কবিরা গুনাহ বলতে সেই সকল পাপকর্ম সমূহকে বুঝায় যে সকল পাপকাজ থাকে আমাদের বেচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হাদীসে কাবায়েরে কবিরা গুনাহ সম্পর্কিত হাদীসে ৭ টি কবিরা গুনাহ সমপর্কে বলা হয়েছে, অনেকেই এই হাদিস টি ভুল বুঝে কবিরা গুনাহ শুধু মাত্র ৭ টি এই ধারনায় বিশ্বাস করেন। তবে এই হাদিস টি'তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মাত্র সাতটি ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহের বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র। এ ছারাও আরো অনেক কবিরা গুনাহ রয়েছেন যে গুল থেকে আমাদের বেচে চলা জরুরী।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরান শরিফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِن تَجْتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلاً كَرِيمًا
অর্থঃ যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের ক্রটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করার।
বর্ণীত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা অঙ্গিকার করেছেন যারা কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখতে পারবে তাদের ছোট গুনাহ গুলো আল্লাহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং তাদেরকে জান্নাত দিবেন।
অতএব, আমারা সকলেই এই সকল বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবো- ইনশাআল্লাহ
কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর পরিণাম খবই ভয়াবহ, এ সকল কাজে আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল (সঃ) ও ফেরেশতা মণ্ডলী লানত দিয়ে থাকেন। কবিরা গুনাহ কারি সম্পর্কে বলা হয়েছে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়, এমন কি কবিরা গুনাহ কারীকে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অথবা যে কাজকে আল্লাহ তায়ালা সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় করা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উলামায়ে কিরামগন কবীরা গুনাহকে চিহ্নিত করেছেন নিন্মরুপেঃ-
১. আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করা
২. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা
৩. এতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা
৪. নামায পরিত্যাগ করা
৫. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা
৬. জিহাদের ময়দান থেকে থেকে পলায়ন করা
৭. সতী-সাধ্বী মু‘মিন নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া
৮. যাদু-টোনা করা
৯. অহংকার করা
১০. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
১১. ফরয রোযা না রাখা
১২. হজ্জ আদায়ের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না করা
১৩. যাকাত আদায় না করা
১৪. ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে চুগলখোরি করা
১৫. যাদুর বৈধতায় বিশ্বাস করা
১৬. মিথ্যা কথা বলা
১৭. মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা
১৮. একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগোনো
১৯. উপকার করে খোটা দান করা
২০. আত্মহত্যা করা
২১. আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা
২২. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা
২৩. বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানো
২৪. সাহাবীদের গালি দেয়া
২৫. স্ত্রীর পায়ু পথে যৌন ক্রিয়া করা
২৬. মদ বা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা
২৭. বিশ্বাস ঘাতকতা করা
২৮. তকদীর অস্বীকার করা
২৯. জুলুম-অত্যাচার করা
৩০. সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখ মণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা চুল উঠিয়ে ভ্রু চিকন করা
৩১. নারীর পুরুষ বেশ ধারণ করা
৩২. হিল্লা তথা চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে করা।
৩৩. খেলার ছলে কোন প্রাণীকে নিক্ষেপ যোগ্য
৩৪. রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করা
৩৫. মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশ গ্রহণ করা
৩৬. অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করা
৩৭. জুয়া খেলা
৩৮. অদৃশ্যের খবর জানার দাবী করা
৩৯. গণকের কাছে ধর্না দেয়া বা গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া
৪০. পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা
৪১. মিথ্যা কসম খাওয়া
৪২. পুরুষের নারী বেশ ধারণ করা
৪৩. পথিককে নিজের কাছে অতিরিক্ত পানি থাকার পরেও না দেয়া
৪৪. মানুষের বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা
৪৫. মুসলিমকে গালি দেয়া অথবা তার সাথে লড়ায়ে লিপ্ত হওয়া
৪৬. মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শোনার চেষ্টা করা
৪৭. কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা
৪৮. পুরুষের টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা
৪৯. আল্লাহর ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করা
৫০. গীবত তথা অসাক্ষাতে কারো দোষ চর্চা করা
৫১. ঋণ পরিশোধ না করা
৫২. ডাকাতি করা
৫৩. চুরি করা
৫৪. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া
৫৫. জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া
৫৬. অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানো বা তা দ্বারা কাউকে ইঙ্গিত করা
৫৭. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা
৫৮. মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা
৫৯. আমানতের খিয়ানত করা
৬০. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা
৬১. যে নারীর প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট স্বামীর অবাধ্য হওয়া
৬২. নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা
৬৩. বদ মেজাজি ও এমন অহংকারী যে উপদেশ গ্রহণ করে না
৬৪. আল্লাহ বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করা
৬৫. মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা
৬৬. দাঁত চিকন করা
৬৭. অতিরিক্ত চুল সংযোগ করা
৬৮. অস্ত্রের লক্ষ্য বস্তু বানানো
৬৯. কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা
৭০. ভেজাল পণ্য বিক্রয় করা
৭১. পরীক্ষায় নকল করা
৭২. তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা ইত্যাদি ঝুলানো
৭৩. বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া
৭৪. ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে অন্যায় বিচার করা
৭৫. নামাযরত অবস্থায় মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করা
৭৬. স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা
৭৭. সুদ লেন-দেন করা, সুদ লেখা বা তাতে সাক্ষী থাকা
৭৮. প্রতারণা বা ঠগ বাজী করা
৭৯. অঙ্গীকার পূরণ না করা
৮০. পরের জমি জবর দখল করা
৮১. বেশী বেশী অভিশাপ দেয়া
৮২. পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা
৮৩. গনিমত তথা জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আত্মসাৎ করা
৮৪. স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করা
৮৫. কোন দুষ্কৃতিকারীকে প্রশ্রয় দেয়া
৮৬. মুসলিম শাসকের সাথে কৃত বাইআত বা আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা
৮৭. ঘুষ লেন-দেন করা
৮৮. ওজনে কম দেয়া
৮৯. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ আমল করা
৯০. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করা
৯১. স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা
৯২. মনিবের নিকট থেকে কৃতদাসের পলায়ন
৯৩. পবিত্র মক্কা ও মদীনায় কোন অপকর্ম বা দুষ্কৃতি করা
৯৪. ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলী রীতিনীতি অথবা বিদআতের প্রতি আহবান করা
৯৫. ইসলামী আইনানুসারে বিচার বা শাসনকার্য পরিচালনা না করা
এছাড়াও আরো অনেক কবিরা গুনাহ রয়েছে, তাই আমাদের উচিৎ সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, এবং ইসলামের সকাল বিঁধান মেনে চলা, আল্লাহ আমাদের সকল কে কবিরা গুনাহ থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুক, আমিন।