নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Wednesday, September 11, 2019

জিব্রাইল আঃ এর গল্প

আপনি কীভাবে জিব্রাইল আঃ এর নাম বলেন, কীভাবে উচ্চারণ করেন তার নাম? জিব্রীল, জিব্রাই–ল, জিব্রাইল, জিব্রাই’ল, জিব্রিইল এই পাঁচ ভাবে তার নাম উচ্চারণ করা হয়। আর এটা বিভিন্ন কিরাতের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বার বার কি শোনা যাচ্ছে? ই-ল। ই-ল মানে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা। এ নিয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। জিবরা মানে বান্দাহ, দাস। তাহলে জিব্রাইল অর্থ- আল্লাহর দাস। সুতরাং এটা হলো তার নাম এবং নামের অর্থ।

রাসূল সঃ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিভাবে তাঁকে সম্বোধন করতেন? এটা আসলেই একটা মজার বিষয়। যখন আমি এই বিষয়ে গবেষণা করা শুরু করলাম, প্রথম দিন এটা দেখে খুব অবাক হলাম যে- কারণ আমি বুখারি শরীফ থেকে শুরু করেছিলাম। আমি বুখারি শরীফ থেকে জিব্রাইল আঃ সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদিস সংগ্রহ করলাম। প্রথম যে হাদিসে জিব্রাইল আঃ এর নাম উল্লেখ আছে, রাসুল সঃ বলেন, জিব্রিল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা সাধারণত জিব্রিলকে আলাইহিস সালাম হিসেবে সম্বোধন করি। যার অর্থ তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হউক। কিন্তু রাসুল সঃ তাঁর উপর সালাওয়াত ও পেশ করলেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে। রাসুল সঃ এটা করলেন জিব্রাইল আ এর উচ্চ মর্যাদার কারণে।

আরেকটা ব্যাপার, রাসুল সঃ প্রায়ই তাঁর নাম বলে তাঁকে সম্বোধন করতেন না। জানেন, কিভাবে করতেন? তিনি বলতেন, যিনি আমার রবের নিকটে থাকেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিভিন্ন উপায়ে তাঁকে সম্বোধন করতেন। সব গুলো আমার পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এটা আরেকটা বিশাল অধ্যয়নের ব্যাপার। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। তবে সবচেয়ে কমন যে বিষয়টি আপনি পাবেন তা হলো ‘রুহ’ শব্দটি, আত্মা, স্পিরিট। আল্লাহ তাঁকে বলেন আর রুহুল কুদুস(পবিত্র আত্মা), আর রুহুল আমিন(বিশ্বাসী আত্মা), রুহানা(আমাদের আত্মা), আল্লাহ তাঁকে আরও ডাকেন ‘রাসুলুন কারীম (সম্মানিত বার্তাবাহক) বলে। সর্বশেষ আর একটি নাম বলেই আমরা অগ্রসর হব, সময় স্বল্পতার কারণে। এই নামটি আল্লাহ বা রাসূল সঃ এর পক্ষ থেকে নয় বরং ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের কাছ থেকে, যিনি ছিলেন খাদিজা রা এর চাচাতো ভাই। ওয়ারাকা বলেছিলেন, ইনি হলেন ‘আন নামুস’, যাকে মূসা আঃ এর কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল।

জিব্রাইল আঃ দেখতে কেমন ছিলেন?
তিনি দেখতে কেমন ছিলেন? জিব্রাইল আঃ বিভিন্ন রকম আকৃতি ধারণ করতেন। তিনি মানুষের আকৃতি ধারণ করতেন। আবার কখনো কখনো তিনি ফেরেশতার আকৃতিও ধারণ করতেন কিন্তু সেটা তাঁর পূর্ণাঙ্গ আকৃতি ছিল না। রাসূল সঃ বলেন, আমি জিব্রাইল আঃ কে দেখেছি আর তাঁর ছিল ৬০০ ডানা। রাসূল সঃ বলেন, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত একটি বিশাল সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে ফেলতেন। রাসূল সঃ আরও বলেন, ঐ ৬০০ ডানা শুধু ছড়ানোই থাকতো না, তাঁর ডানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত মনি মুক্তা ঝরতে থাকতো। আর তাঁর ডানার রং ছিল সবুজ, তাঁর পায়ের পাতার রং ও ছিল সবুজ। ফেরেশতার আকৃতিতে তাঁকে এমন দেখাতো, আর তিনি হলেন অন্য সকল ফেরেশতাদের চেয়ে আলাদা।

মনুষ্য আকৃতিতে তাঁকে কেমন দেখাতো? জিব্রাইল আ কয়েকজন মানুষের আকৃতি ধারণ করতেন। তাঁকে বিভিন্ন রকম দেখাতো। কিন্তু যখন তিনি রাসূল সঃ এর নিকটে আসতেন তিনি সুনির্দিষ্ট একটি রূপ নিয়ে আসতেন। রাসূল সঃ বলেন, জিব্রিল আ কে দিহইয়াহ ইবন খালিফা আল কালবি রা এর মত দেখাতো। দিহইয়াহ রা কে বলা হতো বনু কালবের ইউসুফ। ইউসুফ আ সম্পর্কে মহিলারা কি বলেছিল – ইনি একজন সুন্দর ফেরেশতা। তো দিহইয়াহ কে বলা হতো বনি কালবের ইউসুফ। মহিলারা দিহইয়াহকে পছন্দ করতো।

জিব্রিল আ এর সাথে নবী রাসুলদের সম্পর্ক।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং জিব্রিল আ এর সম্পর্ক কেমন? প্রথমত- তিনি হলেন ‘কালিমুল্লাহ মিনাল মালাইকা’। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে যার সাথে আল্লাহ কথা বলেন তিনি হলেন জিব্রিল আ। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন আল্লাহ কি সকল ফেরেশতার সাথে কথা বলেন না? উত্তর হলো – না। মানুষের মাঝ থেকে যেমন নির্দিষ্ট কয়েকজনের সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেন ঠিক তেমনি ফেরেশতাদের মাঝ থেকেও নির্দিষ্ট কয়েকজনের সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলে থাকেন। আল্লাহ চারজন ফেরেশতার সাথে কথা বলে থাকেন। ‘মুকাসসিমাতে আমরা’ যারা আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশের বাস্তবায়ন ঘটান, এই চারজনের সাথে আল্লাহর সরাসরি কথা বলার বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ সবসময় সরাসরি জিব্রিল আ এর সাথে কথা বলে থাকেন। এমন একজন নবীর কাহিনী আপনি পাবেন না যেখানে জিব্রিল আ এর আলোচনা নেই। আপনি যদি ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ পড়েন প্রত্যেক নবীর আলোচনায় কোন না কোন ভাবে জিব্রাইল আ এর নাম উঠে আসবেই। তাঁর উল্লেখ থাকবেই। 

কারণ তাঁকে এক লাখ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। মুসনাদে ইমাম আহমাদের একটি হাদিসে এক লাখ চব্বিশ হাজার নবীর কথা উল্লেখ আছে। তাঁদের মাঝে তিনশত পঞ্চাশ জন ছিলেন রাসূল। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে জিব্রিল আ কে পাঠানো হয়েছিল তাঁদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য, গড়ে তোলার জন্য, সমর্থন দেয়ার জন্য, প্রতিরক্ষার জন্য। তিনি প্রথম থেকেই তাঁদের সাথে ছিলেন। তাঁর আরেকটি উপাধি কি ছিল? নাসুরুল আম্বিয়া। তিনি ছিলেন নবীদের সাহায্যকারী। জিব্রাইল আঃ ই ইব্রাহীম আঃ কে শয়তানের প্রতি পাথর ছুঁড়তে বলেছিলেন। আর আমরা সেই ঘটনার স্মরণে শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করি। সুব হানাল্লাহ! দেখুন, সেই ঘটনার কত চমৎকার ঐতিহ্য আমাদের! জিব্রাইল আঃ ই ইব্রাহীম আঃ কে হজ্বের নিয়ম কানুন শিখিয়েছিলেন।

কখনো কখনো জিব্রাইল আঃ এর ভূমিকাকে স্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হয় না। ইয়ুসুফ আঃ এর গল্পে কখনো কি জিব্রাইল আঃ এর উল্লেখ পেয়েছেন? আপনি ইয়ুসুফ আঃ এর উপর বিশাল আলোচনা শুনতে পারেন, সেখানে হয়তো জিব্রাইল আঃ এর কথা কখনো বলা হয় না। কিন্তু তিনি সেখানে আছেন।

আয়াত —–
যখন তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হলেন তখন আমরা তাঁকে প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান দিয়েছি। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তাঁর নবুয়ত অনেক কম বয়সে শুরু হয়। আল্লাহ এবং জিব্রাইল আঃ এর সাথে তাঁর সম্পর্ক অনেক কম বয়স থেকে শুরু হয়। জিব্রাইল আঃ এর সাথে হযরত ইউসুফের কখন প্রথম দেখা হয়? যখন তাঁর ভাইরা তাঁকে সেই কূপে নিক্ষেপ করেছিল, আর তিনি কূপের তলায় পড়তে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এমন এক লোকের হাতের উপর ল্যান্ড করেন যাকে তিনি আগে কখনো দেখেননি। তিনি ছিলেন জিব্রিল আ। জিব্রিল তাঁকে ধরে ফেলেন যেন ইউসুফ আ পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পান। সুবহান আল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন। ইবনেল কাইয়েম র এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এই ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে যে- কোন সৃষ্টি আল্লাহর রজ্জু ধারণ করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকেও ধারণ করেন, তিনি আপনাকে পড়ে যেতে দিবেন না। তিনি আপনাকে নষ্ট হয়ে যেতে দিবেন না।
মাঝে মাঝে এই উল্লেখটা খুবই সূক্ষ্ম। আপনি হয়তো কোন লক্ষণীয় উল্লেখের কথা শুনেন না। এখানে জিব্রাইল আঃ এর ভূমিকাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইয়সুফ আঃ যেন পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পান সে জন্য আল্লাহ তাঁকে পাঠালেন ধরে ফেলার জন্য।

কখনো কখনো বর্ণীত গল্পের নবীর সাথে নয় বরং নবীর শত্রুদের সাথে জিব্রিল আঃ এর উল্লেখ পাওয়া যায়। তো মূসা আঃ এর ঘটনায় তিনি মূসা আঃ এর সাথে বহুবার ছিলেন। কিন্তু মূসা আঃ এর ঘটনায় আমরা জিব্রিল আঃ এর উল্লেখের যে সহিহ বর্ণনা পাই, তা আসলে তাঁর শত্রু ফেরাওনের সাথে। তিরমিজি শরীফের একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে- জিবরাইল আঃ নবী করিম সঃ এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে বললেন, ”ফেরাওনের মৃত্যুর দিন যদি আপনি আমাকে দেখতেন! সে যখন সমুদ্রের তলায় ডুবে মারা যাচ্ছিল, আমি গিয়ে তাকে পেলাম এবং তার মুখে কাদা নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে সে হয়তো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ফেলবে আর ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” কারণ আমি ভয় পাচ্ছিলাম সে হয়তো অনুশোচনা করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ফেলবে আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জিব্রিল আ এর চেয়ে বেশি কে চেনে? জিব্রিল আ জানেন, আল্লাহ এতোই দয়ালু যে এমনকি ফেরাওনের মত পাপিষ্ঠরও সুযোগ আছে। আর তিনি আশংখা করছিলেন যে, ফেরাওনের এক মুহূর্তের অনুশোচনা তার হয়তো সারা জিন্দেগীর অপরাধ মুছে দিতে পারে। জিব্রিল আ চিন্তিত ছিলেন যে, ফেরাউনের জন্য হয়তো একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। এখন, জিব্রিল আ কি ফেরাউনের ভাগ্য নষ্ট করে দিলেন? না। এরপর, আল্লাহ জিব্রিল আঃ কে বলেন, হে জিব্রিল! আমার ইজ্জত এবং গৌরবের কসম! যদি সে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চাইতো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিতাম! তার মুখে তোমার কাদা নিক্ষেপ কোন কাজে আসতো না। আমি তবু তাকে ক্ষমা করে দিতাম! এখন দেখুন, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, মুখে কাদা মারার কারণ কি? যখন কোন পাপি ব্যক্তি মারা যায়, ফেরেশতারা তার মুখে আঘাত করতে থাকে। জিব্রিল আঃ কেন ফেরাউন কে এত ঘ্রণা করতেন? তিনি বলেন, আমি সে দিন থেকে তাকে ঘৃণা করতাম যেদিন সে বলেছিল- আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রভু। হাদিসে আমরা জিব্রাইল আঃ এর একটা বিষয় দেখতে পাই, মাঝে মাঝে যখন জিব্রিল আঃ রাসূল সঃ এর কাছে আসতেন তিনি বলতেন না- আল্লাহ এটা বলেছেন। বরং তিনি বলতেন, আল আ’লা (সর্বোত্তম প্রভু)বলেছেন। এতে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি জিব্রিল আ এর অপরিসীম শ্রদ্ধার প্রকাশ পায়।

পরিশেষে, ইমরানের পরিবারের সাথে। কোন কোন সময় জিব্রিল (আঃ) কে নবীর সাথে উল্লেখ না করে নবীর পরিবারের সাথে উল্লেখ করা হয়। তো, আমরা মারিয়াম (আঃ) এর ঘটনা জানি। মারিয়াম (আঃ) মসজিদের বাইরে পূর্বে দিকের কোন এক স্থানে যেতেন ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﺷَﺮْﻗِﻴًّﺎ
। তিনি মাসে একবার মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের কোন এক জায়গায় যেতেন। অনেক আলেমের মতে, সেটা ছিল সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখতেন আর আল্লাহর জিকর করতেন। তিনি সেখানে মাটিতে দুটি লাঠি গেঁড়ে পর্দা টাঙিয়ে দিতেন, যেন এই খোলা জায়গায় মানুষ বুঝতে পারে এটা তাঁর বসার জায়গা। কেউ যেন এটার নিকটে না আসে।

তিনি অল্প বয়স্ক মেয়ে ছিলেন, ১৪- ১৮ বছর বয়সের। মোটকথা তিনি একজন টিনেজার ছিলেন। আর তিনি একা আল্লাহর উপাসনা করছেন, আল্লাহকে একা একা স্মরণ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻓَﺄَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺭُﻭﺣَﻨَﺎ আমরা তাঁর কাছে আমাদের রুহকে (জিবরাইল আঃ ) পাঠালাম। ﻓَﺘَﻤَﺜَّﻞَ ﻟَﻬَﺎ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺳَﻮِﻳًّﺎ জিব্রিল (আঃ) তাঁর নিকট একজন সুন্দর পুরুষের আকৃতিতে আবির্ভূত হলেন। জিব্রিল (আঃ) মুখ খুলে কিছু বলার আগেই মারিয়াম (আঃ) তাকে দেখে বললেন, ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﻣِﻨﻚَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺖَ ﺗَﻘِﻴًّﺎ ”আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর কোন ভয় থেকে থাকে।”

মানে – যদি তোমার নূন্যতম কোন শালীনতা থেকে থাকে ভাগ এখান থেকে। কোন কথা বলতে যেও না। মনে কর যে এটা কখনো ঘটে নি। যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাই প্রিয় বোনেরা, যদি কোন ভাই আপনার নিকট এগিয়ে আসে, তাদের সাথে এভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে দেখুন(আরবিতে এই কথাটা বলেন)। দেখুন, কি ঘটে। যদি তিনি আরবি নাও বুঝেন তিনি ভাববেন, না এই আপুর থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আমরা এই গল্পে যদি আবার ফেরত যাই, তাহলে দেখবো যে মারিয়াম (আঃ) জিবরাইল (আঃ) এর সাথে পরে কথা বলেছিলেন। কিন্তু কেন? কারণ মারিয়াম (আঃ)এর এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলা দেখে জিবরাইল (আঃ) সাথে সাথে মনুষ্য আকৃতি থেকে ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করেন। তিনি তাঁর মনুষ্য আকৃতি ত্যাগ করেন এবং ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করেন। আর সেটা ৬০০ ডানার পূর্ণ আকৃতি ছিল না। ছোট-হালকা কণ্ঠসহ বা অন্য কোন রূপ যেটাই হউক সে আকৃতি ধারণ করে তিনি কথা চালিয়ে যান।

আমি আল্লাহর একজন দূত। আপনার নিকট একজন পবিত্র সন্তানের সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। আল্লাহ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং ﻛَﺬَٰﻟِﻚِ এটা ইতিমধ্যে করা হয়েছে । ﻭَﻟِﻨَﺠْﻌَﻠَﻪُ ﺁﻳَﺔً ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﻣِّﻨَّﺎ ‘’আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই।’’ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣَّﻘْﻀِﻴًّﺎ আর এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে ‘কাদা’ মানে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। আর ‘কানা আমরান মাকদিইয়া’ মানে আপনি ইতিমধ্যে গর্ভবতী হয়ে গেছেন। ﻓَﺤَﻤَﻠَﺘْﻪُ অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন ﻓَﺎﻧﺘَﺒَﺬَﺕْ ﺑِﻪِ ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﻗَﺼِﻴًّﺎ ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন। গর্ভকালীন পুরো সময়টা তিনি লুকিয়ে থাকলেন। আর যখন সন্তান জন্ম দানের সময় আসলো… মনে রাখবেন, তিনি ছিলেন একজন অনভিজ্ঞ তরুণী। তাঁর পাশে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। তিনি পূর্বে কখনো সন্তান জন্ম দেন নি। প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!
যেহেতু মারিয়াম (আঃ) এর গর্ভ ধারণ বা সন্তান জন্ম দানের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। আর গর্ভ ধারণ এবং সন্তান জন্ম দান একজন মেয়েকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। মহিলারা যারা শুনছেন তারা হয়তো ভাবছেন- হ্যাঁ, আমরা জানি। কিন্তু আমাদের পুরুষদের এ বিষয়ে কোন ধারনাই নেই। আমরা শুধু দেখতে পাই। যেহেতু গর্ভ ধারণ এবং সন্তান জন্ম দান একজন মেয়েকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়, মারিয়াম (আঃ) মনে করছিলেন তিনি মারা যাচ্ছেন।

