নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Wednesday, July 8, 2020

ইউসুফ আ. বন্দিজীবনের গল্প ও যেভাবে কারামুক্তি পেলেন জেনে নিন

বাদশাহ নিজ স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে আশ্বস্ত হলেন এবং ইউসুফ আ. এর জ্ঞান গরিমায় বিমুগ্ধ হয়ে আদেশ দিলেন যে, তাকে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এসো। আদেশের সাথে সাথে বাদশাহর জনৈক দূত এ বার্তা নিয়ে কারাগারে পৌঁছলো।


ইউসুফ আ. সুলম্বা বন্দিজীবনের দুঃসহ যাতনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন এবং মনে মনে মুক্তি কামনা করছিলেন। কাজেই বাদশাহর ফরমানকে সুযোগ মনে করে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তিনি সরাসরি তা করলেন না। বরং আল্লাহ পাক স্বীয় পয়গাম্বরগণকে যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, সেই মর্যাদার আলোকে তাঁদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করার ব্যবস্থা করলেন।

اِرْ جِعْ اِلى رَبِّكَ فَسْئَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ الّتِىْ قَطَّعْنَ اَيْدِيَهُنَّ ط اِنَّ رَبِّيْ بِكَيْدِ هِنَّ عَلِيْمٌ0

অর্থঃ ফিরে যাও তোমরা মনিবের কাছে এবং তাকে জিজ্ঞেস করো ঐ রমনীদের কী অবস্থা, যারা নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল? আমার রব তো তাদের ছলনা সবই অবগত। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫০)

ইউসুফ আ. বললেন, তুমি বাদশাহর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করো যে, যে সকল মহিলারা নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল তাদের ব্যাপারে বাদশাহ জানেন কি না? এবং আমাকে নির্দোষ বলে জানেন কি না?

হযরত ইউসুফ আ. কারাগার থেকে মুক্তিলাভের সুযোগ পাওয়ার পরও সেই সুযোগ গ্রহণ করলেন না, বরং আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করাতে চাইলেন। তাই বাদশাহ যখন ইউসুফ আ. কে মুক্ত করে রাজদরবারে তার নিকট নেয়ার জন্য দূত পাঠালেন, তখন তাকে বাদশাহর নিকট ফেরত পাঠিয়ে দেন এবং বলে পাঠান যে, যে মহিলারা ইউসুফ আ. কে দেখে হতভম্ব হয়ে হাত কেটে ছিল, তাদের মাধ্যমে যেন তিনি ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে সনাক্ত করেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

وَ قَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِیْ بِهٖ ۚ فَلَمَّا جَآءَهُ الرَّسُوْلُ قَالَ ارْجِعْ اِلٰی رَبِّکَ فَسْـَٔلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَۃِ الّٰتِیْ قَطَّعْنَ اَیْدِیَهُنَّ ؕ اِنَّ رَبِّیْ بِکَیْدِهِنَّ عَلِیْمٌ○

অর্থঃ বাদশাহ বললেন, ইউসুফকে (মুক্ত করে) আমার নিকট নিয়ে এসো। যখন দূত (এ পয়গাম নিয়ে) ইউসুফ আ. এর নিকটে এলো, তিনি তাকে বললেন, তোমার মনিবের নিকট ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা করো সেই মহিলাদের কী হাল যারা হাত কেটেছিল? নিশ্চয়ই আমার প্রভু তাদের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫০)

##আযীয পত্নীর নাম উল্লেখ না করার কারণ##

এখানে এ বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য যে, ইউসুফ আ. এখানে ঐ সকল মহিলাদের কথা উল্লেখ করেছেন যারা হাত কেটেছেন, কিন্তু আযীয পত্নীর নাম উল্লেখ করেননি। অথচ সে-ই ছিল ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

এর কারণ হচ্ছে, যেহেতু ইউসুফ আ. আযীযঘরে লালিত-পালিত হয়েছিলেন, তাই ভদ্রতার খাতিরে সরাসরি আযীয পত্নীর নাম উল্লেখ করেননি। তবে তার জানা আছে যে, সেই মহিলাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলেই আযীয পত্নীর কথা এমনিতেই বেরিয়ে আসবে।

