Saturday, July 11, 2020
জ্ঞান সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ)-এর দশ টি জবাব
Friday, July 10, 2020
হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) জীবনী ও ঘটনা
তিনি ছিলেন উজ্জ্বল মুখমণ্ডল, গৌরকান্তি, হালকা পাতলা গড়ন ও দীর্ঘদেহের অধিকারী। তাঁকে দেখলে যে কোন ব্যক্তির চোখ জুড়িয়ে যেত, সাক্ষাতে অন্তরে ভক্তি ও ভালোবাসার উদয় হত এবং হৃদয়ে একটা নির্ভরতার ভাব সৃষ্টি হত। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী, অত্যন্ত বিনয়ী ও লাজুক প্রকৃতির। তবে যে কোন সংকট মুহূর্তে সিংহের ন্যায় চারিত্রিক দৃঢ়তা তাঁর মধ্যে ফুটে উঠত। তাঁর চারিত্রিক দীপ্তি ও তীক্ষ্ণতা ছিল তরবারীর ধারের ন্যায়। রাসূলের সা. ভাষায় তিনি ছিলেন উম্মাতে মুহাম্মাদীর ‘আমীন’- বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি।
তাঁর পুরো নাম আমীল ইবন আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ আল –ফিহরী আল কুরাইশী। তবে কেবল আবু উবাইদা নামে তিনি সবার কাছে পরিচিত। তাঁর পঞ্চম উর্ধ পুরুষ ‘ফিহরের’ মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর সা. নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। তাঁর মাও ফিহরী খান্দানের কন্যা। সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমারের রা. মন্তব্য হলঃ ‘কুরাইশদের তিন ব্যক্তি অন্য সকলের থেকে সুন্দর চেহারা, উত্তম চরিত্র ও স্থায়ী লজ্জাশীলতার জন্য সর্বশেষ্ঠ। তাঁর তোমাকে কোন কথা বললে মিথ্যা বলবেন না, আর তুমি তাদেরকে কিছু বললে তোমাকে মিথ্যুক মনে করবেন না। তাঁরা হলেন- আবু বকর সিদ্দিক, উসমান ইবন আফফান ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ।’
ইসলাম প্রচারের প্রথম ভাগেই যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন আবু উবাইদা ছিলেন তাঁদের অন্যতম। হযরত আবু বকরের মুসলমান হওয়ার পরের দিনই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকরের হাতেই তিনি তাঁর ইসলামের ঘোষণা দেন। তারপর তিনি আবদুর রহমান ইবন আউফ, উসমান ইবন মাজউন, আল-আরকাম ইবন আবিল আরকাম ও তাঁকে সংগে করে রাসূলুল্লাহর সা. দরবারে হাজির হন। সেখানে যারা সকলেই একযোগে ইসলামের ঘোষণা দেন। এভাবে তাঁরাই হলেন মহান ইসলামী ইমারতের প্রথম ভিত্তি।
মক্কায় মুসলিমদের তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবু উবাইদা শরীক চিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি অটল থেকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় কামিয়াব হন। কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দু’বার হাবশায় হিজরাত করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহর সা হিজরাতের পর তিনিও মদীনায় হিজরাত করেন। মদীনায় সা’দ বিন মুয়াজের সাথে তাঁর ‘দ্বীনী মুয়াখাত’ বা দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন আবু উবাইদার পরীক্ষার কঠোরতা ছিল সকল ধ্যান-ধারণা ও কল্পনার উর্ধে। যুদ্ধের ময়দানে এমন বেপরোয়াভাবে কাফিরদের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন যেন তিনি মৃত্যুর প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। মুশরিকরা তাঁর আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের অশ্বারোহী সৈনিকরা প্রাণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে। কিন্তু শত্রুপক্ষের এক ব্যক্তি বার বার ঘুরে ফিরে তাঁর সামনে এসে দাঁড়াতে লাগল। আর তিনিও তার সামনে থেকে সরে যেতে লাগলেন যেন তিনি সাক্ষাত এড়িয়ে যাচ্ছেন।
লোকটি ভীড়ের মধ্যে প্রবেশ করল। আবু উবাইদা সেখানেও তাকে এড়িয়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে সে শত্রুপক্ষ ও আবু উবাইদার মাঝখানে এসে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। যখন তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল, তিনি তাঁর তরবারির এক আঘাতে লোকটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছন্ন করে ফেলেন। লোকটি মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।
