও অপরিচিত জগত। কিন্তু বিস্ময়কর এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। মসজিদটি ছিল এক বিশেষ আধ্যাত্মিক সুরভিতে ভরপুর। নীরবতা সেই পরিবেশকে করেছিল আরো প্রাণস্পর্শী ও মধুর। প্রাণজুড়ানো সেই আধ্যাত্মিক পরিবেশের আকর্ষণ আমাকে টেনে নিল মসজিদের ভেতরে। ধীরে ধীরে পা ফেলছিলাম। আমার কানে ভেসে আসছিল এক বিশেষ আহ্বান বা সুসংবাদ। তাতে বলা হল যে তুমি শিগগিরই সত্যকে খুঁজে পাবে।'

এ সময় মসজিদের বারান্দায় বই-পুস্তকের একটি ছোট্ট দোকান দেখলাম। কাছে গিয়ে বিক্রেতাকে বললাম:

'আমি এমন একজনকে খুঁজছি যে ইসলামকে আমার কাছে পরিচিত করবে। সে আমাকে মসজিদের লাইব্রেরিতে নিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে দেখলাম যে একদল মুসলিম মহিলার জন্য ধর্ম বিষয়ক ক্লাস চলছিল এবং তা মাত্র কিছুক্ষণ আগে শেষ হল। সেই প্রথম আমি হিজাব পরিহিতা কোনো মুসলিম নারীকে দেখেছিলাম। তারা আমার প্রস্তাব শুনে খুব খুশি হয়ে আমাকে স্বাগত জানালেন। তারা ছিলেন সবাই সক্রিয়, প্রাণোচ্ছ্বল ও প্রফুল্ল। তাদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী প্যারিসে যে কয়েকটি বৈঠক হতো তাতে উপস্থিত হতাম। মুসলমানদের এইসব বৈঠকে আমার উপস্থিতি ধীরে ধীরে আমার মানসিকতাকে বদলে দেয় এবং বেশ কিছু বই পড়ার পর ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে যায়। আমি বুঝতে পারলাম যে ইসলামে কোনো কিছুই জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয় না। ইসলাম জীবন যাপনের যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথ দেখায়। কোনো কোনো ধর্ম বা মতবাদ সব ধরনের বস্তুগত, জৈবিক বা পার্থিব চাহিদাকে উপেক্ষা করে কেবল পারলৌকিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু ইসলাম আত্মা ও শরীরের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে বলে। অর্থাৎ ইসলাম আত্মিক ও শারীরিক উভয় চাহিদাকেই গুরুত্ব দেয়।’

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণার পর এ ধর্ম সম্পের্ক নানা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ইসলাম অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষের মূল্য নির্ভর করে তার ঈমান ও সৎ কর্ম সম্পাদনের ওপর। যখন খ্রিস্ট ধর্মের পেছনে ছুটতাম তখন এ ধর্মের পক্ষ থেকে বলা হত যে আমাদের পাপগুলো জন্মগত। অথচ এ কথা আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে মোটেই যৌক্তিক বা বোধগম্য নয়। কিন্তু ইসলাম বলে সব মানুষই জন্মগতভাবে পবিত্র ও নিরপরাধ; আর পরবর্তীকালে প্রত্যেক মানুষ নিজেই তার পাপের জন্য দায়ী। আর এ কথা খুবই যৌক্তিক। ইসলাম খুবই সহজ ও স্বচ্ছ ধর্ম। এ ধর্মে কোনো জটিল তত্ত্ব নেই।’

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা মুসলমানদের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বেশ আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছিলেন। যেসব মুসলিম মহিলা তাকে পথ প্রদর্শন বা গাইড করছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন নাকাতা এবং মুসলমানদের প্রথা ও রীতিগুলো রপ্ত করে নেন তাদের কাছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

'আমি তাদের সঙ্গে মসজিদে যেতাম ও তাদের চাল-চলন বা গতিবিধি খুব আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করতাম। অনেক সময় তাদের সম্মান দেখানোর জন্য তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নামাজের অঙ্গভঙ্গিগুলো করে যেতাম যদিও নিজেও বুঝতাম না যে নামাজ আদায় করছি। মুসলমানদের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতেও অংশগ্রহণ করতে থাকি। যেসব বক্তব্য শুনতাম সেসবকে আমার হৃদয় যেন শুকনো মাটি বা বালির দ্রুত পানি শুষে নেয়ার মতই গ্রহণ করত। এসব বক্তব্য আমাকে দিত আধ্যাত্মিক আনন্দ। ধীরে ধীরে অনুভব করলাম যে বহু বছর ধরে আমি যে সত্যের সন্ধান করছি তা পেয়েছি। অবশ্য এ জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। যতই ইসলাম সম্পর্কে বেশি তথ্য জানছিলাম ততই এ ধর্মকে গ্রহণের ইচ্ছাও আমার মধ্যে জোরদার হচ্ছিল। অবশেষে এই সাক্ষ্য দিলাম যে, আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রাসূল। '

নামাজ মিসেস নাকাতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার মতে নামাজ মানুষের বিশ্বাস বা ঈমানকে সুদৃঢ় করে। মুসলমান হওয়ার পর প্রথম নামাজ আদায়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে নাকাতা বলেছেন:

'যখন প্রথমবার সিজদার উদ্দেশ্যে কপাল মাটিতে রাখলাম এক ও দয়ালু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে তখন আমার মধ্যে দেখা দিয়েছিল অসাধারণ অনুভূতি এবং নিজের মাথা জমিন থেকে ওঠাতে পারছিলাম না। যখনই সিজদায় যেতাম তখনই আল্লাহর অস্তিত্বকে ও ঈমান বা বিশ্বাসের অর্থকে বেশি মাত্রায় অনুভব করতাম। আর এটা ছিল এক সুন্দর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা যা আমি অন্য ধর্মগুলোর মধ্যে পাইনি।'

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা কিছুকাল পর মিশরে যান আরবী ভাষা ও ইসলামী শিক্ষা আরো ভালোভাবে রপ্ত করার জন্য। আরবী ভাষা ভালোভাবে বোঝার পর নাকাতা কুরআনের বাণীর অর্থগুলো আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে থাকেন: তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আরবী ভাষা মোটামুটি বোঝার পর কুরআনের সৌন্দর্য আমাকে বিমুগ্ধ করছে। কুরআনের বিষয়বস্তুগুলো ছাড়াও এর সুরও অশেষ সৌন্দর্যে ভরপুর। কুরআন বার বার পড়লেও ক্লান্ত হওয়া তো দূরের কথা বরং আমার অন্তর যেন সৌভাগ্যের সাগরে অবগাহন করতে থাকে। মহান আল্লাহ আমাকে এই সৌভাগ্য নসিব করেছেন বলে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ এবং আমি ইসলামকে আমার দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরছি। যে সৌভাগ্য কেবল এক আল্লাহকে চেনা ও জানার মাধ্যমে পাওয়া যায় সে সৌভাগ্য তারাও অর্জন করুক- এই আমার প্রার্থনা। আমি সুনিশ্চিত যে আল্লাহর ওপর ভরসার সুবাদে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।'

ইসলামবিদ্বেষী ডাচ এমপির ইসলাম ধর্মগ্রহণ

সম্প্রতি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছেন কট্টর ডানপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী ডাচ পার্লামেন্টের সাবেক এমপি জোরাম ভ্যান ক্লাভেরেন (৩৯)। ইসলামবিরোধী বই লেখার জন্য পড়াশোনা করতে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ভাঙে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডাচ রেডিও’র বরাতে দ্য পলিটিকো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জোরাম ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করলেও গত সোমবার তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেন।

ভ্যান ক্লাভেরেন দেশটির চরম ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টির (পিভিভি) এমপি হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টে দায়িত্ব পালন করেন। নিকট অতীতে বিভিন্ন সময়ে তিনি ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন।


হল্যান্ডের এনআরসি সংবাদপত্র জানাচ্ছে, জোরাম একবার বলেছিলেন, ‘ইসলাম মানেই হলো মিথ্যাচার’ এবং ‘কুরআন একটি বিষাক্ত গ্রন্থ।’

আগের এমন বক্তব্যের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে কিনা সংবাদপত্রটির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে, জোরাম বলেন, ‘ওই বক্তব্য খুবই ভুল ছিল। আমাদের দলের (পিভিভি) নীতিই ছিল যা কিছু মন্দ তার সাথে কোনো না কোনোভাবে ইসলামকে জড়িয়ে ফেলা।’

জোরাম তার রাজনৈতিক দলের আরেক সাবেক এমপি আর্নড ভ্যান ডোর্নের পদাঙ্ক অনুসরণ করেণ। কয়েক মাস আগে ডোর্নও ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন।

জোরামের ইসলাম গ্রহণের পর ডোর্ন টুইট করে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি কখনো ভাবতেও পারিনি পিভিভি ধর্মান্তরিতদের একটি সেন্টারে পরিণত হবে!’