আরেক কারণ এই যে, নিজের পবিত্রতা প্রমাণ করাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। আর তা এ মহিলাদের মাধ্যমেই অর্জিত হয়ে যেতে পারে এবং তাতে তাদের তেমন কোনো অপমানও নেই। তারা সত্য কথা স্বীকার করলে শুধু পরামর্শ দেওয়ার দোষ তাদের ঘাড়ে চাপবে। কিন্তু আযীয পত্নীর অবস্থা এরূপ ছিল না। তাই সরাসরি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে, তাকে ঘিরেই তদন্তকার্য অনুষ্ঠিত হতো। ফলে তার অপমান বেশী হতো।

তৃতীয় কারণ এই যে, আযীয পত্নী আযীয মিসর-এর নিকট ঘটনা অস্বীকার করে ইউসুফ আ. এর উপর দোষ চাপালেও হস্ত কর্তনকারিণী মহিলাদের নিকট নিজের সব দোষ অকাতরে স্বীকার করেছেন এবং তাদের সামনেই ইউসুফ আ. কে তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ না করলে কঠোর শাস্তি প্রদানের হুমকি দিয়েছেন। সুতরাং হস্ত কর্তনকারিণী মহিলাদেরকে জিজ্ঞেস করলেই সত্য ঘটনা প্রমাণ হয়ে পড়বে এবং ঘটনার রহস্য আগা-গোড়া সব উদঘাটিত হয়ে যাবে। আর এতে করে ইউসুফ আ. এর নির্দোষিতা তো প্রমাণ হবেই, অধিকন্তু তাঁর সততা, সৎপরায়ণতা ও চারিত্রিক পবিত্রতাও পরিষ্কার হয়ে উঠবে।
ইউসুফ আ. সাথে সাথে আরো বললেন, “আমার পালনকর্তা তাদের মিথ্যা ও ছল-চাতুরি সম্পর্কে সম্যক অবগত।” সুতরাং আমি চাই যে, বাদশাহও বাস্তব সত্য সম্পর্কে অবগত হোন এবং তিনি যেন বুঝতে পারেন যে, ইউসুফ আসামী হিসাবে জেলে ছিলেন না, বরং মজলুম হয়ে জেলে ছিলেন।

কুরআন মাজীদের আয়াতের এ অংশে সূক্ষ্মভাবে ইউসুফ আ. এর পবিত্রতার কথাও বর্ণিত হয়েছে। বাদশাহ তৎক্ষণাৎ ইউসুফ আ. এর দাবী অনুযায়ী হস্ত কর্তনকারিণী মহিলাদরেকে জিজ্ঞাসা করে ঘটনার তদন্ত করলেন। তখন যুলাইখা ও অন্যসব মহিলা বাস্তব ঘটনা স্বীকার করলো। পবিত্র কুরআনে নিম্নবর্ণিত আয়াতে এ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে,

قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ اِذْ رَاوَدْتُّنَّ یُوْسُفَ عَنْ نَّفْسِهٖ ؕ قُلْنَ حَاشَ لِلّٰهِ مَا عَلِمْنَا عَلَیْهِ مِنْ سُوْٓءٍ ؕ قَالَتِ امْرَاَتُ الْعَزِیْزِ الْـٰٔنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ ۫ اَنَا رَاوَدْتُّهٗ عَنْ نَّفْسِهٖ وَ اِنَّهٗ لَمِنَ الصّٰدِقِیْنَ○

অর্থঃ বাদশাহ মহিলাদেরকে বললেন, তোমাদের ঘটনা সম্পর্কে কী মূল্যায়ন যখন তোমরা ইউসুফকে কামনা চরিতার্থ করার জন্য ফুঁসলিয়েছিলে? তারা বললো, সুবহানাল্লাহ! আমরা তাঁর সম্পর্কে মন্দ কিছু জানি না। তখন আযীযপত্নী বললো, এখন সত্য কথা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আমিই তাকে স্বীয় কামনা চরিতার্থের জন্য ফুঁসলিয়েছিলাম এবং নিঃসন্দেহে সে-ই সত্যবাদী। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫১)

স্বীয় পবিত্রতা ও সত্যবাদিতা প্রকাশ হওয়ার পর ইউসুফ আ. আশ্বস্ত হলেন। অতঃপর নিজের এ প্রক্রিয়ার পক্ষে সাফাই প্রকাশ করে বললেন,

ذٰلِکَ لِیَعْلَمَ اَنِّیْ لَمْ اَخُنْهُ بِالْغَیْبِ وَ اَنَّ اللهَ لَا یَهْدِیْ کَیْدَ الْخَآئِنِیْنَ○