আর ঠিক এমন সময়ে কে তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করলো? ﻓَﻨَﺎﺩَﺍﻫَﺎ ﻣِﻦ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﺤْﺰَﻧِﻲ জিব্রিল (আঃ) তাঁকে বললেন, দুঃখ পাবেন না, – জিব্রিল (আঃ) এই সময়টাতে তাঁকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। আপনি মনে করছেন যে মানুষ আপনাকে নিয়ে কুৎসা রটনা করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো – একসময় মানব জাতির কাছে ওহী পাঠানো হবে আর তাতে উল্লেখ থাকবে যে, ﻭَﺍﺫْﻛُﺮْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ এ কিতাবে (উল্লেখিত) মারিয়ামের কাহিনী বর্ণনা করুন। আর দেখ ﻗَﺪْ ﺟَﻌَﻞَ ﺭَﺑُّﻚِ ﺗَﺤْﺘَﻚِ ﺳَﺮِﻳًّﺎ তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন। ﻭَﻫُﺰِّﻱ ﺇِﻟَﻴْﻚِ ﺑِﺠِﺬْﻉِ ﺍﻟﻨَّﺨْﻠَﺔِ আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, ﺗُﺴَﺎﻗِﻂْ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺭُﻃَﺒًﺎ ﺟَﻨِﻴًّﺎ তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে’। ﻓَﻜُﻠِﻲ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑِﻲ ﻭَﻗَﺮِّﻱ ﻋَﻴْﻨًﺎ ”অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও।” তোমার বাচ্চা তোমার চক্ষু শীতলকারী হওয়ার কথা। তোমার বাচ্চার দিকে তাকাও, কষ্টের দৃষ্টিতে নয়, বরং সুখের দৃষ্টিতে।

অতঃপর দ্বিতীয় পরীক্ষা আসলো, যখন তোমার সম্প্রদায় তোমার সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে তখন তুমি নিজের সমর্থনে কোন কথা বলতে পারবে না। ইতিমধ্যে, মারিয়াম (আঃ) এর পূর্ণ বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেল যে আল্লাহর সাহায্য তাঁর সাথে রয়েছে। তাই মারিয়াম (আঃ) যখন তাঁর সম্প্রদায়ের সম্মুখীন হলেন – তিনি জানতেন না যে আল্লাহ কিভাবে তাঁকে রক্ষা করবেন, তিনি জানতেন না আল্লাহ কি করতে যাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁকে সঠিক উপায়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, আল্লাহর উপর তাঁর নির্ভরতা চূড়ান্ত রূপে আবির্ভূত হলো। তিনি ভাবলেন, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

আর ঠিকই আল্লাহ সুবহা হানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে পুরস্কৃত করলেন। তাঁর সমর্থনে তাঁর নতুন জন্ম গ্রহণ করা সন্তান ঈসা (আঃ) কথা বললেন। এখানে জিবরাইল (আঃ) ঈসা (আঃ) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালা বলেন, আমরা তাঁকে পবিত্র আত্মার (জিব্রিল আঃ) মাধ্যমে সাহায্য করেছি। এমনকি আল্লাহ এটাকে ঈসা আঃ এর প্রতি একটি অনুগ্রহ হিসেবেও উল্লেখ করেন। ”আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য করেছি।” ঈসা আঃ কে জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তাঁর সারা জীবন জুড়ে সাহায্য করা হয়। আর শুধু এটা নয়, বরং আলেমদের মতে, একমাত্র ফেরেশতা যিনি কোন নবীকে আকাশে নিয়ে যেতে পারেন তিনি হলেন জিব্রিল (আঃ) ।

তো, যখন ঈসা (আঃ) কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়, তখন তাঁকে জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়ার জন্য একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। আর ঈসা আ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আকাশে অপবস্থান করবেন। কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহর হকুমে তাঁকে আবার পৃথিবীতে পাঠানো হবে। আর সে ফেরেশতা ছিলেন জিব্রিল (আঃ)। আমি এর তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে, কেন আল্লাহ এই কথাটি কেন সূরা মারিয়ামে বলেছেন, ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻚَ ”(জিব্রাইল বললঃ) আমি আপনার পালনকর্তার আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না।” এই আয়াতটি আসলে কি সম্পর্কে? বেশ কিছু দিনের জন্য জিব্রিল আঃ দেখা না দিলে রাসূল (সঃ) মনে মনে দুঃখ পেতেন।

আর তাই জিব্রিল আ রাসূল (সঃ) কে বললেন, দেখুন, আল্লাহর নির্দেশ পেলেই কেবল আমরা আপনার কাছে আসি। আমরা নিজেদের ইচ্ছামত আসতে পারি না, আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর এই কথাটি খুবই ব্যক্তিগত শোনায় যে, জিব্রিল (আঃ) বলছেন- ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻚَ
কেন সূরা মারিয়মে? ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, এই সূরায় বর্ণিত প্রত্যেক নবীর ঘটনায় জিব্রিল আ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চিন্তা করে দেখুন, জাকারিয়া, মারিয়াম থেকে ঈসা, ইব্রাহীম, মূসা, ইদ্রিস, ইসমাইল (আঃ) – ওনাদের সবার জীবনে জিবরাইল (আঃ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এই সূরাতেই রাসূল সঃ কে বলা হয়েছে, দেখুন, আমরা শুধু আল্লাহর হুকুমেই অবতরণ করি, জ্ঞান নিয়ে। আর তখন জিব্রিল (আঃ) এর আগমনে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথী ফেরেশতাদের মাঝে যিনি রাসূল (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন, যিনি রাসূল (সঃ) কে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ছিলেন জিব্রিল আঃ। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সঃ) আরও বলেছেন, …… প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা দুনিয়া থেকে দুইজন এবং আকাশ থেকে দুইজন মন্ত্রী দান করেছেন। আমাকে দেয়া আকাশের দুইজন মন্ত্রী হলেন – জিব্রিল এবং মিকাল।

আর দুনিয়া থেকে প্রদত্ত দুইজন হলেন- আবু বকর এবং ওমর (রা)। জিব্রিল আ এবং রাসূল সঃ এর প্রথম সাক্ষাৎকারটি কেমন ছিল? আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) এর ছেলেবেলায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন, দৌড়াদৌড়ি করছিলেন – ঠিক সকল বাচ্চার মত। হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। তিনি রাসূল (সঃ) কে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার কাছে দৌড়ে চলে গেল আর বলতে লাগলো – মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। অন্য বাচ্চারা যখন দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল (সঃ) দেখছিলেন যে এই লোকটি তাঁকে কি করতে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, তিনি আমার বুক কেটে ফেললেন, তিনি আমার বুক খুলে ফেললেন।

তিনি রাসূল (সঃ) এর হার্ট ধরলেন এবং তা থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন আর বললেন- এটা হলো তোমার অন্তরের শয়তানের অংশ। তারপর তিনি এটাকে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সোনালি বর্ণের একটি পাত্রে রাখা জমজমের পানিতে আমার হার্ট ধুয়ে ফেললেন। আর এই বাচ্চাবস্থায় রাসূল (সঃ) সবকিছু অবলোকন করছেন। এরপর রাসূল (সঃ) এর হার্টকে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। অন্য বাচ্চারা ফিরে এসে দেখল যে রাসূল (সঃ) এর বুক সেলাই করে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করলো। রাসূল (সঃ) এর হার্ট বের করে পবিত্র করা হলো। সে সময় তিনি এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন না। তিনি এই ঘটনায় চরম কষ্ট পেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না যে এটা কি হল!!

ঠিক ৩৪ বছর পর, তিনি যখন ৪০ বছর বয়সে পদার্পণ করেন- আয়েশা রা বলেন, তিনি (সঃ) সত্য ভাল স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। এটা তিনি একাধারে ৬ মাস যাবত দেখতে লাগলেন। তিনি রাতে যা স্বপ্নে দেখতেন তাই দিনের বেলায় সত্যে পরিণত হতো। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এ থেকে আমরা কিছুটা বুঝতে পারি যে, কেন হঠাৎ করে রাসূল (সঃ) গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি এবং খাদিজা (রা) বুঝতে পারলেন যে, অতি প্রাকৃতিক কিছু ঘটছে। ঐশ্বরিক কেউ একজন তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। কোন এক ধরণের বিশেষ সৃষ্টি তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। এ অবস্থা ৬ মাস যাবত চলল।

আয়েশা (রা) বলেন, তারপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নির্জনতাকে রাসূল (সঃ) এর নিকট প্রিয় করে দিলেন। হঠাৎ করেই তিনি একা থাকতে পছন্দ করা শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেরা গুহায় আরোহণ করতেন। হেরা গুহায় আরোহণ করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আপনারা যদি কখনো হেরা গুহায় উঠেন তাহলে সম্পূর্ণ মক্কাকে দৃষ্টি সীমায় দেখতে পাবেন। সুবহান আল্লাহ! আপনি সবকিছু দেখতে পাবেন।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) দিনের পর দিন, কখনো পুরো সপ্তাহ জুড়ে, অবশেষে পুরো রমজান মাস সেখানে অবস্থান করেন। তিনি সেখানে দ্বীনে হানিফ তথা ইব্রাহীম আঃ এর শেখানো পন্থায় এক আল্লাহর ইবাদাত করতেন। অর্থাৎ তিনি সেখানে গিয়ে যেভাবে পারতেন আল্লাহর ইবাদাত করতেন, সুশৃঙ্খল কোন নামাজের নিয়ম তখন জানা ছিল না। তিনি ইব্রাহীম আঃ এর রেখে যাওয়া নিয়মে আল্লাহকে ডাকতেন, ঠিক এটাই বর্ণিত আছে। তো, হঠাৎ করে একদিন তিনি জিব্রিল আঃ কে দেখতে পান। আপনাদের কি মনে হয়, তখন জিব্রিল আঃ কি ফেরেশতার আকৃতিতে দেখা দেন, না মানুষের আকৃতিতে? মানুষের আকৃতিতে।

আপনারা হয়তো ভাবছেন, রাসূল (সঃ) তাহলে ভয় পেলেন কেন? চিন্তা করে দেখুন, আপনি হয়তো দুই ঘণ্টা ধরে সেখানে অবস্থান করছেন, আশে পাশে কেউ নেই। তারপর আচমকা গুহার মুখে এক অপরিচিত লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন, আর সে লোকটি আপনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো, কোন কথা বলছে না। আপনি যদি রাসূল (সঃ) এর জায়গায় থাকতেন, আপনি কি ভাবতেন? তাছাড়া পরবর্তী কালের বর্ণনা থেকে আমরা ধারণা পাই তখন কি ঘটেছিল রাসূল (সঃ) এর প্রতি? রাসূল (সঃ) যখন খাদিজা (রা) এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, তিনি বলেন- ”যাকে আমি স্বপ্নে দেখি সে আমার নিকট এসেছিল।”

সুতরাং আমরা আরও বুঝলাম যে, রাসূল (সঃ) ইতিমধ্যে জিব্রিল (আঃ) কে স্বপ্নে দেখেছিলেন। তো, তিনি চিন্তা করছিলেন – আজব তো, আমি তো এখন ঘুমাচ্ছি না। আমি তো স্বপ্নে নই, বাস্তবে!! এর থেকে জিবরাইল (আঃ) কেন রাসূল (সঃ) কে জড়িয়ে ধরেছিলেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ‘ইকরা’ পড়ুন। পড়ুন, আপনি কল্পিত কিছু দেখছেন না। এটা কল্পিত কোন ছায়ামূর্তি নয়। আমি বাস্তবেই আপনার সামনে। আমি আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছি শুধু আমার বাস্তবতা বুঝাতে নয়, ﺇِﻧَّﺎ ﺳَﻨُﻠْﻘِﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﺛَﻘِﻴﻠًﺎ যে ওহী আপনার উপর নাযিল হতে যাচ্ছে তা হবে অত্যন্ত ভারী।
এ বাণী ধারণ করার জন্য আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে। অতঃপর তিনি তাঁকে আদেশ করলেন, পড়ুন। তারপর রাসূল সঃ কে ছেড়ে দিলেন।

রাসূল (সঃ) বললেন – আমি পড়তে জানি না। জিব্রিল (আঃ) তাঁকে আবার আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন- পড়ুন। রাসূল (সঃ) বললেন – আমি পড়তে জানি না। জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) কে তৃতীয়বারের মত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। (পরবর্তী কালে রাসূল সঃ বর্ণনা করেন) জিব্রিল (আ) আমাকে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন যে আমি মনে করছিলাম আমি মারা যাবো। তিনি বললেন- পড়ুন। রাসূল (সঃ) বললেন- কি পড়বো? ঠিক তখন জিব্রিল (আঃ) বললেন- ﺍﻗْﺮَﺃْ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﻋَﻠَﻖٍ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘আলাকা’ থেকে। ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺭَﺑُّﻚَ ﺍﻟْﺄَﻛْﺮَﻡُ পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। রাসূল (সঃ) যখন ওহী গ্রহন করছিলেন- জিব্রিল (আঃ) তাঁকে আর জড়িয়ে ধরলেন না। আবার চলেও গেলেন না। রাসূল (সঃ) গুহা ত্যাগ করে তাড়াতাড়ি নেমে গেলেন।

খাদিজা (রা) বলেন- কি হয়েছে? এখন দেখুন, রাসূল (সঃ) যখন তাঁকে বললেন কি ঘটেছে খাদিজা (রা) সহজেই তাঁকে বলতে পারতেন- আপনি ঐ গুহায় যাওয়া বন্ধ করুন। আপনার মনে হয় বাসায় থাকা উচিত। ভুলে যান সবকিছু। আপনি ঘরের ঐ কোণায় ধ্যান করতে পারেন। কেউ আপনাকে ডিস্টার্ব করবে না। ইনশাআল্লাহ, এ রকম কিছু আর ঘটবে না। কিন্তু তিনি এসবের কিছুই বললেন না। দেখুন, কেমন চমৎকার ছিলেন তিনি। সুব হানাল্লাহ! রাসূল সঃ নিজে নিজের উপর বিশ্বাস করার আগে খাদিজা তাঁর উপর বিশ্বাস করেন। সত্যিই। তিনিই রাসূল সঃ কে বলেন …… আল্লাহ কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না।

তিনি আমাদের রাসূল সঃ এর গত ১৫ বছরের জীবনী বর্ণনা করতে লাগলেন। আপনি এমন মানুষ যিনি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন। আপনি এতিমদের, গরীবদের যত্ন নেন। আপনি আপনার প্রতিবেশী এবং মেহমানদের প্রতি উদার। কেউ কোন সমস্যায় পড়লে আপনি তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। আল্লাহ কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না।

খাদিজা (রা) বললেন – চলুন, ওয়ারাকার কাছে যাই। তো, তাঁরা তার নিকট গেলেন। রাসূল (সঃ) যা দেখলেন তা ওয়ারাকার নিকট বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা সাথে সাথে বলে উঠলেন – ”ইনি নামুস! (আপনিই সেই রাসূল যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।) এই ফেরেশতাই (নামুস বা জিব্রিল) মূসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। ইস! আমি যদি যুবক হতাম! তাহলে আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনার বিরোধিতা করবে।”

এরপর কি ঘটেছিল? আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন – এরপর বহুদিন যাবত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। রাসূল (সঃ) অপেক্ষা করতে লাগলেন যেন সেই ফেরেশতা আবার দেখা দেন। রাসূল (সঃ) আবার ওইসব পাহাড়ে ঘুরতে লাগলেন। রাসূল (সঃ) নিজের ভাষায় তা এভাবে বর্ণনা করেন যে, ”(তাঁর মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে) তিনি যেন চাইতেন নিজেকে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে!” তিনি স্পষ্টরূপে জানতে চান কি ঘটছে! প্রতিবার রাসূল (সঃ) পাহাড়ে গেলে জিব্রিল (আঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেতেন। ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এতে রাসূল (সঃ) কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন।

এরপর পরবর্তীতে তিনি শুধু যে ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এ কথা বলতেন তা নয়, তিনি আরও বলতেন – ”আর আমি জিব্রিল”। তো, তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকট বিষয়টা পরিষ্কার করলেন যে তিনি জিব্রিল (আঃ)। কিন্তু তবু কোন কুরআন বা ওহী অবতীর্ণ হয়নি। অবশেষে, অন্য একদিন রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন – আর এবার ‘ইয়া মুহাম্মাদ ইন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কা’- ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল” এ বাক্য নয়। বুখারি শরীফে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন তারপর হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন – জিব্রিল আলাইহিস সালাম তাঁর পরিপূর্ণ ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে আছেন, সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে আছেন।

আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন – ﺫُﻭ ﻣِﺮَّﺓٍ ﻓَﺎﺳْﺘَﻮَﻯٰ প্রজ্ঞার অধিকারী, সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল। জিব্রিল (আঃ) পুরো আকাশ জুড়ে আবির্ভূত হলেন। রাসূল (সঃ) জিব্রিল (আঃ) কে তাঁর সকল ডানা সমেত, পরিপূর্ণ আকৃতিতে দেখতে পেলেন। ﺛُﻢَّ ﺩَﻧَﺎ ﻓَﺘَﺪَﻟَّﻰٰ তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকটবর্তী হতে লাগলেন। তিনি রাসূল (সঃ) থেকে মাত্র দুই ধনুকের দূরত্বে ছিলেন। তিনি রাসূল (সঃ) এর কাছাকাছি আসলেন। রাসূল (সঃ) জমিনে পড়ে গেলেন। তিনি নিজেই বলেছেন যে – ”তিনি আমার অতি নিকটবর্তী হওয়াতে আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।”
রাসূল (সঃ) দ্রুত বাড়িতে ফিরে গেলেন আর খাদিজা (রা) কে বলতে লাগলেন – আমাকে ঢেকে দাও, আমাকে ঢেকে দাও। আর ঠিক তখন পরবর্তী ওহী অবতীর্ণ হয় – ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺪَّﺛِّﺮُ – ﻗُﻢْ ﻓَﺄَﻧﺬِﺭْ – ﻭَﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﻜَﺒِّﺮْ – ﻭَﺛِﻴَﺎﺑَﻚَ ﻓَﻄَﻬِّﺮْ
হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন। সুবহানাল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন, প্রথম ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন আর দ্বিতীয়বার তিনি যখন খাদিজা (রা) কাছে ছিলেন তখন ওহী অবতীর্ণ হয়। ”হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন।” মূর্তি পরিত্যাগ করুন। এই হলো প্রথমদিকের ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা। আয়েশা (রা) বলেন- এর পর থেকে একটির পর একটি ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। অর্থাৎ দীর্ঘ বিরতির পর আসে সূরা মুদ্দাসসির, সূরা মুজ্জাম্মিল, সূরা দোহা এবং আরও অনেক সূরা ক্রমাগত রাসূল (সঃ) এর নিকট অবতীর্ণ হতে থাকে। এভাবেই শুরু।

রাসূল (সঃ) এখন বুঝতে পারলেন কি ঘটছে, তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সঃ) এখন আর জিব্রিল (আ) এর উপস্থিতিকে ভয় পান না। বিষয়টা তাঁর (সঃ) কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।

জিব্রীল (আ) এবং রাসূল (সঃ) এর মাঝে ব্যক্তিগত কথোপকথন। জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) এর ঘরে বহুবার এসেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলতেন। বিভিন্ন সময় কোন কোন সাহাবী তাঁকে দেখতে পেতেন আবার কেউ কেউ দেখতে পেতেন না। একদিন আব্বাস (রা) তার সন্তান আব্দুল্লাহ (রা) কে নিয়ে রাসূল (সঃ) এর সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। আব্বাস (রা) রাসূল (সঃ) কে সম্বোধন করে কথা বলছিলেন, কিন্তু তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন না। রাসূল (সঃ) কোন কথা না বলাতে আব্বাস (রা) চলে যান। চলার পথে আব্বাস (রা) আব্দুল্লাহ (রা) কে বললেন, তোমার চাচাতো ভাই কেন আমার সাথে কথা বলল না। তিনি মনে হয়ে যেন আমাকে দূরে ঠেলে দিলেন! আব্দুল্লাহ (রা) বললেন – আপনি কি দেখেন নি যে রাসূল (সঃ) তাঁর সামনে বসা এক লোকের সাথে কথা বলছিলেন।

আব্বাস (রা) বললেন- কোন মানুষ? আমি তো কাউকে দেখলাম না। তো, আব্বাস (রা) আবার রাসূল (সঃ) এর কাছে ফিরে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- তখন কেউ কি আপনার সাথে কথা বলছিল? রাসূল (সঃ) বললেন- আপনি কেন এটা জিজ্ঞেস করছেন? আব্বাস (রা) বললেন- কারণ আব্দুল্লাহ তাঁকে দেখতে পেয়েছিল। রাসূল (সঃ) বললেন- ‘রাআ’- সে দেখেছে? আব্বাস (রা) বললেন- জী, দেখেছি। তারপর রাসূল (সঃ) আব্দুল্লাহ (রা) এর জন্য দোয়া করেন যেন আল্লাহ তাঁর জ্ঞান বাড়িয়ে দেন।

তো, রাসূল (সঃ) এর সাথে জিব্রিলের ব্যক্তিগত কথোপকথন টা কেমন ছিল? রাসূল (সঃ) জিব্রিল (আ) কে বললেন – আল্লাহ বলেছেন যে – আমি আপনাকে (রাসূল সঃ কে) সকল জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- আমার রহমতের কোন অংশ কি আপনার পর্যন্ত পৌঁছেছে? মানে, আপনিও তো জগতের অংশ, আপনি ফেরেশতাদের জগত থেকে, কোন রহমা কি আপনার পর্যন্ত পৌঁছেছে? জবাবে জিব্রিল (আ) বললেন- ”আল্লাহর শপথ! ও মুহাম্মাদ! আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় নবী।” মানে, আমাকে আজ পর্যন্ত এমন কারো কাছে পাঠানো হয়নি, যাকে আমি আপনার থেকে বেশি ভালবাসি। তিনি আরও বললেন- ”আপনার মাধ্যমেই আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি।” এটা দ্বারা তিনি আসলে কি বুঝালেন? তিনি বললেন- আমি আমার ভাগ্য নিয়ে চিন্তায় থাকতাম, যতক্ষণ না আপনার নিকট এই আয়াত অবতীর্ণ হলো – ﺫِﻱ ﻗُﻮَّﺓٍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﻣَﻜِﻴﻦٍ – যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, প্রতিষ্ঠিত।

জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) কে ক্রমাগত আশ্বস্ত করতে লাগলেন। মাদানী জীবনের অনেক ব্যক্তিগত আলোচনায় জিব্রিল (আঃ) বারবার রাসূল (সঃ) কে আশ্বস্ত করার ব্যাপারটা দেখা যায়। কেন? কারণ, দেখুন, রাসূল (সঃ) জানলেন যে, তিনি এবং বিশ্বাসীরা নিরাপদ। কিন্তু রাসূল (সঃ) এখন কাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন? আমাদের নিয়ে – যারা পরবর্তীতে আসবে। তাই তিনি উম্মাতি, উম্মাতি বলে কাঁদতেন। তাই, আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) কে পাঠালেন। জিব্রিল (আঃ) বললেন- ইয়া, মুহাম্মাদ! আমরা আপনার উম্মাতের বিষয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দিব, আমরা আপনাকে হতাশ করবো না। আপনার উম্মত ঠিক থাকবে।

তিনি মদিনায় রাসূল (সঃ) কে বার বার নিশ্চয়তা দিতেন। কারণ রাসূল (সঃ) পরবর্তীতে আসা উম্মাত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। সাহাবীরা নিরাপদ। কিন্তু যারা পরবর্তীতে আসবে তাদের কি হবে? আরেকবার, ওমার (রা) বলেন, আর এটা বুখারিতে বর্ণিত আছে- আমি একবার মদিনাতে রাসূল (সঃ) এর সাথে হাঁটছিলাম, হাঁটতে হাঁটতে আমরা মদিনার ‘হাররা’ নামক এক জায়গায় উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এখানে বসতে বললেন। হঠাৎ তিনি হাঁটতে লাগলেন, আর তখন স্পষ্টত তিনি জিব্রিল (আ) এর সাথে কথা বলছিলেন। আমি আপনাদের বলতে পারি তিনি জিব্রিল (আঃ) এর সাথে কথা বলছিলেন। তারা কিছুক্ষণের জন্য হাঁটলেন আর আমি বসে থাকলাম। আর এই হাটাবস্থায় রাসূল (সঃ) বলছেন- ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? আর ওমর (রা) উত্তর শুনতে পাচ্ছিলেন না। তো, ওমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঐটা কি ছিল? রাসূল (সঃ) বললেন, তিনি ছিলেন জিব্রিল (আঃ)। তিনি এসেছিলেন আমাকে সুসংবাদ দিতে যে, এই উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই রাসূল (সঃ) বললেন, এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? – হ্যাঁ, এমনকি যদি জিনা বা চুরি করে। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তো, তিনি রাসূল (সঃ) কে এভাবে সান্ত্বনা দিলেন।

রাসূল ﷺ যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন জিব্রিল কিভাবে সান্ত্বনা দিতেন? রাসূল ﷺ যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিনি বলেন, জিব্রিল আমার কাছে আসলেন এবং বললেন- ও মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? আমি বললাম – হ্যাঁ। তখন জিব্রিল তাঁর হাত দিয়ে আমার মুখমণ্ডল এবং বক্ষ মুছে দিলেন এবং বললেন- ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা’। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি সবকিছু থেকে যা আপনার ক্ষতি করছে – ”মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন, আও হা-সিদ।” সকল খারাপ জিনিস থেকে অথবা বদ নজর থেকে বা হিংসা থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি।

সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ, ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে।
  • ১। আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে রাখবেন যে আপনি একদিন মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। একদিন আপনি মরবেনই।
  • ২। তিনি আরো বলেন, আপনি যাকে খুশি ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন যে একদিন আপনি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
  • ৩। আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। কিন্তু একথা স্মরণে রাখবেন যে, আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনাকে প্রতিফল দেয়া হবে। প্রতিদান আখিরাতেই পাবেন। এর মানে কি? মানে হলো, প্রত্যেকটি বিষয় আখিরাতে আসবে, প্রত্যেকটি পুরষ্কারই আখিরাতে দেওয়া হবে। আপনি যা করেন তা করতে থাকুন আর মনে রাখবেন যে এর বদলা আখিরাতে পাবেন।
  • ৪। জেনে রাখুন, একজন বিশ্বাসীর জন্য সত্যিকারের আভিজাত্য রাত্রি বেলা নামাজে দাঁড়ানোর মাঝে।
  • ৫। আর তার প্রকৃত মর্যাদা আত্মনির্ভরশীলতার মাঝে।

আর্থিকভাবে, আবেগের দিক থেকে, মানসিকভাবে বা শারীরিকভাবেই হোক, একজন মানুষ হিসেবে আপনার সম্মান ও মর্যাদা অন্য মানুষের উপর নির্ভর না হওয়ার প্রচেষ্টার মাঝে। যে কোন ব্যাপারেই হোক না কেন নিজেকে মানুষের প্রয়োজন থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
এরপর রাসূল ﷺ জীবনের অন্তিম সময় অনুভব করতে থাকেন। আর যখন অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে… আবু সাইদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করে বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের মাঝে অবস্থান করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব সাধারণভাবে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর এক বান্দাকে এ এখতিয়ার দিয়েছেন যে বান্দাহ হয় দুনিয়ার শান শওকত থেকে পছন্দ করবে অথবা যা কিছু আল্লাহর কাছে রয়েছে তা থেকে পছন্দ করতে পারবে। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়িতে সবাই কাঁদছিল, কারণ সবাই জানতো যে রাসূল ﷺ এর অন্তিম সময় চলে এসেছে, তিনি শেষ সময়ের নিটকবর্তী হয়েছেন। বিশেষ করে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ভীষণভাবে বিধ্বস্ত হলেন।
তাঁর কন্যা, উম্মু আবিহা, তাঁর পিতার মা, (বাবারা নিজ কন্যাদের আদর করে মা বলে ডাকেন) সর্বদা তাঁর ﷺ সাথে ছিলেন ঐ সময়ে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি ভালবাসা দেখালেন, মমতা দেখালেন। এমনকি যখন তিনি কোনোরকমভাবে কথাও বলতে পারছিলেন না, তখনও তিনি হাতের ইশারায় ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে ডাকলেন। ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কাছে আসলেন, রাসূল ﷺ তাকে আরো নিকটে আসতে বললেন এবং চুপিসারে তার কানে কিছু বললেন। ফলে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) আরো বেশি কাঁদতে লাগলেন। রাসূল ﷺ তাকে পুনরায় কাছে আসতে বললেন এবং চুপিসারে আরো কিছু কথা বললেন। এবার একথা শুনে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হাসিতে ফেটে পড়লেন! আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এগুলো দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন যে একবার ফাতিমা কাঁদলো আবার হঠাৎ করেই হাসিতে ফেটে পড়লো! সুতরাং তিনি ফাতিমা কে চাপাচাপি করছিলেন যে- বলো না কি বলেছেন তিনি? বলছো না কেন?! কি বলেছেন তিনি? শেষে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)জোরারোপের কারণে বলতে বাধ্য হলেন যে, তিনি বলেছেন, জিব্রীল সাধারণত প্রতি রামাদানে আমাকে নিয়ে পুরো কুরআন একবার ঝালিয়ে নেন। আর এই বছর রামাদানে তিনি দুইবার পুন:পাঠ করেছেন। তাঁর মানে হলো, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) ওহীকে শক্তিশালী করে দিলেন। আর আমার মনে হয় না আমি আর রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারবো।


আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল ﷺ – কে যেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দৃঢ় হতে সাহায্য করেন আর এমতাবস্থায় রাসূল ﷺ তার শরীরে হেলান দিয়ে আছেন। তাঁর দৃষ্টি পড়লো আব্দুর রাহমান ইবনে আবু বাকার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর ওপর, যিনি আয়েশার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর ভাই। তিনি দেখলেন তার পকেটে একটি মিসওয়াক রয়েছে এবং আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন যে আমি বুঝতে পারছিলাম যে রাসূল ﷺ এটি পেতে চাচ্ছেন। আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল ﷺ কে বললেন, আপনি মিসওয়াক চান? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা নাড়িয়ে স্বীকৃতি জানালেন। আব্দুর রাহমান তাঁর অব্যবহৃত মিসওয়াকটি আয়েশা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কে দিলেন। তিনি এটাকে চিবিয়ে নরম করলেন এবং রাসূল ﷺ এর মুখে পুরে দিলেন। এর সাংকেতিক অর্থ হলো, রাসূল ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে মিসওয়াক করতেন। কারণ তিনি চাইতেন যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকালে যেন তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস বিশুদ্ধ থাকে, প্রতিদিনই ৫ বার। তিনি বললেন, তিনি এটিকে ফরজ করতে পারতেন, যদি উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হতো। তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে প্রত্যেকবারই মিসওয়াক করতেন।
আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন তিনি মিসওয়াক করা সমাপ্ত করলেন, তখনই জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আমাদের মাঝে প্রবেশ করলেন। তিনি (আয়েশা) রাসূল এর দিকে তাকালেন আর দেখতে পেলেন তাঁর চেহারা আলোয় উদ্ভাসিত হলো। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম); যিনি নবীকে ওপরের উপদেশগুলো দিয়েছিলেন, তিনি নবী ﷺ কে বললেন, শুনুন, আমি আপনাকে একটি বিষয়ে পছন্দ করতে বলবো। হয়তো আপনি আপনার সাহাবীদের সাথে থাকবেন এবং সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করবেন অথবা আপনি “সর্বোচ্চ” (আল-আ’লা); আল্লাহ এর সাহচর্যে থাকবেন। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) যখন এই কথাটি বললেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তরে বললেন, ‘বালা, রাফিকিল আ’লা’, ‘আল্লাহুম্মা রাফিকিল আ’লা’- ওহ আল্লাহ, আমি সর্বোচ্চ (আল্লাহ) এর সাহচর্য কামনা করি। আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন তিনি ‘আর রাফিকিল আ’লা’ বলছেন, তিনি যেন তাঁর সমস্ত শরীরকেই ছেড়ে দিচ্ছেন! ”ওহ আল্লাহ, আল্লাহর সাহচর্য!” বলতে বলতে তাঁর হাত পড়ে গেলো এবং নবী ﷺ মৃত্যুবরণ করলেন।

যখন এই ঘটনা হলো, আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) চিৎকার করে উঠলেন। ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) যখন আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর চিৎকার শুনতে পেলেন, তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইয়া আবাতা, মান রাব্বিহি মা আদনা’ – হে আমার পিতা, আপনি আপনার রবের কতটা সন্নিকটে আছেন এখন! হে আমার পিতা, আমরা জিব্রীলের (আলাইহিস সালাম) এর নিকট আপনার মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা দিচ্ছি। ‘ইয়া আবাতা, জান্নাতুল ফিরদাউসি মা’ওয়া’ – হে আমার পিতা, জান্নাতই আপনার বর্তমান ঠিকানা! এবং একথাটিই তিনি বারবার বলতে থাকলেন, বলতেই থাকলেন, বলতেই থাকলেন। ”আপনি আপনার রবের কতটা নৈকট্যে আছেন, জিব্রীলের নিকট আপনার প্রস্থানের ঘোষণা দিচ্ছি এবং জান্নাতুল ফিরদাউস-ই আপনার আবাসস্থল।”
জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মৃত্যু।