লোকটি কে? সে আর কেউ নয়। সে আবু উবাইদার পিতা আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। প্রকৃতপক্ষে আবু উবাইদা তাঁর পিতাকে হত্যা করেননি, তিনি তাঁর পিতার আকৃতিতে শিরক বা পৌত্তলিকতা হত্যা করেছেন। এ ঘটনার পর আল্লাহ তা’আলা আবু উবাইদা ও তাঁর পিতার শানে নিম্নের এ আয়াতটি নাযিল করেন।
‘তোমরা কখনো এমনটি দেখতে পাবে না যে, আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার লোকেরা কখনো তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সা. বিরুদ্ধাচরণ করেছে- তারা তাদের পিতা-ই হোক কিংবা তাদের পুত্র-ই হোক বা ভাই হোক অথবা তাদের বংশ-পরিবারের লোক। তারা সেই লোক যাদের দিলে আল্লাহ তা’আলা ঈমান দৃঢ়মূল করে দিয়েছেন এবং নিজের তরফ হতে একটা রূহ দান করে তাদেরকে এমন সব জান্নাতে দাখিল করবেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবহমান হবে। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও সন্তুষ্ট হয়েছেন তাঁর প্রতি। এরা আল্লাহর দলের লোক। জেনে রাখ, আল্লাহর দলের লোকেরাই কল্যাণপ্রাপ্ত হবে।’ (আল মুজাদিলা- ২২)
আবু উবাইদার এরূপ আচরণে বিস্মিত হবার কিছু নেই। কারণ, আল্লাহর প্রতি তাঁর দৃঢ় ঈমান, দ্বীনের প্রতি নিষ্ঠা, এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর প্রতি তাঁর আমানতদারী তাঁর মধ্যে এমন চূড়ান্ত রূপলাভ করেছিল যে, তা দেখে অনেক মহান ব্যক্তিও ঈর্ষা পোষণ করতেন। মুহাম্মাদ ইবন জাফর বলেনঃ ‘খৃস্টানদের একটা প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহর সা. দরবারে হাজির হয়ে বললো- হে আবুল কাসিম! আপনার সাথীদের মাঝ থেকে আপনার মনোনীত কোন একজনকে আমাদের সাথে পাঠান। তিনি আমাদের কিছু বিতর্কিত সম্পদের ফায়সালা করে দেবেন।
আপনাদের মুসলিম সমাজ আমাদের সবার কাছে মনোপূত ও গ্রহণযোগ্য। একথা শুনে রাসূল সা. বললেনঃ ‘সন্ধ্যায় তোমরা আমার কাছে আবার এসো। আমি তোমাদের সাথে একজন দৃঢ়চেতা ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাঠাব।’ হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব বলেনঃ ‘আমি সেদিন সকাল সকাল জোহরের নামায আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হলাম। আর আমি এ দিনের মত আর কোন দিন নেতৃত্বের জন্য লালায়িত হইনি। এর একমাত্র কারণ, আমিই যেন হতে পারি রাসূলুল্লাহর সা. এ প্রশংসার পাত্রটি।
রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের সাথে জোহরের নামায শেষ করে ডানে বায়ে তাকাতে লাগলেন। আর আমিও তাঁর নজরে আসার জন্য আমার গর্দানটি একটু উঁচু করতে লাগলাম। কিন্তু তিনি তাঁর চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে এক সময় আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে দেখতে পেলেন। তাঁকে ডেকে তিনি বললেনঃ ‘তুমি তাদের সাথে যাও এবং সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে তাদের বিতর্কিত বিষয়টির ফায়সালা করে দাও।’ আমি তখন মনে মনে বললামঃ আবু উবাইদা এ মর্যাদাটি ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
আবু উবাইদা কেবল একজন আমানতদারই ছিলেন না, আমানতদারীর জন্য সর্বদা সকল শক্তি পুঞ্জিভূত করতেন। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে কুরাইশ কাফিলার গতিবিধি অনুসরণের জন্য রাসূল সা. একদল সাহাবীকে পাঠান। তাঁদের আমীর নিযুক্ত করেন আবু উবাইদাকে। পাথেয় হিসাবে তাঁদেরকে কিছু খোরমা দেওয়া হয়। প্রতিদিন আবু উবাইদা তাঁর প্রত্যেক সংগীকে মাত্র একটি খোরমা দিতেন। তাঁরা শিশুদের মায়ের স্তন চোষার ন্যায় সারাদিন সেই খোরমাটি চুষে চুষে এবং পানি পান করে কাটিয়ে দিত।
এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র একটি খোরমা দিতেন। তাঁর শিশুদের মায়ের স্তন চোষার ন্যায় সারাদিন সেই খোরমাটি চুষে চুষে এবং পানি পান করে কাটিয়ে দিত। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র একটি খোরমাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট ছিল। কোন কোন বর্ণনায় ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ অষ্টম হিজরীতে রজব মাসে রাসুল সা. আবু উবাইদার নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় কুরাইশদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য একটি বাহিনী পাঠান। কিছু খেজুর ছাড়া তাঁদের সাথে আর কোন পাথেয় ছিল না। সৈনিকদের প্রত্যেকের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ছিল মাত্র একটি খেজুর। এই একটি খেজুর খেয়েই তাঁর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত করেন। অবশেষে আল্লাহতায়ালা তাঁদের এ বিপদ দূর করেন। সাগর তীরে তাঁরা বিশাল আকৃতির এক মাছ লাভ করেন এবং তার ওপর নির্ভর করেই তাঁরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। হয়তো এ দুটি পৃথক পৃথক ঘটনা ছিল।
উহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা যখন পরাজয় বরণ করে এবং মুশরিকরা জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘মুহাম্মাদ কোথায়, মুহাম্মাদ কোথায়….’। তখন আবু উবাইদা ছিলেন সেই দশ ব্যক্তির অন্যতম যারা বুক পেতে রাসূলকে সা. মুশরিকদের তীর থেকে রক্ষা করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে দেখা গেল রাসূলুল্লাহর সা. দাঁত শহীদ হয়েছে, তাঁর কপাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে এবং গণ্ডদেশে বর্মের দুটি বেড়ী বিঁধে গেছে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক বেড়ী দু’টিকে উঠিয়ে ফেলার জন্য তড়িঘড়ি এগিয়ে এলেন। আবু উবাইদা তাঁকে বললেন, ‘কসম আল্লাহর! আপনি আমাকে ছেড়ে দিন।’ তিনি ছেড়ে দিলেন। আবু উবাইদা ভয় করলেন হাত দিয়ে বেড়ী দু’টি তুললে রাসূল সা. হয়ত কষ্ট পাবেন। তিনি শক্তভাবে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে প্রথমে একটি তুলে ফেললেন।
কিন্তু তাঁরও অন্য একটি দাঁত ভেঙ্গে গেল। তখন আবু বকর রা. মন্তব্য করলেনঃ ‘আবু উবাইদা সর্বোত্তম ব্যক্তি।’ খন্দক ও বনী কুরাইজা অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক চুক্তিতে তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেন। খাইবার অভিযানে সাহস ও বীরত্বের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। ‘জাতুস সালাসিল’ অভিযানে হযরত আমর ইবনুল আসের বাহিনীর সাহায্যের জন্য দু’শ’ সিপাহীসহ রাসূল সা. আবু উবাইদাকে পিছনে পাঠান। তাঁরা জয়লাভ করেন। মক্কা বিজয়, তায়িফ অভিযানসহ সর্বক্ষেত্রে আবু উবাইদা শরীক ছিলেন। বিদায় হজ্জেও তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সফরসংগী ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহর সা. জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আবু উবাইদা সর্বক্ষেত্রে ছায়ার ন্যায় সর্বদা তাঁকে অনুসরণ করেন।
সাকীফায়ে বনী সায়েদাতে খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে তুমুল বাক-বিতণ্ডা চলছে। আবু উবাইদা আনসারদের লক্ষ্য করে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিলেন। তাদের সতর্ক করে দিয়ে বললেনঃ ‘ওহে আনসার সম্প্রদায়! তোমরাই প্রথম সাহায্যকারী। আজ তোমরাই প্রথম বিভেদ সৃষ্টিকারী হয়োনা।’ এক পর্যায়ে হযরত আবু বকর আবু উবাইদাকে বলেন, আপনি হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার হাতে বাইয়াত করি।
আমি রাসূলকে সা. বলতে শুনেছিঃ ‘প্রত্যেক জাতিরই একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছে, তুমি এ জাতির সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তি।’ এর জবাবে আবু উবাইদা বললেনঃ ‘আমি এমন ব্যক্তির সামনে হাত বাড়াতে পারিনা যাকে রাসূল সা. আমাদের নামাযের ইমামতির আদেশ করেছেন এবং যিনি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ইমামতি করেছেন।’ একথার পর আবু বকরের হাতে বাইয়াত করা হল। আবু বকরের খলীফা হবার পর সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সর্বোত্তম উপদেষ্টা ও সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেন ।আবু বকরের পর হযরত উমার খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আবু উবাইদা তাঁরও আনুগত্য মেনে নেন।
