Saturday, July 11, 2020
জ্ঞান সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ)-এর দশ টি জবাব
Friday, July 10, 2020
হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) জীবনী ও ঘটনা
তিনি ছিলেন উজ্জ্বল মুখমণ্ডল, গৌরকান্তি, হালকা পাতলা গড়ন ও দীর্ঘদেহের অধিকারী। তাঁকে দেখলে যে কোন ব্যক্তির চোখ জুড়িয়ে যেত, সাক্ষাতে অন্তরে ভক্তি ও ভালোবাসার উদয় হত এবং হৃদয়ে একটা নির্ভরতার ভাব সৃষ্টি হত। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী, অত্যন্ত বিনয়ী ও লাজুক প্রকৃতির। তবে যে কোন সংকট মুহূর্তে সিংহের ন্যায় চারিত্রিক দৃঢ়তা তাঁর মধ্যে ফুটে উঠত। তাঁর চারিত্রিক দীপ্তি ও তীক্ষ্ণতা ছিল তরবারীর ধারের ন্যায়। রাসূলের সা. ভাষায় তিনি ছিলেন উম্মাতে মুহাম্মাদীর ‘আমীন’- বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি।
তাঁর পুরো নাম আমীল ইবন আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ আল –ফিহরী আল কুরাইশী। তবে কেবল আবু উবাইদা নামে তিনি সবার কাছে পরিচিত। তাঁর পঞ্চম উর্ধ পুরুষ ‘ফিহরের’ মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর সা. নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। তাঁর মাও ফিহরী খান্দানের কন্যা। সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমারের রা. মন্তব্য হলঃ ‘কুরাইশদের তিন ব্যক্তি অন্য সকলের থেকে সুন্দর চেহারা, উত্তম চরিত্র ও স্থায়ী লজ্জাশীলতার জন্য সর্বশেষ্ঠ। তাঁর তোমাকে কোন কথা বললে মিথ্যা বলবেন না, আর তুমি তাদেরকে কিছু বললে তোমাকে মিথ্যুক মনে করবেন না। তাঁরা হলেন- আবু বকর সিদ্দিক, উসমান ইবন আফফান ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ।’
ইসলাম প্রচারের প্রথম ভাগেই যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন আবু উবাইদা ছিলেন তাঁদের অন্যতম। হযরত আবু বকরের মুসলমান হওয়ার পরের দিনই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকরের হাতেই তিনি তাঁর ইসলামের ঘোষণা দেন। তারপর তিনি আবদুর রহমান ইবন আউফ, উসমান ইবন মাজউন, আল-আরকাম ইবন আবিল আরকাম ও তাঁকে সংগে করে রাসূলুল্লাহর সা. দরবারে হাজির হন। সেখানে যারা সকলেই একযোগে ইসলামের ঘোষণা দেন। এভাবে তাঁরাই হলেন মহান ইসলামী ইমারতের প্রথম ভিত্তি।
মক্কায় মুসলিমদের তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবু উবাইদা শরীক চিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি অটল থেকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় কামিয়াব হন। কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দু’বার হাবশায় হিজরাত করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহর সা হিজরাতের পর তিনিও মদীনায় হিজরাত করেন। মদীনায় সা’দ বিন মুয়াজের সাথে তাঁর ‘দ্বীনী মুয়াখাত’ বা দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন আবু উবাইদার পরীক্ষার কঠোরতা ছিল সকল ধ্যান-ধারণা ও কল্পনার উর্ধে। যুদ্ধের ময়দানে এমন বেপরোয়াভাবে কাফিরদের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন যেন তিনি মৃত্যুর প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন। মুশরিকরা তাঁর আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের অশ্বারোহী সৈনিকরা প্রাণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে। কিন্তু শত্রুপক্ষের এক ব্যক্তি বার বার ঘুরে ফিরে তাঁর সামনে এসে দাঁড়াতে লাগল। আর তিনিও তার সামনে থেকে সরে যেতে লাগলেন যেন তিনি সাক্ষাত এড়িয়ে যাচ্ছেন।
লোকটি ভীড়ের মধ্যে প্রবেশ করল। আবু উবাইদা সেখানেও তাকে এড়িয়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে সে শত্রুপক্ষ ও আবু উবাইদার মাঝখানে এসে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। যখন তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল, তিনি তাঁর তরবারির এক আঘাতে লোকটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছন্ন করে ফেলেন। লোকটি মাটিতে গড়িয়ে পড়ল।
