নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Sunday, September 8, 2019

কেমন হবে জান্নাত??? আসুন জেনে নেই

★ জান্নাতী_রমণী
জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ নতুন ভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অবস্থায় জান্নাতে যাবে। জান্নাতি রমণীগণ যদি একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি দেয় তবে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত জায়গা আলোকিত হয়ে যাবে। রমণীগণ এতো সুন্দর হবে যে তাদের দেহের ভিতরের হাড্ডির মজ্জা বাহির থেকে দৃষ্টিগোচর হবে। জান্নাতী মহিলারা তাদের স্বামীর সাথে মিলনের পরো চিরকাল কুমারী থাকবে।

★ হুরেঈন
হুরেরা ডিমের ভিতর লুকায়িত সূক্ষ্ম চামড়ার চেয়েও অধিক নরম হবে। (সূরা আস সাফফাত ৪৮-৪৯
হুরগণ তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। হুরেরা এতো লজ্জাশীল হবে যে স্বীয় স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবেনা। হুরগণ ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট হবে, চোখের কালো অংশ একেবারে কালো, এবং সাদা অংশ একেবারে সাদা হবে।

★ জান্নাতের গাছপালা
জান্নাতের সব ধরনের ফলের গাছ থাকবে, তবে খেজুর, ডালিম, আংগুরের গাছ অধিক পরিমাণে থাকবে। জান্নাতের বৃক্ষ কন্টকমুক্ত হবে। কলা ও কুল জান্নাতের বৃক্ষ। জান্নাতে বৃক্ষ সমূহের ছায়া অনেক দীর্ঘ হবে। জান্নাতের সব গাছের মূল স্বর্ণের হবে।

(তিরমিযি)
তুবা জান্নাতের একটি গাছের নাম যার ছায়া শত বছরের রাস্তার সমান দৈর্ঘ্য। এই বৃক্ষের ফলের খোসা দিয়ে জান্নাতিদের বস্ত্র তৈরি করা হবে।

# জান্নাতের_ফল_ফলাদিঃ
জান্নাতে মৌসুমি সর্বপ্রকার ফল থাকবে। কলা ও কুল জান্নাতের ফল। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ ২৭-৩২)
জান্নাতি ফলের শীষ এত বড় হবে যে, তা যদি দুনিয়াতে আসত তবে সাহাবাগণ কিয়ামত পর্যন্ত তা
খেয়ে শেষ করতে পারতো না! (মুসলিম-কিতাব সালাতিন খুসুফ) আঙ্গুর, খেজুর, ডালিম জান্নাতি ফল। (সূরা নাবা ৩১-৩১)

জান্নাতি যখন কোনো বৃক্ষের ফল পাড়বে তখন সঙ্গে সঙ্গে উক্ত স্থানে অপর এক নতুন ফল ধরবে। (তাবারানি) জান্নাতের ফলমূল কখনো ফুড়িয়ে যাবে না এবং নষ্টও হবে না। সুবহানাল্লাহ।

★ জান্নাতের_প্রাসাদসমূহঃ
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত হবে। জান্নাতের কংকরসমূহ হবে মোতি ও
ইয়াকুতের, আর মাটি হবে জাফরানের । সকল জান্নাতির অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে, আর
সেখানে হুরেরা অবস্থান করবে। জান্নাতের প্রতিটি তাঁবু ৬০ মাইল বিস্তৃত হবে। ভিতরে খুব সুন্দর মোতি খোদিত থাকবে।

★ জান্নাতের নদীসমূহ
জান্নাতে সুস্বাদু পানি, সুস্বাদু দুধ, সুমিষ্ট শরাব ও স্বচ্ছ মধুর নদী প্রবাহিত হবে। জান্নাতের নদীসমূহের পানির রঙ ও স্বাদ সবসময় একই থাকবে। সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল জান্নাতি নদী।
(মুসলিম) কাওসার আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল  কে প্রদত্ত উপহার। কাওসার নদীর পানি দুধ অপেক্ষা শুভ্র এবং মধু অপেক্ষা মিষ্টি! জান্নাতি এক নদীর নাম হায়াত, যার পানি জাহান্নাম হতে মুক্তিপ্রাপ্তদের শরীরে ঢালা হবে, ফলে তারা দ্বিতীয়বার চারা গাছের ন্যায় সজিব হয়ে উঠবে।

★ জান্নাতের_ঝর্ণাসমূহঃ
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সালসাবিল যার পানিতে আদা মিশ্রিত স্বাদ পাওয়া যাবে৷ জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম "কাফুর", যার পানি পানে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে।

★ তাসনিম জান্নাতের আরেকটি ঝর্ণা। যার স্বচ্ছ পানি শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য বরাদ্দ হবে।

★ জান্নাতির বাজারঃ
জান্নাতে প্রত্যেক জুমু'আর দিন বাজার জমবে। জুমুয়ার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী জান্নাতীগণের সৌন্দর্য পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। মহিলারা শুক্রবারের বাজারে উপস্থিত হবে না তবে বসে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তাদের লাবণ্যতা বৃদ্ধি করবেন। (মুসলিম)

★ জান্নাতিদের খানাপিনাঃ
জান্নাতিদের সর্বপ্রথম খাদ্য হলো মাছ, এরপর গরুর গোশত। জান্নাতে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয় হলো তাসনীম যা শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের পরিবেশন করা হবে। জান্নাতের পরিষ্কার ও স্বচ্ছ শরাব " রাহিক" পানে সকল জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। রাহিক পান করার পর জান্নাতির মুখে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ অনুভব করবে। শরাব পানে তাদের মাথায় কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। সকল জান্নাতিদের একশো ব্যক্তির খাবারের শক্তি দেওয়া হবে। (তাবারানি) হাউজে কাউসারে উড়ে বেড়ানো পাখির গোশত ভক্ষণে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতিদের খাবার পরিবেশনের নিয়ম চালু থাকবে। (সূরা মারইয়াম ৬২)।

★ জান্নাতিদের_পোশকঃ
জান্নাতিরা সূক্ষ্ম ও পুরু সবুজ রেশমের কাপড় পড়বে। জান্নাতিরা হাতে সোনার অলংকার পড়বে।
খাঁটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাঁটি স্বর্ণের অলংকার, খাঁটি মোতির অলংকার এবং মোতিখচিত
স্বর্ণের অলংকারও জান্নাতিরা পড়বে। পোশাক কখনো পুরাতন হবেনা। জান্নাতি মহিলাদের ওড়না মান ও দামের দিক থেকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থেকে মূল্যবান হবে। জান্নাতিরা রেশমি রুমাল ব্যবহার করবে।(বুখারী)

★ জান্নাতিদের_সেবকঃ
জান্নাতিদের সেবকরা কৈশর বয়সী হবে। জান্নাতিদের সেবক এমন সুন্দর হবে যে,চলতে ফিরতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মোতি। সুরক্ষিত মোতি সদৃশ কিশোররা জান্নাতিদের সেবা করার জন্য ঘুরাফেরা করতে থাকবে।

★ আল্লাহর দর্শন
আল্লাহর দর্শনের সময় জান্নাতিদের চেহারা খুশিতে চককিতে থাকবে। জান্নাতে জান্নাতিরা এর স্পষ্টভাবে আল্লাহকে দেখবে যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদকে স্পষ্ট দেখা যায়। সুবহানাল্লাহ। জান্নাতের সকল বর্ণনা লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। এর প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ'ই ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছেন, যা কোনো মানব কল্পনাও করতে পারবে না৷ সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের জান্নাতের এসব নিয়ামত লাভ করার তাওফিক দিন-আমীন।

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)

হযরত আলী রাঃ,ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে গেছেন ৷ এদিকে হযরত ফাতিমা রাঃআঃ,গায়ে অত্যান্ত জ্বর অবস্থায়৷ ঘরের সমস্ত কাজ, শেষ করেছেন ৷ 

আলী রাঃ, মসজীদ থেকে এসে দেখে, ফাতিমা কাঁদতেছেন, আলী (রাঃ),প্রশ্ন করলেন,ও ফাতিমা তুমি কাঁদ কেন? ফাতিমা কোন উত্তর দিলেন না৷ ফাতিমা আরোজোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, আলী রাঃ কয়েকবার প্রশ্ন করার পরে, ফাতিমা রাঃ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 

ও আলী,,,,,,,,আমি স্বপ্নের মধ্যে দেখতেছি,আমার আব্বাজান, হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ সাঃ আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে কি যেন তালাশ করতেছেন ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময়, আমি পিছন দিক থেকে,আমার আব্বাজান কে ডাক দিলাম৷ ও আব্বাজান আপনি কি তালাশ করতেছেন? আব্বাজান
মুহাম্মাদুর রা:(সঃ) বলতেছেন, ও আমার ফাতিমা, আমিতো তোমাকে তালাশ করতেছি, তোমাকে
নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ আরো বললেনঃ ও আমার ফাতিমা,আজকে তো তুমি রোজা রাখবা ৷ 

সাহরী করবা আলীর দস্তরখানায়, আর ইফতার করবা আমি আব্বাজানের দস্তরখানায় ৷৷৷ আলী (রাঃ) এই স্বপ্ন শোনার পর, দু’জনের বুঝতে বাকী থাকলোনা, যে ফাতিমা আজকেই ইন্তেকাল করবেন৷ দুনো জন আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন৷ এই সময়ের মধ্যে হযরত হাসান হুসাইন (রাঃ) এসে জিজ্ঞাসা করতেছেন, ও আব্বাজান ও আম্মাজান আপনারা দুনোজন কাঁদেন কেন? ফাতিমার রাঃ এর একটা অভ্যাস ছিল, যখন হাসান হুসাইন রাঃ কোন কাজে বিরক্ত করতেন, তখন দুনো জনকে নানাজান এর কবরের কাছে যেতে বলতেন।

 আজকে ও ফাতিমা বলেন,তোমরা দুনোভাই এখন নানার কবরে চলে যাও, কবরের নিকট যাওয়ার সাথে সাথে,কবর থেকে আওয়াজ আসলো,ও আমার আদরের নাতীরা, এই মূহুর্তে তোমরা আমার কাছে কেন আসছো, আমার কাছে তো সব সময় আসতে পারবা, এখন যাও, যেয়ে মায়ের চেহারার দিকে তাকায়ে থাক, আজকের পরে তোমাদের মাকে আর পাবেনা৷

এই কথা শোনার পরে,দুনো ভাই কাঁদতেছে আর দৌড়াতে দৌড়াতে আম্মার নিকট চলে গেলেন।
যেয়ে আম্মাকে বললেন যে, তোমরা দুনোজন কেন কাঁদতেছ বুঝেছি, নানাজান আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আজকের দিনটা তোমার জন্য শেষ দিন, নানাজান তোমার চেহারার দিকে তাঁকায়ে থাকার জন্য আমাদের কে বলেছেন৷ বিকেলের দিকে হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর শরীর বেশি খারাপ হলো। তাকে বিছানাতে শোয়ানো হলো। ফাতিমা রাঃ মৃত্যুর পূর্বক্ষনে আলী রাঃ কে, তিনটি কথা বলেন ৷

【০১】ও আলী যেদিন থেকে আমি আপনার ঘরে এসেছি, ঐ দিন থেকে নিয়ে, আজ পর্যন্ত আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, আলী আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে, আমি সন্তানের কারনে, (আমি মেয়ের কারনে) আমার আব্বাজান অনেক লজ্জীত হবেন৷ বলেন আপনি আমাকে ক্ষমা করলেন কি না,আলী রাঃ বলেন ও ফাতিমা, তুমি এসব কি বলতেছো, আমি আলী তো তোমার যোগ্য ছিলাম না, তোমার আব্বাজান দয়া করে মেহেরবানী করে তোমাকে আমার,,, কাছে বিয়ে দিয়েছেন,বিয়ের দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত, আমি আলী তোমাকে কোনদিন
ঠিকমত দুইবেলা খানা খাওয়াতে পারিনাই, ও ফাতিমা তুমি বল, আমাকে ক্ষমা করছো কি না, তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর, তাহলে আমাকে ও কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে ৷

【০২】ও আলী আপনার সাথে আমার দ্বিতীয় কথা হল, আমি মারা যাওয়ার পরে, আপনি বিয়েকরে নিবেন, দুনিয়ার যে কোন মহিলাকে, আপনার পছন্দমত৷ আপনাকে আমি অনুমতি দিলাম৷ আর
আমার বাচ্চা দুইটাকে, সপ্তাহে একটা দিন আপনার কোলের মধ্যে করে নিয়ে ঘুমাবেন৷৷

【০৩】ও আলী আপনার সাথে আমার তৃতীয় কথা হল, হাসান হুসাইন যখন বালেগ হবে,তখন দুনো
ভাইকে আল্লাহর রাস্তায় সপর্দ করে দিবেন৷ এবং আমাকে রাতের বেলায় দাফন করবেন।
হজরত আলী (রাঃ) বললেনঃ "তুমি নবীর মেয়ে। আমি সবখানে খবর দিয়ে তোমায় দাফন করবো।
এতে সমস্যা কি? হজরত ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ "আামার কাফনের কাপড়ের ওপর দিয়ে সবাই অণুমান করবে যে, নবীর মেয়ে কতটুকু লম্বা ছিলো, কতটুকু সাস্হ ছিলো। এতে আমার পর্দা ভঙ্গ হবে।" হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর তাঁর লাশের খাটিয়া বহন করার মানুষ মাত্র তিনজন। হজরত আলী (রাঃ) এবং শিশু হাসান ও হোসাইন (রাঃ)আনহুমা ৷ হজরত আলী ভাবছিলেন
যে, খাটিয়া বহন করার জন্য মানুষ আরও একজন প্রয়োজন তবেই চার কোনায় চার জন কাঁধে নিতে পারবেন। এমন সময় হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) এলেন ও খাটিয়ার এক কোনা বহন করলেন। হজরত আলী প্রশ্নকরলেন, ও আবুজর আমি তো কাউকে বলিনাই, আপনি জানলেন কিভাবে ? হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সঃ) কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বললেন,
হে আবু জর! আমার ফাতিমার লাশ বহন করার জন্য লোকের অভাব, তুমি তাড়া তাড়ি চলে যাও। ও
আলী আমাকে তো হুজুরে আকরাম সঃ আসতে বলছেন ৷ হযরত ফাতিমা রাঃ আনহা কে যখন কবরে
নামাচ্ছেন, তখন হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) কবরের কাছে গিয়ে কবর কে উদ্দেশ্য করে বললেন..

আতাদরী মানিল্লাতী জি'না বিহা ইলায়কা?
হে কবর, তুই কি জানিস, আজ
তোর মধ্যে কাকে রাখছি?