হযরত আবু বকর রা. খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর হিজরী ১৩ সনে সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেন। আবু উবাইদাকে হিমস, ইয়াযিদ বিন আবু সুফিয়ানকে দিমাশ্ক, শুরাহবীলকে জর্দান এবং ’আমর ইবনুল আসকে ফিলিস্তীনে যাত্রার নির্দেশ দিলেন। সম্মিলিত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করলেন আবু উবাইদাকে। দিমাশ্ক, হিমস, লাজেকিয়া প্রভৃতি শহর বিজিত হয় আবু উবাইদার হাতে। ইয়ারমুকের সেই ভয়াবহ যুদ্ধ তিনিই পরিচালনা করেন। ’আমর ইবনুল ’আসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বায়তুল মাকদাস বিজয়ে শরীক হন। বায়তুল মাকদাসবাসীরা খোদ খলীফা ’উমারের সাথে সন্ধির ইচ্ছা প্রকাশ করলে আবু উবাইদাই সে কথা জানিয়ে খলীফাকে পত্র লেখেন। সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য খলীফা ‘জাবিয়া’ পৌঁছলে আবু উবাইদাহ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। হিজরী ১৭ সনে হযরত খালিদ সাইফুল্লাহকে দিমাশ্কের আমীর ও ওয়ালীর পদ থেকে অপসারণ করে খলীফা উমার আবু উবাইদাকে তাঁর স্থলে নিয়োগ করেন। হযরত খালিদ সাইফুল্লাহ লোকদের বলেন, ‘তোমাদের খুশী হওয়া উচিত যে, আমীনুল উম্মাত তোমাদের ওয়ালী।’
আবু উবাইদার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী সিরিয়ায় একের পর এক বিজয় লাভ করে সিরিয়ার সমগ্র ভূখণ্ড দখল করে চলেছে। এ সময় সিরিয়ায় মহামারী আকারে প্লেগ দেখা দেয় এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তার শিকারে পরিণত হয়। খলীফা হযরত উমার রা. নিজেই খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য রাজধানী মদীনা থেকে ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌঁছুলেন। অন্য নেতৃবৃন্দের সাথে আবু উবাইদা সেখানে খলীফাকে অভ্যর্থনা জানালেন। প্রবীণ মুহাজির ও আনসারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করলেন। সবাই একবাক্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের স্থান ত্যাগের পক্ষে মত দিলেন। হযরত উমার সবাইকে আহ্বান জানালেন তাঁর সাথে আগামী কাল মদীনায় ফিরে যাওয়ার জন্য। তাকদীরের প্রতি গভীর বিশ্বাসী আবু উবাইদা বেঁকে বসলেন।
খলীফাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘আ ফিরারুম মিন কাদলিল্লাহ- একি আল্লাহর তাকদীর থেকে পলায়ন নয়?’ খলীফা দুঃখ প্রকাশ করে বললেনঃ ‘আফসুস! আপনি ছাড়া কথাটি অন্য কেউ যদি বলতো! হাঁ, আল্লাহর তাকদীর থেকে পালাচ্ছি। তবে অন্য এক তাকদীরের দিকে। আবু উবাইদা তাঁর বাহিনীসহ সেখানে থেকে গেলেন। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার মদীনা পৌঁছে দূত মারফত আবু উবাইদাকে একখানা পত্র পাঠান। পত্রে তিনি লিখেনঃ ‘‘আপনাকে আমার খুবই প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরীভাবে আপনাকে আমি তলব করছি। আমার এ পত্রখানি যদি রাতের বেলা আপনার কাছে পৌঁছে তাহলে সকাল হওয়ার পূর্বেই রওয়ানা দেবেন। আর যদি দিনের বেলা পৌঁছে তাহলে সন্ধ্যার পূর্বেই রওয়ানা দেবেন।’’ খলীফা উমারের এ পত্রখানি হাতে পেয়ে তিনি মন্তব্য করেনঃ ‘আমার কাছে আমীরুল মুমিনীনের প্রয়োজনটা কি তা আমি বুঝেছি।
যে বেঁচে নেই তাকে তিনি বাঁচাতে চান। তারপর তিনি লিখলেনঃ ‘‘আমীরুল মু’মিনীন, আমি আপনার প্রয়োজনটা বুঝেছি। আমি তো মুসলিম মুজাহিদদের মাঝে অবস্থান করছি। তাদের ওপর যে আপতিত হয়েছে তা থেকে আমি নিজেকে বাঁচানোর প্রত্যাশী নই। আমি তাদেরকে ছেড়ে যেতে চাইনা, যতক্ষণ না আল্লাহ আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন। আমার এ পত্রখানি আপনার হাতে পৌঁছার পর আপনি আপনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন এবং আমাকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দান করুন।’’
হযরত উমার এ পত্রখানি পাঠ করে এত ব্যাকুলভাবে কেঁদেছিলেন যে, তাঁর দু’চোখ থেকে ঝর ঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর এ কান্না দেখে তার আশেপাশের লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলঃ ‘আমীরুল মু’মিনীন, আবু উবাইদা কি ইনতিকাল করেছেন?’ তিনি বলেছিলেনঃ ‘না। তবে তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।
হযরত উমারের ধারণা মিথ্যা হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্লেগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে উপদেশমূলক একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। তিনি বলেনঃ ‘‘তোমাদেরকে যে উপদেশটি আমি দিচ্ছি তোমরা যদি তা মেনে চলো তাহলে সবসময় কল্যাণের পথেই থাকবে। তোমরা নামায কায়েম করবে, রমাদান মাসে রোযা রাখবে, যাকাত দান করবে, হজ্জ ও উমরা আদায় করবে, একে অপরকে উপদেশ দেবে, তোমাদের শাসক ও নেতৃবৃন্দকে সত্য ও ন্যায়ের কথা বলবে, তাদের কাছে কিছু গোপন রাখবে না এবং দুনিয়ার সুখ সম্পদে গা ভাসিয়ে দেবে না।