অর্থঃ আমার এ তদন্ত কামনা এজন্য যে, যাতে আযীযে মিসর জানতে পারেন, আমি গোপনে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আর আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্তকে এগুতে দেন না। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২)

মিসরের বাদশাহ তখন ইউসুফ আ. এর সততা, সাধুতা ও বিশ্বস্ততায় প্রীত ও সন্তুষ্ট হলেন। তাই পুনরায় দূতকে ইউসুফ আ. এর নিকট পাঠিয়ে বললেন, ইউসুফ আ. কে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে আমার একান্ত উপদেষ্টা নির্বাচিত করবো।

নির্দেশ অনুযায়ী ইউসুফ আ. কে সসম্মানে কারাগার থেকে রাজ দরবারে নিয়ে আসা হলো। অতঃপর পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ফলে তাঁর যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বাদশাহ বললেন, “আপনি আজ থেকে আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব।” কুরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াতে এ বিষয়টি বিবৃত হয়েছে,

وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُوْنِیْ بِهٖۤ اَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِیْ ۚ فَلَمَّا کَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّکَ الْیَوْمَ لَدَیْنَا مَکِیْنٌ اَمِیْنٌ○

অর্থঃ বাদশাহ বললেন, তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে নিজের একান্ত সহকারী বানাবো। অতঃপর তিনি যখন তার সাথে মতবিনিময় করলেন, তখন বললেন, নিশ্চয়ই আপনি আমাদের কাছে আজ থেকে বিশ্বস্ত হিসাবে মর্যাদার স্থান লাভ করেছেন। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৪)

ইমাম বাগাবী রহ. বর্ণনা করেন, যখন বাদশাহর দূত দ্বিতীয়বার কারাগারে ইউসুফ আ. এর কাছে পৌঁছলো এবং বাদশাহর পয়গাম পৌঁছলো, তখন ইউসুফ আ. সব কারাবাসীর জন্য দু‘আ করলেন এবং গোসল করে নতুন কাপড় পরিধান করলেন। অতঃপর তিনি বাদশাহর দরবারে পৌঁছে এই দু‘আ পড়লেন,

حَسْبِىْ رَبِّىْ مِنْ دُنْيَايَ وَحَسْبِىْ رَبِّىْ مِنْ خَلْقِه، عَزَّجَارُهٗ وَجَلَّ ثَنَاءُهٗ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُهٗ،

অর্থঃ আমার দুনিয়ার জন্য আমার পালনকর্তাই যথেষ্ট এবং সকল সৃষ্টির মুকাবিলায় আমার রবই আমার জন্য যথেষ্ট। যে তাঁর আশ্রয়ে আসে, সে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে, তার স্থান সিফাত উচ্চ মর্যদার হয়ে যায় তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

অতঃপর ইউসুফ আ. আরবী ভাষায় সালাম প্রদান করেন, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” এবং বাদশাহর জন্য হিব্রু ভাষায় দু‘আ করেন। বাদশাহ অনেক ভাষা জানতেন, কিন্তু আরবী ও হিব্রু ভাষা তার জানা ছিল না। ইউসুফ আ. বলে দেন যে, সালাম আরবী ভাষায় এবং দু‘আ হিব্রু ভাষায় করা হয়েছে।

এ রিওয়ায়েতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাদশাহ ইউসুফ আ. এর জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও উপলব্ধির জন্য তাঁর সাথে বিভিন্ন ভাষায় কথাবার্তা বলেন। ইউসুফ আ. তাকে প্রত্যেক ভাষায়ই উত্তর দেন এবং সাথে সাথে আরবী ও হিব্রু এই দু’টি অতিরিক্ত ভাষাও শুনিয়ে দেন। এতে যোগ্যতা ও জ্ঞান-প্রজ্ঞা গভীরভাবে রেখাপাত করে।

অতঃপর বাদশাহ বললেন, আমি আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা সরাসরি আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই। ইউসুফ আ. প্রথমে মূল স্বপ্ন সম্বন্ধে এমন বিবরণ দিলেন, যা আজ পর্যন্ত বাদশাহ নিজেও কারো কাছে বর্ণনা করেননি। অতঃপর সেই স্বপ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করলেন।