【০১】
হা-যিহী সায়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাতী ফা-তিমাতা রাঃ আনহা, এটা জান্নাতের সকল মহিলাদের সর্দার,ফাতিমা (রাঃ)আনহা৷ কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০২】
হা-যিহী উম্মূল হাসনাইন রাঃ আনহুমা , এটা হযরত হাসান হুসাইন এর আম্মা ৷

.....এবার ও কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০৩】
হা-যিহী ঝাউযাতু আলিয়্যিন কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্, এটা হযরত আলী রাঃ এর স্ত্রী ৷

......এবার ও কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০৪【
হা-যিহী বিনতু রসুলুল্লাহি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এটা,দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে।
 খবরদার কবর বেয়াদবী করবি না "

"আল্লাহ্ তায়ালা কবরের জবান খুলে দিলেন, কবর
বললঃ

【০১】আনা বায়তুয-যুলমাতি
আমি অন্ধকার ঘর৷

【০২】আনা বায়তুদ-দূদাতী,
আমি সাপ বিচ্ছ্যুর ঘর৷

【০৩】আনা বায়তুন-নফরাতী,
আমি এমন একটি ঘর,
যার মধ্যে কোন বংশ পরিচয় কাজ হয়না...…

"আমি দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে
ফাতিমা কে চিনিনা,
হজরত আলীর স্ত্রীকে চিনিনা,
হাসান হোসাইনের আম্মাকে চিনিনা,
জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনীকে চিনিনা,

আমি শুধু চিনি-
ঈমান আর আমল!

Friday, September 6, 2019

নাস্তিকের কঠিন প্রশ্নের দাঁত ভাঙা জবাব আলেমের





এক নাস্তিক এক আলেম কে বলেছিল, ৩টা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আমি মুসলমান হয়ে যাব।

প্রশ্ন ১: আল্লাহ কোথায় আছে?
আল্লাহকে আমাকে দেখান?



প্রশ্ন ২: আল্লাহ নাকি জ্বিন জাতিকে জাহান্নামে শাস্তি দিবেন, কিন্তু জ্বিনজাতি তো আগুনের সৃষ্টি! তো আগুন কে আগুন দ্বারা কিভাবে শাস্তি দিবেন?



প্রশ্ন ৩: দুনিয়ায় যা হয় তা নাকি সব আল্লাহর নির্দেশে হয়। তাহলে আবার তিনি পাপের শাস্তি দিবেন কেন? পাপ ও তো তার নির্দেশেই হয়। তার প্রশ্ন শোনার পর আলেম কিছুই বললেন না, বরং শক্ত মাটির একটা টুকরা নিয়ে তার কপালে ঢিল মারলেন। এতে করে লোকটি আঘাত পেয়ে কাজী সাহেবের নিকট গিয়ে বিচার চাইলো যে, আমি তাকে প্রশ্ন করায় সে আমাকে আঘাত করেছে। এতে আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি। কাজী তখন আলেমকে ডেকে পাঠালেন এবং অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন।



আলেম বললেনঃ
তার প্রথম প্রশ্ন ছিল আল্লাহ কোথায়? আল্লাহকে দেখান? তো তাকে আমার প্রশ্ন হল, তার ব্যাথা কোথায়? ব্যাথা আমাকে দেখাক?

তার ২য় প্রশ্ন ছিল, আগুনের জাতিকে আল্লাহ আগুন দিয়ে কিভাবে শাস্তি দিবেন?

তো সে মাটির সৃষ্টি হয়ে মাটির আঘাতে ব্যাথা পেল কিভাবে? তার ৩য় প্রশ্ন ছিল, সব আল্লাহর নির্দেশে হওয়া সত্তেও তিনি শাস্তি দিবেন কেন?

তাহলে আমিও তো তাকে আল্লাহর নির্দেশে ঢিল মেরেছি, সে আপনার দরবারে বিচার দায়ের করল কেন? অসাধারণ যুক্তি।

Thursday, September 5, 2019

পবিত্র জুমার দিনে করনীয় (বিস্তারিত)


১। জুম’আর দিন গোসল করা।
২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩,

৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)

১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
১৮। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
১৯। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২০। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)

২১। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২২। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৩। জুম’আর আযান দেওয়া।(বুখারীঃ ৯১২)
২৪।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের আগে ও পরে মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)

হযরত হাসান বসরী (রহঃ)-এর ঘটনা

হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছাকাফী যখন ইরাকের ক্ষমতাভার গ্রহণ করলেন এবং সীমালঙ্গন ও স্বৈরাচারী কাজ শুরু করলেন, তখন হাসান বসরী (রহঃ) সেই অল্পসংখ্যক লোকদের একজন ছিলেন, যারা তার সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিলেন; বলিষ্ঠভাবে মানুষের মাঝে তাঁর অপর্কমের ঘোষণা করেছিলেন এবং সত্যের বাণীকে তাঁর মুখের উপর বলে দিয়েছিলেন।

হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ একটি প্রাসাদ নির্মাণের পর লোকদের মাঝে এই মর্মে ঘোষণা করলেন, তাঁরা যেন তাঁর প্রাসাদের দীর্ঘস্থায়িত্বের এবং বরকতের দু’আ করে। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) লোকদের এই সমবেত হওয়ার সূবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তিনি তাঁদের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলেন, তাঁদের উপদেশ দেয়ার জন্য তাঁদেরকে বোঝানোর জন্য এবং পার্থিব সম্পদের ব্যাপারে তাঁদের উদাসীন করার জন্য ও পরলৌকিক সম্পদের ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ জন্মানোর জন্য।

লোকজন হাজ্জাজের আকাশচুম্বী প্রাসাদ প্রদক্ষিণ করছে। প্রাসাদের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। প্রাসাদের চাকচিক্যের পূর্ণতা দেখে থমকে যাচ্ছে। তখন তিনি তাঁদের মাঝে বক্তব্য রাখার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন, যার সারাংশ হল—

‘যদি আমরা সর্বাদিক নিকৃষ্ট ব্যক্তির তৈরি করা প্রাসাদের দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাই, ফেরাউন এর চেয়ে কঠিন মজবুত এবং আকাশচুম্বী উঁচু প্রাসাদ তৈরি করেছিল।’ তারপর আল্লাহ তা’আলা ফেরাউনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং তাঁর আকাশছোঁয়া প্রাসাদকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন।

হাজ্জাজ যদি বুঝতে পারত যে, আকাশের অধিবাসীরা তাঁকে অপছন্দ করছে এবং পৃথিবীর অধিবাসীরা তাঁর থেকে উপদেশ গ্রহণ করছে। পরদিন হাজ্জাজ যখন তাঁর সভাকক্ষে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি রাগে ফেটে পড়ছিলেন। তিনি তাঁর সভাসদদের বললেন—

‘তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমরা দূর হও। বসরার এক কৃতদাস উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের সামনে যা ইচ্ছে তা-ই বলল আর তোমাদের মাঝে এমন কেউ ছিল না, যে তাঁকে প্রতিহত করবে অথবা তাঁর কথায় অস্বীকৃতি জানাবে। আল্লাহর কসম করে বলছি, হে কাপুরুষের দল! অবশ্যই আমি তোমাদের তাঁর রক্ত পান করাব।’ তারপর তিনি তরবারী ও নাতা (যে প্রশস্ত চামড়ার বিছানার উপর মানুষের শিরোচ্ছেদ করা হয়) আনার আদেশ করলেন। হাজ্জাজের আদেশমতো তা উপস্থিত করা হলো।

তারপর জল্লাদকে ডেকে হাজ্জাজের সামনে উপস্থিত করা হলো। তারপর হাজ্জাজ হাসানকে ধরে আনার জন্য কয়েকজন সৈন্যকে পাঠালেন। অল্পক্ষণ পরেই হযরত হাসান বসরী (রহঃ) হাজ্জাজের দরবার কক্ষে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি এলে সকলের হৃদয়ে কম্পন বেড়ে গেল। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) যখন তরবারী, নাতা ও জল্লাদকে উপস্থিত দেখলেন, তখন তিনি তাঁর ঠোঁটদ্বয় ঈর্ষৎ নাড়ালেন। তারপর হাজ্জাজের দিকে এগিয়ে গেলেন। অথচ তখনও তাঁর সাথে মুমিনের মহিমা, মুসলমানের আত্মসম্মানবোধ এবং আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারীর স্থিরতা।

হাজ্জাজ হযরত বসরীর এ অবস্থান দেখে প্রচন্ড ভয়ে বলতে লাগলন, আবু সাঈদ! এদিকে এসো, এখানে বসো। এ কথা বলে তিনি হাসান বসরী (রহঃ) কে বসার জায়গা করে দিচ্ছিলেন। হাজ্জাজের এ অবস্থা দেখে লোকজন বিস্ময় ও হতবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন। তারপর হাজ্জাজ ও হযরত হাসান বসরী (রহঃ) উভয়ে নিজ-নিজ আসন গ্রহণ করলেন।

হাসান বসরী (রহঃ) আসন গ্রহণ করলেন এবং তাঁর দিকে তাকালেন এবং ধর্মীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন আর হযরত হাসান বসরী (রহঃ) তাঁর প্রতিটি প্রশ্নের স্থিরচিত্তে, জাদুকরী ভাষায় এবং প্রগাঢ় জ্ঞানের আলোকে দিতে লাগলেন। হযরত হাসান বসরীর উত্তর শুনে হাজ্জাজ বললেন, হে আবু সাঈদ! আপনি জ্ঞানীদের সম্রাট!! তারপর তিনি সুগন্ধি আনতে বললেন এবং তা হাসান বসরী (রহঃ)-এর দাঁড়িতে মেখে তাঁকে বিদায় জানালেন।

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বেরিয়ে এলে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের দ্বাররক্ষী তাঁর পিছু-পিছু ছুটে এল এবং বলল, হে আবু সাঈদ! হাজ্জাজ আপনার সাথে যে আচরণ করেছেন, তাঁর বিপরীত আচরণ করার জন্য তিনি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, যখন আপনি অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন আপনি উভয় ঠোঁট নেড়ে বিড়বিড় করে কী যেন পড়েছিলেন। বলুন তো আপনি কি পড়ছিলেন? হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বললেন, আমি পড়ছিলাম:

‘হে আমার নিয়ামতের অভিভাবক! হে আমার বিপদের আশ্রয়দাতা! আপনি তাঁর ক্রোধকে আমার জন্য শীতল ও শান্তিময় বানিয়ে দিন, যেমনিভাবে আপনি আপনার প্রিয়বন্ধু হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্য আগুন শীতল ও শান্তিময় বানিয়েছিলেন।’’

জান্নাত-জাহান্নামের সৃষ্টি ও জাহান্নামের কতিপয় শাস্তি


পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি সকল কিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তেমনি ভাবে জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী করেছেন। জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টির পর জিবরীল (আঃ)-কে তা পরিদর্শন করতে পাঠান। তিনি দেখে এসে জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থা বর্ণনা করেন। সে সম্পর্কে একটি হাদীছ এবং জাহান্নামের কতিপয় শাস্তি সম্পর্কে একটি হাদীছ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন জান্নাত তৈরী করলেন, তখন জিবরীলকে বললেন, যাও জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে জান্নাত এবং জান্নাতের অধিবাসীদের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রস্ত্তত করছেন, সবকিছু দেখে এসে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! যে কোন ব্যক্তি জান্নাতের এ সুব্যবস্থার কথা শুনবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জান্নাতের চারিদিকে অপসন্দনীয় বস্ত্ত দ্বারা ঘিরে দিলেন। তারপর পুনরায় জিবরীল (আঃ)-কে বললেন, হে জিবরাঈল! আবার যাও, জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে জান্নাত দেখে এসে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! আমি আশংকা করছি যে, জান্নাতে কোন ব্যক্তিই প্রবেশ করতে পারবে না। তারপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, অতঃপর আল্লাহ জাহান্নাম তৈরী করে বললেন, হে জিবরীল! যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি গিয়ে জাহান্নাম দেখে এসে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! যে কেউ এ জাহান্নামের ভয়াবহ অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও তাতে প্রবেশ করতে চাইবে না। অতঃপর আল্লহ জাহান্নামের চারদিক প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্ত্ত দ্বারা ঘিরে দিলেন এবং জিবরীল (আঃ)-কে বললেন, আবার যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি গেলেন এবং দেখে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম করে বলছি, আমার আশংকা হচ্ছে সকলেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’
(তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৯৬, হাদীছ হাসান) ।

আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন, ‘আমার নিকট দু’জন ব্যক্তি আসল। তারা দু’জন আমার দু’বাহুর মাঝামাঝি ধরে আমাকে এক ভয়াবহ কঠিন পাহাড়ের নিকট নিয়ে আসল। তারা দু’জন বলল, আপনি এ পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমি এ পাহাড়ে উঠতে সক্ষম নই। তারা দু’জন বলল, আমরা আপনাকে পাহাড়ে উঠার কাজটি সহজ করে দিব। আমি উঠলাম, এমনকি পাহাড়ের উপরে চলে আসলাম। হঠাৎ আমি একটি বিকট আওয়াজ শুনলাম। আমি বললাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের বিলাপ-আর্তনাদ ও কান্না।

তারপর তারা আমাকে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ আমি দেখলাম, একদল লোককে পায়ের সাথে বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ফেটে দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে আছে এবং চোয়াল হ’তে রক্ত ঝরছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা ঐসব লোক যারা সময়ের পূর্বেই ইফতার করত। অর্থাৎ ছিয়াম পালন করত না। তখন তিনি বললেন, ইহুদী-নাছারারা ধ্বংস হোক। … তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখি কিছু লোক খুব ফুলে উঠে মোটা হয়ে আছে। আর খুব দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের দৃশ্য খুব বিশ্রী। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা ঐ সব লোক যারা কাফের অবস্থায় নিহত হয়েছে। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখলাম, কিছু লোক ফুলে মোটা হয়ে আছে। অতি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ দুর্গন্ধ যেন শৌচাগারের ন্যায়। আমি বললাম, এরা কারা? তারা দু’জন বলল, এরা হচ্ছে ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল, দেখলাম, কিছু মহিলা, প্রচুর সাপ তাদের স্তনগুলিতে বার বার ছোবল মারছে। আমি বললাম, এদের কি হয়েছে? এদের এ অবস্থা কেন? তারা বলল, এরা ঐসব মহিলা, যারা বাচ্চাদের দুধ পান করাতো না। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখলাম, বেশকিছু ছেলে তারা দু’নদীর মাঝে খেলা করছে। আমি বললাম, এ সমস্ত ছেলে কারা? তারা বলল, এগুলি মুমিনদের শিশু সন্তান। তারপর তারা আমাকে আরো উঁচু একটি পাহাড়ে নিয়ে গেল। হঠাৎ দেখলাম, তিনজন মানুষ শরাব পান করছে। আমি বললাম, এ লোকগুলি কারা? তারা বলল, এ লোকগুলি হচ্ছে জা‘ফর, যায়েদ ও ইবনে রাওয়াহা (এ তিনজন লোক মু‘তার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন)। তারপর তারা আমাকে অন্য একটি উঁচু পাহাড়ে নিয়ে গেল। দেখলাম, তিনজন লোক। আমি বললাম, এ লোকগুলি কারা? তারা বলল, তাঁরা হচ্ছেন ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা (আঃ), তাঁরা আপনার অপেক্ষায় রয়েছেন’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৩০)