কোন ব্যক্তি যদি হাজার বছরও জীবন লাভ করে, আজ আমার পরিণতি তোমরা দেখতে পাচ্ছ তারও এই একই পরিণতি হবে।’’ সকলকে সালাম জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। অতঃপর মুয়াজ ইবন জাবালের দিকে তাকিয়ে বলেনঃ ‘মুয়াজ! নামাযের ইমামতি কর।’ এর পরপরই তাঁর রূহটি পবিত্র দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরম সত্তার দিকে ধাবিত হয়। মুয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে সমবেত সকলকে লক্ষ্য করে বলেনঃ লোক সকল! তোমরা এ ব্যক্তির তিরোধানে ব্যথা ভারাক্রান্ত। আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যক্তির থেকে অধিক কল্যাণদৃপ্ত বক্ষ, পরিচ্ছন্ন হৃদয়, পরকালের প্রেমিক এবং জনগণের উপদেশ দানকারী আর কোন ব্যক্তিকে জানিনা। তোমরা তাঁর প্রতি রহম কর, আল্লাহও তোমাদের প্রতি রহম করবেন। এটা হিজরী ১৮ সনের ঘটনা।
এরপর লোকেরা সমবেত হয়ে আবু উবাইদার মরদেহ বের করে আনলো। মুয়াজ বিন জাবালের ইমামতিতে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হল। মুয়াজ বিন জাবাল, আমর ইবনুল আস ও দাহ্হাক বিন কায়েস কবরের মধ্যে নেমে তাঁর লাশ মাটিতে শায়িত করেন। কবরে মাটিচাপা দেওয়ার পর মুয়াজ এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তাঁর প্রশংসা করে বলেনঃ ‘‘আবু উবাইদা, আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন! আল্লাহর কসম! আমি আপনার সম্পর্কে যতটুকু জানি কেবল ততটুকুই বলবো, অসত্য কোন কিছু বলবো না। কারণ, আমি আল্লাহর শাস্তির ভয় করি। আমার জানা মতে আপনি ছিলেন আল্লাহকে অত্যধিক স্মরণকারী, বিনম্রভাবে যমীনের ওপর বিচরণকারী ব্যক্তিদের একজন। আর আপনি ছিলেন সেইসব ব্যক্তিদের অন্যতম যারা তাদের ‘রবের’ উদ্দেশ্যে সিজদারত ও দাঁড়ানোর অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে এবং যারা খরচের সময় অপচয়ও করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আল্লাহর কসম; আমার জানা মতে আপনি ছিলেন বিনয়ী এবং ইয়াতিম-মিসকীনদের প্রতি সদয়। আপনি ছিলেন অত্যাচারী অহংকারীদের শত্রুদেরই একজন।’
খাওফে খোদা, ইত্তেবায়ে সুন্নাত, তাকওয়া, বিনয়, সাম্যের মনোভাব, স্নেহ ও দয়া ছিল তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একদিন একটি লোক আবু উবাইদার বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পেল, তিনি হাউমাউ করে কাঁদছেন। লোকটি জিজ্ঞেস করলোঃ ব্যাপার কি আবু উবাইদা, এত কান্নাকাটি কেন? তিনি বলতে লাগলেনঃ ‘‘একবার রাসূল সা. মুসলমানদের ভবিষ্যত বিজয় ও ধন-ঐশ্বর্যে্যর আলোচনা প্রসঙ্গে সিরিয়ার প্রসঙ্গ উঠালেন। বললেনঃ ‘আবু উবাইদা তখন যদি তুমি বেঁচে থাক, তাহলে তিনটি খাদেমই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। একটি তোমার নিজের, একটি পরিবার-পরিজনের এবং অন্যটি তোমার সফরে সংগী হওয়ার জন্য।
অনুরূপভাবে তিনটি বাহনও যথেষ্ট মনে করবে। একটি তোমার, একটি তোমার খাদেমের এবং একটি তোমার জিনিসপত্র পরিবহনের জন্য।’ কিন্তু এখন দেখছি, আমার বাড়ী খাদেমে এবং আস্তাবল ঘোড়ায় ভরে গেছে। হায়, আমি কিভাবে রাসূলুল্লাহকে সা. মুখ দেখাবো? রাসুল সা. বলেছিলেনঃ সেই ব্যক্তিই আমার সর্বাধিক প্রিয় হবে, যে ঠিক সেই অবস্থায় আমার সাথে মিলিত হবে যে অবস্থায় আমি তাকে ছেড়ে যাচ্ছি।’’
খলীফা হযরত উমার সিরিয়া সফরের সময় দেখতে পেলেন, অফিসারদের গায়ে জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক-পরিচ্ছদ। তিনি এতই ক্ষেপে গেলেন যে, ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন এবং তাদের দিকে পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করতে করতে বললেনঃ তোমরা এত তাড়াতাড়ি অনারব অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছো কিন্তু আবু উবাইদা একজন সাদামাটা আরব হিসেবে খলীফার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। গায়ে অতি সাধারণ আরবীয় পোশাক, উটের লাগামটিও একটি সাধারণ রশি। খলীফা উমার রা. তাঁর বাসস্থানে গিয়ে দেখতে পেলেন, সেখানে আরো বেশী সরল-সাদাসিধে জীবনধারার চিহ্ন। অর্থাৎ একটি তলোয়ার একটি ঢাল ও উটের একটি হাওদা ছাড়া তাঁর বাড়ীতে আর কিছু নেই। খলীফা বললেনঃ আবু উবাইদা, আপনি তো আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের ব্যবস্থা করে নিতে পারতেন।’ জবাবে আবু উবাইদা বললেনঃ আমীরুল মুমিনীন, আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