হযরত আলী (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত আলী (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর চাচাত ভাই ও জামাতা এবং চতুর্থ খলীফা হচ্ছেন হযরত আলী (রাঃ)। তার পিতা আবু তালিব ছিলেন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিমের পুত্র । আলী (রাঃ) এর ডাক নাম আবু তুরাব, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর নিকট হইতে প্রাপ্ত । তিনি হযরত (সঃ) এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) কে বিবাহ করেন । তাঁহার মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ ইবন হাশিম । ইসলাম গ্রহণের সময় তাঁহার বয়স কত ছিল তাহা সঠিকরূপে নির্ধারন করা যায় না ।

হযরত খাদীজা (রাঃ) এর পরে তিনি প্রথম মুসলিম; আবুযার, আল মিকদাদ, আবু সাইদ আল খুদরী (রাঃ) প্রমুখের মতে বুরায়দা ইবনিল হুসায়ব (রাঃ) অথবা তিনি দ্বিতীয় মুসলিম । হযরত (সঃ) যে দশজনকে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করিবেন বলিয়া স্পষ্টভাবে সুসংবাদ প্রদান করেন, তিনি তাহাদের অন্যতম । উমার (রাঃ) কর্তৃক তাঁহার মৃত্যুশয্যায় মনোনীত ছয়জন নির্বাচকেরও তিনি ছিলেন অন্যতম ।

এক নজরে হযরত আলি (রাঃ)

পূর্ণ নাম : আলী ইবনে আবু তালিব

জন্মঃ অক্টোবর ২৩, ৫৯৮// মার্চ ১৭, ৫৯৯ // মার্চ ১৭, ৬০০ (একেক জায়গায় একেক রকমের দেওয়া, তাই তিনটাই উল্লেখ করলাম)

পিতাঃ আবু তালিব

মাতাঃ ফাতিমা বিনতে আসাদ

স্ত্রীঃ হযরত ফাতিমা (রাঃ)

সন্তানঃ ইমাম হাসান , ইমাম হোসাইন, জয়নাব

রাজত্বকাল : ৬৫৬–৬৬১

পূর্বসূরীঃ হযরত ওসমান (রাঃ)

উত্তরসূরীঃ ইমাম হাসান (রাঃ)

মৃত্যুঃ জানুয়ারি ২৮, ৬৬১

প্রাথমিক জীবন

হযরত আলী (রাঃ) এর বয়ছ ছিল তখন প্রায় বাইশ বছর । আল্লাহ্‌ তা’আলার নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ইয়াছরিবে হিজরত করার শেষ রাতে শত্রুদের চোখের সামনে দিয়া নিরাপদে গৃহ ত্যাগ করিলেন । যাবার সময় হযরত আলী (রাঃ) কে আমানতের গচ্ছিত সম্পদ প্রদানের দায়িত্ব দিয়া গেলেন । প্রত্যুষে শত্রুপক্ষ দেখিল, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর বিছানায় শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) নিশ্চিন্ত মনে শুইয়া আছে ।

হিজরাতের দ্বিতীয় বর্ষে হযরত (সঃ) এর প্রিয় কন্যা ফাতেমা (রাঃ) এর সহিত আলী (রাঃ) এর বিবাহ সম্পন্ন হয় । বিবাহের সময় হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বয়স ছিল ১৪ বছর এবং হযরত আলী (রাঃ) এর বয়স ছিল ২২ বছর । (তাবাকাতে ইবনে সা’দ, এসাবা, খোলাফায়ে রাশেদিন) । তিনি বদর, উহুদ ও খন্দক(পরিখা) এর যুদ্ধে যোগদান এবং তাবূক ছাড়া অন্য সমস্ত অভিযানে হযরত (সঃ) এর সঙ্গে গমন করেন । তাবূক অভিযানের সময় হযরত (সঃ) এর অনুপস্থিতিতে তাঁহার পরিবার-বর্গের তত্ত্বাবধান এবং মদিনার শাসনভার তাঁহার উপর ন্যস্ত ছিল । উহুদের যুদ্ধে তিনি ষোলটি আঘাতপ্রাপ্ত হন; তাঁহার প্রচণ্ড আক্রমণে খায়বারের দুর্জয় কা’মূস দূর্গের পতন ঘটে ।

হযরত (সঃ) এর উপর নবম সূরা (আল বারা’আঃ বা আত-তাওবা) অবতীর্ন হওয়ার অল্প পরে উহার প্রথম তেরটি আয়াত হাজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করার জন্য হযরত (সঃ) তাহাকে প্রেরণ করেন । দশম হিজরি, মুতাবিক ৬৩১-৩২ সনে আলী (রাঃ) ইয়ামানে এ প্রচার সফরে গমন করেন । ইহারই ফলে হামাদানীরা ইসলাম গ্রহণ করে । এ বছরই রাসুল (সঃ) হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কাশরীফ গমন করেন ; হজ্জ হতে ফেরার পথে তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর হাত ধরিয়া ফরমাইলেন “আমি যাহার মওলা হই, ইনিও অর্থাৎ হযরত আলী (রাঃ)ও তাঁহার মওলা ।”

এলেমের দরজা

রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কোলে যিনি লালিত-পালিত হইয়াছিলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর মুখে যিনি কোরআন পাক শ্রবণ করিয়াছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছেই যিনি কুরআন শিক্ষা লাভ করিয়াছেন এবং বুঝিয়াছেন, তাঁহার এলম সম্পর্কে আর কাহার এলেমের তুলনা করা যাইতে পারে ? রাসুলুল্লাহ (সঃ) ফরমাইয়াছেনঃ “আমি এলেমের শহর এবং আলী উহার দরজা ।“ এই কাড়নের সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) অন্যান্য সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন ।

খলিফা নির্বাচন

হযরত উসমানের (রাঃ) শহীদ হওয়ার পর মদিনাতে একটি সর্বব্যাপী বিশৃংখলা এবং নৈরাজ্য বিরাজ করছিল।পাঁচ দিন যাবত রাজনৈতিক ডামাডোলের পর, মিসরীয় বিদ্রোহীদের নেতা, ইবনে সাবা, হযরত আলী (রাঃ)-এর পক্ষে এই বলে রায় দেয় যে, তিনিই একমাত্র খলিফা হওয়ার অধিকারী কারণ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যার সপক্ষে একটি ওসিয়্যত করেছিলেন।২৩শে জুন ৬৫৬ খ্রীস্টাব্দে, হযরত উসমানের (রাঃ) মৃত্যুর ছয় দিন পর, হযরত আলী (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত হন এবং জনগণ তাঁর হাতে একে একে বয়'আত গ্রহণ করেন।।

হযরত আলি (রাঃ) এর শাসনকাল

খেলাফতের নির্বাচনের পরপরই তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী, মদীনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন, যা ছিল অধিকতর কেন্দ্রীয় একটি স্থান।তাঁর নির্বাচনের পরপরই তিনি জনগণের বিশেষ করে মহানবী (সাঃ) এর প্রভাবশালী সাহাবী যেমন হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর উত্থাপিত 'হযরত উসমান(রাঃ)-এর হত্যাকারীদের যথাশীঘ্র শাস্তির জনপ্রিয় দাবীর সম্মুখিন হন। হযরত আলী(রাঃ) ঘোষণা করেন যে, তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রে শান্তি- শৃংখলা পুনঃস্থাপন করা এবং কেবল তারপরই তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করতে পারবেন। কিন্তু হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ), হযরত আলী(রাঃ) এর এই সিদ্ধান্তে রাজী হননি; তারা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ), যিনি প্রকৃত অবস্থা অবগত ছিলেন না, তিনিও হযরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর সাথে যোগ দেন। তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে এক সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন।হযরত আলী (রাঃ) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়াতে যারপরনাই চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, তাঁর এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়, যদিও, হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবায়ের (রাঃ) যুদ্ধের পূর্বেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং অন্য কোন শত্রুর দ্বারা নিহত হন।

হযরত আয়েশার (রাঃ) সৈন্যরা পরাজিত হয় কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তাঁর নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তাঁর ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রাঃ) এর রক্ষাবেষ্টনীতে তাঁকে মদীনায় প্রেরণ করেন। এটি 'উটের যুদ্ধ' নামে খ্যাত; কারণ হযরত আয়েশা(রাঃ) যুদ্ধের সময় উটের উপর সওয়ারী ছিলেন। পরবর্তীতে, হযরত আয়েশা (রাঃ) জীবনভর হযরত আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্তা ছিলেন।উটের যুদ্ধের পর হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কে, যিনি তখনও তাঁর হাতে বয়'আত গ্রহণ করেননি, ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর নিকট আত্বসমর্পণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এই অজুহাতে তাঁর নিকট নিজেকে সমর্পণ করেনি যে, হযরত উসমান(রাঃ) যিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত ছিলেন, তার রক্তের প্রতিশোধ প্রথমে নিতে হবে।

আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ), আমর বিন আস (রাঃ) এর সহায়তায়, সৈন্য প্রস্তত করা শুরু করে। হযরত আলী (রাঃ), অন্য কোন বিকল্প না পেয়ে, মুয়াবিয়ার সাথে লড়ার জন্য সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হতে হয়। ৫৬৭ খ্রীস্টাব্দের জুলাই এ দুই সৈন্য বাহিনী 'সিফফিনে' যুদ্ধে উপনীত হয়। দু'পক্ষেই ব্যাপক হতাহত হয়; কিন্তু যুদ্ধ এই মতৈক্যে শেষ হয় যে, বিষয়টি একটি মধ্যস্থতা কমিটিতে নিষ্পত্তি হবে। এই কমিটিতে হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষে আবু মুসা আল আসরি (রাঃ) এবং আমীর মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর বিন আস (রাঃ) প্রতিনিধিত্ব করে। দুর্ভাগ্যবশতঃ এই মধ্যস্থতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, কারণ আমর বিন আস (রাঃ) আবু মুসা আল আসরি (রাঃ)-এর সাথে গ্রহীত সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়াঁয়।

একটি বড় দল, যারা মধ্যস্থতার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিল, হযরত আলী (রাঃ) থেকে সরে গিয়ে তাদের জন্য এক নতুন আমীর নির্বাচিত করে নেয়।এই দলটিকে 'খারেজী' অর্থাৎ'ব্যতান্ত্রিক' বলা হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম, হযরত আলী (রাঃ) তাদেরকে বুঝিয়ে রাজি করেনোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তা নিস্ফল হয়; যা ভয়াবহ যুদ্ধে মোড় নিলে প্রচুর খারেজী নিহত হয়।এই বিপর্যস্ত পরাজয়ের পর খারেজীরা হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এবং আমর বিন আস (রাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তী দু'জন হত্যা প্রচেষ্টা হতে বেঁচে যেতে সক্ষম হলেও হযরত আলী (রাঃ) ফযরের নামাজের জন্য মসজিদে যাবার সময় আক্রমণকারীর দ্বারা গুরুতর আহত হন। দু'দিন পর এই অমিত সাহসী এবং ধর্মপ্রাণ খলীফা ৪০ হিজরীর ২০ রমযানে পরলোক গমন করেন। এই সময়ে তাহার ৩৭ বত্সর বয়সী বড় ছেলে আল হাসানকে (রাঃ) ইমামতি হস্তান্তর করেন৷নিঃসন্দেহে, হযরত আলী (রাঃ) খেলাফতের পবিত্রতা এবং মর্যাদা রক্ষার খাতিরে তাঁর জীবন কুরবান করেন।তিনিও সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) যাঁদের বেহেস্তের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