মার্কিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইউএস অরিভিয়া ইসলাম এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মার্কিন গাইনী ও অবস বিশেষজ্ঞ ডা. ইউএস অরিভিয়া ইসলাম। নিজের ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে ডা. অরিভিয়া বলেন, আমি আমেরিকার একটি হাসপাতালে গাইনী ও অবস বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করি।

একদিন হাসপাতালে এক আরব মুসলিম নারী এলেন বাচ্চা প্রসবের জন্য। প্রসবের পূর্বমুহূর্তে তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। প্রসব মুহূর্ত ঘনিয়ে এলে তাকে জানালাম, আমি বাসায় যাচ্ছি, আর আপনার বাচ্চা প্রসবের দায়িত্ব অর্পণ করে যাচ্ছি অন্য এক ডাক্তারের হাতে। মহিলা হঠাত্ কাঁদতে লাগলেন, দ্বিধা ও শঙ্কায় চিত্কার জুড়ে দিলেন, ‘না না, আমি কোনো পুরুষ ডাক্তারের সাহায্য চাই না।


আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এ অবস্থায় তার স্বামী আমাকে জানালেন, সে চাইছে তার কাছে যেন কোনো পুরুষের আগমন না ঘটে। কারণ সে সাবালক হওয়া থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত তার আপন বাপ, ভাই ও মামা প্রভৃতি মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কেউ তার চেহারা দেখেনি। আমি হেসে উঠলাম, তারপর চরম বিস্ময় নিয়ে তাকে বললাম, অথচ আমি কিনা এমন এক নারী আমেরিকান এমন কোনো পুরুষ নেই, যা তার চেহারা দেখিনি। অতঃপর আমি তার আবেদনে সাড়া দিলাম।

বাচ্চা প্রসবের পরদিন আমি তাকে সাহস ও সান্ত্বনা দিতে এলাম। পাশে বসে তাকে জানালাম, প্রসব-উত্তর সময়ে দাম্পত্যমিলন অব্যাহত রাখার দরুন আমেরিকায় অনেক মহিলা অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ এবং সন্তান প্রসবঘটিত জ্বরে ভোগেন। অতএব আপনি এ সম্পর্ক স্থাপন থেকে কমপক্ষে ৪০ দিন বিরত রাখবেন। এ ৪০ দিন পুষ্টকর খাদ্য গ্রহণ ও শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকার গুরুত্ব ও তুলে ধরলাম তার সামনে। এটা করলাম আমি সর্বশেষ ডাক্তারি গবেষণার ফলাফলের নিরিখে।

অথচ আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে তিনি জানালেন, ইসলাম এ কথা বলে দিয়েছে। প্রসব-উত্তর ৪০দিন পবিত্র হওয়া অবধি ইসলাম স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ করেছে। তেমনি এ সময় তাকে নামাজ ও রোজা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে।

এ কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে বিমূঢ় হলাম। তাহলে আমাদের এত গবেষণা আর এত পরিশ্রমের পর কেবল আমরা ইসলামের শিক্ষা পর্যন্ত পৌঁঁছলাম! আরেকদিন এক শিশু বিশেষজ্ঞ এলেন নবজাতককে দেখতে। তিনি শিশুর মায়ের উদ্দেশে বললেন, বাচ্চাকে যদি ডান কাতে শোয়ান তবে তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে করে তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে।

শিশুর বাবা তখন বলে উঠলেন, আমরা সবাই সর্বদাই ডান পাশ হয়ে ঘুমাই। এটা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। এ কথাশুনে আমি বিস্ময়ে থ হয়ে গেলাম! এই জ্ঞান লাভ করতে আমাদের জীবনটাই পার করলাম আর সে কি-না তার ধর্ম থেকেই এ শিক্ষা পেয়ে এসেছে!


ফলে আমি এ ধর্ম সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনার জন্য আমি এক মাসের ছুটি নিলাম এবং আমেরিকার অন্য শহরে চলে গেলাম, যেখানে একটি ইসলামিক সেন্টার আছে। সেখানে আমি অধিকাংশ সময় নানা জিজ্ঞাসা আর প্রশ্নোত্তরের মধ্যে কাটালাম। আরব ও আমেরিকার অনেক মুসলমানের সঙ্গে ওঠাবসা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ এর কয়েক মাসের মাথায় আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলাম।

মেষপালক হিসেবে মুহাম্মাদ (সঃ)

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যখন চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে ছিলেন, তখন তিনি চাচার অবস্থা স্বচ্ছল না থাকায় মেষপাল চরাতেন । প্রায় নবীগণই দেখা যায় প্রথম জীবনে মেষপাল চরানোর কাজ করতেন ।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজেই বলে গেছেন, তিনি কিছু পয়সার বিনিময়ে অন্যলোকেরও মেষ চরাতেন । আমাদের দেশের মেষপালক বালকদের মতো তিনি উন্মুক্ত প্রান্তরে সারাদিন পালাক্রমে মেষ চরাতেন । পরবর্তীকালে যখন তাঁর সাহাবীগণ (সহচর) তাঁকে পাকা জাম এনে দিতেন, তখন তিনি বলতেন পাকা কালো জাম আনতে, কেননা পাকা কালো জাম খেতে সুস্বাদু । এ অভিজ্ঞতাও তাঁর বালক জীবনের ।


মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রথম সিরিয়া যাত্রা

হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর বয়স যখন ১২ বছর তখন আবু তালিব ভাবলেন সিরিয়াতে বাণিজ্য উপলক্ষ্যে যাত্রা করবেন । পতিমধ্যে নানা বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের জন্য ভাতিজা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে না নিয়ে যাওয়ার কথাও চিন্তা করলেন । কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) চাচা আবু তালিবকে এতই ভালোবাসতেন, তিনি তাঁর সঙ্গে যাবেনই । তাই আবু তালিব তাঁকে সঙ্গে নিয়ে উভয়েই বসরা নামক স্থানে হাজির হলেন । ঐতিহাসিকগণ বলেন, এই সময়ে বসরায় বুহাইরা নামক এক খ্রীস্টান পাদ্রী
বালক মুহাম্মদ (সঃ)-কে দেখেন । তাঁর দৃষ্টিতে বালক মুহাম্মদ (সঃ)-এর এমন কোন বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে যাতে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই বালক একদিন নবীর মর্যাদা লাভ করবেন । 

আবু তালিবকে তিনি সতর্ক করেন, যাতে তিনি এই অসাধারণ বালককে আর কোথাও না নিয়ে যান, কারণ ইহুদীরা এর ক্ষতি করতে পারে । এই ভ্রমণই হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে প্রথম বহির্বিশ্বের স্বাদ আস্বাদন করায়, তিনি বিশ্বের বিরাটত্ব আপন অন্তরে অনুভব করেন । এতদিন তিনি ছিলেন অনুর্বর মক্কার মরুভূমিতে । আজ তিনি শস্য-শ্যামল বসরাতে । তিনি সামুদ গোত্রের রাজত্বভূমি বিরাট প্রান্তর ওয়াদিল কুরাও অতিক্রম করেন । তিনি দেখলেন তাঁদের ধ্বংসাবশেষ । পরবর্তীকালে পবিত্র কোরআনে যার বর্ণনাও আছে । হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর বয়স যদিও তখন ১২ বছর, কিন্তু তাঁর পর্যবেক্ষণ শক্তির প্রসারতা ও গভীরতা আকাশের মতো বড় ও সমুদ্রের মতো বিশাল হয়ে উঠেছিল । এবারের বাণিজ্য যাত্রায় আবু তালিব আশাতীত লাভবান হয়েছিলেন । এই বাণিজ্যযাত্রা এত সুখকর ছিল যে, সারা জীবন তিনি তা ভোলেননি ।

Wednesday, September 4, 2019

স্ত্রীর বিস্বাসে তওবা করে ইসলাম গ্রহণ করলেন মুনাফেক স্বামী




এক মহিলার স্বামী ছিল মুনাফেক । সে মহিলার অভ্যাস ছিল প্রতিটি জিনিসের পূর্বে সে "বিসমিল্লাহ" পড়তো, হউক

তা কাজ বা কথা । একদিন তার স্বামী বলল (মনে মনে চিন্তা করল) , আমি এমন একটি কাজ করব যা দ্বারা আমি তাকে "বিসমিল্লাহ" বলার ক্ষেত্রে লজ্জিত করবো । অতএব, তার কাছে একটি থলে দিল এবং তাকে বলল , তুমি এটাকে হেফাজত করে রাখ ।

ঐ মহিলাটি "বিসমিল্লাহ" বলে থলেটি কে এক জায়গায় লুকিয়ে রাখলো, সুযোগ বুঝে এক সময় তার স্বামী থলেটি নিয়ে নিল এবং থলেটিকে তার বাড়ির কূপে ফেলে দিল । অতঃপর স্ত্রীর নিকট


এসে থলেটি ফেরত চাইল । মহিলাটি যথাস্থানে এসে "বিসমিল্লাহ" বলে হাত বাড়িয়ে দিল । আল্লাহ তায়ালা তখন ঐ "বিসমিল্লাহ"বলার বদৌলতে মহিলাকে যাতে অপমানিত হতে না হয় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তে তৎক্ষণাৎ অবতরণের আদেশ প্রদান করলেন এবং থলেটিকে তার স্থানে পূর্বের ন্যায় রেখে দিতে বললেন ।


অবশেষে সে তা যেভাবে রেখেছে সে ভাবেই পেল । তার স্বামী আশ্চর্যান্বিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইল। কিতাবুল কালয়ুবি ঘটনা নং ১১ পৃষ্ঠা নং ৪৫ সুবাহানাল্লাহ ( মহান আল্লাহ্ কত মেহের বান দেখেছেন আল্লাহ কখন তার বান্দাহদের অন্যায় ভাবে অযথা অপমানিত হতে দেন না।) রাসূল (সাঃ) এর উম্মাতি হিসেবে এই লেখাটা শেয়ার করতে ভুলবেন না ।

দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সকল দোয়া


১।ঘুমাতে যাওয়ার সময় দোয়া

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া-আহ'ইয়া।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরন করি,আবার তোমারই নামে জীবন ধারন করি।


২।ঘুম থেকে উঠার পরের দোয়া

উচ্চারণঃ আলহামদুলিল্লাহিল লাজি আহইয়া নাফছি বা'দা মা আমাতাহা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।

ফজিলতঃ রাসূল (সঃ) ঘুম থেকে উঠেই এই দোয়া পড়তেন। এই দোয়া পড়লে সারাদিন ভালো কাটবে। (তিরমিজী শরীফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-১৭৮)


৩।ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ের দোয়া

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক'কালতু আলাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কু'ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ

ফজিলতঃ রাসূল (সঃ) বলেছেন যে ব্যাক্তি এই দোয়া পড়ে ঘর থেকে বেরোবে সকল বিপদ থেকে সে নিরাপদে থাকবে ও ইবলিশ শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিজী শরীফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-১৮০)



৪।টয়লেটে যাওয়ার আগে দোয়া

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবথি ওয়াল খাবায়ি'থ

ফজিলতঃ এই দোয়া পড়ে রাসূল (সঃ) টয়লেটে ঢুকতেন। টয়লেটে ঢুকার আগে এই দোয়া পড়তে বলেছেন। (বুখারী শরীফ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৩৬)।



৫।টয়লেট থেকে বের হওয়ার :-আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আযহাবা আল্লীল আযা ওয়াআ-ফানী।

অর্থঃ সেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দিলেন এবং প্রশান্তি দান করেছেন (ইবনে মাজা)।



৬।মসজিদে প্রবেশ ও বাহিরে হওয়ার সময়ের দোয়ামসজিদে প্রবেশ করার দোয়াঃ



উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাফ তাহ্লী আবওয়াবা রাহমাতিকা

মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়াঃ



আল্লা-হুম্মা ইন্নি আছআলুকা-মিন ফাদলিকাস্ত্রী সহবাসের দোয়াবিছমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিব-নাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাজাকতানা।



৭।কাপড় পরিধানের দোয়া

:-আল্হামদু লিল্লাহিল্লাজী কাছানী মা উয়ারী বিহী আওরাতী অ আতাজাম্মাল্লু বিহী ফী হায়া-তী।


৮। খাবার শুরু ও শেষ করার দোয়া খাবারের শুরুতেঃ 

বিসমিল্লাহে অ-আলা বারকাতিল্লাহেখাবারের পরঃ আলহামদু-লিল্লা হিল্লাজী আত্ব আমানা অ- ছাক্কানা অ-জা আলানা মিনাল মুছলেমীন।


৯।ঘর হইতে বাহির হওয়ার দোয়া:-

বিছমিল্লাহে তাওয়াক কালতু আলাল্লাহে।


১০:-দাওয়াত বা অন্যের ঘরে খাওয়ার পর দোয়া:-

আল্লাহুম্মা আত্বয়েম মান আত্বআমানী ওয়াছ্ক্কে মান ছাক্কানী।



১১।সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার (তিন বার পাঠ করা)

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজী লা ইয়াদুররু মাআসমিহী শাইয়ুন ফিল আরদি ওলা ফিস সামাই ওয়াহুয়াস সামিউল আলীম।



অর্থ : আমি সকালে বা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এমন আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোন কিছুই ক্ষতি করতে পারে না।

ফজিলত : যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়া তিন বার করে পাঠ করবে, কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।



১২।অন্যান্য দোয়াসমূহ রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য প্রাপ্তির দোয়া

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বান নাছি মুযহিবাল বাছি - ইশফি আনতা শাফি - লা শাফি ইল্লা আনতা শিফা'ন লা ইয়োগাদিরু সুকমা।



ফজিলতঃ আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (সাঃ) অসুস্থ ব্যাক্তিদের উপর এই দোয়া পড়ে ফু দিতেন। অসুস্থ ব্যাক্তি দ্রুত আরোগ্য লাভ করতো। (বুখারী শরীফ খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৮৫৫)