একবার হযরত উমার রা. উপঢৌকন হিসেবে চারশ’ দীনার ও চার হাজার দিরহাম আবু উবাইদার নিকট পাঠালেন। তিনি সব অর্থই সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। নিজের জন্য একটি পয়সাও রাখলেন না। হযরত ’উমার একথা শুনে মন্তব্য করেনঃ ‘আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামে এমন লোকও আছে।’
তিনি এতই বিনয়ী ছিলেন যে, সিপাহসালার হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ সৈনিকদের থেকে তাঁকে পৃথক করা যেত না। অপরিচিত কেউ তাকে সিপাহসালার বলে চিনতে পারতো না। একবার তো এক রোমান দূত এসে জিজ্ঞেস করেই বসে, ‘আপনাদের সেনাপতি কে? সৈনিকরা যখন আঙ্গুর উঁচিয়ে তাঁকে দেখিয়ে দিল, তখন তো সে সেনাপতির অতি সাধারণ পোশাক ও অবস্থান দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।
উৎস: আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
স্বামীকে খুশি রাখার ও শুধু নিজের করে রাখার জন্য কার্যকারী টিপসঃ-
১) স্বামীর ঘুম থেকে উঠার আগে নিজে উঠে পরিপাটি হয়ে নেওয়া যাতে স্বামী আপনাকে সকাল বেলাই অপরিপাটি না দেখে। তার সাথে সুগন্ধি ব্যবহার করুন। যাতে সকালে আপনাকে দেখেই আপনার স্বামীর মন ভরে যায়।
২) তার ঘুম যেভাবে ভাঙ্গালে সে পছন্দ করবে, সেভাবে তাকে ঘুম থেকে জেগে তুলুন।
৩) তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে তবেই অন্য কাজে যাবেন। এবং সে তার কাজে যাওয়ার সময় কপালে আর বুকে দুইটা......... দিয়ে দিন।
৪) সে কখন বাসায় আসতে পারে তা অনুমান করে পরিপাটি হয়ে থেকে তার অপেক্ষা করুন এবং সে ডাকার সাথে সাথে দরজা খুলে দিন এক মুচকি হাসি দিয়ে। এবং তার সাথে কথা বলার সময় সর্বদা হাসি মুখে কথা বলুন।
৫)তার সামনে কখনো গন্ধ নিয়ে যাবেন না। সবসময় একটা সুঘ্রাণ রাখুন নিজের শরীরে।
৬) পরিপূর্ণ পর্দা করুন।
৭)স্বামীকে তাহাজ্জুদ এবং ফজরের নামাজের জন্য ডেকে দিন। আল্লাহর তরফ হতে স্বামীর হৃদয়ে আপনার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা জন্ম নিবে।
৮) স্বামীর মনে কখনো আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না।
৯) কখনো স্বামীকে নিজের উপর রাগ হতে দিবেন না বরং স্বামী যে ইশারায় চালাতে চায় সে ইশারায় চলুন( নাফরমানীর কাজ ব্যতিত)।
১০)স্বামী কোন কাজ করতে আদেশ করলে সাথে সাথে হাসি ও খুশির সহিত কাজ করে দিন।
১১)স্বামীর কাছে থাকাকালীন তার অনুমতি ব্যতিত কোন নফল ইবাদাত করবেন না। স্বামীর খেদমত অন্যান্য নফল ইবাদাত থেকেও উওম।
১২)পৃথিবীর কোন মানুষের গিবত না করা।
১৩)স্বামীর হুকুম ছাড়া স্বামীর মাল থেকে কাউকে দান বা হাওলাত না করা। এটা জায়েজ নেই।
১৪)স্বামীর কোন দোষের কথা পৃথিবীর কোন মানুষকে না বলা। বরং স্বামীর মাথা যখন একদম ঠান্ডা থাকবে তখন স্বামীকে হাসিমুখে বিনয়ের সহিত তার ভুল ধরিয়ে ও সুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা।
১৫)স্বামীর কোন কাজ নিজের মতের বিরুদ্ধে হলেও তর্ক না করা।
১৬)স্বামী যা আনুক তা ১ টাকার হলেও এমন একটা ভাব করুন যেন এটা আপনার কাছে ভিষণ পছন্দ হয়েছে। এতে পুরুষেরা স্বস্তি পায়।
১৭)স্বামীর বাড়িতে যতই কষ্ট থাকুক, স্বামীর সাথে সমাধামের চেষ্টা করুন। তবে হাই হতাশা করে স্বামীকে কষ্ট দিবেন না।
১৮)স্বানীর মেজাজ বুঝে ব্যবহার। তার মুখে হাসি থাকলে আপনিও হাসুন। আর তার মন কোন কারণে খারাপ থাকলে আপনিও তার মন খারাপের ভাগিদার হোন, মন খারাপের সময় হেসে এটা প্রকাশ করবেন না যে তার মন খারাপে আপনার কিছু যায় আসে না। আর মেজাজ খারাপ থাকলে একদম চুপ থাকবেন।
১৯)স্বামী আপনাকে যে টাকা দিবে তা ১০০% তাকে হিসাব দিয়ে দিন।আপনার ওপর একটা অন্যরকম বিশ্বাস সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ।
২০)শশুড়-শাশুড়ির সেবা করুন। এবং শশুড় বাড়ীর সকলকে ভালোবাসুন।
২১)স্বামীকে মনের ভুলেও কাজ করতে দিবেন না। বরং তাকে ঠিক কাচের পুতুলের মতো রাখার চেষ্টা করুন।
২২)ঘরের কাজ কারো জন্য ফেলে রাখবেন না।
২৩)স্বামী বাবা-মা এর কাছে টাকা দিলে তা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। তাদের ছেলের টাকা তারা নিবে না তো কে নিবে?