মৃত্যুর পূর্বকালীন ঘটনা ও মৃত্যু

মুসলমানরা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কথা বিস্মৃত হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ ও একে অন্যকে হত্যার নেশায় মেতে ওঠে। ফলে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে উষ্ট্রের যুদ্ধ ও ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিফ্ফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গৃহযুদ্ধে রাসুল (সা.) কর্তৃক প্রত্যয়িত তালহা, যুবাইর ও অনেক বয়োবৃদ্ধ সাহাবাসহ লক্ষাধিক মুসলমান নিহত হন। কার্যত ইসলামী খেলাফত অত্যন্ত দ্রুত অন্তিম সময়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

সিফ্ফিনের যুদ্ধের পর 'দুমাতুল জানদালে' ইসলামী খেলাফতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বৈঠককালে ১২ হাজার সৈন্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী খলিফার পক্ষ ত্যাগ করে। ইসলামে 'খারেজি' নামে উগ্রপন্থী সম্প্রদায়ের উদ্ভব তাদের থেকেই।

খারেজি সম্প্রদায় মুসলিম মিল্লাতের জাতীয় শত্রু হিসেবে হজরত আলী, মুয়াবিয়া ও আমর ইবনুল আস (রা.)কে চিহ্নিত করে তাঁদের একই দিন ও অভিন্ন সময়ে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আসন্ন মাহে রমজানের ১৫ তারিখ ফজরের নামাজের সময় আক্রমণ পরিচালনার সময় নির্ধারিত হয়। আততায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে বয়োবৃদ্ধ তিন সাহাবির ওপর হামলা করে।

সৌভাগ্যক্রমে আমর ইবনুল আস (রা.) অসুস্থতার কারণে সেদিন মসজিদেই যাননি। আর মুয়াবিয়া (রা.) আততায়ীর আক্রমণে সামান্য আহত হলেও বেঁচে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হজরত আলী (রা.) ৬৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি শাহাদাৎ বরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তাঁর জানাজায় ইমামতি করেন এবং কুফা জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

সরলতা ও আত্দত্যাগের প্রতীক ছিলেন হজরত আলী (রা.)। মুসলিম জাহানের খলিফা হয়েও নিজ হাতে তাঁকে ও ফাতেমা (রা.)কে কাজ করতে হতো। দাস-দাসী কোনো দিনই তাঁর ঘরে ছিল না। ইতিহাসবিদ হিট্টি বলেছেন, 'আলী (রা.) ছিলেন যুদ্ধে সাহসী, পরামর্শদানে বিজ্ঞ, বক্তৃতায় স্বচ্ছ, সাবলীল, বন্ধুদের প্রতি অকপট এবং শত্রুদের প্রতি দয়াশীল। আলী (রা.) মাহাত্দ্য ও শৌর্য-বীর্যের নিদর্শনস্বরূপ ছিলেন।'

মাসুদী বলেন, 'আল্লাহ তাঁহাকে যে গুণাবলি দ্বারা ভূষিত করেন, তাঁহার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী (একমাত্র রাসুলে কারিম ছাড়া) অন্য কারো মধ্যে আমরা খুঁজিয়া পাইব না।' বস্তুত হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের মাধ্যমে খোলাফায়ে রাশেদিনের সমাপ্তি ঘটে।

অভিভাবকের দায়িত্বে আবু তালিব।

আবদুল মুত্তালিব তাঁর মৃত্যুশয্যায় শিশু মুহাম্মদ (সঃ)-এর অভিভাবকত্বের ভার দিলেন আবু তালিবের ওপর । কেননা আবু আবু তালিব ভাতিজাকে পুত্রের অধিক স্নেহ করতেন । কারণ মুহাম্মদ (সঃ)-এর বুদ্ধিমত্তা, বিবেক, বিবেচনা, বদান্যতা, উদার হৃদয় ও মহত্ত্ব সকলকে অতিক্রম করেছিল । এখন থেকে আবু তালিবই হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর পিতা ও মাতা স্বরূপ । হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর জীবনে একটা করুণ ইতিহাস যে, আবু তালিব জীবিত অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেননি । কিন্তু সারা জীবন তিনি মুহাম্মদ (সঃ)-কে ছায়ার মতো রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন । একদিনের জন্যও তাদের দু'জনের মধ্যে সম্পর্কের কোনরূপ তিক্ততা দেখা দেয়নি । শুধু আবু তালিব বলে নয়, অন্য যে কোন ধর্মের, এবং যে কোন লোকের সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সম্পর্ক কোনদিনের জন্যই তিক্ত হতো না, শুধু মাত্র কোনরূপ ইসলাম বিদ্বেষী কাজ এবং অসৎ আচরণ ছাড়া । অনেকেরই ধারণা ছিল যে, ইসলাম গ্রহণ না করাতে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তার প্রতি বিরূপ হয়ে উঠতেন । আসলে কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারণা । যে মানুষের মধ্যে তিনি মনুষ্যত্বের বিকাশ লক্ষ্য করতেন, তাঁকে তিনি সবসময়ই অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন, এবং অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতেন । তাই আবু তালিব যদিও একজন অমুসলিম ছিলেন, তবুও তাঁদের দু'জনের সম্পর্কে এতোটুকুও মলিনতা আসেনি কখনো ।

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্পূর্ণ জীবনী



আললাহুম্মা সাললিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাললাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আললাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোনেরা, আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে হাজির হয়েছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জিবনী নিয়ে । ভুল ট্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করা হল।

(হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্পূর্ণ জীবনী)

**জন্ম**

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারনা মোতাবেক, উনার জন্ম ৫৭০ খৃস্টাব্দে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সনই ব্যবহার করেছেন। তবে উনার প্রকৃত জন্মতারিখ বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাছাড়া মুহাম্মদ(সা.)নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি. এজন্যই এ নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি জন্মমাস নিয়েও ব্যপক মতবিরোধ পাওয়া যায় । [৩] যেমন, এক বর্ণনা মতে, উনার জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২ শে এপ্রিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।

**শৈশব ও কৈশোর কাল**

তত্কালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন। এই রীতি অনুসারে মোহাম্মদকেও হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এই শিশুকে ঘরে আনার পর দেখা যায় হালিমার সচ্ছলতা ফিরে আসে এবং তারা শিশুপুত্রকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন। তখনকার একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য – শিশু মোহাম্মদ কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা শিশু মোহাম্মদকে আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এর পরপরই মক্কায় মহামারী দেখা দেয় এবং শিশু মুহাম্মাদকে হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন শিশুটিকে ফিরে পেতে। এতে তার আশা পূর্ণ হল। ইসলামী বিশ্বাসমতে এর কয়েকদিন পরই একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে – একদিন শিশু নবীর বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে সিনা চাকের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।

এই ঘটনার পরই হালিমা মুহাম্মাদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর জিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। আমিনা ছেলে, শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌঁছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মোত্তালেব শিশু মুহাম্মাদকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন। এর পর থেকে দাদাই মুহাম্মাদের দেখাশোনা করতে থাকেন। মোহাম্মদের বয়স যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন তখন তার দাদাও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে মোহাম্মদের দায়িত্ব দিয়ে যান।

আবু তালিব ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন। মুহাম্মাদের বয়স যখন ১২ ব্ছর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস সামে এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফুজ্জারের যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন নবীর বয়স ১৫ বছর। এই যুদ্ধে তিনি স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের নির্মমতায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন। কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিলনা। সে সময় থেকেই তিনি কিছু একটি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন।

**নবুয়ত-পূর্ব জীবন**

আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা, খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মাদ এতে যোগদান করেন এবং এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় তরুণ বয়সে মুহাম্মাদের তেমন কোন পেশা ছিলনা। তবে তিনি বকরি চরাতেন বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। সাধারণত তিনি যে বকরিগুলো চরাতেন সেগুলো ছিল বনি সা’দ গোত্রের। কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তির বকরিও চরাতেন। এরপর তিনি ব্যবসায় শুরু করেন। মুহাম্মাদ অল্প সময়ের মধ্যেই একাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। এতই খ্যাতি তিনি লাভ করেন যে তার উপাধি হয়ে যায় আল আমিন এবং আল সাদিক যেগুলোর বাংলা অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে বিশ্বস্ত এবং সত্যবাদী। ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া, বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে বেশ কয়েকবার সফর করেন। মুহাম্মাদের সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই তাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান। মুহাম্মাদ এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং খাদীজার পণ্য নিয়ে সিরিয়ার অন্তর্গত বসরা পর্যন্ত যান।

খাদীজা মাইছারার মুখে মুহাম্মাদের সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভূয়সী প্রশংশা শুনে অভিভূত হন। এছাড়া ব্যবসায়ের সফলতা দেখে তিনি তার যোগ্যতা সম্বন্ধেও অবহিত হন। এক পর্যায়ে তিনি মুহাম্মাদকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে মুহাম্মাদ বলেন যে তিনি তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন। মুহাম্মাদ তাঁর চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় খাদীজার বয়স ছিল ৪০ আর মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫। খাদীজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি। খাদীজার গর্ভে মুহাম্মাদের ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসেম, যয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম’, ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। ছেলে সন্তান দুজনই শৈশবে মারা যায়। মেয়েদের মধ্যে সবাই ইসলামী যুগ পায় এবং ইসলাম গ্রহণ করে এবং একমাত্র ফাতিমা ব্যতিত সবাই নবীর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করে।