১৩।ব্যাথা উপশমের দোয়া উচ্চারণঃ 

সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী সুবহানাল্লাহীল আজীমি ওয়া বিহামদিহী

১৪। আস্তাগফিরুল্লাহফজিলতঃ 

হুজুর সাঃ বলেন, এই দোয়া প্রত্যহ ফজর নামাজের পূর্বে বা পরে ১০০ বার করে পড়, সংসার দুনিয়া আপনা আপনি তোমার দিকে ফিরবে অর্থাত দুনিয়া তোমাকে হেয় ও লাঞ্ছিত অবস্থায় ধরা দিবে এবং এতদ্ভিন্ন আল্লাহতায়ালা এর একেকটি শব্দ হতে এক একেক জন ফেরেশতা তৈরী করে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত তসবীহ পাঠে নিযুক্ত করে দিবেন উহার সমুদয় সোয়াব তুমি পাবেএর মুল বক্তব্য হচ্ছে এস্তেগফার। বলাবাহুল্য গুনাহের কারনেই মানুষের রিজিকের সঙ্কীর্নতা এবং সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট ও পেরেশানী ঘটে থাকে। এই আমল নিয়মিত করার মাধ্যমে সংসারে কোন অভাব অনটন থাকতেই পারে না।


১৪। প্রত্যেক নামাযের পরের দোয়া :-

সুবহানাল্লাহ্ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং একবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদা্হু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শা্য়্যিন ক্বাদীর।ফযীলতঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর উক্তরূপে তসবীহ্ পাঠ করে তার সকল গুনাহ্ মার্জিত হয়ে যায় যদিও তা সমুদ্রের ফেণরাশির মত অফুরন্ত হয়।


১৫।

 যে প্রত্যহ ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ও বিহামদিহী’ পাঠ করে তার পাপরাশি সমুদ্রের ফণরাশির ন্যায় অপরিসীম হলেও তা ক্ষমা করা হয়।


১৬।মাতা-পিতার জন্য সন্তানের দোয়া 

উচ্চারণঃ রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা। (সূরা বণী ইসরাইল, আয়াতঃ ২৩-২৫)অর্থঃ হে আল্লাহ্‌ আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি সেই ভাবে সদয় হউন, তাঁরা শৈশবে আমাকে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছেন।


১৭।ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করার দোয়া

রাব্বানা লা’তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব। (সুরা আল ইমরান, আয়াতঃ ০৮)অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, সরলপথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিওনা এবং তুমি আমাদের প্রতি করুনা কর, তুমিই মহান দাতা।


১৮।ভুল করে ফেললে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া 

উচ্চারণঃ রাব্বাবা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির্‌লানা ওয়াতার হামনা লানা কুনান্না মিনাল খা’সিরিন।অর্থঃ হে আল্লাহ্‌, আমি আমার নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। এখন তুমি যদি ক্ষমা ও রহম না কর, তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।


১৯।গুনাহ্‌ মাফের দোয়া 

উচ্চারণঃ রাব্বানা ফাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ্‌ফানা মায়াল আবরার। (সূরা আল ইমরান, আয়াতঃ ১৯৩)অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দাও, আমাদের থেকে সকল মন্দ দূর করে দাও এবং আমাদের নেক লোকদের সাহচার্য দান কর।


২০।ক্ষমা ও রহমতের দোয়া 

উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আর আমার প্রতি রহম কর, তুমিই তো উত্তম দয়ালু।


২১।ঈমান ঠিক রাখার দোয়া 

উচ্চারণঃ ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা।অর্থঃ হে মনের গতি পরিবর্তনকারী, আমার মনকে সত্য দ্বীনের উপর স্থিত কর।


২২।অস্থিরতায় পাঠ করার দোয়া 

উচ্চারণঃ আল্লাহু ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগীছু।অর্থঃ হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী আল্লাহ্‌ তোমার রহমত দ্বারা আমাকে সাহায্য কর।এবং



উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানান্নাহিল আযীম।অর্থঃ মহান আল্লাহ বড়ই পবিত্র, আল্লাহ বড়ই পবিত্র ও মহান।
২৩। বিপদে আল্লাহর সাহায্য লাভের জন্য দোয়া 

উচ্চারণঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মাল নাসির।



মহান আল্লাহর সাহায্যই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম জামিনদার। তিনি কতইনা উত্তম প্রভু এবং উত্তম সাহায্যকারী।সাইয়্যিদুল ইস্তিগফারউচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহ্‌দিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাছত্বোয়াতাতু, আউযুবিকা মিন শাররি মা ছানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি, ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আন্তা।(যাদুল মাআদ)।



অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা। আর আমি সাধ্যমত তোমার অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতির উপর কায়েম আছি। আমি মন্দ যা করেছি তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমার উপর তোমার প্রদত্ত নেয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি। আর আমার গুনাহ্‌গুলো স্বীকার করছি। অতএব আমাকে ক্ষমা কর। কারণ তুমি ছাড়া গুনাহ্ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।ফজিলতঃ রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ এ কথাগুলো সন্ধ্যা বেলায় বললে, অতপর সকাল হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তোমাদের কেউ তা সকাল বেলায় বললে, অতপর সন্ধ্যার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী, তিরমিযী) ।


২৪।অত্যাচারের ভয় থেকে মুক্তির দোয়া 

উচ্চারণঃ আল্লাহুকফিনাহু বিমা শিতা আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফী ন্ হহুরিহিম ওয়া নাউজু বিকা মিন শুররিহিম |জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়াউচ্চারণঃ রব্বি জীদনী ঈলমাঅর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও ।


২৫।বিশ লক্ষ নেকীর দোয়া 

উচ্চারনঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা শারিকালাহু আহাদান ছামাদান লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউ লাদ ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।ফজিলতঃ যে ব্যাক্তি এই দোয়া একবার পাঠ ক রবে তার আম ল নামায় বিশ লক্ষ নেকী লেখা হবে।


২৬।এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নেকীর দোয়া 

যে ব্যাক্তি দৈনিক ১০০ বার "সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী" পড়বে তা আমল নামায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নেকী লেখা হবে।

আবূ ত্বালিবের মৃত্যুর ঘটনা

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, যখন আবূ ত্বালিব মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হ’লেন, রাসূল (সাঃ) তার নিকট গেলেন।আবূ জাহলও সেখানে ছিল। নবী (সাঃ) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -কালেমাটি একবার পড়ুন, তাহ’লে আমি আপনার জন্য আল্লাহ্‌ নিকট কথা বলতে পারব।

তখন আবূ জাহল ও আব্দুললাহ ইবনু আবূ উমাইয়া বলল, হে আবূ ত্বালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হ’তে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে একথাটি বারবার বলতে থাকল। সর্বশেষ আবূ ত্বালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তা হ’ল, আমি আব্দুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর নবী (সাঃ) বললেন, ‘আমি আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়’।এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হল: ‘নবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয়, তবুও যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী’ [সূরা তওবা – ১১৩]

আরো নাযিল হল: ‘আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে হিদায়াত করতে পারবেন না’ [সূরা কাছাছ – ৫৬]

[ বুখারী হা/৩৮৮৪ ‘আনছারদের মর্যাদা’অধ্যায়, ‘আবু ত্বালিবের কাহিনী’অনুচেছদ ]

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রা:) হ’তে বর্ণিত যে, তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁর সামনে তাঁর চাচা আবূ ত্বালিবের আলোচনা করা হ’ল, তখন তিনি বললেন, আশা করি কিয়ামতের দিনে আমার সুফারিশ তার উপকারে আসবে। অর্থাৎ আগুনের হালকা স্তরে তাকে ফেলা হবে। যা তার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছাবে আর এতে তার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে (ঐ, হা/৩৮৮৫)।
শিক্ষা:

১. হেদায়েতের মালিক আল্লাহ্‌ তা‘আলা। তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। এজন্য সবসময় তার কাছে হেদায়েত চাইতে হবে।
২. জাহান্নামের আযাব অত্যন্ত ভয়াবহ।সবচেয়ে হালকা শাস্তি হওয়ার পরেও যদি আবূ ত্বালিবের এই অবস্থা হয়, তাহ’লে অন্যদের কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়।
৩. সমাজ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা মানুষকে অনেক সময় হক গ্রহণ থেকে বিমুখ রাখে।

জার্মানিতে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ লাখ!


বর্তমানে জার্মানিতে মুসলিমদের সংখ্যা চল্লিশ লাখের মতো, এই বিশাল সংখ্যক মুসলিম তাও আবার এমন একটি ইহুদি খ্রিষ্টানদের দেশে এলো কিভাবে ?

১৯৬০ এর দশক থেকে মুসলমানরা তুরস্ক থেকে জার্মানিতে হিজরত বা অভিবাসন করেন এবং মুসলমান সমাজ গঠন করেন। এখন সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা চল্লিশ লাখের মতো।
মুসলমানরা জার্মানিতে বহু মসজিদ, ইসলামী সংস্থা এবং ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। হামবুর্গে ইসলামিক সেন্টারের মতো মিউনিখ এবং আঁচে’তেও বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছে। জার্মানিতে তৎপর এইসব ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রমগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুরস্ক থেকে আসা মুসলমানরাই চালিয়ে থাকে। তুরস্কের ইসলামপন্থী দলগুলো সেদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে তারা তুরস্কের বাইরে চলে যায় এবং তাদের কর্মতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে। বিশেষ করে তারা ইউরোপের দিকে যেতে পছন্দ করতো। এভাবেই তারা জার্মানি চলে যায় এবং নিজ দেশে কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা জার্মানিতে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে।

জার্মানিতে তাদের এরকম কার্যক্রম পরিচালনার একটি প্রতিষ্ঠান হলো ‘গোরুশ’ জাতীয় সংস্থা। ইরানেও ইসলামী বিপ্লবের বিজয় জার্মানিতে তৎপর ইসলামী দল ও সংস্থাগুলোর ভেতরে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। মুসলমানদের কর্মতৎপরতার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক ছিল তাদের সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া। জার্মানিতে মুসলমান ছাত্রদের শতকরা নব্বুই ভাগ ইসলামী শিক্ষার ক্লাসগুলোতে যায় এবং শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ছাত্র অংশ নেয় কুরআন শিক্ষার ক্লাসে। জার্মানির স্থানীয় মুসলমানরা বিশেষ করে যুবক শ্রেণী সেদেশে ইসলামী সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জার্মানির একজন খ্যাতিমান মুসলিমের নাম হলো মুরাদ বেলফার্ড হফম্যান। তিনি মরক্কোতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মুসলমান হবার পর তিনি জার্মানির সমাজে ইসলামকে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

বেলজিয়ামের মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিন ভাগই ছিলো মুসলমানরা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্ক থেকে এই দেশে হিজরত করে। ১৯৭০ সালের প্রথম দশকগুলোতে ব্রাসেললে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৮০ সালের শেষ নাগাদ ৩০০ মসজিদ এবং হোসাইনিয়া তৈরি হয়েছিল বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের মুসলমানরা প্রধানত মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড এবং মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের কাছ থেকে প্রেরণা লাভ করেছে।

হল্যান্ডেও ১০ লাখের মতো মুসলমান রয়েছে। এই সংখ্যা হল্যান্ডের মূল জনসংখ্যার ছয় ভাগ। এখানকার মুসলমানরাও উত্তর আফি্রকা এবং তুরস্ক থেকে এসেছে। ১৯৭৯ সালে হল্যান্ডে তুর্কিদের সাংস্কৃতিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে ইসলামী বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার ধারা সৃষ্টি হয়। মসজিদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইসলামিক সেন্টার এতো বেশি গড়ে ওঠে যে ১৯৮০’র দশকে সেখানে মসজিদের সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাশে। হেগের মুসলমানরা মুসলিম তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে ‘কেবলা’ নামক ম্যাগাজিন ছাপেন। এই কেবলা ইসলামী আদর্শ ও বিধি বিধানগুলোর প্রচার প্রসারে নানামুখি প্রভাব ফেলেছিল।

ইউরোপের একটিমাত্র দেশ আলবেনিয়া, যেখানে পুরো জনসংখ্যার সত্তুর ভাগই হলো মুসলমান। বলকানের ওপর ওসমানী আধিপত্যের সময় তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এদিক থেকে আলবেনিয়ার মুসলমানদের ভিত যথেষ্ট মজবুত। সেখানে কমিউনিজমের পতনের ফলে ধর্মীয় বা মাযহাবি কর্মকাণ্ড পরিচালনার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। সাবেক যুগোস্লাভিয়াতেও ত্রিশ লাখেরও বেশি মুসলমান বসবাস করতেন। দেশটি ওসমানী সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্যাপক চাপের মুখে পড়ায় বেশিরভাগ মুসলমানই তুরস্কে চলে গিয়েছিল।




দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর মুসলমানরা তরুণ মুসলিম বহু সংস্থা গড়ে তুলেছিল। আলহেদায়া এবং মারহামাত নামের দুটি যুব সংগঠন চেষ্টা করেছিল বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনার মতো দেশ দুটোর আদলে স্বাধীনতা অর্জন করতে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের শক্তি খর্ব হয়ে যায় এবং তাদের নেতাদের কেউ কারাবন্দী হয় আবার কারো বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়। ১৯৬০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দূরত্ব বজায় রাখার পর এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে ওঠার পর যুগোস্লাভিয়ায় মুসলমানদের অবস্থার উন্নতি ঘটে। এ সময় বহু মাদ্রাসা এবং মসজিদ গড়ে উঠেছিল। মুসলিম বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আলি ইযযাত বেগোভিচ ইসলামী বিবৃতি প্রকাশ করার পর ইসলামী কর্মতৎপরতা উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়।

ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের ফলেও যুগোস্লাভিয়া সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই ১৯৮৩ সালে বেগোভিচ আরো ১২জন মুসলিম নেতাসহ দীর্ঘ মেয়াদে কারাবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। যুগোস্লাভিয়া আলাদা হবার পর বেশিরভাগ দেশ বিশেষ করে সার্বিয়ার মতো দেশ চেষ্টা করেছিল ইউরোপের ভেতর যেন কোনো মুসলিম দেশ গড়ে উঠতে না পারে। এই লক্ষ্যে বসনিয়ার মুসলমানদের ওপর তারা গণহত্যা চালিয়েছিল। এই গণহত্যার ফলে বসনিয় মুসলমানরা উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বসনিয় মুসলমানদের মাঝে যেমন তেমনি বিশ্ব মুসলমানদের মাঝেও আত্মসচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