সুবহানাল্লাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমনকি জিব্রীল-ও মৃত্যুবরণ করবে। চিন্তা করতে পারেন, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)- ও মারা যাবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর আল্লাহ যাদের চান তারা ছাড়া আর কেউ স্থির থাকতে পারবে না (অন্য সবাই মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবেন, তারা হলেনঃ জিব্রীল, ইস্রাফিল, মিকাল ও মৃত্যুর ফেরেশতা … যারা আল্লাহর আদেশ সমূহের বাস্তবায়ন করে থাকেন। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর কারা কারা বাকী আছে? মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনার সম্মানিত পবিত্র চেহারা (পূর্ণ সত্ত্বা), আপনার বান্দা আমি, আপনার বান্দা জিব্রীল, আপনার বান্দা মিকাল, আপনার বান্দা ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, মিকালের আত্মা নিয়ে নাও। তখন মিকালের আত্মা নিয়ে নেওয়া হবে। তখন আল্লাহ পূনরায় বলবেন, আর কে কে বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনি, আমি, জিব্রীল এবং ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, ইস্রাফিলের আত্মা নিয়ে নাও। ইস্রাফিলের আত্মা তাঁর থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ আবারও বলবেন, আর কারা বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওয়াজহুকাল বাকিল কারিম – ওহ আল্লাহ, আপনার পবিত্র চেহারা, আপনার এই বান্দা এবং আপনার বান্দা জিব্রীল। আমরা দুই বান্দা সবশেষে বাকী রয়েছি। আল্লাহ বলবেন, জিব্রীলের আত্মা নিয়ে নাও।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিব্রীল তাঁর চেহারা নিয়ে পতিত হবেন এমন অবস্থায় যে তাঁর ডানাগুলো বিস্তৃত অবস্থায় থাকবে আর সেগুলো আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। তিনি তাসবিহ (আল্লাহর প্রশংসা)-রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁর চেহারা নিম্নে পতিত হবে এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসারত থাকবেন। এরপর আল্লাহ বলবেন, আর কে বাকী আছে? তখন মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ইয়া আল্লাহ, কেবল আপনি আর আমিই বাকী আছি। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে আদেশ করবেন মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর মৃত্যুর ফেরেশতা মারা যাবেন। আর আল্লাহ বলবেন, “কুল্লু মান আলাইহা ফান, প্রত্যেক ব্যক্তিই ধবংসপ্রাপ্ত হবেন, ওয়া ইয়াবকা ওয়াজহু রাব্বিকা জুলজালালি ওয়াল ইকরাম”- আর কেবল আপনার মহাসম্মানিত রবের চেহারাই (পূর্ণ সত্ত্বা) বাকী থাকবে” (সূরা আর-রাহমান)। আল্লাহ নিজেকেই তখন জিজ্ঞেস করবেন, ‘লিমানিল মুলকিল ইয়াউম’ – আজকের রাজত্ব কার? আল্লাহ নিজেকেই প্রতিউত্তরে বলবেন, ‘লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার’- “কেবলই অদ্বিতীয় নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর”।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন আখিরাতে আমরা সবাই হাজির হবো, তখন সমস্ত জমিন আল্লাহর আনুগতের প্রশংসায় একদম সমতল হবে। তিনি বলেন, হাশরের ময়দানে প্রত্যেকেই যে জায়গায় রয়েছে সে জায়গা থেকে একটুও নড়তে পারবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর নিকট আমাকেই প্রথম আহবান করা হবে। অতএব তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এর নিকটে প্রবেশ করবেন। ”আমি সিজদায় পড়ে যাবো।” তিনি বলেন, অতঃপর আমি আমার মস্তক উত্তোলন করবো এবং আকস্মিকভাবে আমি সর্বোচ্চ দয়াময় (আল্লাহ) এর ডান পাশে জিব্রীলকে দেখতে পাবো! নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে বলেন, আল্লাহর কসম, ইতোপূর্বে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা-কে কোনো দিনই দেখেনি! জিব্রীল আল্লাহকে আগে কখনই দেখেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিব্রীলের দিকে ইশারা করে বলবেন, হে আমার রব, এই ব্যক্তি আমাকে বলেছিলো যে আপনিই তাকে আমার নিকটে পাঠিয়েছিলেন। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি সত্য বলেছো।

.একইভাবে জিব্রীল-ও নবীকে বলবেন, আপনি সত্য বলেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেন প্রতিদান দিবসে এই বিষয়টি করতে পছন্দ করলেন? তিনি কেন এটি ইচ্ছা পোষণ করলেন? কারণ হলো, প্রতিদান দিবসের দিন প্রত্যেক নবী-রাসূলকেই জিজ্ঞেস করা হবে যে সে (জিব্রীল) কি নবুওয়াতের বার্তাকে ঠিক মতো পৌছে দিয়েছে কিনা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিব্রিলের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই তিনি নিজেই বললেন যে, উনি বলেছেন যে তাঁকে আপনি আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন? তিনি তাঁর কাজ ঠিকমত করেছিলেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি সত্য বলেছো।

কুর’আনের অর্থ না বুঝার কারণে আপনি প্রতিদিন যে ১০টি জিনিস হারাচ্ছেন

১-কুর’আন নাযিলের উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন !
আপনি যদি কুর’আনের অর্থ না বুঝেই কেবল উচ্চারণ করে পড়তে থাকেন, তাহলে কুর’আন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
“এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে”। সূরা সা’দ ২৯
কিভাবে এই উদ্দেশ্য আমাদের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে যদি আমরা কুর’আন কি বলছে তা বুঝতে না পারি!
কোন ব্যক্তির পক্ষে কি সর্বদা অনুবাদ বহন করা সম্ভব, কিংবা সালাতে যখন কুর’আন তিলাওয়াত করা হয় তখন কি আমাদের পক্ষে কুর’আনের অনুবাদ বহন করা সম্ভব?.


২- আপনার মন হতে পারতো একটি সজ্জিত উদ্যান !
আমাদের মন যেন একটি সজ্জিত উদ্যান। আর সেই উদ্যানে যদি আমরা কোন গাছ না লাগাই, তাহলে সেখানে জন্মাবে আগাছা। এমনকি যদি আমরা ফুলের গাছ লাগাই, কিন্তু পরিচর্যা না করি তাহলেও সেখানে আগাছা জন্মাতে থাকবে। আমাদেরকে সর্বদাই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, কেবল তখনই আমরা আমাদের উদ্যানের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারব।
মনের ফুল হচ্ছে হেদায়াত,আল্লাহর বাণী,আল্লাহর দেখানো পথ, আর আগাছা হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা, কুচিন্তাসমূহ। প্রতিবার যখন আমরা কুর’আন তিলাওয়াত শুনি সালাতে কিংবা অন্যত্র তখন আমাদের মনে একটি ভালো অনুভূতি জন্ম নেয়, আমরা যদি সেই আয়াতসমূহের প্রতি মনোযোগ না দেই, কি বলা হচ্ছে তা বুঝার চেষ্টা না করি, আল্লাহর আয়াত-নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করি তাহলে তা হবে ফুল গাছ লাগানো বাগানে পানি না দেওয়ার মত, সেখানে জন্মাবে আগাছা আর সেই উদ্যান নষ্ট হয়ে যাবে।


৩- আপনি হারাচ্ছেন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য !
কুর’আন পাঠের পাঁচটি উদ্দেশ্য হতে পারে
১) আল্লাহর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ
২) ইলম অর্জন
৩) আল্লাহ যা করতে বলছেন তা বাস্তবায়িত করা
৪) আমাদের মন ও অন্তরের আরোগ্য-শিফা
৫) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে কথোপকথন .
অর্থ না বুঝার কারণে আপনি এ সকল উদ্দেশ্য থেকে উপকার লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।


৪-আপনি হারাচ্ছেন রুগ্ন ও ব্যধিগ্রস্ত অন্তর থেকে আরোগ্য লাভের সুযোগ !
আমরা সবাই জানি ফযরের সালাত আদায় করা ফরয। কিন্তু এরপরেও খুব অল্প কিছু মানুষ মসজিদের জামাতে অংশ নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু কেন? এমন নয় যে, তারা এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়, মূল কারণ হচ্ছে আমাদের অন্তর রুগ্ন ও ব্যধিগ্রস্ত, মরিচা ধরা ।
অধিকাংশ লোকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কুর’আন শুধুমাত্র একটি আদেশ-নিষেধের কিতাব।
কি করা যাবে, আর কি করা যাবে না ; সে বিষয়ের কিতাব।
অথচ বিধি-নিষেধের আলোচনা করা হয়েছে এমন আয়াতের সংখ্যা মোট আয়াতের শতকরা ১০ ভাগেরও কম !
বাকি ৯০ ভাগেরও বেশি আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে এমন বিষয় সম্পর্কে যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কের খোরাক, এগুলো আমাদের মনকে সতেজ ও পুষ্ট রাখে। আমাদের অন্তর দুর্বল ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে আমাদের পাপের কারণে। কাজেই এই মরিচা পড়া অন্তরে ঘষা মাজা এবং মজবুত করতে চাই কুর’আন।
আদম আলাইহি সালাম কে নিষেধ করা হয়েছিল তিনি যেন নিষিদ্ধ গাছের নিকটবর্তী না হন। আল্লাহ বলেন, “আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি”। ত্বহা ১১৫ ।আমরা মানুষ, আর আমাদের রয়েছে নানাবিধ দুর্বলতা। আমাদের চারপাশে আছে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষা। কাজেই এগুলো থেকে বাঁচতে আমাদের সদা সর্বদা তাযকিরাহ ( এমন উপদেশ যা আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) ও সতর্কবাণী মনে রাখা প্রয়োজন, যা আমরা লাভ করতে পারি দৈনিক তিলাওয়াত এর মাধ্যমে।
আল্লাহ এ কারণেই বলছেন,
“হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য”। [ইউনুস ৫৭]
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত…”।ইসরা ৮২
অন্তরের ব্যধি থেকে মুক্তির এর চেয়ে ভালো ঔষধ আর কে দিতে পারে, আল্লাহ ছাড়া?


৫– আপনি হারাচ্ছেন অন্তরে দৃঢ়তা লাভের সুযোগ !
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুর’আন একবারে নাযিল হয়নি, বরং তা ২৩ বছর সময় ধরে ধীরে ধীরে নাযিল হয়েছে।
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর প্রতি সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন? আমি এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে”।ফুরকান ৩২
অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও সতর্কতার খবর লাভ করে, ঈমান বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ বলেন,
“আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সূরা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো? অতএব যারা ঈমানদার, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে”। তাওবা ১২৪
প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে সালাতে কিংবা কিরাতে অর্থ বুঝে কুর’আন তিলাওয়াত ও আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর চিন্তা গবেষণা দ্বারা আমাদের অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে। অর্থ বুঝে কুর’আন তিলাওয়াত না করে আপনি এ সু্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।

৬-প্রতিদিন সালাতে আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সুযোগ হারাচ্ছেন !
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুর’আনের আয়াতের সাথে যেন কথা বলতেন !
প্রিয় পাঠক ! ভেবে দেখুন, আমরা যখন আমাদের প্রিয়জনদের কাছাকাছি থাকি, তখন কি আমরা মিনিট পাঁচেকের জন্যেও কথা না বলে চুপ করে থাকতে পারি? আর আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে হতে পারে?
তিনি আমাদেরকে আমাদের আপন মায়ের চেয়েও সত্তর গুণ বেশি ভালোবাসেন।
এরপরও আমরা জানার প্রয়োজন মনে করি না, আজকে সালাতে কি তিলাওয়াত করা হল!
আল্লাহ কি বিষয়ে কথা বলেছেন!
এমনকি কিছুমাত্র অর্থ না বুঝে আমরা কাটিয়ে দেই পুরো রামাদানের তারাবীহ’র সালাত !


৭-সরাসরি হেদায়াত ও পথ নির্দেশনা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন !
আমরা যখন কুর’আন পাঠ করি কিংবা এর তিলাওয়াত শুনে থাকি তখন আমরা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারি,পথ চলার বাতি লাভ করি। হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি।
“এবং যে আমার স্মরণ (কুর’আন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,
তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো (দুনিয়াতে) চক্ষুমান ছিলাম।
আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল,
অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব”। ত্বহা ১২৪-১২৬
“…আমি আমার কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ।
যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে”। ত্বহা ৯৯-১০০


৮-আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন !
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে- তাঁর প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, তাঁর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে স্মরণ করা সরাসরি কিংবা যখন আমরা তাঁর কোন আয়াত তথা সৃষ্টি নিদর্শন দেখতে পাই, তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা, তাঁর গুণবাচক উত্তম নামসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় রয়েছে। এই সম্পর্ক কেবল সময়ের সাথে সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আর এজন্য প্রয়োজন অল্প করে হলেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দৈনন্দিন কিছু না কিছু আল্লাহর কালামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।


৯– আপনার চরিত্র হতে পারতো আল-কুর’আন এর মত !
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “কুর’আনই হল আল্লাহর রাসূল(সা) এর আখলাক” ।
কুর’আন যদি হয় তত্ত্বকথা (থিওরি) তাহলে তার ব্যবহারিক হাতে কলমে প্রদর্শনী দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সমগ্র জীবনের মাধ্যমে। আমাদের উচিত নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জীবনীগ্রন্থ পাঠ করা এবং সেই ঘটনাপ্রবাহের সাথে আয়াতসমূহের মিল খুঁজে বের করা।
যেমন, হিজরতের সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একান্ত মনে নিবিষ্ট চিত্তে, নির্ভাবনায় সাথে পাঠ করে যাচ্ছিলেন একটি আয়াত, অপরদিকে সাথী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সংগীর নিরাপত্তা চিন্তায় উদ্বিগ্ন। সেটি হল,
“…হে আমার রব! (আমাকে যেখানেই নিয়ে যাও না কেন) তুমি আমাকে সত্যের সাথে নিয়ে যেও এবং (যেখান থেকেই আমাকে বের করো না কেন) সত্যের সাথেই বের করো এবং দান করো আমাকে তোমার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য”। [ইসরা ৮০]


১০- কুর’আনের চোখে বিশ্ব দেখার সুযোগ হারাচ্ছেন !
এ পৃথিবী একটি মায়ার জগত, যেন এক মস্ত কুহেলিকা আর ধোঁকা, যার অন্তরে কুর’আন নেই তার অন্তর একটি শূণ্য ঘরের মত যে ঘরে কোন আসবাব নেই। কুর’আনের শিক্ষা না থাকার কারণে সে দুনিয়ার জগতকেই বড় ও আসল বলে মনে করে, ফলে সে পরকালের প্রতি হয়ে পড়ে উদাসীন। এরূপ ব্যক্তির জীবন যতই সুখকর হোক না কেন তা শুধুই স্বপ্নের মত, যা ঘুম ভেঙ্গে গেলে হারিয়ে যায়।
যখন একজন ডাক্তারের কাছে এসে কোন রোগী নিজের সমস্যা ও অসুস্থতার বর্ণনা দিতে থাকে তখন অভিজ্ঞ ডাক্তার সেই লক্ষণসমূহ শুনতে থাকেন এবং রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন, পরিশেষে তিনি নিরাময়ের জন্য ঔষধ কিংবা পরামর্শ দান করেন। একইভাবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিচিত্র ঘটনার সামনে এসে দাঁড়াই।
আমাদের উচিত আমরা যেন সেই সমস্যাগুলোর সমাধান আল্লাহর কালামের কাছ থেকে নেয়ার মত সক্ষমতা অর্জন করি। এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন আমরা নিয়মিতভাবে কুর’আনের অর্থ শিক্ষা লাভ করব এবং সেই শিক্ষার সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতির মিল খুঁজে বের করতে পারব।


বনি ইসরাইলের বারসিসার কাহিনী

বারসিসা ছিল বনী ঈসরাইলের একজন সুখ্যাত উপাসক, ধর্মযাজক,‘আবিদ’। তার নিজের মন্দির ছিল আর সেখানে সে একাগ্রভাবে নিজেকে উপাসনায় নিয়োগ করত।

বনী ঈসরাইলের তিন জন পুরুষ জিহাদে যেতে চাচ্ছিল, তাদের একমাত্র বোনকে কোথায় রেখে যাবে বুঝতে পারছিল না।তারা সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ‘কোথায় আমরা আমাদের বোনকে রেখে যেতে পারি? তাকে তো আমরা একা ফেলে যেতে পারিনা। কোথায় তাকে রেখে যাওয়া যায়?’ তখন তারা তাদেরকে বলল, ‘তাকে রেখে যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হবে তাকে ঐ উপাসকের কাছে রেখে যাওয়া, সেই-ই সবচেয়ে ধার্মিক ব্যক্তি, আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। তোমাদের বোনকে তার কাছে রেখে যাও,
সে তার খেয়াল রাখবে’। তারা আবিদের নিকট গেল। তাকে সব বর্ণনা করে বলল, ‘এই হল অবস্থা - আমরা জিহাদে যেতে চাই, আপনি কি কষ্ট করে আমাদের বোনকে দেখে রাখতে পারবেন?’ সে বলল, ‘আমি তোমাদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আমার কাছ থেকে চলে যাও’। তখন শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করল, ‘তুমি তাকে কার কাছে রেখে আসবে? তুমি যদি তার খেয়াল না রাখো তাহলে হয়ত কোন দুষ্ট লোক তার খেয়াল রাখবে, আর তারপর তো তুমি জানোই কী ঘটবে! তুমি কি করে এই ভাল কাজটা তোমার হাতছাড়া করে দিতে পার?’