মুহাম্মাদের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা’বা গৃহের পূনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়। এভাবে পুনঃনির্মানের সময় যখন হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখনই বিপত্তি দেখা দেয়। মূলত কোন গোত্রের লোক এই কাজটি করবে তা নিয়েই ছিল কোন্দল। নির্মাণকাজ সব গোত্রের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ স্থাপন ছিল একজনের কাজ। কে স্থাপন করবে এ নিয়ে বিবাদ শুরু হয় এবং চার-পাঁচ দিন যাবৎ এ বিবাদ অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে এটি এমনই মারাত্মক রূপ ধারণ করে যে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি সমাধান নির্ধারণ করে যে পরদিন প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে প্রথম প্রবেশ করবে তার সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নেবে। পরদিন মুহাম্মাদ সবার প্রথমে কাবায় প্রবেশ করেন। এতে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয় এবং তাকে বিচারক হিসেবে মেনে নেয়। আর তার প্রতি সবার সুগভীর আস্থাও ছিল। যা হোক এই দায়িত্ব পেয়ে মুহাম্মাদ অত্যন্ত সুচারুভাবে ফয়সালা করেন। তিনি একটি চাদর বিছিয়ে তার উপর নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং বিবদমান প্রত্যেক গোত্রের নেতাদের ডেকে তাদেরকে চাদরের বিভিন্ন কোণা ধরে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বলেন এবং তারা তা ই করে। এরপর তিনি পাথর উঠিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন।

**নবুওয়ত প্রাপ্তি**

চল্লিশ বছর বয়সে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ নবুওয়ত লাভ করেন, অর্থাৎ এই সময়েই স্রষ্টা তার কাছে ওহী প্রেরণ করেন। নবুওয়ত সম্বন্ধে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় আজ-জুহরির বর্ণনায়। জুহরি বর্ণিত হাদীস অনুসারে নবী সত্য দর্শনের মাধ্যমে ওহী লাভ করেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর নবী প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। এমনি এক ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তার কাছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী নিয়ে আসেন। জিব্রাইল তাঁকে এই পংক্তি কটি পড়তে বলেন:

“পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না”।

উত্তরে নবী জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিব্রাইল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও মুহাম্মাদ নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেয়ার পর মুহাম্মাদ পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। অবর্তীর্ণ হয় কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। প্রথম অবতরণের পর নবী এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গ্রহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাবেন, “আমাকে আবৃত কর”। খাদিজা নবীর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যান। নওফেল তাঁকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে। ধীরে ধীরে আত্মস্থ হন নবী। তারপর আবার অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য। একটি লম্বা বিরতির পর তাঁর কাছে দ্বিতীয় বারের মত ওহী আসে। এবার অবতীর্ণ হয় সূরা মুদ্দাস্‌সির-এর কয়েকটি আয়াত। এর পর থেকে গোপনে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন মুহাম্মাদ। এই ইসলাম ছিল জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার জন্য প্রেরিত একটি আদর্শ ব্যবস্থা। তাই এর প্রতিষ্ঠার পথ ছিল খুবই বন্ধুর। এই প্রতিকূলততার মধ্যেই নবীর মক্কী জীবন শুরু হয়।

**মক্কী জীবন**


হেরা গুহা, এখানেই মুহাম্মাদ প্রথম প্রত্যাদেশ পান

**গোপন প্রচার**

প্রত্যাদেশ অবতরণের পর নবী বুঝতে পারেন যে, এটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাকে পুরো আরব সমাজের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে হবে; কারণ তৎকালীন নেতৃত্বের ভীত ধ্বংস করা ব্যাতীত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার অন্য কোন উপায় ছিলনা। তাই প্রথমে তিনি নিজ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাঝে গোপনে ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন। মুহাম্মাদের আহ্বানে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন খাদিজা। এরপর মুসলিম হন মুহাম্মাদের চাচাতো ভাই এবং তার ঘরেই প্রতিপালিত কিশোর আলী, ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য নবী নিজ বংশীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করেন; এই সভায় কেউই তাঁর আদর্শ মেনে নেয়নি, এ সভাতে শুধু একজনই ইসলাম গ্রহণ করে, সে হলো আলী। ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নবীর অন্তরঙ্গ বন্ধূ আবু বকর। এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে।

**প্রকাশ্য দাওয়াত**

তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেয়ার পর মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরণের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। নবী সাফা পর্বতের ওপর দাড়িয়ে চিৎকার করে সকলকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল। কিন্তু এতে সকলে তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড খেপে যায় এবং এই সময় থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার শুরু হয়।

**মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন**

বিরুদ্ধবাদীরা কয়েকটি স্তরে নির্যাতন শুরু করে: প্রথমত উস্কানী ও উত্তেজনার আবহ সৃষ্টি, এরপর অপপ্রচার, কুটতর্ক এবং যুক্তি। এক সময় ইসলামী আন্দোলনকে সহায়হীন করার প্রচেষ্টা শুরু হয় যাকে সফল করার জন্য একটি নেতিবাচক ফ্রন্ট গড়ে উঠে। একই সাথে গড়ে তোলা হয় সাহিত্য ও অশ্লীল গান-বাজনার ফ্রন্ট, এমনকি একং পর্যায়ে মুহাম্মাদের সাথে আপোষেরও প্রচেষ্টা চালায় কুরাইশরা। কিন্তু মুহাম্মাদ তা মেনে নেননি; কারণ আপোষের শর্ত ছিল নিজের মত ইসলাম পালন করা, সেক্ষেত্র তার ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ভেস্তে যেতো।

**ইথিওপিয়ায় হিজরত**

ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবী কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণ

এরপর ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল উমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ। নবী সবসময় চাইতেন যেন আবু জেহেল ও উমরের মধ্যে যেকোন একজন অন্তত ইসলাম গ্রহণ করে। তার এই ইচ্ছা এতে পূর্ণতা লাভ করে। আরব সমাজে উমরের বিশেষ প্রভাব থাকায় তার ইসলাম গ্রহণ ইসলাম প্রচারকে খানিকটা সহজ করে, যদিও কঠিন অংশটিই তখনও মুখ্য বলে বিবিচেত হচ্ছিল। এরপর একসময় নবীর চাচা হামযা ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণে আরবে মুসলিমদের আধিপত্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়।

**একঘরে অবস্থা**

এভাবে ইসলাম যখন শ্লথ গতিতে এগিয়ে চলছে তখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার অনুসারী সহ সহ গোটা বনু হাশেম গোত্রকে একঘরে ও আটক করে। তিন বছর আটক থাকার পর তারা মুক্তি পায়।

**দুঃখের বছর ও তায়েফ গমন**

কিন্তু মুক্তির পরের বছরটি ছিল মুহাম্মাদের জন্য দুঃখের বছর। কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার স্ত্রী খাদিজা ও চাচা আবু তালিব মারা যায়। দুঃখের সময়ে নবী মক্কায় ইসলামের প্রসারের ব্যাপরে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশ হয়ে তিনি মক্কা বাদ দিয়ে এবার ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফ যান (অবশ্য তায়েফ গমনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের শিকার হন। এমনকি তায়েফের লোকজন তাদের কিশোর-তরুণদেরকে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনে লেলিয়ে দেয়; তারা ইট-প্রস্তরের আঘাতে নবীকে রক্তাক্ত করে দেয়। কিন্তু তবুও তিনি হাল ছাড়েননি; নব নব সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।

**মি’রাজ তথা উর্দ্ধারোহন**

এমন সময়েই কিছু শুভ ঘটনা ঘটে। ইসলামী ভাষ্যমতে এ সময় মুহাম্মাদ এক রাতে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইতিহাসে ইসরা নামে পরিচিত। কথিত আছে, মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন, এছাড়া তিনি বেহেশ্‌ত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন। এই যাত্রা ইতিহাসে মি’রাজ নামে পরিচিত। এই সম্পূর্ণ যাত্রার সময়ে পৃথিবীতে কোন সময়ই অতিবাহিত হয়নি বলে বলা হয়।

**মদীনায় হিজরত**


এরপর আরও শুভ ঘটনা ঘটে। মদীনার বেশকিছু লোক ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। তারা মূলত হজ্জ্ব করতে এসে ইসলামে দাওয়াত পেয়েছিল। এরা আকাব নামক স্থানে মুহাম্মাদের কাছে শপথ করে যে তারা যে কোন অবস্থায় নবীকে রক্ষা করবে এবং ইসলামে প্রসারে কাজ করবে। এই শপথগুলো আকাবার শপথ নামে সুপরিচিত। এই শপথগুলোর মাধ্যমেই মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং একসময় মদীনার ১২ টি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের মাধ্যমে মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। মদীনা তথা ইয়াসরিবে অনেক আগে থেকে প্রায় ৬২০ সাল পর্যন্ত গোত্র গোত্র এবং ইহুদীদের সাথে অন্যদের যুদ্ধ লেগে থাকে। বিশেষত বুয়াছের যুদ্ধে সবগুলো গোত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ায় প্রচুর রক্তপাত ঘটে। এ থেকে মদীনার লোকেরা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল যে, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নেয়ার নীতিটি এখন আর প্রযোজ্য হতে পারেনা। এজন্য তাদের একজন নেতা দরকার যে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে পারবে। এ চিন্তা থেকেই তারা মুহাম্মাদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যদিও আমন্ত্রণকারী অনেকেই তখনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। এই আমন্ত্রণে মুসলিমরা মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে যায়। সবশেষে মুহাম্মাদ ও আবু বকর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় হিজরত করেন। তাদের হিজরতের দিনেই কুরাইশরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হত্যার পরিকল্পনা করেছিল যদিও তা সফল হয়নি। এভাবেই মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে।