আমেরিকায় প্রথম পর্যায়ের মুসলমানরা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। দাস ব্যবসার জন্যে তাদেরকে আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই বাধ্য হয়েছিল নিজেদের নাম পরিচয় পরিবর্তন করতে। এর ফলে সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এক্স ফ্যামিলি’র পক্ষ থেকে এরকম একটি আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। মালকুল এক্স নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নেতার নেতৃত্বে আন্দোলনটি গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনটি ছিল মূলত মার্কিন সমাজে কৃষ্ণাঙ্গদের মর্যাদাহানী করার বিরুদ্ধে এবং তাদের ওপর বিচিত্র জুলুম নির্যাতন চালানোর বিরুদ্ধে এক ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। তিনি তাঁর নিজ ধর্ম ইসলামের জায়গায় খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। সেইসাথে ফ্যামিলি নেইম ‘লিটল’ তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না, কেননা এই নামটি শ্বেতাঙ্গ দাস ব্যবসায়ীরাই তাঁকে দিয়েছিল।

১৯৮০’র দশকে বহু মুসলমান আমেরিকায় গিয়েছিল একটা ইসলামী পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। তাঁরা চেষ্টা করেছিল তাবলিগ বা প্রচারের মাধ্যমে এবং মসজিদ মাদ্রাসা, ছাপাখানা, প্রকাশনাসহ ব্যাংকের মতো অর্থনৈতিক অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছিল। এসবের পেছনে সবচেয়ে বেশি শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছিলেন ভার্সিটি ছাত্ররা। এরপর একের পর এক গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বহু সংগঠন। এমস, এস, এ, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনগুলো এ সময়ই গড়ে উঠেছিল।

মালয়েশিয়ার নওমুসলিম ইব্রাহিম কাভানের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

মালয়েশিয়ার নওমুসলিম ইব্রাহিম কাভান প্রথম জীবনে ছিলেন একজন বৌদ্ধ ও এরপর তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত পবিত্র কুরআন ও ইসলামী সমাজের নানা আকর্ষণে মুগ্ধ হয়ে তিনি গ্রহণ করেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম।

'কাভান' জন্ম নিয়েছিলেন এক বৌদ্ধ পরিবারে। ছয় বছর বয়সে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল একটি চীনা স্কুলে। সেখানে কাভান কনফুসিয়াসের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি নয় বছর বয়সে কুয়ালালামপুরের ভিক্টোরিয়া স্কুলে ইংরেজি ভাষা শেখেন। কিছু দিন পর পরিচিত হন বাইবেলের সঙ্গে এবং কয়েক বছর পর খ্রিস্টান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কাভান খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা এতটা রপ্ত করতে সক্ষম হন যে একজন পাদ্রি হিসেবে গির্জায় উপদেশ দিতেন। কিন্তু একদিন গির্জায় যাওয়ার পথে এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে তার সাক্ষাত ঘটে। আর এই সাক্ষাতই ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের মোড়। তিনি সেদিনের সেই ঘটনার স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন:

"'কুয়ালালিপস' গির্জায় বক্তব্য রাখার জন্য যাওয়ার পথে এক ভারতীয় মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয়। তার সঙ্গে আগেই পরিচয় হয়েছিল। তিনি সেদিন আমাকে ইংরেজিতে অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি উপহার দেন। কাকা মুহাম্মাদ নামের ওই ব্যক্তি এসেছিলেন এ জন্যই। তিনি অন্যদের কাছে ইসলামের শিক্ষা প্রচারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তাই ইংরেজিতে অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহের পরই তিনি তা আমার জন্য নিয়ে আসেন। তার কাছ থেকে কুরআনের ওই কপিটি নেয়ার পর সেদিনই তা পড়তে আগ্রহী হই। প্রথমেই কুরআনের বিষয়বস্তুগুলো আমাকে বেশ আকৃষ্ট করে ও এসবের মাধ্যমে প্রভাবিত হই। কিন্তু ওই প্রভাব এতটা ব্যাপক ছিল না যে তখনই মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত মাথায় আসতে পারে। এ ঘটনার পর কিছু দিন কেটে যায়। সে সময় খ্রিস্টানদের নানা গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন গির্জার মধ্যে মতভেদ ও উত্তেজনা আমাকে খুবই দুঃখিত এবং হতবাক করেছিল। এইসব বিষয়সহ আরো কিছু বিষয়ের প্রভাবে আমি ইসলাম সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নেই। ফলে এইবার খুব মনোযোগ দিয়ে কুরআন পড়লাম এবং বেশ গভীরভাবে প্রভাবিত হলাম।"

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ একত্ববাদের ওপর বেশ জোর দিয়েছেন। আর এ বিষয়টিও গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে কাভানকে। তার মতে ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের মধ্যে পার্থক্যের সবচেয়ে বড় দিক হল এই বিষয়।

ইসলামের ও পবিত্র কুরআনের শিক্ষার অন্য যে দিক মালয়েশিয় নও-মুসলিম কাভানকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে তা হল, মানুষের জীবনের সব দিকের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টি এবং যে কোনো বিষয়ে শৈথিল্য বা বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ। কাভান এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'আমার মতে বিশ্ব কোনো কোনো মতবাদের একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নানা সংকটের শিকার হয়েছে। কেউ কেউ কেবল মানুষের আধ্যাত্মিক দিকগুলোকেই গুরুত্ব দেন এবং মানুষের পার্থিব সব বিষয়কে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন। অন্যদিকে কেউ কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান। এই দুই ধরনের মানুষই বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের চরম পন্থা মানুষকে প্রশান্তি থেকে দূরে রাখছে। বিশ্বে নানা যুদ্ধ, সংঘাত ও মতভেদ এ ধরনের চরমপন্থা, ক্ষমতা-লিপ্সা ও নানা ধরনের লোভ-লালসারই ফসল।'

মালয়েশিয় নও-মুসলিম কাভান এ বিষয়ে আরো ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন: পাশ্চাত্যে আজ ভারসাম্যহীনতা খুবই স্পষ্ট। পাশ্চাত্য হচ্ছে এমন এক ভবনের মত যার বাইরে রয়েছে ব্যাপক চাকচিক্য, কিন্তু ভেতরটা শূন্য ও দুর্বল। তারা যেন এমন এক পাত্র তৈরি করেছে যা উত্তেজনা আর নানা অবিচারে ভরপুর। তারা বিজ্ঞানকে শরীরের ভোগ-বিলাস বা আরামের কাজে ব্যবহার করছে, কিন্তু আত্মাকে দারিদ্র ও উদ্বেগের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। বস্তুবাদী সভ্যতার বিপদ হল এটা যে, এই সভ্যতা আধ্যাত্মিকতাকে পরিহার করেছে এবং এমনকি আধ্যাত্মিকতাকে মানুষের বস্তুগত নানা খাহেশের সেবায় নিয়োজিত করেছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করে আমি জেনেছি যে এ ধর্ম সব ধরনের চরমপন্থা থেকে মুক্ত।'

ইসলামের আরো একটি বড় দিক মালয়েশিয় নও-মুসলিম কাভানকে মুগ্ধ করেছে। আর এ দিকটি হল, ইসলামী বিধানের পরিপূর্ণতা। ইসলাম পার্থিব ও পারলৌকিক সব বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। আর এ জনই ইসলাম একত্ববাদ, পরকাল বা বিচার দিবস ও নবুওতকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। এইসব বিষয় পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, সৎ কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তির জন্যই পরকাল বা বিচার-দিবস থাকাটা জরুরি।

কাভান বলেছেন: ইসলাম বৈষয়িকতা বা পার্থিব কিংবা বস্তুগত বিষয় ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ভারসাম্যের নীতিতে বিশ্বাসী। এ জন্য ইসলামের রয়েছে চমতকার কর্মসূচি। ইসলাম বিধানগুলো খুবই যৌক্তিক ও বিবেক-সম্মত। কুরআন অতীতের ঐশী ধর্মগ্রন্থগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তৌহিদ বা একত্ববাদের সৌন্দর্য সম্পর্কে কথা বলে। এইসব সৌন্দর্যের কারণেই আমি ৪২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি এবং নিজের জন্য ইব্রাহিম কাভান নামটি বেছে নিয়েছি।'

ইব্রাহিম কাভান সবশেষে বলেছেন: 'আমি মুসলমান হতে পারার জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ও সৌভাগ্যবান হয়েছি বলে পুরোপুরি অনুভূব করছি।'

সূরা ইয়াসিন: আয়াত ১-৪ তাফসির



يس (1) وَالْقُرْآَنِ الْحَكِيمِ (2) إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ (3) عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (4



“ইয়া সিন।” (৩৬:১) “প্রজ্ঞাময় কোরআনের শপথ।” (৩৬:২) “নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রসূলগণের একজন।” (৩৬:৩) “(এবং) আপনি সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।” (৩৬:৪)

এর আগে আমরা সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরানসহ আরো কয়েকটি সূরায় হুরুফে মুকাত্তায়াত নিয়ে আলোচনা করেছি। পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েকটি সূরা এই ধরনের অক্ষর বা হরফ দিয়ে শুরু হয়েছে। এগুলো পরস্পর থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন কোনো অক্ষর নয়। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে যেমন ওই প্রতিষ্ঠানের নামকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয় তেমনি হুরুফে মুকাত্তায়াতেও রয়েছে সেরকম কিছু ইঙ্গিত ও নিদর্শন। কিন্তু সে নিদর্শন উপলব্ধি করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা নিজের কাছে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কোনো কোনো বর্ণনায় হুরুফে মুকাত্তায়াত ‘ইয়া-সিন’কে বিশ্বনবী (সা.)-এর অন্যতম নাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই দুই আরবি হরফের পরই নবীজীকে সম্মোধন করে আল্লাহ তায়ালা কথা বলেছেন।

এর আগে আমরা আরো বলেছি, সাধারণভাবে মুকাত্তায়াত হরফের পর পবিত্র কুরআনের নাম এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হয়। এই সূরায়ও পবিত্র কুরআনের প্রজ্ঞাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে তার শপথ করা হয়েছে। এই কিতাবের মাধ্যমে আল্লাহর প্রজ্ঞার দরজা মানুষের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে এবং এই কিতাব মানুষকে সত্য সরল পথ প্রদর্শন করেছে। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো কিছুর শপথ করেন তখন তিনি সেই বিষয় বা বস্তুর বিশালতা ও গুরুত্ব মানুষের সামনে তুলে ধরেন। তা না হলে মানুষকে বিশ্বাস করানো বা মানুষের সামনে কোনোকিছুর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার শপথ করার প্রয়োজন হয় না।

এই চার আয়াতে বিশ্বনবীর রিসালাত ও পবিত্র কুরআন নাজিলের মধ্যকার সম্পর্ক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীজী (সা.)কে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে, কুরআনুল হাকিম হচ্ছে আপনার রিসালাতের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এটি হচ্ছে ঐশী মুজিযা এবং কুরআনের মতো কিতাব কোনো মানুষের পক্ষে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া, অতীতের নবী-রাসূলদের মতো মানুষকে সত্য সরল পথে পরিচালিত করার জন্য আপনাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আপনি সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর অটল রয়েছেন, এই পথ আপনার ভালোভাবে জানা আছে এবং এই পথ থেকে বিচ্যুতির কারণগুলিও আপনার অজানা নয়।

সূরা ইয়াসিনের চতুর্থ আয়াতের সারমর্ম অনুযায়ী, আল্লাহর রাসূল শুধু সত্য সরল পথেই পরিচালিত নন সেইসঙ্গে এই পথের ওপর তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, যিনি মানুষকে এই পথে দাওয়াত জানাবেন তাঁকে এই পথের একজন বাস্তব আদর্শ হতে হবে; যিনি একইসঙ্গে মানুষকে সঠিকভাবে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করবেন এবং তাদেরকে এই পথে অটল রাখবেন। এখানে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা সিরাতুল মুস্তাকিম বা সহজ-সরল পথে চলার যে আহ্বান জানিয়েছেন তার অর্থ এই নয় যে, এই পথে চলা অত্যন্ত সহজ। আমরা যেন এটা না ভাবি যে, এই পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা গিরিখাদ নেই। বরং সিরাতুল মুস্তাকিম এই অর্থে বলা হয়েছে যে, লক্ষ্যে পৌঁছার সঠিক পথ হচ্ছে এটি। বাকি সব পথ মানুষকে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতির দিকে নিয়ে যায়। বিচ্যুতির পথগুলো দৃশ্যত অনেক সোজা ও প্রতিবন্ধকতাবিহীন মনে হলেও এগুলোকে অনুসরণ করলে মানুষ কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।

এই চার আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো-

১- কুরআনে কারিম হচ্ছে সুদৃঢ় গ্রন্থ। প্রজ্ঞাপূর্ণ এ গ্রন্থ মানুষকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেয়। কুরআনের অন্যতম মুজিযা হচ্ছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের জন্য এতে রয়েছে প্রজ্ঞাপূর্ণ শিক্ষা।

২- পবিত্র কুরআনের শিক্ষা প্রচারের জন্য বিশ্বনবী (সা.)-এর মতো একজন মহান শিক্ষকের প্রয়োজন যিনি মানুষকে তা শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি নিজের জীবনে সে শিক্ষা বাস্তবায়ন করে দেখাবেন।

৩- আমরা প্রতিবার নামাজে দাঁড়ালেই সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করেন। আর সূরা ইয়াসিনের চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে সিরাতুল মুস্তাকিমের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কাজেই আমরা যদি সিরাতুল মুস্তাকিম বা সহজ-সরল পথে চলতে চাই তাহলে নবীজী (সা.)-এর জীবনাদর্শ সঠিকভাবে চিনতে, বুঝতে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে।

শিশুর জন্মের পর ইসলাম অনুযায়ী বাবা-মার কিছু করণীয় দিক


আল্লাহতায়ালার
পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সন্তান হচ্ছে এক অনন্য উপহার। তাই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই সুখবর অন্যকে আনন্দচিত্তে জানানো আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার বহির্প্রকাশ।
একইভাবে অন্যদের দায়িত্ব হচ্ছে, সন্তান জন্মের খবর পাওয়ার পর নবজাতকের বাবা-মাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো এবং সন্তানের জন্য দোয়া করা। সন্তানলাভের পর অর্থাৎ এই অনন্য উপহার পাওয়ার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো জরুরি। নানা উপায়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতে পারে। সন্তানলাভের পর কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি ভালো উপায় হলো আকিকা। ইসলামি পরিভাষায় সন্তান জন্মগ্রহণের পর আল্লাহর শুকরিয়া ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য পশু কুরবানি করাকে আকিকা বলা হয়। আকিকা করার উত্তম দিবস হলো সন্তান জন্মের সপ্তম দিন। সন্তানলাভের পর কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