দেখুন ! শয়তান তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করছে! তো সে তাদেরকে আবার ডেকে এনে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তার খেয়াল রাখব, কিন্তু সে আমার সাথে আমার মন্দিরে থাকতে পারবে না,
আমার আরেকটা বাড়ি আছে সে সেই ঘরে থাকবে’। সে মেয়েটিকে বলল, ‘তুমি ওখানে থাক, আমি আমার মন্দিরে থাকব’। তো মেয়েটা সেই বাড়িতে একটা ঘরে থাকত, আর সেই ধর্মযাজক তার জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে এসে তার নিজের দরজার বাইরে রেখে দিত। সে মেয়েটির বাড়িতে পর্যন্ত যেত না, নিজের দরজার বাইরেই খাবার রেখে দিত আর মেয়েটিকে ঘর থেকে বের হয়ে এসে খাবার নিয়ে যেতে হত; সে মেয়েটির দিতে তাকিয়ে দেখতে পর্যন্ত ও চাইত না। তখন শয়তান আবার তার কাছে এসে বলল, ‘তুমি করছটা কি? তুমি কি জানো না মেয়েটা যখন তার ঘর থেকে বের হবে আর তোমার মন্দির পর্যন্ত আসবে লোকে তাকে দেখতেপাবে? তোমার উচিত তার দরজায় যেয়ে খাবারটা রেখে আসা।’ সে বলল,‘হ্যাঁ, আসলেই’।

শয়তান কিন্তু তার সাথে সামনা-সামনি কথা বলছেনা,তাকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। ধর্মযাজক ‘আবিদ তাই এবার খাবার নিয়ে মেয়েটির দরজা পর্যন্ত রেখে আসতে শুরু করল। এভাবে কিছুদিন চলল, এরপর শয়তান তাকে বলল, ‘মেয়েটা এখনও তার দরজা খুলছে আর বাইরে বের হয়ে আসছে প্লেট নেয়ার জন্য, কেউ তাকে দেখে ফেলতেপারে, তোমার উচিত প্লেটটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসা’। শয়তান কিনাতাকে বলছে আরো ভাল কাজ করতে! তাই সে খাবারের প্লেটটা ঘরে রাখা আরম্ভ করল, সেখানে রেখেই সে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসত। এভাবে আরো কিছুদিন পার হলো। আর ওদিকে জিহাদ চলতে থাকায় ভাইদেরফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। শয়তান আবারো তার কাছে আসল, বলল, ‘আচ্ছা, তুমি তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিবে,

কেউ তো নেই যে তার দিকে একটু খেয়াল রাখবে, একটু কথা বলবে।
সে যেন জেলখানায় আবদ্ধ হয়ে আছে, কথা বলার কেউ নেই। তুমি কেন ওর দায়িত্ব নিচ্ছ না? ওর সাথে একটু সামাজিকতা বজায় রেখে তো চলতে পার, যেয়ে একটু কথা বলো যাতে করে তুমি তার খোঁজখবর রাখতে পারো। তা না হলে দেখা যাবে সে বাইরে যেয়ে কোন পরপুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে’। তাই সে মেয়েটির সাথে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করল,
মেয়েটা ঘরের মধ্য থেকেই কথা বলত; দুজনকেপ্রায় চিৎকার করে কথা বলতে হতো যেন তারা একজন অন্য জনকে শুনতে পায়।

শয়তান এবার তাকে বলল, ‘তুমি এরকম দূর থেকে একজন আরেকজনের উপর চিৎকার না করে কেন ব্যাপারটাকে নিজের জন্য আরেকটু সুবিধাজনক করে নিচ্ছনা? কেন তার সাথে একই ঘরে বসে কথা বলছ না?’ তো এবার সে মেয়েটার সাথে একই ঘরে বসে কিছুসময় ব্যয় করতে শুরু করল।
তারপর ধীরে ধীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসাথে কাটাতে লাগল,আর আস্তে আস্তে তারা পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসতে লাগল। এক সময় এমন হল যখন সেই আবিদ,ধর্মযাজক,উপাসক সেই মেয়ের সাথে যিনায় (ব্যাভিচার) লিপ্ত হল। ফলে মেয়েটা অন্তসত্ত্বাহয়ে পড়ল।
কাহিনী এখানেই শেষ নয়।

মেয়েটি একটি সন্তানের জন্ম দিল। শয়তান ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল, ‘একি করেছ তুমি! তুমি কি জানো যখন ওর ভাইরা ফিরে আসবে তখন কি হবে? তারা তোমাকে মেরে ফেলবে, এমনকি তুমি যদি এটাও বলো যে – “এটাআমার বাচ্চা না”,তারা তোমাকে বলবে যে “তোমার বাচ্চা না হলেও তুমি তার দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলে,
তাই এটা এখন তোমারই দায়ভার।
বাচ্চার বাবা কে আমরা তার পরোয়া করি না, তুমিই এর জন্য দায়ী”। সুতরাং এখনএকটাই উপায়,
তুমি বাচ্চাটাকে মেরে তাকে পুঁতে ফেল’। বারসিসাবলল, ‘এটা কি গোপন থাকবে আমি তার ছেলেকে মেরে ফেলার পরে?’
শয়তান বলল, ‘তোমার কি মনেহয় ও এটাকে গোপনে রাখবে? তুমি যদি এরকম ভাব, তাহলে তুমি মস্ত বড় বোকা’। সে জিজ্ঞেসকরল, ‘তাহলে আমি কি করব?’। শয়তান জবাব দিল, ‘তোমার ঐ মেয়েটাকেও মেরে ফেলা উচিত’।

তাই সে মেয়েটা কে আর বাচ্চাকে মেরে ফেলল, এরপর দুজনকে একই ঘরের নিচে কবর দিয়ে দিল।
ভাইয়েরা একসময় ফিরে আসল,
তারপর জানতে চাইল,‘আমাদের বোন কোথায়?’, সে উত্তরে বলল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সেঅসুস্থ হয়ে পড়ে এরপর মারা যায়, তাকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে’ এই বলে সেমনগড়া একটা কবর দেখিয়ে দিল তাদেরকে। তারা বলে উঠল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজি’উন’, তারা বোনের জন্য দু’আ করল, আর নিজেদের বাসায় ফিরে গেল।

রাতের বেলা, তিনজনের মাঝে এক ভাই একটা স্বপ্নদেখল, কে তার সেই স্বপ্নে এসেছিল?
শয়তান, সে তাকে বলল, ‘তুমি বারসিসা কে বিশ্বাস করো? তুমি কি তাকে বিশ্বাস করো? সে মিথ্যা বলেছে। সে তোমার বোনের সাথে ব্যাভিচার করেছে,তারপর তাকে আর তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আর এই কথার প্রমাণ হল সে তোমাদেরকে যেখানে সে কবর দেখিয়েছে তোমাদের বোন সেখানে নেই, আছে তার ঘরের পাথরের নিচে’।

তার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর সে তার বাকি ভাইদেরকে স্বপ্নের কথা জানাল। তারা বলল, ‘আমরাও তো একই স্বপ্নই দেখেছি, তাহলে এটা নিশ্চয়ই সত্যি’। পরদিন তারা সেই মিথ্যা কবরটা খুড়ল কিন্তুকিছুই পেল না, এরপর তারা তাদের বোনের ঘরে যেয়ে মাটি সরাল তখন দেখতে পেল তার বোনের মৃতদেহসাথে একটা শিশু। তারা যেয়ে বারসিসাকে ধরল, ‘মিথ্যুক! এইসব করেছ তুমি?’ তারা তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল। এমন সময় শয়তান আসল বারসিসার কাছে, এবারে কিন্তু সে মনের ওয়াসওয়াসা হিসেবে আসেনি, সে আসল মানুষের রূপ ধরে। তাকে বলল, ‘বারসিসা, তুমি কি জানো আমি কে? আমি শয়তান, আমিই সে, যে তোমাকে এতো ঝামেলার মধ্যে ফেলেছি। আর আমিই সেএকজন, যে তোমাকে এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারব। আমিই এসব ঘটনা ঘটিয়েছি আর আমারকাছেই আছে এসবের সমাধান। এখন তোমার উপর নির্ভর করে, তুমি যদি মরতে চাও তো ঠিক আছে।তুমি যদি চাও আমি তোমাকে রক্ষা করি, তাহলে আমি করতে পারি’। বারসিসাবলল, ‘দয়া করে আমাকে বাঁচাও’।

শয়তান বলল, “আমাকে সিজদাহ করো’। বারসিসা শয়তানের প্রতি সিজদাহ করল। কিন্তু শয়তান কি বলল? সে বলল, ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল’এরপর সে তাকে আর কোনদিন দেখতে পেল না।
বারসিসা শয়তানের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করল, আর এটাই ছিল তার জীবনে করা শেষ কাজ, কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সুতরাং তার জীবনের শেষ কাজটা তাহলে ছিল- শয়তানকে সিজদাহ করা, সে ছিল সেই উপাসক যে কিনা ছিল সরল পথের উপর, কিন্তু যেহেতু সে সেপথ থেকে বাঁক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিওখুব খুব ছোট্ট একটা বাঁক, প্রথমদিকে যেটাকে একেবারেই তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, একটু সুবিধারনামে, দ্বীনের মাসলাহার নামেই সে এগুলো করেছিল। সরলপথ থেকে তার বিচ্যুতির পরিমাপটা ছিল একদমই নগণ্য কিন্তু দেখুন তার শেষ পরিণতি!


বারসিসা ছিল বনী ঈসরাইলের একজন সুখ্যাত উপাসক, ধর্মযাজক,‘আবিদ’।
তার নিজের মন্দির ছিল আর সেখানে সে একাগ্রভাবে নিজেকে উপাসনায় নিয়োগ করত।
বনী ঈসরাইলের তিন জন পুরুষ জিহাদে যেতে চাচ্ছিল, তাদের একমাত্র বোনকে কোথায় রেখে যাবে বুঝতে পারছিল না।তারা সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ‘কোথায় আমরা আমাদের বোনকে রেখে যেতে পারি? তাকে তো আমরা একা ফেলে যেতে পারিনা। কোথায় তাকে রেখে যাওয়া যায়?’ তখন তারা তাদেরকে বলল, ‘তাকে রেখে যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হবে তাকে ঐ উপাসকের কাছে রেখে যাওয়া, সেই-ই সবচেয়ে ধার্মিক ব্যক্তি, আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। তোমাদের বোনকে তার কাছে রেখে যাও, সে তার খেয়াল রাখবে’। তারা আবিদের নিকট গেল। তাকে সব বর্ণনা করে বলল, ‘এই হল অবস্থা - আমরা জিহাদে যেতে চাই, আপনি কি কষ্ট করে আমাদের বোনকে দেখে রাখতে পারবেন?’ সে বলল, ‘আমি তোমাদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। 

আমার কাছ থেকে চলে যাও’। তখন শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করল, ‘তুমি তাকে কার কাছে রেখে আসবে? তুমি যদি তার খেয়াল না রাখো তাহলে হয়ত কোন দুষ্ট লোক তার খেয়াল রাখবে, আর তারপর তো তুমি জানোই কী ঘটবে! তুমি কি করে এই ভাল কাজটা তোমার হাতছাড়া করে দিতে পার?’

দেখুন ! শয়তান তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করছে! তো সে তাদেরকে আবার ডেকে এনে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তার খেয়াল রাখব, কিন্তু সে আমার সাথে আমার মন্দিরে থাকতে পারবে না,

আমার আরেকটা বাড়ি আছে সে সেই ঘরে থাকবে’। সে মেয়েটিকে বলল, ‘তুমি ওখানে থাক, আমি আমার মন্দিরে থাকব’। তো মেয়েটা সেই বাড়িতে একটা ঘরে থাকত, আর সেই ধর্মযাজক তার জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে এসে তার নিজের দরজার বাইরে রেখে দিত। সে মেয়েটির বাড়িতে পর্যন্ত যেত না, নিজের দরজার বাইরেই খাবার রেখে দিত আর মেয়েটিকে ঘর থেকে বের হয়ে এসে খাবার নিয়ে যেতে হত; সে মেয়েটির দিতে তাকিয়ে দেখতে পর্যন্ত ও চাইত না। তখন শয়তান আবার তার কাছে এসে বলল, ‘তুমি করছটা কি? তুমি কি জানো না মেয়েটা যখন তার ঘর থেকে বের হবে আর তোমার মন্দির পর্যন্ত আসবে লোকে তাকে দেখতেপাবে? তোমার উচিত তার দরজায় যেয়ে খাবারটা রেখে আসা।’ সে বলল,‘হ্যাঁ, আসলেই’।

শয়তান কিন্তু তার সাথে সামনা-সামনি কথা বলছেনা,তাকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। ধর্মযাজক ‘আবিদ তাই এবার খাবার নিয়ে মেয়েটির দরজা পর্যন্ত রেখে আসতে শুরু করল। এভাবে কিছুদিন চলল, এরপর শয়তান তাকে বলল, ‘মেয়েটা এখনও তার দরজা খুলছে আর বাইরে বের হয়ে আসছে প্লেট নেয়ার জন্য, কেউ তাকে দেখে ফেলতেপারে, তোমার উচিত প্লেটটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসা’। শয়তান কিনাতাকে বলছে আরো ভাল কাজ করতে! তাই সে খাবারের প্লেটটা ঘরে রাখা আরম্ভ করল, সেখানে রেখেই সে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসত। এভাবে আরো কিছুদিন পার হলো। আর ওদিকে জিহাদ চলতে থাকায় ভাইদেরফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। শয়তান আবারো তার কাছে আসল, বলল, ‘আচ্ছা, তুমি তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিবে, কেউ তো নেই যে তার দিকে একটু খেয়াল রাখবে, একটু কথা বলবে।

সে যেন জেলখানায় আবদ্ধ হয়ে আছে, কথা বলার কেউ নেই। তুমি কেন ওর দায়িত্ব নিচ্ছ না? ওর সাথে একটু সামাজিকতা বজায় রেখে তো চলতে পার, যেয়ে একটু কথা বলো যাতে করে তুমি তার খোঁজখবর রাখতে পারো। তা না হলে দেখা যাবে সে বাইরে যেয়ে কোন পরপুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে’। তাই সে মেয়েটির সাথে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করল, মেয়েটা ঘরের মধ্য থেকেই কথা বলত; দুজনকেপ্রায় চিৎকার করে কথা বলতে হতো যেন তারা একজন অন্য জনকে শুনতে পায়।

শয়তান এবার তাকে বলল, ‘তুমি এরকম দূর থেকে একজন আরেকজনের উপর চিৎকার না করে কেন ব্যাপারটাকে নিজের জন্য আরেকটু সুবিধাজনক করে নিচ্ছনা? কেন তার সাথে একই ঘরে বসে কথা বলছ না?’ তো এবার সে মেয়েটার সাথে একই ঘরে বসে কিছুসময় ব্যয় করতে শুরু করল।
তারপর ধীরে ধীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসাথে কাটাতে লাগল,আর আস্তে আস্তে তারা পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসতে লাগল। এক সময় এমন হল যখন সেই আবিদ,ধর্মযাজক,উপাসক সেই মেয়ের সাথে যিনায় (ব্যাভিচার) লিপ্ত হল। ফলে মেয়েটা অন্তসত্ত্বাহয়ে পড়ল।
কাহিনী এখানেই শেষ নয়।
মেয়েটি একটি সন্তানের জন্ম দিল। শয়তান ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল, ‘একি করেছ তুমি! তুমি কি জানো যখন ওর ভাইরা ফিরে আসবে তখন কি হবে? তারা তোমাকে মেরে ফেলবে, এমনকি তুমি যদি এটাও বলো যে – “এটাআমার বাচ্চা না”,তারা তোমাকে বলবে যে “তোমার বাচ্চা না হলেও তুমি তার দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলে,
তাই এটা এখন তোমারই দায়ভার।
বাচ্চার বাবা কে আমরা তার পরোয়া করি না, তুমিই এর জন্য দায়ী”। সুতরাং এখনএকটাই উপায়,
তুমি বাচ্চাটাকে মেরে তাকে পুঁতে ফেল’। বারসিসাবলল, ‘এটা কি গোপন থাকবে আমি তার ছেলেকে মেরে ফেলার পরে?’
শয়তান বলল, ‘তোমার কি মনেহয় ও এটাকে গোপনে রাখবে? তুমি যদি এরকম ভাব, তাহলে তুমি মস্ত বড় বোকা’। সে জিজ্ঞেসকরল, ‘তাহলে আমি কি করব?’। শয়তান জবাব দিল, ‘তোমার ঐ মেয়েটাকেও মেরে ফেলা উচিত’।
তাই সে মেয়েটা কে আর বাচ্চাকে মেরে ফেলল, এরপর দুজনকে একই ঘরের নিচে কবর দিয়ে দিল।
ভাইয়েরা একসময় ফিরে আসল,
তারপর জানতে চাইল,‘আমাদের বোন কোথায়?’, সে উত্তরে বলল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সেঅসুস্থ হয়ে পড়ে এরপর মারা যায়, তাকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে’ এই বলে সেমনগড়া একটা কবর দেখিয়ে দিল তাদেরকে। তারা বলে উঠল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজি’উন’, তারা বোনের জন্য দু’আ করল, আর নিজেদের বাসায় ফিরে গেল।
রাতের বেলা, তিনজনের মাঝে এক ভাই একটা স্বপ্নদেখল, কে তার সেই স্বপ্নে এসেছিল?
শয়তান, সে তাকে বলল, ‘তুমি বারসিসা কে বিশ্বাস করো? তুমি কি তাকে বিশ্বাস করো? সে মিথ্যা বলেছে। সে তোমার বোনের সাথে ব্যাভিচার করেছে,তারপর তাকে আর তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আর এই কথার প্রমাণ হল সে তোমাদেরকে যেখানে সে কবর দেখিয়েছে তোমাদের বোন সেখানে নেই,
আছে তার ঘরের পাথরের নিচে’।
তার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর সে তার বাকি ভাইদেরকে স্বপ্নের কথা জানাল। তারা বলল, ‘আমরাও তো একই স্বপ্নই দেখেছি, তাহলে এটা নিশ্চয়ই সত্যি’। পরদিন তারা সেই মিথ্যা কবরটা খুড়ল কিন্তুকিছুই পেল না, এরপর তারা তাদের বোনের ঘরে যেয়ে মাটি সরাল তখন দেখতে পেল তার বোনের মৃতদেহসাথে একটা শিশু। তারা যেয়ে বারসিসাকে ধরল, ‘মিথ্যুক! এইসব করেছ তুমি?’ তারা তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল। এমন সময় শয়তান আসল বারসিসার কাছে, এবারে কিন্তু সে মনের ওয়াসওয়াসা হিসেবে আসেনি, সে আসল মানুষের রূপ ধরে। তাকে বলল, ‘বারসিসা, তুমি কি জানো আমি কে? আমি শয়তান,

আমিই সে, যে তোমাকে এতো ঝামেলার মধ্যে ফেলেছি। আর আমিই সেএকজন, যে তোমাকে এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারব। আমিই এসব ঘটনা ঘটিয়েছি আর আমারকাছেই আছে এসবের সমাধান। এখন তোমার উপর নির্ভর করে, তুমি যদি মরতে চাও তো ঠিক আছে।তুমি যদি চাও আমি তোমাকে রক্ষা করি, তাহলে আমি করতে পারি’। বারসিসাবলল, ‘দয়া করে আমাকে বাঁচাও’।

শয়তান বলল, “আমাকে সিজদাহ করো’। বারসিসা শয়তানের প্রতি সিজদাহ করল। কিন্তু শয়তান কি বলল? সে বলল, ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল’এরপর সে তাকে আর কোনদিন দেখতে পেল না।

বারসিসা শয়তানের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করল, আর এটাই ছিল তার জীবনে করা শেষ কাজ, কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সুতরাং তার জীবনের শেষ কাজটা তাহলে ছিল- শয়তানকে সিজদাহ করা, সে ছিল সেই উপাসক যে কিনা ছিল সরল পথের উপর, কিন্তু যেহেতু সে সেপথ থেকে বাঁক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিওখুব খুব ছোট্ট একটা বাঁক, প্রথমদিকে যেটাকে একেবারেই তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, একটু সুবিধারনামে,
দ্বীনের মাসলাহার নামেই সে এগুলো করেছিল। সরলপথ থেকে তার বিচ্যুতির পরিমাপটা ছিল একদমই নগণ্য কিন্তু দেখুন তার শেষ পরিণতি!

খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতকাল

তিনি ১৯ হিজরী সনে রোমানদের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী পাঠালেন। সেই বাহিনীতে ছিলেন সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইববে হুজাফাহ আস সাহমী (রাঃ)। রোমান সম্রাট প্রায়ই রাসূল (সঃ) এর সাহাবীদের ঈমান ও বীরত্বের কথা শুনতেন। তাই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কোন মুসলিম সৈনিক জীবিত অবস্থায় বন্দী হলে যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) কে রোমানরা বন্দী করে এবং সম্রাটের সামনে উপস্থিত করে।

রোমান সম্রাট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) কে বললেন, “আমি প্রস্তাব করছি তুমি খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ কর। যদি তা কর, তাহলে তোমাকে মুক্তি দেব এবং তোমাকে সম্মানিত করবো।”

বন্দী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) খুব দৃঢ়তার সাথে বললেন, “আফসোস! যেদিকে আপনি আহবান জানাচ্ছেন তার থেকে হাজার বার মৃত্যু আমার অধিক প্রিয়।”

তখন রোমান সম্রাট বললেন, “আমি মনে করি তুমি একজন বুদ্ধিমান লোক। আমার প্রস্তাব মেনে নিলে আমি তোমাকে আমার ক্ষমতার অংশীদার বানাবো, আমার কন্যা তোমার হাতে সমর্পণ করবো এবং আমার এ সাম্রাজ্য তোমাকে ভাগ করে দেব।”

বেড়ী পরিহিত বন্দী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) মৃদু হেসে বললেন, “আল্লাহর কসম! আপনার গোটা সাম্রাজ্য এবং সেই সাথে আরবদের অধিকারে যা কিছু আছে সবই যদি আমাকে দেওয়া হয়, আর বিনিময়ে আমাকে বলা হয় এক পলকের জন্য মুহাম্মদের (সঃ) দ্বীন আমি পরিত্যাগ করি, আমি তা করবো না।”

রোমান সম্রাট বললেন, “তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করবো।”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) দৃঢ়তার সাথে বললেন, “আপনার যা খুশী করতে পারেন।”

এরপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) কে শূলকাষ্ঠে হাত পা বেঁধে ঝুলিয়ে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে বলা হল। এতে রাজী না হওয়ায় বিশাল এক কড়াই এনে তাতে তেল ফুটানো হল। টগবগে সেই উত্তপ্ত তেলে ফেলা হল একজন মুসলিম বন্দীকে। ফেলার সাথে সাথে দেহের গোশত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে হাড় পৃথক হয়ে গেল।

সেটা দেখিয়ে এবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) কে আবারও খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণের আহবান জানানো হল। এবারও তিনি দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। সম্রাটের নির্দেশে তাকে উত্তপ্ত কড়াইয়ের নিকট আনা হয়। এতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) এর চোখে পানি চলে আসে।

এতে তার মন পরিবর্তন হয়েছে মনে করে সম্রাট তাকে আবারও খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে বললেন। কিন্তু তিনি তা আবারও প্রত্যাখ্যান করেন। তাহলে কাঁদছ কেন জিজ্ঞেস করলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ (রাঃ) বলেন, “আমি একথা চিন্তা করে কাঁদছি যে, এখনই আমাকে এই কড়াইয়ের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে এবং আমি শেষ হয়ে যাব। অথচ আমার বাসনা, আমার দেহের পশমের সমসংখ্যক জীবন যদি আমার হতো এবং সবগুলিই আল্লাহর রাস্তায় এই কড়াইয়ের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারতাম।” সত্যিই আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর সাহাবীদের ঈমান ছিল পর্বতের মতো অটল। আল্লাহু আকবার!



মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রাসূল (সঃ) এর সাহাবীদের মতো সুদৃঢ় ঈমান দান করুন। আমীন।

Tuesday, September 10, 2019

ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে নারীদেরকে অপমানিত করেছে?

ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থার নাম যা সকল যুগের জন্য সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে ইসলাম সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিস্থিতির কারণে মানুষ ২য় বিবাহ করতে বাধ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার অধিকার সংরক্ষণ করা আবশ্যক।

তাই ইসলাম ২য় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়েছে যে, সকল স্ত্রীর সাথে ন্যায়পরায়ণতা সুলভ আচরণ করতে হবে। কোন মহিলাকে এ বিয়েতে বাধ্য করা যাবে না এবং এ বিয়েতে ২য় স্ত্রী শর্তারোপ করতে পারে। ইসলামে একাধিক বিয়ে করা আবশ্যক করা হয়নি, উত্তমও বলা হয়নি। বরং তা শুধু বৈধ বলা হয়েছে। একজন ব্যক্তি চারটি বিয়ে করতে পারে তবে শর্ত হচ্ছে, তাকে শরীয়ত নির্ধারিত অলঙ্ঘনীয় শর্তাবলী অবশ্যই পূরণ করতে সক্ষম হতে হবে। সেগুলো হল, ন্যায়-পরায়নতা বজায় রাখা, প্রত্যেক স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হওয়া, ভরণ-পোষণ সহ জীবন-যাপনের উপকরণের ব্যবস্থা করা।

মোটকথা, শুধু প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। আর তাও শর্ত সাপেক্ষে। সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তব প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ইসলাম এ অনুমতি প্রদান করেছে। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যারা ইসলামের এ বিধানকে অনৈতিক এবং এতে নারীদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তারাই যখন নিজের স্ত্রী বাদ দিয়ে অন্য মহিলাকে ‘র্গাল ফ্রেন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে তখন তার এটাকে অনৈতিক বলতে নারাজ! তারাই নারীদেরক পণ্যের মত পুরুষের উপভোগের বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর প্রতি এর থেকে চরম অপমান আর কী হতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এই আইনের মাধ্যমে ইসলাম তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে লাঞ্ছনা ও অপমানের হাত থেকে উদ্ধার করে বৈধ পন্থায় সম্মানের সাথে ঘরে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।

তাই পরিশেষে বলব, একাধিক বিবাহের বৈধতা দিয়ে ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, প্রকৃতিগত চাহিদা এবং নানা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করেছে। নারীকে পরপুরুষের ভোগ্য বস্তু থেকে উদ্ধার করে তাকে মর্যাদা এবং সম্মানের আসনে আসীন করেছে। তবে প্রয়োজন, ইসলামী আইনের ব্যাপারে মুসলমানদের গণসচেতনতা এবং সঠিকভাবে তা ব্যবহার করা। তাহলেই যে উদ্দেশ্যে ইসলাম এ আইনকে মানবতার কল্যাণে দান করেছে সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন॥

Monday, September 9, 2019

আজ ১০ মহাররম, কি ঘটেছিল এই দিনে? জানুন বিস্তারিত

এটা বলাই বাহুল্য যে, মহররম মাস ও আশুরার (১০ই মুহররম) দিনটা মুসলিম জাহানের উপর চেপে বসা রাজা-বাদশাহ শেখ ও আমির শাসিত রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্যে একটা চরম বিব্রতকর দিন। রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারনে স্বৈরাচারী শাসক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে ৬১ হিজরীতে এদিন মহানবীর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) শাহাদাত বরন করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে অনেক নবী রসুলসহ খলিফা হযরত উসমান, হযরত আলীসহ হুসাইনের চাইতেও বেশী মর্যাদাপূর্ণ আরো অনেক বড় বড় মহান ব্যক্তির হত্যাকান্ডের ঘটনা থাকলেও ৬১ হিজরীর কারবালার ঘটনা এতোটাই পৈচাশিক ও নির্মমতম ছিল যে এটা যুগে যুগে কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দিয়েছে, এখনো দেয় এবং নিঃসন্দেহ তা কেয়ামত পর্যন্ত জালিমদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাতে ও ইসলামী শক্তির পক্ষে মুমীনদের উদ্ভূদ্ধ করায় নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে।


মহানবী(দঃ) ইন্তেকালের পূর্বে কাউকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যাননি। তিনি জনগনের উপর তার উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ভার ছেড়ে দিয়ে যান। সেইমতে প্রথম চারজন উত্তরাধিকারী তথা খোলাফায়ে রাশেদীন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগন কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু উমাইয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৭৬ খ্রীষ্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা হযরত মুগিরার প্ররোচনায় তিনি তার জ্যৈষ্ট পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মর্মমুলে চরম কুঠারাঘাত করেন। হযরত মুয়াবিয়া এবং হযরত মুগীরা উভয়েই সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। যেহেতু তারা কোন নবী বা রসুল ছিলেন না, স্বাভাবিক কারনেই তারা ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না। কিন্তু তাদের এই ভুল ইসলামের ইতিহাসকে ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করে। ইসলামের শাসন পদ্ধতির মুলে চরম কুঠারাঘাত করে। ঐতিহাসিক আল-ফাখরী, ফন ক্রেমার এবং ইবনুত তিকতাকার মতে ইয়াজিদের রাজত্বকাল তিনটি দুষ্কর্মের জন্য বিখ্যাত-প্রথম বছরে সে মহানবীর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে, দ্বিতীয় বছরে মদীনাকে লুন্ঠন করে এবং তৃতীয় বছরে সে কাবার উপর হামলা করে।এই ইয়াজিদ-এর খলিফা হিসাবে মনোনয়ন অন্যরা মেনে নিলেও, ইসলামের ব্যত্যয় মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন মেনে নিলেন না। হুসাইনের এই ন্যায্য দাবীকে আবদুল্লাহ-ইবনে যুবাইর, আবদুল্লাহ-ইবনে ওমর, আবদুর রহমান-ইবনে আবু বকর সমর্থন করেন।



ইয়াজিদ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটানোয় ইমাম হুসাইনের মত মুমীন ব্যক্তির পক্ষে সেটা মেনে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। খিলাফত ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনই ছিল ইমাম হোসাইনের (রা.) সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থনও ছিল তার পক্ষে।



ইরাকের লোকেরা তার কাছে চিঠি/দূত পাঠিয়ে জানাল তারা তাকে খলিফা হিসেবে চায়, ইয়াজিদকে নয়। সমর্থকদের চিঠি পেয়ে হুসাইন (রা: ) তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে কুফায় পাঠালেন অবস্থা দেখার জন্য। মুসলিম দেখলেন যে আসলেই অনেক মানুষ হুসাইনকে (রা: ) কে খলিফা হিসেবে চাচ্ছে। তিনি হুসাইন (রা: ) কে সেটা জানিয়েও দিলেন। ইতমধ্যে কিছু অত্যুৎসাহী লোকেরা হানী বিন উরওয়ার ঘরে মুসলিমের হাতে হুসাইনের পক্ষে বায়াত নেওয়া শুরু করল। সিরিয়াতে ইয়াজিদের কাছে এ খবর পৌছালে সে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে পাঠাল কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করতে।



উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে দেখে ঘটনা সত্যি। মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক নিয়ে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময় উবাইদুল্লাহ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ দিয়ে মানুষকে ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর ভয় দেখাল। কুফাবাসীরা ইয়াজিদের শাস্তির ভয়ে আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম বিন আকীল দেখলেন, তথাকথিত হুসাইন সমর্থকদের কেউই অবশিষ্ট নেই। তাকে গ্রেপ্তার করে হত্যার আদেশ দিল উবাইদুল্লাহ। মুসলিম মৃত্যুর আগে হুসাইনের কাছে একটি চিঠি পাঠান –



“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না। কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার সাথেও তারা সত্য বলেনি।”


এদিকে মুসলিম বিন আকীলের মৃত্যু হলেও তার প্রথম চিঠির উপর ভিত্তি করে যুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখে হুসাইন (রা:) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অনেক সাহাবী তাকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর,আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।



সুফীয়ান আস সাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:) হুসাইনকে বলেছিলেন: মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) হুসাইনকে বলেন: হুসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে,যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?



যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই চিঠি এসে পৌঁছল। চিঠি পড়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে থাকলেন। পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের (রা:) গতিরোধ করল। তিনি আগত সৈন্যদলকে আল্লাহর দোহাই এবং নিজের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনটি প্রস্তাব দেন –



১. তাকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করবেন।



২. অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।



৩. অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি জিহাদ করবেন এবং ইসলামী রাজ্যের সীমানা পাহারা দেবেন।



ইয়াজিদের সৈন্যরা উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ফয়সালা ছাড়া কোন প্রস্তাবই মানতে রাজী হল না। এ কথা শুনে উবাইদুল্লাহর এক সেনাপতি হুর বিন ইয়াজিদ বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত, তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা খুব যৌক্তিক এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়নি।



অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবেন যিয়াদের ৪ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হোসাইনকে (রা.) অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। মাত্র ২০০ মানুষের বিপক্ষে ৪০০০ সৈন্য। পানি সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়ায় ইমামের কচি সন্তানেরা প্রচণ্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লে হযরত আব্বাস ফোরাতে যান পানি আনতে। নিজেও তিনি ভীষণ তৃষ্ণার্ত ছিলেন। আঁজলা ভরে পানি তুলে খেতে যাবেন এমন সময় তাঁর মনে পড়ে যায় ইমাম হোসেন এর তৃষ্ণার্ত শিশু সন্তানের কথা। পানি ফেলে দিয়ে মশক ভর্তি করে তাঁবুর উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই শত্রুপক্ষের তীরে তাঁর এক হাত কেটে যায়। মশকটাকে তিনি অপর হাতে নিয়ে ইমামের তাঁবুর দিকে ছুটলেন। এবার অপর হাতটিও কাটা পড়ে। মশকটাকে এবার তিনি মুখে নিয়ে তাঁবুর দিকে যেতে চাইলেন। শত্রুর তীর এবার সরাসরি তার দেহে আঘাত হানে। এভাবে শহীদ হয়ে যান তিনি। এরপর অসম এই যুদ্ধে আলী আকবর শহীদ হয়ে যান। কারবালায় আরো যাঁরা শহিদ হন তাদেঁর মধ্যে রাসূলের প্রিয় সাহাবা হাবিব ইবনে মাজাহের, তাঁর প্রাচীন বন্ধু মুসলিম ইবনে আওসাজা, নওমুসলিম ওহাবসহ আরো অনেকেই।



নিরুপায় হুসাইন শেষবারের মত অনুরোধ করলেও, পাষান্ডদের মন গলেনি। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর কারবালার প্রান্তরে এক অসম যুদ্ধ শুরু হলো। হুসাইনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম সর্বপ্রথম শত্রুর আঘাতে শাহাদাত বরন করলেন। তৃষ্ণার্ত হুসাইন শিশুপুত্র আসগরকে কোলে নিয়ে ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হলেন কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর শিশুপুত্রের শরীরে বিদ্ধ হয়ে শিশুপুত্রটি শাহাদাত বরন করলে একাকী অবসন্ন হুসাইন তাবুর সামনে বসে পড়লেন। এমন সময় এক মহিলা তাকে এক পেয়ালা পানি এনে দিলো। কিন্তু শত্রুর তীর তার মুখ বিদীর্ণ করে দিলো।