**মাদানী জীবন**
নিজ গোত্র ছেড়ে অন্য গোত্রের সাথে যোগদান আরবে অসম্ভব হিসেবে পরিগণিত হত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সেরকম নয়, কারণ এক্ষেত্রে ইসলামের বন্ধনই শ্রেষ্ঠ বন্ধন হিসেবে মুসলিমদের কাছে পরিগণিত হত। এটি তখনকার যুগে একটি বৈপ্লবিক চিন্তার জন্ম দেয়। ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। এজন্য ইসলামী পঞ্জিকার বর্ষের শেষে AH উল্লেখিত থাকে যার অর্থ: After Hijra।

**স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান প্রণয়ন**

মুহাম্মাদ মদীনায় গিয়েছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী এবং শাসক হিসেবে। তখন বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল আওস ও খাযরাজ। তিনি তার দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন করেছিলেন। মদীনার সকল গোত্রকে নিয়ে ঐতিহাসিক মদীনা সনদ স্বাক্ষর করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংবিধান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এই সনদের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভুতি সৃষ্টি করা হয়। আওস, খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদী গোত্র (বনু কাইনুকা, বনু কুরাইজা এবং বনু নাদির)। এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। এই সনদের মাধ্যমে মদীনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হন তার প্রধান।

**মক্কার সাথে বিরোধ ও যুদ্ধ**

মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে। মুহাম্মাদ(স)মদীনায় এসে আশেপাশের সকল গোত্রের সাথে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনে অগ্রণী ছিলেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা গৃহত্যাগী সকল মুসলিমদের সম্পত্তি ক্রোক করে। এই অবস্থায় ৬২৪ সালে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)৩০০ সৈন্যের একটি সেনাদলকে মক্কার একটি বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁধা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠায়। কারণ উক্ত কাফেলা বাণিজ্যের নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। কুরাইশরা তাদের কাফেলা রক্ষায় সফল হয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যুদ্ধের ডাক দেয়। আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা সৈন্য সংখ্যার দিক দিয়ে কুরাইশদের এক তৃতীয়াংশ হয়েও বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত যা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখে সংঘটিত হয়। মুসলিমদের মতে এই যুদ্ধে আল্লাহ মুসলিমদের সহায়তা করেছিলেন। যাহোক, এই সময় থেকেই ইসলামের সশস্ত্র ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর ৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিতে হয়। এতে প্রথম দিকে মুসলিমরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। কুরাইশরা বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত মুহূর্তের নীতিগত দূর্বলতার কারণে পরাজিতের বেশে মক্কায় প্রবেশ করে। ৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে মুসলিমরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।

**মদীনার ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক**


কিন্তু এ সময় মদীনার বসবাসকারী ইহুদীরা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকী হয়ে দেখা দেয়। মূলত ইহুদীরা বিশ্বাস করতনা যে, একজন অ-ইহুদী শেষ নবী হতে পারে। এজন্য তারা কখনই ইসলামের আদর্শ মেনে নেয়নি এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বুঝতে পারে তখন তারা এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)প্রতিটি যুদ্ধের পরে একটি করে ইহুদী গোত্রের উপর আক্রমণ করেন। বদর ও উহুদের যুদ্ধের পর বনু কাইনুকা ও বনু নাদির গোত্র সপরিবারে মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়; আর খন্দকের পর সকল ইহুদীকে মদীনা থেকে বিতাড়ন করা হয়।[৫] মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এই ইহুদী বিদ্বেশের দুটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি ধর্মীয় এবং অন্যটি রাজনৈতিক[৬]। ধর্মীয় দিক দিয়ে চিন্তা করলে আহলে কিতাব হয়েও শেষ নবীকে মেনে না নেয়ার শাস্তি ছিল এটি। আর রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করলে, ইহুদীরা মদীনার জন্য একটি হুমকী ও দুর্বল দিক ছিল। এজন্যই তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়।

**হুদাইবিয়ার সন্ধি**

কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জ্বের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ ককরা আছে, তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ্ব আদায় করতে পারছিল না। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দিব্যদর্শনে দেখতে পান তিনি হজ্জ্বের জন্য মাথা কামাচ্ছেন। এ দেখে তিনি হজ্জ্ব করার জন্য মনস্থির করেন এবং ৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসে হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মদীনার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাঁধা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে সুপরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলিমরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে। সন্ধির অধিকাংশ শর্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে গেলেও মুহাম্মাদ এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

**বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ**

রাসূল (সাঃ)সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছ দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে এ কাজে মননিবেশ করেন। সেসময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য (the holy roman empire),এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের ‘আযীয মুকাউকিস’,ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একইদিনে এদেঁর কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।

**প্রেরিত দূতগণের তালিকা**


দািহয়া ক্বালবী (রাঃ)কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে।
আবদুল্লাহ বিন হুযাফা (রাঃ)কে পারস্যসম্রাট পারভেজের কাছে।
হাতিব বিন আবূ বুলতা’আ (রাঃ) কে মিশরৈর শাসনকর্তার কাছে।
আমর বিন উমাইয়া (রাঃ) কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে।
সলীত বিন উমর বিন আবদে শামস (রাঃ) কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।
শুজাইবনে ওয়াহাব আসাদী (রাঃ)কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।

শাসকদের মধ্য হতে শুধুমাত্র বাদশাহ নাজ্জাসী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি।

**মক্কা বিজয়**

দশ বছরমেয়াদি হুদাইবিয়ার সন্ধি মাত্র দু’ বছর পরেই ভেঙ্গে যায়। খুযাআহ গোত্র ছিল মুসলমানদের মিত্র,অপরদিকে তাদের শত্রু বকর গোত্র ছিল কুরাইশদের মিত্র। একরাতে বকর গোত্র খুযাআদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। কুরাইশরা এই আক্রমণে অন্যায়ভাবে বকর গোত্রকে অস্ত্র দিয়ে সহয়োগিতা করে। কোন কোন বর্ণনামতে কুরাইশদের কিছু যুবকও এই হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনার পর মুহাম্মাদ (সঃ) কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্তসহ পত্র প্রেরণ করেন এবং কুরাইশদেরকে এই তিনটি শর্তের যে কোন একটি মেনে নিতে বলেন। শর্ত তিনটি হলো;

(1) কুরাইশ খুযাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করবে।
(2) অথবা তারা বকর গোত্রের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করবে।
(3) অথবা এ ঘোষণা দিবে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

কুরাইশরা জানালো যে, তারা শুধু তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করবে। কিন্তু খুব দ্রুত কুরাইশ তাদের ভুল বুঝতে পারলো এবং আবু সুফয়ানকে সন্ধি নবায়নের জন্য দূত হিসেবে মদীনায় প্রেরণ করলো। কিন্তু মুহাম্মাদ (সঃ) কুরাইশদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং মক্কা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করলেন।
৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ (সঃ) দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো এবং মুহাম্মাদ (সঃ) বিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন। তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। তবে দশজন নর এবং নারী এই ক্ষমার বাইরে ছিল। তারা বিভিন্নভাবে ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সঃ)এর কুৎসা রটাত। তবে এদের মধ্য হতেও পরবর্তিতে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়। মক্কায় প্রবেশ করেই মুহাম্মাদ (সঃ) সর্বপ্রথম কাবাঘরে আগমন করেন এবং সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস করেন। মুসলমানদের শান-শওকত দেখে এবং মুহাম্মাদ (সঃ)এর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করে। কোরআনে এই বিজয়ের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।

*****মৃত্যু****

বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (সাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল,মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন। বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসে তিনি মৃত্যবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী (রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশ (রাঃ)এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন,জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফন করা হয়।

**ইসলামী বর্ণনামতে মুহাম্মাদের অলৌকিকত্ব**

ব্যতিক্রমের প্রতি আকর্ষন মানুষের স্বভাবজাত, অন্যদিকে অলৌকিকত্বের প্রভাব আমাদের লৌকিক জীবনে সুদূর প্রসারী। আরবী মু’জেযা শব্দের অর্থ আসাধারন বিষয়, অলৌকিকত্ব। মুহাম্মদের [স.] অসংখ্য মু’জেযার মধ্যে প্রকাশ্য মু’জেযার সংখ্যা দশ হাজারেরও অধিক।[৮] ব্যাখ্যাকারীগণ মুহাম্মদের [স.] মু’জেযাগুলোকে তিনভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। প্রথমত যা তাঁর দেহ হতে বহির্ভূত। যথা- চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া, বৃক্ষ নিকটে আসা, ঊট ও হরিনের অভিযোগ ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত যা তাঁর দেহসম্পৃক্ত যথা- ‘মহরে নবুওয়াত’ যা হলো দুই কাঁধের মাঝখানে আল্লাহর রাসূল মোহাম্মাদ বাক্যটি লেখা ছিল মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। তৃতীয়ত তাঁর নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলী যথা- নির্ভিক, অকুতোভয়, দানশীল, সত্য ভাষণকারী, দুনিয়াবিমুখ ইত্যাদি। আল কোরানের সুরা ক্বামারে মুহাম্মদের [স.] আংগুল দ্বারা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে। বদর যুদ্ধের আগের দিন বদর নামক স্থানে পৌঁছে মুহাম্মদ [স.] বললেন ‘এটা আমুকের শাহাদাতের স্থান, এটা অমুকের (কাফেরের) হত্যার স্থান… সাহাবীরা (রা.) বলেন ‘রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার জন্য যে স্থান দেখিয়েছেন, তার সামান্য এদিক সেদিক হয়নি।’ (মুসলিম) বিভিন্ন যুদ্ধে আকাশের ফেরেশতাগন অংশগ্রহন করতো। যা আল্লাহর সাহায্য ও রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মু’জেযার প্রমান। হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন- ‘ ওহুদের যুদ্ধের দিন আমি রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ডানে বামে সাদা পোষাকের দু জন কে (জিব্রাইল, মিকাইল) দেখলাম যাদের কে আর কোন দিন দেখেনি। (বুখারী, মুসলিম) সাহাবীর ভাংগা পা রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্পর্শে ভালো হওয়া আরো একটি মু’জেযা। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাঃ) এর পা ভেংগে গেলে তিনি তা রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জানালে রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পায়ের উপর হাত বুলালেন। সাহাবী বলেন- ‘ এতে আমার পা এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলো যেন তাতে আমি কখনো আখাতই পাইনি। (বুখারী) স্বল্প খাদ্যে হাজার মানুষের পরিতৃপ্ত ভোজন হওয়া প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উল্লেখযোগ্য মু’জেযা। এরুপ বহু ঘটনা বহু সাহাবী বর্ণনা করেছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় যখন রাসুলুল্লাহ! সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল সাহাবীগন ক্ষুধায় অস্থির ও দুর্বল হয়ে পরেছিলেন তখন জাবের (রাঃ) একটি বকরীর বাচ্চা জবাই করলেন আর এক সা পরিমান জবের রুটি তৈরি করলেন আর তা দিয়েই সবাই তৃপ্তিতে খেলেন। সাহাবী জাবের (রাঃ) আল্লাহর শপথ করে বলেন- ‘সকলে তৃপ্তি সহকারে খেয়ে চলে যাওয়ার পরও চুলায় গোশত ভর্তি ডেকচি ফুটছিল এবং রুটি হচ্ছিল।’(বুখারী, মুসলিম)