বাদশাহ বললেন, আমি আশ্চর্য বোধ করছি যে, আপনি এসব বিষয় কি করে জানলেন? ইউসুফ আ. বললেন, এটা আমার, আপনার ও সকলের প্রভু-প্রতিপালক মহান আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।
অতঃপর বাদশাহ পরামর্শ চাইলেন যে, এখন কি করা দরকার? ইউসুফ আ. বললেন, প্রথম সাত বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় অধিকতর পরিমাণে চাষাবাদ করে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে, জনগণকে অধিক ফসল ফলানোর জন্য নির্দেশ দিতে হবে এবং উৎপন্ন ফসলের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছড়ার মধ্যে নিজের কাছে সঞ্চিত রাখতে হবে।

এভাবে দুর্ভিক্ষের সাত বছরের জন্য মিসরবাসীদের কাছে প্রচুর শস্যভাণ্ডার মজুত থাকবে এবং আপনি তাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকবেন। এমতাবস্থায় রাজস্ব আয় ও খাস জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল সরকারের হাতে আসবে, তা ভিনদেশী লোকদের জন্য রাখতে হবে। কারণ এ দুর্ভিক্ষ হবে সুদূর দেশ অবধি বিস্তৃত। ভিনদেশিরা তখন আপনার মুখাপেক্ষী হবে। আপনি খাদ্যশস্য দিয়ে সেসব আর্তমানুষকে সাহায্য করবেন। বিনিময়ে যৎকিঞ্চিত মূল্য গ্রহণ করলেও সরকারি ধনভাণ্ডারে অভূতপূর্ব অর্থ সমাগত হবে।

এ পরামর্শ শুনে বাদশাহ মুগ্ধ ও আনন্দিত হয়ে বললেন, এ বিরাট পরিকল্পনার ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে এবং কে করবে? ইউসুফ আ. তাকে যথাবিহিত পরামর্শ দিয়ে বললেন,

قَالَ اجْعَلْنِیْ عَلٰی خَزَآئِنِ الْاَرْضِ ۚ اِنِّیْ حَفِیْظٌ عَلِیْمٌ○

অর্থঃ আমাকে দেশের ধনভাণ্ডার নিযুক্ত করুন। আমি (আল্লাহর রহমতে) বিশ্বস্ত রক্ষক ও বেশ অভিজ্ঞ। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৫)

অর্থাৎ জমির উৎপন্ন ফসলসহ দেশীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করতে আমি সক্ষম এবং ব্যয়ের খাত ও পরিমাণ সম্পর্কেও আমার পুরোপুরি জ্ঞান আছে। (আল-জামি‘লিআহকামিল কুরআন)

একজন অর্থমন্ত্রীর মাঝে যেসব গুণ থাকা দরকার, উপযুক্ত দু’টি শব্দের মধ্যে ইউসুফ আ. তার সবগুলোই বর্ণনা করে দিলেন। কেননা, অর্থমন্ত্রীর জন্যে সর্বপ্রথম প্রয়োজন হচ্ছে সরকারি ধন-সম্পদ বিনষ্ট থেকে না দেওয়া; বরং পূর্ণ হিফাযত সহকারে একত্র করা এবং অনাবশ্যক ও ভ্রান্ত খাতে ব্যয় না করা। দ্বিতীয় প্রয়োজন হচ্ছে, যেখানে যে পরিমাণ ব্যয় করা দরকার, সেখানে সেই পরিমাণ ব্যয় করা এবং এক্ষেত্রে কোনো কমবেশি না করা। حَفِیْظٌ শব্দটি প্রথম প্রয়োজনীয় গুণ এবং عَلِیْمٌ শব্দটি দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় গুণের নিশ্চয়তা বহন করছে।

বাদশাহ যদিও ইউসুফ আ. এর গুণাবলীতে মুগ্ধ ও তাঁর তাক্বওয়া ও বুদ্ধিমত্তায় পুরোপুরি বিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলেন, তথাপি কার্যত তাঁকে অর্থমন্ত্রী পদ সোপর্দ করলেন না, বরং আরো বৃহত্তর উদ্দেশ্যে তাঁকে এক বছর পর্যন্ত একজন সম্মানিত অতিথি হিসেবে রাজ দরবারে রেখে দিলেন।

অতঃপর এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বাদশাহ শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ই নয়, বরং সম্পূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব তাঁর নিকট সোপর্দ করে তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান বানিয়ে দেন। সম্ভবত এই বিলম্বের কারণ ছিল এই যে, নিকট সান্নিধ্যে রেখে তাঁর চরিত্র ও অভ্যাস সম্পর্কে বাদশাহর পুরোপুরি অভিজ্ঞতা অর্জন করা।

0 coment�rios:

Post a Comment