সীমার বিন যুল জাওশান নামের এক নরপশু বর্শা দিয়ে হুসাইনের (রা:) শরীরে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। শেষে ইয়াজিদ বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে নির্ভীক এই বীর আল্লাহর লিখে রাখা ভাগ্যানুযায়ী শহীদ হলেন। হুসাইন (রা:) অন্যায় কিছু বলেন নি, অন্যায় কিছু করেন নি। তার হত্যাকারী ও হত্যায় সাহায্যকারীদের আল্লাহর ক্রোধ ঘেরাও করুক, এরা ধ্বংস হোক! আল্লাহ্‌ তায়ালা শহীদ হুসাইন (রা:) এবং তাঁর সাথীদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা আচ্ছাদিত করুন।



ইতিহাসের পরবর্তী বিশ্লেষণঃ



ইয়াজিদ বেঁচে নেই। কিন্তু ইয়াজিদের প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র এখনো শীর্ষ মুসলিম দেশগুলো কব্জা করে রেখেছে। স্বৈরাচাররা মুসলমানদের বুকে চেপে বসে আছে। মুসলমানদের বোকা বানাবার জন্যে তাদেরও কিছু গৃহপালিত আলেম ইমাম পীর জাতীয় লোক আছেন। এরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নামে নানাভাবে চেষ্টা করছে কারবালার ইতিহাসকে ম্লান করে এর গুরুত্বকে খাটো করার। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কায়দা করে বলতে চায়, ইমাম হুসাইন ক্ষমতার লোভেই নাকি কুফায় গমন করেছিলেন। তার এই যাওয়াতে নাকি ইসলামের কোন কল্যাণ ছিল না। এটা নাকি হক আর বাতিলের যুদ্ধ ছিল না। (নাউজুবিল্লাহ)।আল্লাহর লানত এইসব দরবারীর উপর। তারা ইয়াজিদের নৃশংসতাকে এবং ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ বন্ধকে সহি নয় মর্মে প্রতিপন্ন করতে তৎপর। কেউ কেউ কারবালার এ ঘটনাকে কেচ্ছা কাহিনী বলতেও দ্বিধা করেনি। ইনিয়ে বিনিয়ে তারা দলীল পেশ করে কেবল দরবারী আলেমদের। 

তারা বুঝাতে চান, কারবালার ঘটনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এ নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই। ইয়াজিদ হুসাইনের হত্যাকারী নয়। ইমাম হুসাইন মুসলিম জাতির নির্বাচিত আমীর বা খলীফা ছিলেন না। তাকে হত্যা করা জায়েজ ছিল বলেও তারা কৌশলে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। কোন কোন আলেম তো ইয়াজিদের প্রতি অতিরিক্ত লিখতে গিয়ে তাকে ‘রাহমতুল্লাহ’বলতেও কুন্ঠিত হননি। তবে এইসব দরবারী আলেমরা বড়ই ধূর্ত। তারা প্রথমেই হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর পক্ষে এমনভাবে বন্দনা করেন যে পড়ে মনে হবে তারা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর খুবই ভক্ত এবং পক্ষের লোক। প্রথমেই বোঝাতে চেষ্টা করেন ইমাম হুসাইনের মহব্বতে তাদের কলিজা ভরপুর। কিন্তু ধূর্তামীর আশ্রয়ে 'প্রকৃত ইতিহাস' শেখাবার নামে এবং বড়ই চাতুর্য্যপূর্ণভাবে তারা ইয়াজিদের সাফাই গায়। তারা হযরত ইমাম হুসাইনকে হত্যার জন্য হযরত ইমাম হুসাইনকেই দায়ী করেন। কেউ কেউ শীয়াদের দায়ী করেন। অথচ ঐসময় শীয়া মতবাদের সৃষ্টিই হয়নি। মোট কথা, যে কোনভাবেই যেন ইয়াজিদকে দায়ী করা না হয়। ইমাম হুসাইনের হত্যার দায় কুফাবাসীর উপরও চাপাতে চান। তারা বোঝাতে চান, ইমাম হুসাইন কুফাবাসীর ফাঁদে পড়ে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। 

অথচ কুফাবাসীদের প্ররোচনায় হুসাইন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন-এমনটা কোন মুসলমান মনে করতে পারে না। বরং ইমাম হুসাইন ইসলামী খেলাফতের পক্ষে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। এটা ঠিক কুফাবাসীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তারা ইমাম পরিবারের সাথে চরম গাদ্দারী করেছে।দরবারী আলেমরা চরম ধূর্ততার আশ্রয়ে ইয়াজিদকে ভাল শাসক, ইসলামের খেদমতগার বলেও প্রতিপন্ন করতে চান। তাদের মতে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নাকি সহি নয়। তারা মানুষকে বোঝাতে চান, ইয়াজিদ হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দিলেও হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দেয়নি। পাঠক খেয়াল করুন ফাঁকিবাজিটা কোথায়। ইয়াজিদ যখন হুসাইনকে হত্যার ঘটনা শুনলো তখন ইয়াজিদ ব্যথিত হয়েছিল বা হত্যাকারীকে শাস্তি দিয়েছিল এমন কোন দলীল তো পাওয়া যায় না। দরবারীরা বলে বেড়ান যে, হুসাইনের ছিন্ন মস্তক ইয়াজিদের দরবারে এলে সেখানে নাকি কান্নার রোল পড়ে যায়। কিন্তু হত্যাকারীকে তো ক্ষমতা থেকে সরিয়েও দেয়নি এবং কোন শাস্তিও দেয়নি। গর্ভনর ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ তো তার স্বপদে বহাল তবিয়তেই ছিল। তাহলে কি বোঝা গেলো? দরবারীরা আরো বুঝাতে চান রাজতন্ত্র তেমন খারাপ কিছু নয়। যুগে যুগে এইসব দরবারীরা নানাভাবে মুসলমানদের সত্য ইতিহাস শেখাবার নামে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে।



যরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) কেন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে গেলেন, মদিনা থেকে কেন বের হলেন নানাভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে তার জন্য ইমাম হুসাইনকে ক্ষমতালোভী আখ্যায়িত করে প্রকারান্তে তাকেই দোষী সাব্যস্থ্য করার অপচেষ্টাও কম হয়নি। তারা বলেন কুফায় যাওয়ার কারণেই ইয়াজিদ ইমাম হুসাইনকে শহীদ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা বুঝাতে চান, অন্যায়ের বিরোধিতা করে হুসাইন ঠিক কাজ করেননি। ইয়াজিদের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে হুসাইনই অন্যায় কাজ করেছেন। তারা বলতে চান, মুসলিমরা ইয়াজিদের শাসনের উপর ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। হুসাইন এসে সেই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কিছু সুবিধাবাদী আলেম বলেছেন, ইয়াজিদকে ভালও বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না। গোঁজামিলটা খেয়াল করুন। নবীর দৌহিত্রের হত্যাকারী জালিম শাসককে নাকি ভাল খারাপ কোনটাই বলা যাবে না। এই না বলার অর্থ কিন্তু ইয়াজিদকে সমর্থণ করাই। অনেকে কারবালার যুদ্ধকে হক ও বাতিলের যুদ্ধ নয় বলে অভিমত দিতেও কুন্ঠিত হলেন না। প্রকারান্তরে তারা বলতে চান, হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) হকের পক্ষে ছিলেন না (নাউজুবিল্লাহ)।



সম্মানীত সাহাবীরা কেন ইমামকে কুফা যা্ওয়া রুখতে চেয়েছিলেন ?




ইমাম হুসাইন যখন কুফাবাসীর পত্র পেয়ে কুফায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অনেক সম্মানীত সাহাবী তাকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তারা কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন বলেই হুসাইনকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কোনভাবেই ইয়াজিদকে সমর্থণ করে নয়।



হুসাইন (রাঃ)-কে কেন ইমাম বলা হয়?




পুরো মুসলিম বিশ্ব এক কথায় তাকে ইমাম বা নেতা মেনে নিয়েছেন। ইয়াজিদ জনতার উপর চেপে বসেছিল। ইয়াজিদ মুসলিম বিশ্বের নির্বাচিত নেতা ছিল না। সেই সময় থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা ইয়াজিদকে ইমাম বা নেতা হিসাবে মেনে নেয়নি নেবেও না। হুসাইনকে ইমাম বলার অর্থ ইয়াজিদকে স্বীকার না করা। ইমাম বা নেতা হুসাইনই। সেকারনে তখন থেকেই যুগে যুগে হুসাইন-এর নাম নেয়ার আগে 'ইমাম' বলা হয়। ইমাম হাসানকেও বিষ প্রয়োগে অত্যন্ত কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল। তিনিও মুসলিম জাতির ইমাম। ইয়াজিদের বংশধরদের যতই গা জ্বলুক, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা হাসান এবং হুসাইনকে ‘ইমাম’ হিসাবেই ঘোষনা দেবেন।



মুয়াবিয়া(রাঃ) সম্পর্কে আমাদের ধারনা কিরুপ হওয়া উচিত ?



দুরাচারী ইয়াজিদকে খলিফা হিসাবে মনোনয়ন দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া একটা বড় রকমের ভুল করেছেন-এতে কোনই সন্দেহ নেই। ঐসময়টা ছিল সাহাবী, তাবেইনদের যুগ, খলিফা মনোনয়নের জন্যে অনেক যোগ্য লোক থাকা সত্বেও তিনি কি কারনে পুত্র ইয়াজিদকে মনোনীত করেছিলেন, সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে তার বর্তমানে কারবালার এই ঘটনা ঘটেনি। তিনি হযরত আলীর খেলাফতের বিরুদ্ধেও অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। তিনি চাইছিলেন ওসমান হত্যার প্রতিশোধ আগে নিতে, কিন্তু আলী চাইছিলেন আগে খিলাফত ঠিক করতে। দু’জনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে হয়তো সঠিক ছিলেন, যদিও পথ ছিল ভিন্ন। তাদের উভয়েরই ইজতেহাদী অনেক ভুল ছিল। সবার উপরে যে কথা, তাহলো, উভয়েই ছিলেন সম্মানিত সাহাবী। হযরত আলী ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী। সাহাবীদের সম্পর্কে কোন খারাপ ধারনা কোন মুসলমানের থাকতে পারে না। মুয়াবিয়ার ভুলে পরবর্তীতে ইসলামের চরম ক্ষতি হয়েছে।ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, তথাপি একজন সম্মানিত সাহাবী হিসাবে তিনি মুসলমানদের শ্রদ্ধার পাত্রই থাকবেন। কারবালার ঘটনার জন্যে তিনি দায়ী ছিলেন না। দায়ী ছিল তার দুরাচারী পুত্র ইয়াজিদ। নবীর দৌহিত্রকে এমন নৃশংশভাবে হত্যাকান্ডে যার সামান্যতম সম্পর্কও থাকবে, তেমনটা জানলে তিনি নিশ্চয়ই ইয়াজিদকে খলিফা হিসাবে মনোনয়ন দিতেন না।



আশুরার দিন যা বর্জনীয়



সুন্নি নামধারী কিছু লোক এদিন নানা জাতের খানাপিনা করেন, মহরম-এর বাদ্য বাজান, এদিনটাকে খুশীর আমেজে পালন করেন। আবার শীয়া নামধারী কিছু কুলাঙ্গার এদিন নানা জাতের মাতম করেন, বুকে পিঠে ছুরি মারেন, তাজিয়া মিছিল করেন। এসব কাজ অবশ্যই বর্জনীয়। এসব কখনোই ইসলাম অনুমোদন করেনি। কাজেই এগুলো বিদআত। এদের কিছু কিছু কর্মকান্ড শির্কের পর্যায়ভূক্ত। মুসলমানদেরকে অবশ্যই এসব বর্জণ করতে হবে।



যা করনীয়



১। রোজা রাখুন। কেননা কারবালার এই মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও এদিনটি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: রামাযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহাররামের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায।” (মুসলিম)ইব্ন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আশুরার দিনের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে এত গুরুত্বসহকারে অন্য কোন দিন রোযা পালন করতে দেখিনি। (অর্থাৎ রামাযান মাস ছাড়া) (বুখারী)।



২। কারবালার এ বিয়োগান্ত ঘটনা স্মরন করে ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তার পরিবার বর্গের জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘যাঁরা আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় শহীদ হন তাঁদেরকে কখনও মৃত মনে করো না। বরং তাঁরা নিজেদের রব তায়ালার নিকট জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত।’ (সূরা আলে ইমরান-১৬৯)



৩। কারবালার ঘটনার চেতনায় উদ্ভূদ্ধ হয়ে রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, পীরবাদ, জালিম শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে মনেপ্রাণে ঘৃণা প্রকাশ করুন, ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় নিজ করনীয় ঠিক করুন এবং তা পালনের দৃঢ় শপথ নিন। কবি’র এ অমর বাণীটা স্মরণ রাখুন, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ।

Sunday, September 8, 2019

সহীহ বুখারীর ১০ টি বৈজ্ঞানিক হাদীস

১)নবীজি বলেন,"জ্বর আসে জাহান্নামের তাপ থেকে!সুতরাং,জ্বর কে পানি দ্বারা প্রশমিত কর!
—(সহীহ বুখারী,, খন্ড: ৭:অধ্যায় ৭১:হাদিস ৬২১)

২)নবীজি বলেন,"যদি কারো পানিতে মাছি পড়ে যায়,তবে মাছিটিকে পানিতে চুবিয়ে তারপর পান কর!কারণ,মাছির এক ডানায় আছে রোগ,অন্য ডানায় আছে প্রতিকার!
—"(সহীহ বুখারী, ৪:৫৪:৫৩৭)

৩)নবীজি বলেন,কালোজিরা আস- সামস ব্যতিত সর্বরোগের ঔষধ! আয়েশা জিজ্ঞেস করেন,আস- সামস কি?নবীজি উত্তরে বলেন,মৃত্যু!
—— "(সহীহ বুখারী ৭:৭১:৫৯১)

৪)নবীজি বলেন,"যারা রোপ্যপাত্রে পানি পান করে,তারা জাহান্নামের আগুন দ্বারা তাদের পেটপুর্ণ করে!
—-"(সহীহ বুখারী ৭:৬৯:৫৩৮)

৫) নবীজি বলেন,"জাহান্নামের আগুণ আল্লাহর কাছে অভিযোগ করল,"হে আমার প্রতিপালক, আমার বিভিন্ন অংশ পরস্পরকে খেয়ে ফেলছে!সুতরাং,তিনি জাহান্নামকে দুইবার শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিলেন,একটি শীতকালে (প্রশ্বাস), অন্যটি গ্রীষ্মকালে (নিঃশ্বাস)! এবং এটাই (গ্রীষ্মকলে) প্রখর গরম ও (শীতিকালে) তীব্র শীতের কারণ!
—-"(সহীহ বুখারী ৪:৫৪:৪৮২)

৬)নবীজি বলেন,"আল্লাহ হাচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন!
—-"(সহীহ বুখারী ৮:৭৩:২৪২)

৭)নবীজি বলেন,"ভাল স্বপ্ন আসে আল্লাহ থেকে আর দুঃস্বপ্ন আসে শয়তান থেকে!কেউ যদি দুঃস্বপ্ন দেখে তার উচিত আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া ও বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করা,কারণ এতে দুঃস্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
—-"(সহীহ বুখারী ৯: ৮৭: ১১৫)

৮)আব্দুল্লাহ বর্ণিত:এক লোক নবীজির কাছে এসে বলল,সে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়েছে এবং নামায আদায় করতে পারেনি!!নবীজি বললেন:শয়তান তার কানে প্রস্রাব করে দিয়ে চলে গিয়েছে!
—-"(সহীহ বুখারী ২:২১:২৪৫)

৯)নবীজি বলেন,"তোমরা সুর্যদ্বয় ও সুর্যাস্তের সময় নামায আদায় করোনা,কারণ সুর্য শয়তানের মাথার দুইপ্রান্তের মধ্যখান দিয়ে উদিত হয়।
—-"(সহীহ বুখারী ৪:৫৪:৪৯৪)

১০) নবীজি বলেন,,"যে ব্যক্তি প্রতি সকালে ৭ টি আজওয়া খেজুর খায়,তার ওপর বিষ ও জাদু কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা!
——"(সহীহ বুখারী ৭:৬৫:৩৫৬)
# হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দিন।
(হাদিসগুলো অবশ্যই সকলেই শেয়ার করবেন)

কেমন হবে জান্নাত??? আসুন জেনে নেই

★ জান্নাতী_রমণী
জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ নতুন ভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অবস্থায় জান্নাতে যাবে। জান্নাতি রমণীগণ যদি একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি দেয় তবে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত জায়গা আলোকিত হয়ে যাবে। রমণীগণ এতো সুন্দর হবে যে তাদের দেহের ভিতরের হাড্ডির মজ্জা বাহির থেকে দৃষ্টিগোচর হবে। জান্নাতী মহিলারা তাদের স্বামীর সাথে মিলনের পরো চিরকাল কুমারী থাকবে।

★ হুরেঈন
হুরেরা ডিমের ভিতর লুকায়িত সূক্ষ্ম চামড়ার চেয়েও অধিক নরম হবে। (সূরা আস সাফফাত ৪৮-৪৯
হুরগণ তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। হুরেরা এতো লজ্জাশীল হবে যে স্বীয় স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবেনা। হুরগণ ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট হবে, চোখের কালো অংশ একেবারে কালো, এবং সাদা অংশ একেবারে সাদা হবে।

★ জান্নাতের গাছপালা
জান্নাতের সব ধরনের ফলের গাছ থাকবে, তবে খেজুর, ডালিম, আংগুরের গাছ অধিক পরিমাণে থাকবে। জান্নাতের বৃক্ষ কন্টকমুক্ত হবে। কলা ও কুল জান্নাতের বৃক্ষ। জান্নাতে বৃক্ষ সমূহের ছায়া অনেক দীর্ঘ হবে। জান্নাতের সব গাছের মূল স্বর্ণের হবে।