****মুহাম্মাদ সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি****

***ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি***

ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে মুহাম্মাদের অবদান

**নব্যুওয়তের মোহর**

এই অনুচ্ছেদ উইকিপিডিয়ার জন্য মান সম্পন্ন অবস্থায় আনতে পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন। (প্রয়োজনে আরও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিন।) সম্ভব হলে অনুগ্রহ করে অনুচ্ছেদ এর মান উন্নয়ন করুন। আলাপ পাতায় এই সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে পারে। (নভেম্বর ২০১১)

বিশুদ্ধতম হাদীস গ্রন্থ- বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী শরীফে মুহাম্মদের [স.] নব্যুওয়তের মোহর সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে ছায়েদ ইবনে ইয়াযীদ [রা.] কর্তৃক বর্ণিত এমর্মের একখানা হাদিস উদ্বৃত করা হয়েছে যে, ছায়েব (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিঠের পিছনে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন দেখতে পেলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র দুই কাঁধের ঠিক মধ্যস্থলে চাতক পাখির ডিমের আকৃতির মাংসখন্ডে নব্যুওয়তের মোহর অঙ্কিত রয়েছে। এর চারপাশ মসৃণ কেশ দ্বারা পরাবৃত। আমি একটু ঝূঁকে সেটির নিকট নাক দিয়ে শুঁকছিলাম। আমার নিকট তখন কস্তুরীর সূগন্ধ অনুভূত হচ্ছিল। নব্যুওয়তের মোহর-এর অভ্যন্তরভাগে লেখা ছিল “আল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু ওয়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”[৯]র্থ হচ্ছে আল্লাহ এক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। এর উপরিভাগে অঙ্কিত ছিল যে দিকে ইচ্ছা বিচরন করুন, কেননা আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্ত। অহী নাযিল হওয়ার আগ মুহূর্তে ৩য় বারের মত যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছিনাচাক হয়, তখনই পিঠের মধ্যস্থলে শরীরের উপরিভাগে নব্যুওয়তের মোহর অঙ্কিত হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর নব্যুওয়তের মোহর যা উনার পিঠে অঙ্কিত ছিল সেটি মুছে যায়। এটা দেখেই সাহাবীরা বুঝেন যে উনি ইন্তেকাল করেছেন।

**মুসলিমদের শ্রদ্ধা নিবেদন**
**চিত্র বা ভাস্কর্যের মাধ্যমে চিহ্নিতকরণ**
**খ্রিস্টান ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি**

প্রখ্যাত ইংরেজ বৈজ্ঞানিক মি. এডওয়ার্ড টিম্বার প্রৃথিবীর মহাপুরুষগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১৭ জন মহাপুরুষের নাম the faith and Favour পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন। তন্মধ্যে প্রিয় নবিজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম প্রথমে স্থান পেয়াছে। নোবেল বিজয়ী চিন্তাবিদ প্রখ্যাত সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ডশ রাখঢাক না করেই বলে গিয়েছেন, বিশ্ববাসী! যদি তোমরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে চাও এবং সর্বাঙ্গীন সুন্দর জীবন ব্যবস্থা কামনা করো, তবে বিশ্ব-সংসারের নিয়ন্ত্রন ভার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে ছেড়ে দাও। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন, যাকে না হলে বিশ্ব অসম্পুর্ন থেকে যেতো। তিনি নিজেই নিজের তুলনা। তাঁর কৃতিত্বময় ইতিহাস মানব জাতির ইতিহাসে এক সমুজ্জল অধ্যায় রচনা করেছে। আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদী প্রফেসর জুল ম্যাসারমান বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, সর্বকালের সর্বশ্র্রেষ্ঠ অনুসরনীয় ও অনুকরনীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হিলফুল ফুযুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আরবে যখন জন্ম হয়, তখন যুদ্ধ ছিল সেখানকার একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শৈশবেই এ সকল যুদ্ধ তাকে প্রচন্ড বেদনাহত করে। তাই যৌবনের প্রারম্ভে তাঁর একান্ত অনুপ্রেরনায় ও উদ্যোগে হিলফুল-ফুযুল নামক একটি সেবাসংঘ গঠিত হয়। এই সংঘের লক্ষ্য ছিল সমকালিন যাবতীয় অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এর মুখ্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল, দরিদ্রের দারিদ্র মোচন করা, অত্যাচার ও অনাচারের প্রতিরোধ করা। এই সংঘের সকল সদস্য তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ করেন। মক্কার কোন নির্যাতিত ব্যক্তি হিলফুল-ফুযুল এর কাছে সাহায্য চাইলে এই সংঘের সবাই সম্মেলিত ভাবে তাকে সাহায্য করত। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরবর্তীকালে বলেছিলেন, আমাকে যদি এই সংঘের বদলে অনেকগুলো লাল উটও উপহার দেয়া হয় তা হলেও আমি ও গুলো গ্রহণ করবো না। কোনো ব্যক্তি যদি এই সময় হে হিলফুল ফুযুলের সদস্যগন বলে ডাক দেয়, আমি অবশ্যই তার ডাকে সারা দিব। তথ্য সূত্রঃ মাসিক মদিনা, সীরাতুন্নবী সংখ্যা, ২০১০, ফারাবী

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন সাবেক বিশ্বসুন্দরী মার্কেটা কোরিনকোভা

সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন সাবেক বিশ্বসুন্দরী ব্রিটেনের ফ্যাশন ডিজাইনার ও অভিনেত্রী মার্কেটা কোরিনকোভা। একই সঙ্গে নিজের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রেখেছেন মরিয়ম। চেকোস্লোভাকিয়ান বংশোদ্ভূত এই সুন্দরী ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে দুবাইয়ে এক ঘোষণায় এ তথ্য জানিয়েছেন।

Marketa-Korinkova মার্কেটা কোরিনকোভা বলেন, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং দুবাইয়ে বসবাস করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গত তিন বছর ধরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন মার্কেটা। পরে দুবাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খ্রিস্টানধর্ম ত্যাগ করেন। স্থানীয় আরবি ভাষার দৈনিক আল কুদস-আল আরাবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপার মডেল ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মার্কেটা কোরিনকোভা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে তার ফ্যানদের অবাক করেছেন।


তিনি ইতালিতে অনুষ্ঠিত ২০১২ সালে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এরপর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি পান। হলিউডের একটি ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয়েরও সুযোগ পান সাবেক এই সুন্দরী। দুবাইয়ের আলি অ্যান্ড সনস গ্রুপস অব কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার পদে যোগ দিয়েছেন মার্কেটা।

অ্যালান রুনির ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

স্কটল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা শ্বেতাঙ্গ অ্যালান রুনির জীবনে কখনোই কোনো মুসলিমের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়নি। তবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল বান্দার কাছেই ইসলাম এর বানী পৌঁছে দেন।

এভাবেই হঠাৎ একদিন তার কানে ভেসে এলো আজানের সুমধুর ধ্বনি। এটা তাকে বিমোহিত করে। এরপর তিনি পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন শুরু করেন। অবশেষে তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী নিয়ে ব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধ লিখেছেন রুনি।

আসুন তার বয়ানেই শুনি সেই মনোমুগ্ধকর কাহিনী:

‘তুরস্ক ভ্রমণকালে আমি একটি সৈকতে ছিলাম। সে সময় স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। আমি এটা শুনলাম এবং নিজের ভেতরে নতুন কিছু অনুভব করতে লাগলাম। এটা আমাকের আধ্যাত্মিকতার সন্ধান করতে অনুপ্রাণিত করলো।

দেশে ফিরে আমি স্থানীয় একটি লাইব্রেরিতে গিয়ে পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন শুরু করলাম। অধ্যয়ন করার সময় আমি ঈশ্বরকে বলতাম আমি যে যাত্রা শুরু করেছি তাতে তোমার পথনির্দেশনা চাই।

কোরআন অধ্যয়নের সময় আমি বহুবার প্রার্থনা করেছি।

পবিত্র কোরআন আমাকে বিমোহিত করে। এটা বিস্ময়কর একটি গ্রন্থ যেখানে আমি দেখতে পাই যে আমাদের নিজের সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে যা আমার মধ্যে নেই। আমি নিজেকে কিছুটা বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই।

আমি জানতাম আমি যে কোনো সময় কোরআন অধ্যয়ন শেষ বন্ধ করে দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি টানতে পারি। কিন্তু আমি জানতাম এটা করা হলে তা হবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছেড়ে যাওয়া।

এবং আমি জানতাম যে এই প্রক্রিয়ার শেষ হলো আমি একজন মুসলিম হবো। কাজেই আমি অধ্যয়ন অব্যাহত রাখলাম। আমি তিনবার কোরআন অধ্যয়ন করলাম। আমি প্রতিটি বিষয়ে স্বস্তি অনুভব করলাম।