আকিকা ছাড়াও সন্তান লাভের পর দান-খয়রাত করে এবং মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ালে আল্লাহতালায়া খুশি হন। এসবই হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও তাঁর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়। আকিকা, দান-খয়রাত ও মানুষকে খাওয়ানো হলে শিশুর জন্য দোয়া পাওয়া যায়। মুসলমানরা নানা ধরণের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে শিশুকে রক্ষার জন্য দোয়া করেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিকও রয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কও জোরদার হয়। এতে করে সমাজে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হবে। সর্বোপরি এতে ইসলামের সামাজিক দায়িত্বচর্চার উপলক্ষ হয়। মনে রাখতে হবে, সন্তান হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্যতম সেরা নেয়ামত। সন্তান পার্থিব জীবনেরও সৌন্দর্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সুরা কাহাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য।

বাবা-মায়ের অধিকারের বিষয়ে যেমন ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সন্তানের অধিকারও ব্যাপকভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, যেমনিভাবে সন্তানের উচিত নয়, বাবা-মাকে অসম্মান করা ঠিক তেমনি বাবা-মায়েরও উচিত নয় সন্তানকে অসম্মান করা। অন্য এক হাদিসে এসেছে রাসূলে খোদা (স.) বলেছেন, সন্তানের প্রতি সম্মান দেখান এবং তাদেরকে সৎ হিসেবে গড়ে তুলুন।

শিশুদের আরেকটি অধিকার হলো সুন্দর নাম পাওয়া। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, বাবা প্রথম যে ভালো কাজটি সন্তানের জন্য করেন তাহলো সুন্দর ও অর্থবহ নাম বাছাই। কাজেই আপনারা সবাই সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখুন।

অনেকে কোরআনে শব্দের উল্লেখ থাকলেই নাম রাখার জন্য সে শব্দটাকে নির্বাচন করেন, এটা ঠিক নয়, বরং নামটির অর্থও দেখতে হবে। কারণ কোরআনে কাফেরদের বিভিন্ন অবস্থা, ভর্ৎসনা ও আজাব বুঝাতেও বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয়েছে।

শিশু হচ্ছে মানবসভ্যতার প্রথম অবদান। এই শিশুই একদিন বড় হয়ে তার শ্রমশক্তি ও প্রতিভার অবদানে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, শ্রেষ্টত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে। সুতরাং এই শিশুকে উপযুক্ত ভাবে লালন-পালন করা সকলের দায়িত্ব, তার জীবনকে আনন্দময় – মঙ্গলময় – শান্তিময় রাখা সকলের দায়িত্ব। তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় করে তুলতে হবে যেন সে স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, নিজের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে। তার আনন্দ – খুশি – শান্তি নিশ্চিত রাখতে হবে। তার শিশুকালকে রঙিন স্বপ্নময় করে দিতে হবে। শিশুর অন্ন-বস্ত্র বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার পূর্নাঙ্গভাবে মেটাতে হবে। এ দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের। শিশুকে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং আনন্দময় জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তাকে বড় করে তুলতে হবে। অভিভাবকহীন পরিত্যাক্ত যেসব শিশু পথের ধারে ঘুমিয়ে থাকে, ডাস্টবিনের খাবার কুড়িয়ে খায়, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পোড়ে এবং শীতে কাঁপে, সেইসব শিশুদেরও মানবাধিকার আছে। শিশু অধিকার ভোগ করতে না দেয়াটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।

শিশু হচ্ছে সবচেয়ে অসহায়। সে যখন কথা বলতে পারে না, কিছু চাইতেও জানে না, এমনকি নিজের কষ্ট ও বেদনার কথাও প্রকাশ করতে পারে না, তখন তার প্রতি সহানুভূতি দেখানো পরিবারের বড়দের দায়িত্ব। শিশুর প্রথম শিক্ষা হয় মায়ের কাছে. তারপর পরিবারের কাছে। একজন ভালো মা পারেন সুসন্তান গড়ে তুলতে, একটি আদর্শ পরিবার পারে একটি মূল্যবোধসম্পন্ন শুদ্ধতম মানুষ তৈরি করতে। একটি সংস্কৃতিবান সমাজ এবং সুশাসনমন্ডিত রাষ্ট্র পারে একজন সুনাগরিক সৃষ্টি করতে। যে সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নত এবং কল্যাণকামী সেই সমাজের শিশুরা যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক হিসেবে কৈশোর থেকে গড়ে ওঠে। তারুণ্যের শক্তি-মেধা-বুদ্ধিমত্তা-শ্রম দ্বারা দেশের উন্নয়নের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করে না। সমাজ, রাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সৎ ও যোগ্য মানুষ গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। এ কারণে পবিত্র ইসলাম ধর্ম শিশু অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের সততা, নীতি-নৈতিকতা তথা ধর্মের শিক্ষা দিতে হবে।

আমাদের দেশে অনেকের মাঝে একটি ধারণা আছে যে আকিকার মাধ্যমে শিশুর নামকরণ করা হয়। কিন্তু আসলে তা নয়। শিশুর সুন্দর ও ভালো অর্থবহ নাম রাখা একটি স্বতন্ত্র সুন্নত। আকিকা করা আরেকটি স্বতন্ত্র সুন্নত।#

খলিফা হারুনুর-রশিদের একটি অসাধারণ ঘটনা

খলিফা হারুনুর-রশিদের নিকট 'রাকা' নামের একটি শহর থেকে চিঠি আসলো। চিঠিতে লেখা ছিল: শহরের বিচারক এক মাস যাবত অসুস্থ,বিচার কাজ স্থগিত হয়ে আছে । খলিফা যেন দ্রুত ব্যবস্থা করেন । খলিফা চিঠির জবাব পাঠালেন । আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক আসবেন । এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক এসে যোগ দিলেন ।

বিচার কাজ শুরু হয়েছে । স্থানীয় প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে আসামী হিসেবে দরবারে হাজির করলেন । তার অপরাধ ছিল তিনি শহরের এক রেস্তারাঁ থেকে কিছু রুটি আর মধু চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পরেন ।

বিচারক: আপনি চুরি করেছেন?
– জ্বি ।
– আপনি কি জানেন চুরি করা কতো বড় অপরাধ ও পাপ ?
– জ্বি ।
– জেনেও কেন চুরি করলেন ?
– কারণ আমি গত এক সপ্তাহ যাবত অনাহারে ছিলাম । আমার সাথে এতিম দু’নাতিও না খেয়ে ছিল । ওদের ক্ষুদারত চেহারা ও কান্না সহ্য করতে পারিনি তাই চুরি করেছি। আমার আর এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না হুজুর ।

বিচারক এবার পুরো দরবারে চোখবুলালেন। বললেন কাল যেন নগর, খাদ্য,শরিয়া, পুলিশ প্রধান ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিগন সবাই উপস্থিত থাকেন ।তখন এর রায় দেওয়া হবে ।

পরদিন সকালে সবাই হাজির হলেন । বিচারক ও যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে রায় ঘোষণা করলেন-“ বৃদ্ধা মহিলার চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৫০টি চাবুক, ৫০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা আর অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া করা হলো। তবে অকপটে সত্য বলার কারণে হাত কাটা মাফ করা হলো। বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিচে নেমে ঐ বৃদ্ধা মহিলার পাশাপাশি দাঁড়ালেন ।

বিচারক বললেন যে নগরে একজন ক্ষুধার্তবৃদ্ধ মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয় সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলিফা। আর আমি এসেছি খলিফার প্রতিনিধি হয়ে । আমি যেহেতু তাঁর অধীনে চাকরি করি তাই ৫০টি চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারা হউক । আর এটাই হলো বিচারকের আদেশ । আদেশ যেন পালন করা হয় এবং বিচারক হিসাবে আমার উপর চাবুক মারতে যেন কোনো রকম করুণা বা দয়া দেখানো না হয়।
বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন । দুই হাতে পর পর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতের ফলে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে । ঐ অবস্থায় বিচারক পকেট থেকে একটি রুমাল বের করলেন । কেউ একজন বিচারকের হাত বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে বিচারক নিষেধ করেন। এরপর বিচারক বললেন “ যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্য গুদাম প্রধান ও অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাব গ্রস্হ মহিলার ভরন-পোষণ করতে পারেন না। সেই নগরে তারা ও অপরাধী। তাই বাকি ৩০টি চাবুক সমান ভাবে তাদেরকে মারা হোক ।“

এরপর বিচারক নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের উপর ৫০টি রৌপ্য মুদ্রা রাখলেন । তারপর বিচারপতি উপস্থিত সবাইকে বললেন “যে সমাজ একজন বৃদ্ধমহিলাকে চোর বানায়, যে সমাজে এতিম শিশুরা উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী । তাই উপস্থিত সবাইকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো।“
এবার মোট ৫০০দিনার রৌপ্য মুদ্রাথেকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানাবাবদ রেখে বাকি ৪০০টি রৌপ্য মুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেওয়া হলো। বাকি ৩৮০টি রৌপ্য মুদ্রা বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বললেন “ এগুলো আপনার ভরণপোষণের জন্য । আর আগামী মাসে আপনি খলিফা হারুনুর রশিদের দরবারে আসবেন । খলিফা হারুনুর রশিদ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী ।

“একমাস পরে বৃদ্ধা খলীফার দরবারে গিয়ে দেখেন ; খলীফার আসনে বসা লোকটিকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে । মহিলা ভয়ে ভয়ে খলীফার আসনের দিকে এগিয়ে যান। কাছে গিয়েবুঝতে পারেন লোকটি সেদিনের সেই বিচারক। খলীফা চেয়ার থেকে নেমেএসে বললেন —আপনাকে ও আপনার এতিম দু’নাতিকে উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক হিসেবে ক্ষমা চেয়েছিলাম । আজ দরবারে ডেকে এনেছি প্রজা অধিকারসমুন্নত করতে না পারা অধম এই খলীফাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য ।আপনি দয়াকরে আমাকে ক্ষমা করুন ।

Tuesday, September 3, 2019

চোখে পানি এসে যাওয়ার মত এক সাহাবীর জীবনী

হযরত সাদ সালামি আল্লাহর নবীর একজন সাহাবী ছিলেন । তিনি অত্যন্ত গরীব সাহাবী ছিলেন।
গায়ের রং ছিল খুবই কালো এবং মুখের মধ্যে ছিল বসন্তের দাগ| একদিন সাদ (রা: ) রাসূলে পাকের দরবারে বসে কাঁদতে ছিলেন। হুজুর ( সা: ) তাকে কান্না করার কারন জিজ্ঞেস করলেন? জবাবে
সাদ (রা: ) বলতে শুরু করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি আপনার হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছি ৮ মাস হল। এই ৮ মাস আমি মদিনার অলিতে গলিতে কত জায়গায় ঘুরলাম বিয়ের জন্য কিন্ত আমি
দেখতে অসুন্দর বলে কেউ আমাকে মেয়ে দেয়না। আমি আপনার সকল সুন্নাত পালন করতে পারলেও আপনার একটি সুন্নাত বিয়ে যা আমি পালন করতে পারিনি ।

তাই আমি ভয়ে কান্না করছি যদি এই সুন্নাত না মানার জন্য আল্লাহ্ আমাকে জান্নাত হতে বঞ্চিত করেন। রাসুল (স: ) সাদকে বললেন এই মদিনার সবচেয়ে ধনী লোক আমর ইবনে ওহাবের মেয়ে মদিনার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের সাথে আমি রাসূল তোমার বিয়ে দিয়ে দিলাম। এখন তুমি আমর ইবনে ওহাবের বাড়িতে যাও এবং তাকে গিয়ে বল আমি তার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি । সাদ (রা: ) আমর ইবনে ওহাবের বাড়িতে গেলেন এবং আমর ইবনে ওহাবকে সব কিছু খুলে বললেন । সাদ (রা: ) এর কথা শুনে আমর ইবনে ওহাব খুব রাগন্নিত হয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ করে বাড়ি হতে বের করে দিলেন। এদিকে আমর ইবনে ওহাবের মেয়ে ঘরের ভেতর থেকে সব শুনতে পেলেন । যখন আমর ইবনে ওহাব ঘরে ঢুকলেন তার মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা তোমাকে এত বড় সাহস কে দিল যে রাসূলের কথা অমান্য করলেন? আল্লাহর রাসূল আমার জন্য যে ছেলেকে পছন্দ করেছেন আমিও তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম। 

মেয়ের কথা শুনে আমর ইবনে ওহাব দৌড়ে রাসূলের দরবারে গেলেন এবং রাসূলের কাছে মাফ চাইলেন। প্রিয় নবীজী সা. তাকে মাফ করে দিলেন। আর সাদ (রা: ) এর বিয়ের জন্য ৬০০ দিরহাম মোহরানা ধার্য করলেন এবং বললেন এখন তুমি তোমার স্ত্রীর কাছে যাও। কিন্ত সাদ (রা: ) এত গরীব ছিলেন তার পক্ষে ৬০০ দিরহাম জোগাড় করা সম্ভব ছিল না | 

তাই অন্যান্য সাহাবীরা মিলে সাদ (রা: ) কে সাহায্য করলেন যাতে উনি উনার স্ত্রীর মোহরানা আদায়
করেও নতুন বৌয়ের জন্য কিছু সদাই করতে পারেন। ওদিকে সাদ (রা: ) বাজারে চলে গেলেন কেনাকাটা করার জন্য। যখন নতুন বৌয়ের জন্য কেনাকাটা করতে দোকানে ঢুকলেন হঠাৎ
শুনতে পেলেন মদিনার বাজারে কে যেন জিহাদের ডাক দিচ্ছে ? জিহাদের ডাক শুনে সাদ (রা: ) ভাবলেন আমি সাদ ফুলের বিছানা বাসর ঘরে নতুন স্ত্রীর কাছে যাবো না আমি রাসূলের মহব্বতে
জিহাদে যাবো । 

তাই তিনি বিয়ের টাকা খরচ করে যুদ্ধের সরঞ্জাম ক্রয় করে জিহাদে চলে গেলেন।
এদিকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সাদ (রা: ) একের পর এক কাফিরকে হত্যা করে জাহান্নামে পাঠাতে
লাগলেন। যুদ্ধ করতে করতে এরকম হঠাৎ সাদ (রা: ) শাহাদাতের পেয়ালায় শরবত পান করে শহীদ হয়ে গেলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হল। দূর হতে দেখা যায় কার যেন লাশ পড়ে আছে ? রাসুল (স: ) ও
সাহাবীরা কাছে গিয়ে দেখলেন এ যে সাদের লাশ। মাথার লোহার টুপি ভেঙ্গে মগজ বের হয়ে গেছে আর জিহ্বা বের হয়ে আছে। 

সাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে রাসূল (স: ) কেঁদে দিলেন আবার পরক্ষণেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং আবার আকাশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
একজন যুবক সাহাবী আবু লুবাবা রাসূলকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। রাসুল (স: ) বললেন আমার সাদ ফুলের বিছানা বাসর ঘরে যায়নি, আমার মহব্বতে শহীদ হয়ে গেল তাই স্নেহের কারণে আমার চোখ হতে পানি ঝড়ে পড়ল। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলাম কারণ আল্লাহ আমার সাদকে খুব সুন্দর একটা মাকাম দান করেছেন আর চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হল আমার সাদ শহীদ হয়েছে তাই আকাশের সব দরজা খুলে গিয়েছে। বেহেস্ত হতে অসংখ্য হুর দৌড়ে আসতেছে যে কার
আগে কে সাদকে কোলে নিবে ? দৌড় দেওয়ার কারণে হুরদের সামনের পর্দা সরে যাচ্ছিলো যা দেখে
আমি রাসূল লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিলাম|

হাদিসের দৃষ্টিতে মেসওয়াকের গুরুত্ব উপকারিতা

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত মেসওয়াকের ব্যবহার করা, যদিও বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষের দেখা যায় দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করে থাকে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কিন্তু এখনো মেসওয়াক ব্যবহার করে থাকেন। কারণ ইসলামে মেসওয়াকের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মেসওয়াকের। বিষয়ে ইসলাম কি বলছে, তার আলোচনা নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।


মিসওয়াক কি? মিসওয়াক হলো গাছের ডাল বা শিকড়। যা দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিষ্কার করা হয়। দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলা হয়।

মিসওয়াকের গুুরুত্ব : মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়। (বুখারি, নাসাঈ, মিশকাত) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমনটি কখনা হয়নি যে, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মিসওয়াকের কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

কি দ্বারা মিসওয়াক করবো : যেসব গাছের স্বাদ তিতাসেসব গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। যায়তুনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। মিসওয়াক হাতের আঙ্গুলের মতো মোটা ও নরম হওয়া ভালো। লম্বায় হবে এক বিঘাত।
মিসওয়াক করার নিয়ম : মুখের ডানদিক থেকে শুরু করে দাঁতের প্রস্থের দিক থেকে মিসওয়াক করা। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে নয়। ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলী মিসওয়াকের নিচে আর মধ্যমা ও তর্জনী মিসওয়াকের ওপর এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা এর মাখার নিচ ভালভাবে ধরা। এ নিয়মটি হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে।

মিসওয়াক কখন করবো : অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে, ওজুতে কুলি করার পূর্বে কোনো কোন আলিম ওজুর পূর্বে মিসওয়াক করার কথা বলেছেন। নামাজের পূর্বে। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর। কোনো মজলিসে যাওয়ার পূর্বে। কুরআন ও হাদিস তিলাওয়াতের পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।

মেসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত : মেসওয়াক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ সুন্নাত। বিভিন্ন হাদিস শরীফে মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে বেশি বেশি মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিস শরীফে হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখনই জিবরাঈল (আ.) আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দিতেন। আমার ভয় হতে লাগলো যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি। আমার মুখের সম্মুক দিক ক্ষয় করে দিব। (মেশকাত শরীফ- ১/৪৫) রাসূল (সা.)ও উম্মতগণকে মেসওয়াকের গুরুত্ব বোঝাতে, যেয়ে বলেন, “যদি উম্মতের কষ্ট ও অসুবিধার কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক তাদের ওপর আবশ্যক করে দিতাম।” (মুসলিম শরীফ- ১/১২৮),
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মিসওয়াক সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে অতি গুরুত্বারোপ করছি।” (নাসাঈ শরীফ পৃ. ৩)। মিসওয়াক সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের শরীয়তে সুন্নাত ছিলো। যেমন, হাদিস শরীফে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, চারটি বস্তু সকল নবীগণের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। (১) মন্দ কাজ থেকে লজ্জা করা (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা (৩) মিসওয়াক করা (৪) বিবাহ করা। (তিরমিযি শরীফ-১/২০৬) রাসূল (সা.) উম্মতগণকে মিসওয়াকের প্রতি গুরুত্বারোপ করার সাথে সাথে নিজেও মিসওয়াকের আমলের প্রতি অধিক যত্নবান ছিলেন। যেমন হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, তাবেয়ী হযরত শুরাইহ ইবনে হানী (রাযি.) বলেন, একবার আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাযি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন কোন কাজ সর্বপ্রথম করতেন? হযরত আয়েশা (রাযি.) বললেন, মিসওয়াক। (মুসলিম শরীফ-১/১২৮) অন্যত্রে হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখনই ঘুমাতেন রাতে হোক বা দিনে, অতঃপর জাগ্রত হতেন, তখনই মিসওয়াক করতেন ওযু করার পূর্বে।’ (আবুদাউদ-১/৪)

ইসলামী শরীয়তে মিসওয়াক করার মধ্যে অনেক বরকত ও ফজিলত রযেছেঃ ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন যে, মিসওয়াকের ফজিলত প্রসঙ্গে প্রায় চল্লিশটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখ করা হলো, হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রযেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।(নাসাঈ শরীফ-পৃ:৩) অন্যত্রে হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে নামাজের জন্য মিসওয়াক করা হয়, তার ফজিলত মিসওয়াকবিহীন আদায় কৃত নামাজের তুলনায় সত্তর গুণ অধিক। (মেশকাত শরীফ-১/৪৫) অন্য এক হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করছি। এ সময় আমার নিকট দুজন ব্যক্তি আসলো, তাদের মধ্যে একজন অপর জন থেকে বড়। আমি ছোট ব্যক্তিকেই আমার মিসওয়াকটি দিয়েছিলাম।

তখন আমাকে বলা হলো, (ওহীর মাধ্যমে) বড় ব্যক্তিকেই মিসওয়াকটি দিন। অতঃপর আমি মিসওয়াকটি বড় ব্যক্তিকে দিলাম। (মুসলিম শরীফ ২/২৪৪) হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমার নিকট মিসওয়াক সহকারে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাকাআতের চেয়েও পছন্দীয়। (আবু নাঈম) বেনেয়া গ্রন্থে আল্লামা আয়নী রাহ. উল্লেখ করেছেন, হযরত ওমর (রাযি.) বলেন, মিসওয়াকের ফজিলতের ব্যাপারে সকল ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত। এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি। সকলের নিকট মিসওয়াক সহকারে নামাজ আদায় করা মিসওয়াকবিহীন নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এছাড়া মিসওয়াকের উপকারিতাও অনেক বেশি। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহ.) উল্লেখ করেছেন, মিসওয়াকের উপকারিতা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করার দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় আর সর্বেŸাচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নছিব হয়। (ফাতাওযে শামী-১/২৩৯)

মেসওয়াক ব্যবহারে শারীরিক উপকারীতা

গলগন্ড রোগে মেসওয়াকের গুরুত্ব : টনসিলের রোগীদের নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহার করানো হলে তারা খুব শীঘ্র রোগমুক্ত হয়ে যায়। গলগন্ড রোগ কষ্ট পাওয়া একজন রোগীকে তুঁতের শরবত পান করতে এবং পিলুর (এক প্রকার গাছের ডাক) তাজা মেসওয়াক ব্যবহার করতে বলা হলো। মেসওয়াক কেটে টুকরো করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে গরগরা করানো হলো। অল্প দিনের মধ্যে রোগী গলগ- রোগ থেকে মুক্তি লাভ করলো।

মেসওয়াক ব্যবহারে দাঁত ও মস্তিষ্ক রোগের উপকার : অপরিচছন্ন, ময়লা এবং পুঁজযুক্ত দাঁত মস্তিষ্ক রোগের কারণ হয়। মানসিক রোগসমূহ যেমন উন্মাদনা, মস্তিষ্ক বিকৃতি এবং অন্যান্য ধ্বংসকর রোগসমূহ এসবের শামিল। এক ভদ্রলোকের স্ত্রীর সস্তিষ্কের সমস্যা ছিলো। জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তার মস্তিষ্কের পর্দার ওপর পূঁজ জমে গেছে এবং রোগিনী র্দীর্ঘদিন থেকে পাইওরিয়া রোগে ভুগছিলো। আর পাইওরিয়াজনিত পুঁজই তার মস্তিষ্ক রোগের কারণ হয়েছে। অনুরুপ পুঁজের প্রতিক্রিয়া অস্থিমজ্জা অথবা পিষ্টুরি গ্ল্যান্ডের জন্যে ধ্বংসকর হয়।
স্থায়ী সর্দি রোগে মেসওয়াকের গুরুত্ব : যেসব রোগীর সর্দি লেগেই থাকে, মেসওয়াক ব্যবহার করলে তাদের সর্দি বেরিয়ে যায় এবং মগজ হালকা হয়। একজন প্যাথলজিষ্ট বলেছেন, আমার অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, স্থায়ী সর্দির রোগীর জন্য মেসওয়াক বিশেষ ফলপ্রসু। মেসওয়াক ব্যবহার করা হলে এ রকম রোগীদের নাক এবং গলার অপারেশনের প্রয়োজন কমে যায়।

মেসওয়াক ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ: ইঞ্জিনিয়ার নকশাবন্দী তাঁর ওয়াজে বলেছেন, ‘আমেরিকান ওয়াশিংটনে একজন ডাক্তার তাকে বলেছেন রাতে ঘুমানোর আগে মেসওয়াক করে ঘুমানোর জন্য। তখন উনি ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার তাকে বললেন, মানুষ যা কিছু খায় সেসব মুখের ভিতর প্লাজমা হয়ে থাকে। সে প্লাজমা শুধু কুলি করলে পরিষ্কার হয় না। সাধারণত রাতে ঘুমানের মধ্যে দাঁতের খারাপের যত অসুখ দেখা যায়।
কারণ মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন মুখ বন্ধ থাকে। তখন মুখের নড়াচড়া বন্ধ থাকে। দিনের বেলা মানুষ কথা বলে খাবার খায় পানি পান করে। রাতে মুখ বন্ধ থাকে। এর ফলে প্লাজমা মুখের ভিতর কাজ করার সুযোগ পায়। এতে দাঁতের অসুখ অধিকাংশ রাতে দেখা যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেসওয়াক করলে দাঁতের জন্য ভাল।

পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্কের উপকারিতা : হযরত আলী (রা) বলেছেন, মেসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব ও সতেজ হয়। প্রকৃতপক্ষে মেসওয়াকের মধ্যে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে। পিলু গাছের মেসওয়াক ব্যবহার করলে দাঁতের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের যে অভাব থাকে তা পূরণ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতা প্রমাণিত হয়েছে, পিলুর মেসওয়াক রোগ জীবাণুর উৎপাদন বন্ধ করে ও দাঁতকে রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। পিলুর মেসওয়াক ব্যবহার করার সময় আঁশ কাটতে হবে। তাহলে নতুন আঁশ ব্যবহ্নত হবে তেতো উৎপাদন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মেসওয়াক ব্যবহারে সামাজিক উপকারিতা : মানুষ যখন কোনো সামাজিক মজলিসে কথা বলে বা কোনো যানবাহনের যাত্রী হয়, তখন তার মুখে যদি দুর্গন্ধ থাকে তাহলে তা অন্যদের জন্যে বেশ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত জাহাজে আলোহী হলে তার শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে দুর্গন্ধ অনুভূত হয়। এরকম সহযাত্রীর যদি হাঁচি শুরু হয়ে যায়, তাহলে তো পুরো পরিবেশই দুর্গন্ধ অনুভূত হয়।
সর্বাগ্রে দাঁতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ দাঁতই অধিকাংশ দুর্গন্ধের কারণ হয়ে থাকে। নয় তো পাকস্থলীর চিকিৎসা সম্ভব।

ব্রাশ ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিবরণ : জীবাণু বিশেষজ্ঞদের বছরের পর বছর গবেষণায় একথা পূর্ণতার স্তরে উপনীত হয়েছে যে, যে ব্রাশ একবার ব্যবহার করা হয়, পুনরায় তা ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। কেননা, একবার ব্যবহারের পরই তাতে রোগ-জীবাণুর স্তর জমে যায়। তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেললেও ক্রিয়াশীল থাকে। তাছাড়া ব্রাশ ব্যহার করা হলে দাঁতের ওপরের চমকদার সাদা স্তর নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দাঁতের মাঝে ফাঁক তৈরী হয় এবং ধীরে ধীরে দাঁত মাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যায়। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা আটকে গিয়ে মাড়ি এবং দাঁতের ক্ষতির কারণ হয়।

দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হয়?


দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:

১. আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণীর মর্মার্থ “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্‌রই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্‌, আয়াত: ১৮] দোয়ার শর্তগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন দোয়া কবুল হবে না, কোন আমল গৃহীত হবে না। অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মৃতব্যক্তিদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে। তাদের ধারণা যেহেতু তারা পাপী ও গুনাহগার, আল্লাহ্‌র কাছে তাদের কোন মর্যাদা নেই; তাই এসব নেককার লোকেরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এবং তাদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মধ্যস্থতা করবে। এ বিশ্বাসের কারণে তারা এদের মধ্যস্থতা ধরে এবং আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এ মৃতব্যক্তিদেরকে ডাকে। অথচ আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন আপনি বলে দিন) নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। দোয়াকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি ডাকে সাড়া দিই।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

২. শরিয়ত অনুমোদিত কোন একটি মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে ওসিলা দেয়া।

৩. দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) আরও এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।”

৪. দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না হওয়া; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিসে এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে।”

৫. আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া কর।”[সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (২৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্‌ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।

৬. দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে (২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

৭. খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্‌ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] এ কারণে যে ব্যক্তির পানাহার ও পরিধেয় হারাম সে ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদূরপরাহত বিবেচনা করেছেন। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?[সহিহ মুসলিম, (১০১৫)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, হারাম ভক্ষণ করা দোয়ার শক্তিকে নষ্ট করে দেয় ও দুর্বল করে দেয়।

৮. দোয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন না করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়ার মধ্যে সীমালঙ্ঘন করাটা অপছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫]

৯. ফরয আমল বাদ দিয়ে দোয়াতে মশগুল না হওয়া। যেমন, ফরয নামাযের ওয়াক্তে ফরয নামায বাদ দিয়ে দোয়া করা কিংবা দোয়া করতে গিয়ে মাতাপিতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। খুব সম্ভব বিশিষ্ট ইবাদতগুজার জুরাইজ (রহঃ) এর কাহিনী থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ জুরাইজ (রহঃ) তার মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। ফলে মা তাকে বদদোয়া করেন; এতে করে জুরাইজ (রহঃ) আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন: এতে প্রমাণ রয়েছে যে, জুরাইজের জন্য সঠিক ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া। কেননা তিনি নফল নামায আদায় করছিলেন। নফল নামায চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে- নফল কাজ; ফরয নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব এবং মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম....”[শারহু সহিহু মুসলিম (১৬/৮২)]

৩ টি শিক্ষনীয় হাদিস

*আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি হেবা (দান, উপহার) করে তা ফেরত নেয় সে এমন কুকুরের সমতুল্য যে বমি করে তা পুনরায় গলাধঃকরণ করে।” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, বুখারী: ২৫৮৯, মুসলিম: ১৬২২]
*আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ বলেন: কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা ও চুক্তি করে তা ভঙ্গ করেছে, যে ব্যক্তি মুক্ত-স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে এবং যে ব্যক্তি কাউকে মজুর নিয়োগ করে পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে কিন্তু তাকে মজুরী প্রদান করেনি।” [বুখারী: ২২২৭]
*আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এমন দু’টি বাক্য আছে যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, ওজন-দণ্ডের পরিমাপে খুবই ভারী, দয়াময় আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয়। (বাক্য দু’টি হলো-) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম’। (অর্থ: মহা পবিত্র আল্লাহ্, তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা। মহা পবিত্র আল্লাহ্, তিনি মহামহিম।)” [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, বুখারী: ৬৪০৬, মুসলিম: ২৬৯৪]

আবু হোরায়রা (রাঃ) এর একটি শিক্ষণীয় গল্প

একদিন হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "হে আবু হোরায়রা তুমি কেন কাঁদছ?" হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, আমার মা
আমাকে মেরেছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, "কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ?" হযরত আবু হোরায়রা ( রাঃ ) বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার
রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আরআপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না
হয় মুহাম্মদ (সাঃ) এর দরবার ছাড়বি।

আমি বললাম, ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলুল্লাহ্ ﷺ কে ছাড়তে পারবো না। তখন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? আমার তো এখানে কিছুই করার নেই। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন, হে রাসূল (সাঃ) আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই।

রাসুল (সাঃ) বললেন, তাহলে কেন এসেছ? হযরত আবু হোরায়রা( রাঃ ) বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী ( সাঃ)। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন। আর তখনই সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, "হে আল্লাহ! আমি দোয়া করি আপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।”

রাসুল (সাঃ) দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন হযরত আবু হোরায়রা ( রাঃ ) বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও।আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইতেছি এই কারণে যে, আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা ( রাঃ ) দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন হযরত আবু হোরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি।

মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল (সাঃ) এর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল (সাঃ) এর
দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মাকে সেখানেই # পবিত্র_কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।

জাপানি নওমুসলিম নাকাতার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

জাপানি নওমুসলিম নারী 'কাওয়ারায়ি নাকাতা' কখনও স্রস্টা সম্পর্কে তেমন মনোযোগ দিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেননি। এমন ভাবনার দরকার ছিল বলেও ভাবেননি কখনও। তিনি সত্যকে পেয়েছিলেন অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর। নাকাতা কখনও ভাবেননি যে সত্যকে এভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'আমার জীবনের সব কিছুই চলছিল ভালভাবে। আমি সৌভাগ্য অনুভব করতাম। কখনও আল্লাহর অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। কিন্তু হঠাৎ আবিস্কার করি যে, আমার জীবন পুনরাবৃত্তিতে একঘেয়ে হয়ে আছে ও জীবনের কোনো অর্থ নেই। তখন থেকেই সত্যকে খুঁজতে থাকি। নানা ধর্মের প্রচারকরা আমার বাসায় এসেছেন বেশ কয়েকবার। সে সময় খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য একজন মহিলা নিয়মিত আমার বাসায় আসতেন। তিনি আমাকে বাইবেল শেখাতেন ও আমিও খুব আগ্রহ নিয়ে তা শিখতাম। কিন্তু আমি যার খোঁজ করছিলাম তা পেলাম না।”

নওমুসলিম মিসেস নাকাতা আরো বলেছেন: 'আমি বসবাস করতাম কিয়েটো নামক ঐতিহাসিক শহরে। এই শহরে রয়েছে নানা ধরনের উপাসনালয়। আমাদের বাসভবনের কাছেই ছিল একটি ইবাদতকেন্দ্র বা উপাসনালয়। আমি প্রতিদিন সকালে সেখানে যেতাম ও প্রার্থনা করতাম। তিন মাস ধরে প্রতিদিন এই প্রার্থনা অব্যাহত রেখেছিলাম। সত্যের সন্ধানেই এই প্রার্থনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দোয়ায় মনোযোগ নিবিষ্ট বা কেন্দ্রীভুত করা ছিল বেশ কঠিন। তবে তা ছিল খুবই আনন্দদায়ক। কিন্তু কিছুদিন পরই অনুভব করলাম যে আমার ভেতরের জগত ও বাইরের বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ব্যবধান। তাই আমি হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। অথচ আমি উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে জীবন যাপন করতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমার প্রচেষ্টায় কোনো ফল হয়নি।'



এর কিছুকাল পর নওমুসলিম মিসেস নাকাতা জীবনের গতিপথ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। পড়াশোনা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ফ্রান্সে যান। আর এখানেই ঘটে তার জীবনে যুগান্তকারী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ প্রসঙ্গে নাকাতা বলেছেন:

'ফ্রান্সে পরিচিত হই এক মুসলমানের সঙ্গে। তিনি নিজের ধর্ম ইসলামকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন ও সমস্ত শক্তি আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এ ধর্মের পক্ষে কথা বলতেন। তার ওই দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দেখে আমার নিজের জন্য অনুশোচনা হত। কারণ, আমি দীর্ঘ বহু বছর ধরে আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। আর এ জন্য অনেক গবেষণা ও পড়াশুনার পর যখন হতাশায় ডুবে ছিলাম তখন দেখলাম যে এই মুসলমান ইসলামকে ভালবাসতেন গভীরভাবে ও এর ছায়াতলে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছেন। তাই আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে গবেষণার সিদ্ধান্ত নিলাম যাতে এ ধর্মের অনুসারীদের এত গভীর আত্মিক প্রশান্তির উৎস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হই। সে সময় পর্যন্ত অনেক ধর্ম আমাকে আকৃষ্ট করলেও ইসলামের প্রতি একবারও আকৃষ্ট হইনি।'

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা ফরাসি ভাষায় অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহ করেন ও তা পড়তে থাকেন। এ মহাগ্রন্থ পড়ার সময় তিনি অনুভব করেন যে, এ আসমানি বই পড়ার জন্য কারো সাহায্য নেয়া জরুরি। ফলে হঠাৎ বিদ্যুতের মতই নাকাতার মাথায় এক ঝলকের মধ্যে ভেসে উঠল সেই মুসলিম মহিলার মুখখানি। ফলে তিনি মুসলমানদের ইবাদত-কেন্দ্র তথা মসজিদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নাকাতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

'অবশেষে একদিন মসজিদে গেলাম। মসজিদের পরিবেশ ছিল আমার জন্য এক অচেনা ও অপরিচিত জগত। কিন্তু বিস্ময়কর এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। মসজিদটি ছিল এক বিশেষ আধ্যাত্মিক সুরভিতে ভরপুর। নীরবতা সেই পরিবেশকে করেছিল আরো প্রাণস্পর্শী ও মধুর। প্রাণজুড়ানো সেই আধ্যাত্মিক পরিবেশের আকর্ষণ আমাকে টেনে নিল মসজিদের ভেতরে। ধীরে ধীরে পা ফেলছিলাম। আমার কানে ভেসে আসছিল এক বিশেষ আহ্বান বা সুসংবাদ। তাতে বলা হল যে তুমি শিগগিরই সত্যকে খুঁজে পাবে।'

এ সময় মসজিদের বারান্দায় বই-পুস্তকের একটি ছোট্ট দোকান দেখলাম। কাছে গিয়ে বিক্রেতাকে বললাম:

'আমি এমন একজনকে খুঁজছি যে ইসলামকে আমার কাছে পরিচিত করবে। সে আমাকে মসজিদের লাইব্রেরিতে নিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে দেখলাম যে একদল মুসলিম মহিলার জন্য ধর্ম বিষয়ক ক্লাস চলছিল এবং তা মাত্র কিছুক্ষণ আগে শেষ হল। সেই প্রথম আমি হিজাব পরিহিতা কোনো মুসলিম নারীকে দেখেছিলাম। তারা আমার প্রস্তাব শুনে খুব খুশি হয়ে আমাকে স্বাগত জানালেন। তারা ছিলেন সবাই সক্রিয়, প্রাণোচ্ছ্বল ও প্রফুল্ল। তাদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী প্যারিসে যে কয়েকটি বৈঠক হতো তাতে উপস্থিত হতাম। মুসলমানদের এইসব বৈঠকে আমার উপস্থিতি ধীরে ধীরে আমার মানসিকতাকে বদলে দেয় এবং বেশ কিছু বই পড়ার পর ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে যায়। আমি বুঝতে পারলাম যে ইসলামে কোনো কিছুই জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয় না। ইসলাম জীবন যাপনের যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথ দেখায়। কোনো কোনো ধর্ম বা মতবাদ সব ধরনের বস্তুগত, জৈবিক বা পার্থিব চাহিদাকে উপেক্ষা করে কেবল পারলৌকিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু ইসলাম আত্মা ও শরীরের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে বলে। অর্থাৎ ইসলাম আত্মিক ও শারীরিক উভয় চাহিদাকেই গুরুত্ব দেয়।’

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণার পর এ ধর্ম সম্পের্ক নানা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ইসলাম অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষের মূল্য নির্ভর করে তার ঈমান ও সৎ কর্ম সম্পাদনের ওপর। যখন খ্রিস্ট ধর্মের পেছনে ছুটতাম তখন এ ধর্মের পক্ষ থেকে বলা হত যে আমাদের পাপগুলো জন্মগত। অথচ এ কথা আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে মোটেই যৌক্তিক বা বোধগম্য নয়। কিন্তু ইসলাম বলে সব মানুষই জন্মগতভাবে পবিত্র ও নিরপরাধ; আর পরবর্তীকালে প্রত্যেক মানুষ নিজেই তার পাপের জন্য দায়ী। আর এ কথা খুবই যৌক্তিক। ইসলাম খুবই সহজ ও স্বচ্ছ ধর্ম। এ ধর্মে কোনো জটিল তত্ত্ব নেই।’

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা মুসলমানদের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বেশ আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছিলেন। যেসব মুসলিম মহিলা তাকে পথ প্রদর্শন বা গাইড করছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন নাকাতা এবং মুসলমানদের প্রথা ও রীতিগুলো রপ্ত করে নেন তাদের কাছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

'আমি তাদের সঙ্গে মসজিদে যেতাম ও তাদের চাল-চলন বা গতিবিধি খুব আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করতাম। অনেক সময় তাদের সম্মান দেখানোর জন্য তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নামাজের অঙ্গভঙ্গিগুলো করে যেতাম যদিও নিজেও বুঝতাম না যে নামাজ আদায় করছি। মুসলমানদের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতেও অংশগ্রহণ করতে থাকি। যেসব বক্তব্য শুনতাম সেসবকে আমার হৃদয় যেন শুকনো মাটি বা বালির দ্রুত পানি শুষে নেয়ার মতই গ্রহণ করত। এসব বক্তব্য আমাকে দিত আধ্যাত্মিক আনন্দ। ধীরে ধীরে অনুভব করলাম যে বহু বছর ধরে আমি যে সত্যের সন্ধান করছি তা পেয়েছি। অবশ্য এ জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। যতই ইসলাম সম্পর্কে বেশি তথ্য জানছিলাম ততই এ ধর্মকে গ্রহণের ইচ্ছাও আমার মধ্যে জোরদার হচ্ছিল। অবশেষে এই সাক্ষ্য দিলাম যে, আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রাসূল। '

নামাজ মিসেস নাকাতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার মতে নামাজ মানুষের বিশ্বাস বা ঈমানকে সুদৃঢ় করে। মুসলমান হওয়ার পর প্রথম নামাজ আদায়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে নাকাতা বলেছেন:

'যখন প্রথমবার সিজদার উদ্দেশ্যে কপাল মাটিতে রাখলাম এক ও দয়ালু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে তখন আমার মধ্যে দেখা দিয়েছিল অসাধারণ অনুভূতি এবং নিজের মাথা জমিন থেকে ওঠাতে পারছিলাম না। যখনই সিজদায় যেতাম তখনই আল্লাহর অস্তিত্বকে ও ঈমান বা বিশ্বাসের অর্থকে বেশি মাত্রায় অনুভব করতাম। আর এটা ছিল এক সুন্দর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা যা আমি অন্য ধর্মগুলোর মধ্যে পাইনি।'

জাপানি নওমুসলিম মিসেস নাকাতা কিছুকাল পর মিশরে যান আরবী ভাষা ও ইসলামী শিক্ষা আরো ভালোভাবে রপ্ত করার জন্য। আরবী ভাষা ভালোভাবে বোঝার পর নাকাতা কুরআনের বাণীর অর্থগুলো আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে থাকেন: তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আরবী ভাষা মোটামুটি বোঝার পর কুরআনের সৌন্দর্য আমাকে বিমুগ্ধ করছে। কুরআনের বিষয়বস্তুগুলো ছাড়াও এর সুরও অশেষ সৌন্দর্যে ভরপুর। কুরআন বার বার পড়লেও ক্লান্ত হওয়া তো দূরের কথা বরং আমার অন্তর যেন সৌভাগ্যের সাগরে অবগাহন করতে থাকে। মহান আল্লাহ আমাকে এই সৌভাগ্য নসিব করেছেন বলে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ এবং আমি ইসলামকে আমার দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরছি। যে সৌভাগ্য কেবল এক আল্লাহকে চেনা ও জানার মাধ্যমে পাওয়া যায় সে সৌভাগ্য তারাও অর্জন করুক- এই আমার প্রার্থনা। আমি সুনিশ্চিত যে আল্লাহর ওপর ভরসার সুবাদে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।'