(তিরমিযি)
তুবা জান্নাতের একটি গাছের নাম যার ছায়া শত বছরের রাস্তার সমান দৈর্ঘ্য। এই বৃক্ষের ফলের খোসা দিয়ে জান্নাতিদের বস্ত্র তৈরি করা হবে।

# জান্নাতের_ফল_ফলাদিঃ
জান্নাতে মৌসুমি সর্বপ্রকার ফল থাকবে। কলা ও কুল জান্নাতের ফল। (সূরা ওয়াক্বিয়াহ ২৭-৩২)
জান্নাতি ফলের শীষ এত বড় হবে যে, তা যদি দুনিয়াতে আসত তবে সাহাবাগণ কিয়ামত পর্যন্ত তা
খেয়ে শেষ করতে পারতো না! (মুসলিম-কিতাব সালাতিন খুসুফ) আঙ্গুর, খেজুর, ডালিম জান্নাতি ফল। (সূরা নাবা ৩১-৩১)

জান্নাতি যখন কোনো বৃক্ষের ফল পাড়বে তখন সঙ্গে সঙ্গে উক্ত স্থানে অপর এক নতুন ফল ধরবে। (তাবারানি) জান্নাতের ফলমূল কখনো ফুড়িয়ে যাবে না এবং নষ্টও হবে না। সুবহানাল্লাহ।

★ জান্নাতের_প্রাসাদসমূহঃ
জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ সোনা-চাঁদির ইট দিয়ে নির্মিত হবে। জান্নাতের কংকরসমূহ হবে মোতি ও
ইয়াকুতের, আর মাটি হবে জাফরানের । সকল জান্নাতির অট্টালিকায় তাঁবু থাকবে, আর
সেখানে হুরেরা অবস্থান করবে। জান্নাতের প্রতিটি তাঁবু ৬০ মাইল বিস্তৃত হবে। ভিতরে খুব সুন্দর মোতি খোদিত থাকবে।

★ জান্নাতের নদীসমূহ
জান্নাতে সুস্বাদু পানি, সুস্বাদু দুধ, সুমিষ্ট শরাব ও স্বচ্ছ মধুর নদী প্রবাহিত হবে। জান্নাতের নদীসমূহের পানির রঙ ও স্বাদ সবসময় একই থাকবে। সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল জান্নাতি নদী।
(মুসলিম) কাওসার আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল  কে প্রদত্ত উপহার। কাওসার নদীর পানি দুধ অপেক্ষা শুভ্র এবং মধু অপেক্ষা মিষ্টি! জান্নাতি এক নদীর নাম হায়াত, যার পানি জাহান্নাম হতে মুক্তিপ্রাপ্তদের শরীরে ঢালা হবে, ফলে তারা দ্বিতীয়বার চারা গাছের ন্যায় সজিব হয়ে উঠবে।

★ জান্নাতের_ঝর্ণাসমূহঃ
জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সালসাবিল যার পানিতে আদা মিশ্রিত স্বাদ পাওয়া যাবে৷ জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম "কাফুর", যার পানি পানে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি অনুভব করবে।

★ তাসনিম জান্নাতের আরেকটি ঝর্ণা। যার স্বচ্ছ পানি শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য বরাদ্দ হবে।

★ জান্নাতির বাজারঃ
জান্নাতে প্রত্যেক জুমু'আর দিন বাজার জমবে। জুমুয়ার দিন বাজারে অংশগ্রহণকারী জান্নাতীগণের সৌন্দর্য পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। মহিলারা শুক্রবারের বাজারে উপস্থিত হবে না তবে বসে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তাদের লাবণ্যতা বৃদ্ধি করবেন। (মুসলিম)

★ জান্নাতিদের খানাপিনাঃ
জান্নাতিদের সর্বপ্রথম খাদ্য হলো মাছ, এরপর গরুর গোশত। জান্নাতে সর্বোৎকৃষ্ট পানীয় হলো তাসনীম যা শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের পরিবেশন করা হবে। জান্নাতের পরিষ্কার ও স্বচ্ছ শরাব " রাহিক" পানে সকল জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। রাহিক পান করার পর জান্নাতির মুখে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ অনুভব করবে। শরাব পানে তাদের মাথায় কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। সকল জান্নাতিদের একশো ব্যক্তির খাবারের শক্তি দেওয়া হবে। (তাবারানি) হাউজে কাউসারে উড়ে বেড়ানো পাখির গোশত ভক্ষণে জান্নাতিরা আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতিদের খাবার পরিবেশনের নিয়ম চালু থাকবে। (সূরা মারইয়াম ৬২)।

★ জান্নাতিদের_পোশকঃ
জান্নাতিরা সূক্ষ্ম ও পুরু সবুজ রেশমের কাপড় পড়বে। জান্নাতিরা হাতে সোনার অলংকার পড়বে।
খাঁটি রেশমী কাপড়ের পোশাক, খাঁটি স্বর্ণের অলংকার, খাঁটি মোতির অলংকার এবং মোতিখচিত
স্বর্ণের অলংকারও জান্নাতিরা পড়বে। পোশাক কখনো পুরাতন হবেনা। জান্নাতি মহিলাদের ওড়না মান ও দামের দিক থেকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ থেকে মূল্যবান হবে। জান্নাতিরা রেশমি রুমাল ব্যবহার করবে।(বুখারী)

★ জান্নাতিদের_সেবকঃ
জান্নাতিদের সেবকরা কৈশর বয়সী হবে। জান্নাতিদের সেবক এমন সুন্দর হবে যে,চলতে ফিরতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মোতি। সুরক্ষিত মোতি সদৃশ কিশোররা জান্নাতিদের সেবা করার জন্য ঘুরাফেরা করতে থাকবে।

★ আল্লাহর দর্শন
আল্লাহর দর্শনের সময় জান্নাতিদের চেহারা খুশিতে চককিতে থাকবে। জান্নাতে জান্নাতিরা এর স্পষ্টভাবে আল্লাহকে দেখবে যেমন পূর্ণিমার রাতে চাঁদকে স্পষ্ট দেখা যায়। সুবহানাল্লাহ। জান্নাতের সকল বর্ণনা লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। এর প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ'ই ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছেন, যা কোনো মানব কল্পনাও করতে পারবে না৷ সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের জান্নাতের এসব নিয়ামত লাভ করার তাওফিক দিন-আমীন।

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকাল (সম্পূর্ণ ঘটনা)

হযরত আলী রাঃ,ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে গেছেন ৷ এদিকে হযরত ফাতিমা রাঃআঃ,গায়ে অত্যান্ত জ্বর অবস্থায়৷ ঘরের সমস্ত কাজ, শেষ করেছেন ৷ 

আলী রাঃ, মসজীদ থেকে এসে দেখে, ফাতিমা কাঁদতেছেন, আলী (রাঃ),প্রশ্ন করলেন,ও ফাতিমা তুমি কাঁদ কেন? ফাতিমা কোন উত্তর দিলেন না৷ ফাতিমা আরোজোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, আলী রাঃ কয়েকবার প্রশ্ন করার পরে, ফাতিমা রাঃ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 

ও আলী,,,,,,,,আমি স্বপ্নের মধ্যে দেখতেছি,আমার আব্বাজান, হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ সাঃ আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে কি যেন তালাশ করতেছেন ঘর থেকে বাহির হওয়ার সময়, আমি পিছন দিক থেকে,আমার আব্বাজান কে ডাক দিলাম৷ ও আব্বাজান আপনি কি তালাশ করতেছেন? আব্বাজান
মুহাম্মাদুর রা:(সঃ) বলতেছেন, ও আমার ফাতিমা, আমিতো তোমাকে তালাশ করতেছি, তোমাকে
নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ আরো বললেনঃ ও আমার ফাতিমা,আজকে তো তুমি রোজা রাখবা ৷ 

সাহরী করবা আলীর দস্তরখানায়, আর ইফতার করবা আমি আব্বাজানের দস্তরখানায় ৷৷৷ আলী (রাঃ) এই স্বপ্ন শোনার পর, দু’জনের বুঝতে বাকী থাকলোনা, যে ফাতিমা আজকেই ইন্তেকাল করবেন৷ দুনো জন আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন৷ এই সময়ের মধ্যে হযরত হাসান হুসাইন (রাঃ) এসে জিজ্ঞাসা করতেছেন, ও আব্বাজান ও আম্মাজান আপনারা দুনোজন কাঁদেন কেন? ফাতিমার রাঃ এর একটা অভ্যাস ছিল, যখন হাসান হুসাইন রাঃ কোন কাজে বিরক্ত করতেন, তখন দুনো জনকে নানাজান এর কবরের কাছে যেতে বলতেন।

 আজকে ও ফাতিমা বলেন,তোমরা দুনোভাই এখন নানার কবরে চলে যাও, কবরের নিকট যাওয়ার সাথে সাথে,কবর থেকে আওয়াজ আসলো,ও আমার আদরের নাতীরা, এই মূহুর্তে তোমরা আমার কাছে কেন আসছো, আমার কাছে তো সব সময় আসতে পারবা, এখন যাও, যেয়ে মায়ের চেহারার দিকে তাকায়ে থাক, আজকের পরে তোমাদের মাকে আর পাবেনা৷

এই কথা শোনার পরে,দুনো ভাই কাঁদতেছে আর দৌড়াতে দৌড়াতে আম্মার নিকট চলে গেলেন।
যেয়ে আম্মাকে বললেন যে, তোমরা দুনোজন কেন কাঁদতেছ বুঝেছি, নানাজান আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আজকের দিনটা তোমার জন্য শেষ দিন, নানাজান তোমার চেহারার দিকে তাঁকায়ে থাকার জন্য আমাদের কে বলেছেন৷ বিকেলের দিকে হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর শরীর বেশি খারাপ হলো। তাকে বিছানাতে শোয়ানো হলো। ফাতিমা রাঃ মৃত্যুর পূর্বক্ষনে আলী রাঃ কে, তিনটি কথা বলেন ৷

【০১】ও আলী যেদিন থেকে আমি আপনার ঘরে এসেছি, ঐ দিন থেকে নিয়ে, আজ পর্যন্ত আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, আলী আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে, আমি সন্তানের কারনে, (আমি মেয়ের কারনে) আমার আব্বাজান অনেক লজ্জীত হবেন৷ বলেন আপনি আমাকে ক্ষমা করলেন কি না,আলী রাঃ বলেন ও ফাতিমা, তুমি এসব কি বলতেছো, আমি আলী তো তোমার যোগ্য ছিলাম না, তোমার আব্বাজান দয়া করে মেহেরবানী করে তোমাকে আমার,,, কাছে বিয়ে দিয়েছেন,বিয়ের দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত, আমি আলী তোমাকে কোনদিন
ঠিকমত দুইবেলা খানা খাওয়াতে পারিনাই, ও ফাতিমা তুমি বল, আমাকে ক্ষমা করছো কি না, তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর, তাহলে আমাকে ও কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে ৷

【০২】ও আলী আপনার সাথে আমার দ্বিতীয় কথা হল, আমি মারা যাওয়ার পরে, আপনি বিয়েকরে নিবেন, দুনিয়ার যে কোন মহিলাকে, আপনার পছন্দমত৷ আপনাকে আমি অনুমতি দিলাম৷ আর
আমার বাচ্চা দুইটাকে, সপ্তাহে একটা দিন আপনার কোলের মধ্যে করে নিয়ে ঘুমাবেন৷৷

【০৩】ও আলী আপনার সাথে আমার তৃতীয় কথা হল, হাসান হুসাইন যখন বালেগ হবে,তখন দুনো
ভাইকে আল্লাহর রাস্তায় সপর্দ করে দিবেন৷ এবং আমাকে রাতের বেলায় দাফন করবেন।
হজরত আলী (রাঃ) বললেনঃ "তুমি নবীর মেয়ে। আমি সবখানে খবর দিয়ে তোমায় দাফন করবো।
এতে সমস্যা কি? হজরত ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ "আামার কাফনের কাপড়ের ওপর দিয়ে সবাই অণুমান করবে যে, নবীর মেয়ে কতটুকু লম্বা ছিলো, কতটুকু সাস্হ ছিলো। এতে আমার পর্দা ভঙ্গ হবে।" হজরত ফাতিমা (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর তাঁর লাশের খাটিয়া বহন করার মানুষ মাত্র তিনজন। হজরত আলী (রাঃ) এবং শিশু হাসান ও হোসাইন (রাঃ)আনহুমা ৷ হজরত আলী ভাবছিলেন
যে, খাটিয়া বহন করার জন্য মানুষ আরও একজন প্রয়োজন তবেই চার কোনায় চার জন কাঁধে নিতে পারবেন। এমন সময় হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) এলেন ও খাটিয়ার এক কোনা বহন করলেন। হজরত আলী প্রশ্নকরলেন, ও আবুজর আমি তো কাউকে বলিনাই, আপনি জানলেন কিভাবে ? হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সঃ) কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি বললেন,
হে আবু জর! আমার ফাতিমার লাশ বহন করার জন্য লোকের অভাব, তুমি তাড়া তাড়ি চলে যাও। ও
আলী আমাকে তো হুজুরে আকরাম সঃ আসতে বলছেন ৷ হযরত ফাতিমা রাঃ আনহা কে যখন কবরে
নামাচ্ছেন, তখন হজরত আবু জর গিফারী (রাঃ) কবরের কাছে গিয়ে কবর কে উদ্দেশ্য করে বললেন..

আতাদরী মানিল্লাতী জি'না বিহা ইলায়কা?
হে কবর, তুই কি জানিস, আজ
তোর মধ্যে কাকে রাখছি?

【০১】
হা-যিহী সায়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাতী ফা-তিমাতা রাঃ আনহা, এটা জান্নাতের সকল মহিলাদের সর্দার,ফাতিমা (রাঃ)আনহা৷ কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০২】
হা-যিহী উম্মূল হাসনাইন রাঃ আনহুমা , এটা হযরত হাসান হুসাইন এর আম্মা ৷

.....এবার ও কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০৩】
হা-যিহী ঝাউযাতু আলিয়্যিন কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্, এটা হযরত আলী রাঃ এর স্ত্রী ৷

......এবার ও কবর থেকে কোন আওয়াজ নাই৷

【০৪【
হা-যিহী বিনতু রসুলুল্লাহি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এটা,দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে।
 খবরদার কবর বেয়াদবী করবি না "

"আল্লাহ্ তায়ালা কবরের জবান খুলে দিলেন, কবর
বললঃ

【০১】আনা বায়তুয-যুলমাতি
আমি অন্ধকার ঘর৷

【০২】আনা বায়তুদ-দূদাতী,
আমি সাপ বিচ্ছ্যুর ঘর৷

【০৩】আনা বায়তুন-নফরাতী,
আমি এমন একটি ঘর,
যার মধ্যে কোন বংশ পরিচয় কাজ হয়না...…

"আমি দো জাহানের বাদশাহের মেয়ে
ফাতিমা কে চিনিনা,
হজরত আলীর স্ত্রীকে চিনিনা,
হাসান হোসাইনের আম্মাকে চিনিনা,
জান্নাতের মহিলাদের সর্দারনীকে চিনিনা,

আমি শুধু চিনি-
ঈমান আর আমল!

Friday, September 6, 2019

নাস্তিকের কঠিন প্রশ্নের দাঁত ভাঙা জবাব আলেমের





এক নাস্তিক এক আলেম কে বলেছিল, ৩টা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আমি মুসলমান হয়ে যাব।

প্রশ্ন ১: আল্লাহ কোথায় আছে?
আল্লাহকে আমাকে দেখান?



প্রশ্ন ২: আল্লাহ নাকি জ্বিন জাতিকে জাহান্নামে শাস্তি দিবেন, কিন্তু জ্বিনজাতি তো আগুনের সৃষ্টি! তো আগুন কে আগুন দ্বারা কিভাবে শাস্তি দিবেন?



প্রশ্ন ৩: দুনিয়ায় যা হয় তা নাকি সব আল্লাহর নির্দেশে হয়। তাহলে আবার তিনি পাপের শাস্তি দিবেন কেন? পাপ ও তো তার নির্দেশেই হয়। তার প্রশ্ন শোনার পর আলেম কিছুই বললেন না, বরং শক্ত মাটির একটা টুকরা নিয়ে তার কপালে ঢিল মারলেন। এতে করে লোকটি আঘাত পেয়ে কাজী সাহেবের নিকট গিয়ে বিচার চাইলো যে, আমি তাকে প্রশ্ন করায় সে আমাকে আঘাত করেছে। এতে আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি। কাজী তখন আলেমকে ডেকে পাঠালেন এবং অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন।



আলেম বললেনঃ
তার প্রথম প্রশ্ন ছিল আল্লাহ কোথায়? আল্লাহকে দেখান? তো তাকে আমার প্রশ্ন হল, তার ব্যাথা কোথায়? ব্যাথা আমাকে দেখাক?

তার ২য় প্রশ্ন ছিল, আগুনের জাতিকে আল্লাহ আগুন দিয়ে কিভাবে শাস্তি দিবেন?

তো সে মাটির সৃষ্টি হয়ে মাটির আঘাতে ব্যাথা পেল কিভাবে? তার ৩য় প্রশ্ন ছিল, সব আল্লাহর নির্দেশে হওয়া সত্তেও তিনি শাস্তি দিবেন কেন?

তাহলে আমিও তো তাকে আল্লাহর নির্দেশে ঢিল মেরেছি, সে আপনার দরবারে বিচার দায়ের করল কেন? অসাধারণ যুক্তি।