আমি অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করে সময় কাটাতে লাগলাম যাতে আমার মত কারো অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা তা জানা। কিন্তু দেখলাম ইসলামের পথে প্রত্যেকের যাত্রাই অতুলনীয়।

এই প্রক্রিয়ায় আমার ১৮ মাস সময় লাগলো। কারো এর চেয়ে বেশি সময় লাগে, কারো লাগে কম সময়। তবে আমি এটা নিজেই করলাম, কারো সহায়তা ছাড়াই। তখন পর্যন্ত আমি কোনো মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করিনি।

১৮ মাস পরে আমি নিজেকে মুসলিম হিসেবে ভাবতে লাগলাম। আমি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, রোজা রাখি এবং কোরআনের নির্দেশ অনুসারে পানাহার করি।

পরে আমি দেখতে পাই আমার শহরে ছোট একটি মসজিদ আছে। আমি নিজেই সেখানে গেলাম, দরজায় কড়া নাড়লাম এবং নিজের পরিচয় দিলাম।

তারা প্রথমে আমাকে দেখে বিস্মিত হলো এবং আমাকে তাদের সম্প্রদায়ে স্বাগত জানালো। শুরু থেকেই তারা আমাকে গ্রহণ করলো এবং এখন আমি এই সম্প্রদায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অবশ্যই, আমার এখনো অনেক কিছু শেখার আছে।

পবিত্র কোরআনের শিক্ষা মানলে আপনি নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারবেন।

আমি এখন একজন শ্বেতাঙ্গ, মধ্যবয়সী স্কটিশ মুসলিম এবং এটা নিয়ে আমি সুখী।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ দৈনিক দা ইন্ডিপেনডেন্টে প্রকাশিত অ্যালান রুনির নিবন্ধ
ভাষান্তর: ফাতিমা ফেরদৌসী আশা।

যেভাবে চলচিত্র জীবন ত্যাগ করে ইসলামে ফিরে এলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিম

কুড়ি বছর বয়সী বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিম। জনপ্রিয়তা, প্রশংসা অর্থ সম্পদ সব কিছুই গোড়ে ছিলেন সুন্দর করে। আমির খানের মত সুপারস্টারদের সাথে এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু এত অল্পসময়ে সবকিছু পেয়েও তার মনে হচ্ছিল জীবনে কী যেন নেই! এক অপূর্ণতায় এত অর্জন সব ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

কী সেই অপূর্ণতা? এ অপূর্ণতা আসমান ও জমীনের রব থেকে দূরে থাকার। আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পূজা করার। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ) বলতেন, “প্রত্যেক মানুষের অন্তরেই রয়েছে অস্থিরতা, যা কেবল আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে গেলেই ঠিক করা সম্ভব। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে এক শূন্যতা রয়েছে, সেটা কেবল আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে গেলেই দূর করা সম্ভব। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে রয়েছে ভয় আর উৎকণ্ঠা, যা কেবল আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় নিলেই দূর করা সম্ভব। আর প্রত্যেক মানুষের অন্তরেই রয়েছে হতাশা, যেটা কেবল আল্লাহ্‌র উপরে সন্তুষ্ট হলেই দূর করা সম্ভব।” (আল ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, ১/৭১)


এই অপূর্ণতা সবাই বুঝতে পারে। বিশাল অট্টালিকার মালিক থেকে শুরু করে যারা বস্তিতে থাকে, তারাও পারে। তবে অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না দুনিয়াটাকে পাশ কাটিয়ে রবের কাছে ফেরার। জায়রা ওয়াসিম পেরেছেন। প্রত্যাবর্তন করেছেন জীবনের মূল উদ্দেশ্যে। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে অনুরোধও করেছেন জীবনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে একবার ভাবতে। সবচেয়ে অবাক হয়েছি, সে স্ট্যাটাসের বিভিন্ন জায়গায় উনি যেভাবে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতকে উদ্ধৃত করেছেন। এতে পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে, কতোটা মন দিয়ে উনি কুরআন পড়েছেন, ভেবেছেন, উপলব্ধি করেছেন। আল্লাহর কালাম শুধু উনার কণ্ঠনালীতে না অন্তরেও পৌঁছেছিল।

তার এই সিদ্ধান্তটাকে অনেকে সমালোচনা করেছেন। টিভি-মিডিয়াতে চলছে নিন্দার ঝড়। আল্লাহর জন্য তিনি ক্যারিয়ারটাকে বিসর্জন দিয়েছেন জানতে পেরে শ্রীমতী তসলিমা নাসরিন টুইট করেও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ‘কী উদ্ভট ধর্ম রে বাবা, জীবনে সফল হতেও বাধা দেয়!’

তবে আমরা মুসলিমরা তো সফলতাটাকে অন্য চোখে দেখি। কারা সফল? যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন-
“যাকে জাহান্নামের (আগুন) থেকে দূরে রাখা হবে, আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে- সেই-ই সফল। আর দুনিয়ার জীবন তো কিছুই নয় ভ্রান্তিময় ছলনা ছাড়া।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫)

দুনিয়ার এই জীবন যেন আমাদের ধাঁধায় না ফেলে তার জন্যে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। যারা আল্লাহর দ্বীনকে বিক্রি করে এই দুনিয়ার জীবনে সফল- চাই সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার, এমপি, প্রধানমন্ত্রী- যেই হোক না কেন, তারাও আমাদেরকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। আমাদের বোন জায়রা ওয়াসিম যাদের ব্যাপারে আমাদের সাবধান করেছেন-
“Don’t look for role models or measures of success in the displeasure of Allah and the transgressions of His commandments. Do not allow such people to influence your choices in life or dictate your goals or ambitions.”

Monday, September 2, 2019

যে দোয়াটি পড়লে ৭০ টি বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন

আপনি কি জানেন? এমন কিছু দোয়া রয়েছে যেগুলো পাঠ করে ৭০ টি বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারেন? তাহলে আর দেড়ি কেন চলুন দোয়া গুল সম্পর্কে জেনে নেই।

এমন একটি দোয়া রয়েছে যা পড়লে সত্তরটি বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারেন আপনি, সর্বনিম্নটি হলো দারিদ্রতা। হযরত ওমর ফারুক রা. বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় এ দুয়াটি পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় দশ লাখ নেকি লেখা হবে এবং তার আমলনামা থেকে দশ লাখ গুনাহ মুছে দেয়া হবে।  

দোয়াটি হলো: لااله الاالله وحده لاشريك له الملك وله الحمد يحي ويميت وهوحي لايموت بيده الخير وهوعلي كل شيء قدير বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলক, ওয়ালাহুল হামদ, ইউহই ওয়া-ই মিতু, বিয়াদিহিল খাইর, ওহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরিক নেই। তাঁর জন্যই বাদশাহী ও রাজত্ব এবং তাঁর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। তিনি জীবন দেন, মৃত্যু দেন। তিনি জীবিত আছেন, মারা যাবেন না কখনোই। সমস্ত কল্যাণ তাঁর নিয়ন্ত্রণে এবং তিনি সমস্ত জিনিসের ওপর ক্ষমতাবান।’

(তিরমিযি) হযরত আবু নাঈম ও ইবনে আবি শায়বা রহ. একটি আমলের কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেন, যে ব্যক্তি নিম্নের দুয়া একবার পাঠ করবে- একশ’ বার নয়, মাত্র একবার- আল্লাহ তায়ালা তার সত্তরটি বিপদ দূর করে দিবেন। আর সর্বনিম্ন বিপদ হল দারিদ্রতা। আর অন্যান্য বিপদগুলো এর চেয়ে অনেক বড় বড়। যে ব্যক্তি এই দুয়ার আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তার এসব বিপদ দূর করে দিবেন।

দোয়া : لاحول ولاقوة الا بالله ولاملجا ولامنجا من الله الا اليه  
বাংলা উচ্চারণ : লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি ওয়ালা মালজাআ ওয়ালা মানজাআ মিনাল্লাহি ইল্লাহ ইলাইহি।
দোয়া'টি নিয়মিত পাঠ করুন। সব রকম সমস্যা থেকে নাজাত পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তদের জন্য সান্তনা : কানযুল উম্মালে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই আয়াতটি পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হৃদয়কে প্রশান্তি দান করবেন।
لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ 
এখানে ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের শর্তারোপ করা হয়েছে। কারো অন্তরে এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে সে সুফল পাবে না।

বিশিষ্ট সাহাবি হজরত তামিম দারি রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ বাক্য দশ বার পড়বে সে চল্লিশ লাখ সওয়াব পাবে।

বাক্যটি হলো- أَشْهَدُ أَنْ لاَ إله إِلاَّ الله، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، إِلهاً وَاحِداً أَحَداً صَمَداً لَمْ يَتَّخِذْ صَاحِبَةً وَلاَ وَلَداً وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ উচ্চারণ: আশহাদুআল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ইলাহান ওয়াহিদান- আহাদান সামাদান- লাম ইয়াত্তাখিজ সাহিবাতান ওয়ালা ওয়ালাদান; ওয়ালাম ইয়াকুল লাহু কুফুওয়ান আহাদ। অর্থ: আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি একা, তার কোনো শরিক নেই। একক উপাস্য, একাই, অমুখাপেক্ষী, তার স্ত্রী-সন্তান নেই। তার সমকক্ষও কেউ নেই।

শরীর ও হার্ট ব্যথা থেক মুক্তি লাভের দোয়া

মানুষের শরীরে অনেক সময় নানা ব্যথা বেদনা অনুভব হয়ে থাকে। এ ব্যথা বেদনা থেকে পরিত্রাণ পেতে হাদিসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া করার জন্য বলা হয়েছে।

হজরত ওসমান ইবনে আবুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট তার শরীরের ব্যথার কথা জানালেন। জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তোমার বেদনার জায়গায় হাত রাখ এবং তিন বার বিসমিল্লাহ বল এবং সাত বার এই দোয়া পড়-