২৪) স্বামী কোন সফর থেকে ফিরলে তাকে খেদমত করুন, প্রশ্ন করুন পরে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোনদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন.....আমীন!
সাহাবীদের ঘটনা শুনলে সত্যি চোখে পানি এসে যায়…..........
Wednesday, July 8, 2020
ইউসুফ আ. বন্দিজীবনের গল্প ও যেভাবে কারামুক্তি পেলেন জেনে নিন
বাদশাহ নিজ স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে আশ্বস্ত হলেন এবং ইউসুফ আ. এর জ্ঞান গরিমায় বিমুগ্ধ হয়ে আদেশ দিলেন যে, তাকে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এসো। আদেশের সাথে সাথে বাদশাহর জনৈক দূত এ বার্তা নিয়ে কারাগারে পৌঁছলো।
ইউসুফ আ. এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন
অতঃপর হযরত ইউসুফ আ. পিতা-মাতাকে নিয়ে রাজসিংহাসনে বসালেন। এ সময় পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা সবাই ইউসুফ আ. এর সামনে সিজদা করলেন। তখন ইউসুফ আ. ইয়াকুব আ. কে বললেন, আব্বাজান! এটাই আমার সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা, যা আমি দেখেছিলাম যে, এগারেটি তারা এবং সূর্য চন্দ্র আমার জন্য সিজদা করছে। পবিত্র কুরআনে এ সম্বন্ধে ইরশাদ হয়েছে,
وَرَفَعَ اَبَوَیْهِ عَلَی الْعَرْشِ وَخَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا ۚ وَقَالَ یٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاْوِیْلُ رُءْیَایَ مِنْ قَبْلُ ۫ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّیْ حَقًّا
অর্থঃ এবং তিনি পিতা-মাতাকে সিংহাসনের উপর বসালেন। তখন সবাই তার সামনে সিজদাবনত হলেন। ইউসুফ আ. বললেন, হে আমার আব্বাজান! এ হলো আমাদের আগেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার পালনকর্তা তাকে সত্যে পরিণত করেছেন। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০০)
উপরোল্লিখিত আয়াতে اَبَوَیْهِ বলে পিতা-মাতা উভয়জনের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ইউসুফ আ. এর মাতা তাঁর শৈশবেই ইন্তিকাল করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তারপর ইয়াকুব আ. ইউসুফ এর মাতার বোন লায়্যাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি ইউসুফ আ. এর খালা হওয়ার দিক দিয়ে মায়ের মতোই ছিলেন, আবার পিতার বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার দিক দিয়েও মাতাই ছিলেন। তাই আয়াতে তাদেরকে اَبَوَیْهِ (মা-বাবা) বলা হয়েছে।
وَخَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا “
সবাই হযরত ইউসুফ আ. এর সামনে সিজদা করলেন” আয়াতে বর্ণিত উক্ত সিজদা সম্পর্কে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এ সিজদাটি ছিল কৃতজ্ঞতাসূচক। আর এটা ইউসুফ আ. এর জন্য নয়, বরং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, উপাসনামূলক সিজদা প্রত্যেক পয়গাম্বরের শরী‘আতেই আল্লাহ ছাড়া কারো জন্যেই বৈধ ছিল না। কিন্তু তা‘জীমী বা সম্মানসূচক সিজদা পূর্ববর্তী পয়গাম্বরগণের শরী‘আতে বৈধ ছিল। সেই হিসেবে এটা তাঁর জন্য সম্মানসূচক সিজদাও হতে পারে। তবে শিরকের সিঁড়ি হওয়ার কারণে ইসলামী শরী‘আতে তাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এরপর ইউসুফ আ. পিতা-মাতার সামনে কিছু অতীত কাহিনী বর্ণনা করতে শুরু করলেন।
এখানে এটা অনুধাবনযোগ্য যে, যতটুকু দুঃখ-কষ্ট হযরত ইউসুফ আ. এর উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে, ততটুকু দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন যদি কেউ হয় এবং লম্বাদিনের বিচ্ছেদ ও নৈরাশ্যের পর পিতা-মাতার সাথে মিলন ঘটে, তাহলে সে পিতা-মাতার সামনে নিজের কাহিনী কিভাবে বর্ণনা করবে, আর কতটুকু কাঁদবে এবং কাঁদাবে তা সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু এখানে উভয়পক্ষই হচ্ছেন আল্লাহ পাকের পয়গাম্বর ও রাসূল। তাঁদের কার্যপদ্ধতি অনুপম আদর্শে ভাস্বর। তাই তো ইয়াকুব আ. এর লম্বা বিরহী প্রিয় ছেলে হাজারো দুঃখ-কষ্টের প্রান্তর অতিক্রম করে যখন পিতার সাথে মিলিত হলেন, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তা‘আলা আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমাকে জেল থেকে বের করেছেন এবং আপনাদের সবাইকে গ্রাম থেকে মিসরে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দেওয়ার পরেও।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০০)