উচ্চারণ : আউজু বিইযযাতিল্লাহি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন সাররি মা আঝিদু ওয়া উহাজিরু। (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : আল্লাহ প্রতাপ ও তার ক্ষমতার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এবং ঐ বস্তু হতে, যা অনুভব করছি ও আশংকা করছি, তার অনিষ্ট হতে।সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো এ দোয়া এবং আমলটি করে ব্যথা থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারি।এছাড়া হার্ট বা হৃদপিণ্ড মানুষের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হৃদপিণ্ড সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, শরীরে একটি গোস্তের টুকরো আছে, যার এ টুকরোটি সুস্থ থাকবে, তার পুরো শরীরই সুস্থ থাকবে। আর যার এ গোস্তের টুকরোটি অসুস্থ হয়ে যাবে, তার পুরো শরীরই অসুস্থ হয়ে যাবে। আর তা সুস্থ রাখার উপায় হলো আল্লাহর জিকির।মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি হার্ট বা হৃদপিণ্ড বর্তমান সময়ে অনেক বেশি রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। হার্ট বা হৃদপিণ্ডের ব্যথা বা যে কোনো রোগের সম্মুখীন হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।কুরআনে এই হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে ও ব্যাথামুক্ত রাখতে আয়াত রয়েছে। যারা নিয়মিত কুরআনের আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাদের হৃদপিণ্ডের ব্যথাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যধিগুলো দূর করে দেবেন। আয়াতটি হলো-


উচ্চারণ : আল্লাজিনা আমানু ওয়া তাত্বমাইন্নু ক্বুলুবুহুম বিজিকরিল্লাহি আলা বিজিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল ক্বুলুবু।’ (সুরা রাদ : আয়াত ১৩)যে ব্যক্তি সুরা রাদের উল্লেখিত আয়াত নিয়মিত ৪১ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার হার্ট বা হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও রোগ-ব্যাধি দূর করে দেবেন।




বিপদ পরলে যে দোয়া পড়তে হয়

স্বাভাবিকত বিপদ বা সঙ্কটে পড়লে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে যায়, হওয়াটাও কিন্তু স্বাভাবিক। কারন বিপদ বলে-কয়ে আসে না, যদিও বিপদ-আপদ মানুষের নিত্যসঙ্গী। মানুষের চিন্তা-ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে করণীয় ভুলে যায়।
বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হয়। তিনিই একমাত্র উদ্ধারকারী। তিনি চাইলে মুহূর্তেই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন। পেরেশানির কুহেলিকা হটিয়ে দিতে পারেন।

বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য পবিত্র কোরআন এবং রাসুল (সা.) এর হাদিসে কিছু দোয়াও আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি এ দোয়াটি পড়তেন।’ (তিরমিজি মিশকাত, হাদিস নম্বর: ২৪৫৪)

উচ্চারণ: ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ।’

অর্থ: হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

দোয়ায়ে ইউনুস (আ.): রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এ দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এ দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস নম্বর: ২২৯২)।

উচ্চারণ: ‘লাইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতুমিনাজ্জালিমিন’ (সুরা আম্বিয়া: ২১/৮৭)
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

এই দোয়া পড়লে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হবে না


 মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের শরীরের মধ্যে রূহ দিয়ে পৃথিবীতে পাথিয়েছেন, আবার একদিন আল্লাহর নির্দেশে আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে।
তবে অনেক মানুষই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা যায়। তেমনি আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করাও একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকতে তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন দোয়া ও আমল।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগুনে দগ্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকতে এ দোয়াটি পড়তেন। যারা এ দোয়াটি নিয়মিত পড়বে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আগুনে দগ্ধ হওয়াসহ অনেক দুর্ঘটনা থেকে হেফাজত করবেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবুল ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي، وَالْهَدْمِ، وَالْغَرَقِ، وَالْحَرِيقِ،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি ওয়াল হাদমি ওয়াল গারাক্বি ওয়াল হারিক্বি। ওয়া আউজুবিকা আইঁ ইয়াতাখাব্বাত্বানিশ শায়ত্বানু ইংদাল মাওতি, ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরা। ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদিগা। (ইবনে মাজাহ)

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
- উঁচু স্থান থেকে পড়ে এবং
- কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে এবং
- আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং পানি ডুবে যাওয়া থেকে।
আর আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
- মৃত্যুকালে শয়তান যেন আমাকে বিপথগামী করতে না পারে।
এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
- আপনার পথে জিহাদ করার সময় যেন পালিয়ে মৃত্যুবরণ না করি।
এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
- যেন সাপ-বিচ্ছুর মৃত্যুবরণ না করি।

উল্লেখ্য যে, কোথাও আগুন লাগলে তা দেখে উচ্চস্বরে (اَللهُ اَكْبَر) তাসবিহ পড়া এবং আজান দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া জরুরি।

হজরত ইবরাহিম আলালাইহিস সালামের জন্য প্রজ্জ্বলিত করা আগুনের লেলিহান শিখা বন্ধ হতে আল্লাহ তাআলা আগুনকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাও বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে আগুণ বন্ধ হওয়ার জন্য দোয়া করা-
يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া নারু কুনি বারদাও ওয়া সালামান আলা ইবরাহিম।’
অর্থ : হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আগুনে মৃত্যুবরণ করা থেকে বিরত থাকাসহ বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে হেফাজত থাকতে উল্লেখিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এক মিনিটের আমল

(১) সুরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) মনে মনে দ্রুতগতিতে ২০ বার পড়া যায়। সুরা ইখলাস একবার পাঠ করলে পবিত্র কোরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। 
(২) মনে মনে দ্রুতগতিতে ৩ বার সূরা ফাতিহা পড়া যায়। এভাবে আমল করলে ১৮০০ এর বেশি নেকি হাসিল করা যায়।
(৩) চেষ্টা করলে পবিত্র কোরআনের এক পৃষ্ঠা পাঠ করা যায়।
(৪) পবিত্র কোরআনের ছোট একটি আয়াত মুখস্থ করা যায়।
(৫) নিম্নোক্ত দোয়াটি ২০ বার পড়া যায়। উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’। এ আমলের সওয়াব ইসমাঈল (আ.) এর বংশের ৮ জন দাস আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করার সমান।
(৬) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ ১০০ বার পড়া যায়। যে ব্যক্তি একদিনে এই দোয়াটি ১০০ বার পড়ে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়।
(৭) ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম’ অথবা ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ ৫০ বার পড়া যায়। এ দু’টি বাক্য পড়তে খুব সহজ; আমলের পাল্লাতে অনেক ভারী হবে; আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়; ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম এ বরাতে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(৮) প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘সুব্‌হানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আক্‌বার পাঠ করা, যা কিছুর উপর সূর্য উদিত হয়েছে সবকিছু থেকে আমার কাছে অধিক প্রিয়।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৯৫)
এক মিনিটে বাক্যগুলো ১৮ বারের বেশি পড়া যায়। এ বাক্যগুলো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এগুলো সর্বোত্তম কথা এবং আমলের পাল্লায় এগুলোর ওজন অনেক বেশি।
(৯) ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায়-সামর্থ্য ও কোনো শক্তি নেই) ৪০ বারের বেশি পড়া যায়। এ বাক্যটির সওয়াব জান্নাতের জন্য সঞ্চিত অমূল্য রত্ন এবং সামগ্রিক দুশ্চিন্তা দূর করে দেয়। বুখারি ও মুসলিমে এ প্রসঙ্গে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(১০) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল) প্রায় ২৫ বার পড়া যায়। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহিদের বাণী। এ কালেমার ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে অনেক বর্ণনা রয়েছে।
(১১) আল্লাহর কাছে একশ’ বারের বেশি ইসতিগফার (আসতাগফিরুল্লাহ) বা ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। এর ফজিলত আপনার অজানা নয়। এটি ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখময় জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদ-আপদ রোধ, সব কাজ সহজীকরণ, বৃষ্টি বর্ষণ, সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যম।
(১২) এক মিনিটে আপনি সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে পারেন যা দ্বারা আল্লাহ হয়ত এমন কোনো কল্যাণের পথ খুলে দেবেন যা আপনি ভাবতেও পারেননি।
(১৩) মহানবী (সা.) এর উপর ৫০ বার দরুদ পাঠ করা যায়। শুধু ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পড়লেও চলে। প্রতিদানে আল্লাহ ৫০০ বার রহমত পাঠাবেন। আর একবার দরুদ পাঠ করলে, আল্লাহ ১০ বার প্রতিদান দেন।
(১৪) এক মিনিটে মন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, তার ভালবাসা, ভয়, তার প্রতি আশা এবং তার প্রেমে উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি উবূদিয়্যাহ্‌ (আল্লাহর দাসত্ব) এর স্তরসমূহ অতিক্রম করতে পারেন; হতে পারে সে সময় আপনি হয়ত আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন অথবা কোনো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন।
(১৫) সহজবোধ্য উপকারী কোনো বইয়ের দুই পৃষ্ঠার বেশি পড়া যায়।
(১৬) এক মিনিটের টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আমল পালন করা যায়। এতে আল্লাহ সওয়াব দেয়ার পাশাপাশি আয়ু বৃদ্ধি করে দেন।
(১৭) দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলো থেকে পছন্দমত যে কোনো দোয়া করা যায়।
(১৮) কয়েকজন ব্যক্তিকে সালাম দিয়ে তাদের সঙ্গে মুসাফাহা করা যায়।
(২০) কোন ব্যক্তিকে মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা যায়।
(২১) ভাল কাজের আদেশ করা যায়।
(২২) কাউকে উপদেশ দেয়া যায়।
(২৩) দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দেয়া যায়।
(২৪) পথ থেকে ক্ষতিকর কোনো বস্তু অপসারণ করা যায়।
(২৫) এই এক মিনিটের সদ্ব্যবহার, অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে।
এই আমলগুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই তেমন কিছু করতে হয় না। এগুলোর জন্য আপনার পবিত্রতারও প্রয়োজন নেই। ক্লান্তি-শ্রান্তি বা কায়িকশ্রম নেই। বরং আমলগুলো যেকোনো অবস্থায় করা যায়।