হযরত ইউসুফ আ. এর দুঃখ-কষ্ট যথাক্রমে তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত ছিল: এক. ভাইদের অত্যাচার ও উৎপীড়ন এর দুঃখ-কষ্ট।
দুই. পিতা-মাতার কাছ থেকে লম্বাদিনের বিচ্ছেদ এর দুঃখ-কষ্ট।
তিন. কারাগারের কষ্ট।
আল্লাহ তা‘আলার এ বিশিষ্ট পয়গাম্বর স্বীয় বিবৃতিতে প্রথমে ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতা পরিবর্তন করে কারাগার প্রসঙ্গ থেকে কথা শুরু করেছেন।
কিন্তু এতেও কারাগারে প্রবেশ করা এবং সেখানকার কষ্ট ক্লেশের বর্ণনা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। বরং জেলখানা থেকে অব্যহতির কথা আল্লাহর কৃতজ্ঞতাসহ বর্ণনা করেছেন। তাতে এ কথা অনায়াসে ফুটে উঠেছে যে, তিনি কারাগারে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়েছেন।
এখানে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, ইউসুফ আ. কারাগার থেকে বের হওয়ার কথা তো উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ভাইয়েরা যে তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করেছিল, তা এদিক দিয়েও উল্লেখ করেননি যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ঐ কূপ থেকে বের করেছেন। কেননা, ভাইদের অপরাধ তো আগেই মাফ করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।” তাই কোনোভাবে কূপের কথা উল্লেখ করে ভাইদেরকে লজ্জা দেওয়া সমীচীন মনে করেননি।
এরপর ছিল পিতা-মাতা থেকে সুলম্বা বিচ্ছেদ ও তার প্রতিক্রিয়াদি বর্ণনা করার বিষয়। তিনি এসব বিষয় থেকে পাশ কাটিয়ে শুধু শেষ পরিণতি ও পিতা-মাতার সাথে সাক্ষাতের কথা আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতাসহ উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ পাক আপনাদেরকে গ্রাম থেকে মিসর শহরে এনে দিয়েছেন।
এখানে এই নি‘আমতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইয়াকুব আ. এর বাসভূমি ছিল গ্রামে, সেখানে জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা কম ছিল। আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁকে শহরে রাজকীয় সম্মানের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন।
এখন শুধু প্রথম অধ্যায়টি অবশিষ্ট রইলো অর্থাৎ ভাইদের অত্যাচার ও উৎপীড়ন প্রসঙ্গ। একেও শয়তানের ঘাড়ে চাপিয়ে এভাবে চুকিয়ে দিলেন যে, আমার ভাইয়েরা এরূপ ছিল না, কিন্তু মালা‘উন শয়তান তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে কলহ সৃষ্টির এ কাজটি করিয়েছে।
-
১।ঘুমাতে যাওয়ার সময় দোয়া উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া-আহ'ইয়া। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরন করি,আবার তো...
-
স্বাভাবিকত বিপদ বা সঙ্কটে পড়লে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে যায়, হওয়াটাও কিন্তু স্বাভাবিক। কারন বিপদ বলে-কয়ে আসে না, যদিও বিপদ-আপদ মানুষের নিত্যসঙ্গ...
-
হযরত সাদ সালামি আল্লাহরনবীর একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত গরীব সাহাবী ছিলেন। গায়ের রং ছিল খুবই কালো এবং মুখের মধ্যে ছিল বসন্তের দাগ| একদি...
-
তিরমিযী শরীফের এক হাদীসে রয়েছে, মিসওয়াকসহ যে নামায পড়া হয় তা বিনা মিসওয়াকের নামাযের চেয়ে ৭০গুণ বেশী ফজীলত রাখে। মসজিদে জামাতের সাথে ফরজ না...
-
★ জান্নাতী_রমণী জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ নতুন ভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অ...
-
হযরত আলী (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর চাচাত ভাই ও জামাতা এবং চতুর্থ খলীফা হচ্ছেন হযরত আলী (রাঃ) । তার পিতা আবু তাল...
-
বাদশাহ নিজ স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে আশ্বস্ত হলেন এবং ইউসুফ আ. এর জ্ঞান গরিমায় বিমুগ্ধ হয়ে আদেশ দিলেন যে, তাকে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এসো। আদ...
-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হল। এ...
-
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত মেসওয়াকের ব্যবহার করা, যদিও বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষের দেখা যায় দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ...
-
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, যখন আবূ ত্বালিব মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হ’লেন, রাসূল (সাঃ) তার নিকট গেলেন...