লোকটি কে? সে আর কেউ নয়। সে আবু উবাইদার পিতা আবদুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। প্রকৃতপক্ষে আবু উবাইদা তাঁর পিতাকে হত্যা করেননি, তিনি তাঁর পিতার আকৃতিতে শিরক বা পৌত্তলিকতা হত্যা করেছেন। এ ঘটনার পর আল্লাহ তা’আলা আবু উবাইদা ও তাঁর পিতার শানে নিম্নের এ আয়াতটি নাযিল করেন।
‘তোমরা কখনো এমনটি দেখতে পাবে না যে, আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার লোকেরা কখনো তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সা. বিরুদ্ধাচরণ করেছে- তারা তাদের পিতা-ই হোক কিংবা তাদের পুত্র-ই হোক বা ভাই হোক অথবা তাদের বংশ-পরিবারের লোক। তারা সেই লোক যাদের দিলে আল্লাহ তা’আলা ঈমান দৃঢ়মূল করে দিয়েছেন এবং নিজের তরফ হতে একটা রূহ দান করে তাদেরকে এমন সব জান্নাতে দাখিল করবেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবহমান হবে। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও সন্তুষ্ট হয়েছেন তাঁর প্রতি। এরা আল্লাহর দলের লোক। জেনে রাখ, আল্লাহর দলের লোকেরাই কল্যাণপ্রাপ্ত হবে।’ (আল মুজাদিলা- ২২)
আবু উবাইদার এরূপ আচরণে বিস্মিত হবার কিছু নেই। কারণ, আল্লাহর প্রতি তাঁর দৃঢ় ঈমান, দ্বীনের প্রতি নিষ্ঠা, এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর প্রতি তাঁর আমানতদারী তাঁর মধ্যে এমন চূড়ান্ত রূপলাভ করেছিল যে, তা দেখে অনেক মহান ব্যক্তিও ঈর্ষা পোষণ করতেন। মুহাম্মাদ ইবন জাফর বলেনঃ ‘খৃস্টানদের একটা প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহর সা. দরবারে হাজির হয়ে বললো- হে আবুল কাসিম! আপনার সাথীদের মাঝ থেকে আপনার মনোনীত কোন একজনকে আমাদের সাথে পাঠান। তিনি আমাদের কিছু বিতর্কিত সম্পদের ফায়সালা করে দেবেন।
আপনাদের মুসলিম সমাজ আমাদের সবার কাছে মনোপূত ও গ্রহণযোগ্য। একথা শুনে রাসূল সা. বললেনঃ ‘সন্ধ্যায় তোমরা আমার কাছে আবার এসো। আমি তোমাদের সাথে একজন দৃঢ়চেতা ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাঠাব।’ হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব বলেনঃ ‘আমি সেদিন সকাল সকাল জোহরের নামায আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হলাম। আর আমি এ দিনের মত আর কোন দিন নেতৃত্বের জন্য লালায়িত হইনি। এর একমাত্র কারণ, আমিই যেন হতে পারি রাসূলুল্লাহর সা. এ প্রশংসার পাত্রটি।
রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের সাথে জোহরের নামায শেষ করে ডানে বায়ে তাকাতে লাগলেন। আর আমিও তাঁর নজরে আসার জন্য আমার গর্দানটি একটু উঁচু করতে লাগলাম। কিন্তু তিনি তাঁর চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে এক সময় আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহকে দেখতে পেলেন। তাঁকে ডেকে তিনি বললেনঃ ‘তুমি তাদের সাথে যাও এবং সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে তাদের বিতর্কিত বিষয়টির ফায়সালা করে দাও।’ আমি তখন মনে মনে বললামঃ আবু উবাইদা এ মর্যাদাটি ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
আবু উবাইদা কেবল একজন আমানতদারই ছিলেন না, আমানতদারীর জন্য সর্বদা সকল শক্তি পুঞ্জিভূত করতেন। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে কুরাইশ কাফিলার গতিবিধি অনুসরণের জন্য রাসূল সা. একদল সাহাবীকে পাঠান। তাঁদের আমীর নিযুক্ত করেন আবু উবাইদাকে। পাথেয় হিসাবে তাঁদেরকে কিছু খোরমা দেওয়া হয়। প্রতিদিন আবু উবাইদা তাঁর প্রত্যেক সংগীকে মাত্র একটি খোরমা দিতেন। তাঁরা শিশুদের মায়ের স্তন চোষার ন্যায় সারাদিন সেই খোরমাটি চুষে চুষে এবং পানি পান করে কাটিয়ে দিত।
এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র একটি খোরমা দিতেন। তাঁর শিশুদের মায়ের স্তন চোষার ন্যায় সারাদিন সেই খোরমাটি চুষে চুষে এবং পানি পান করে কাটিয়ে দিত। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র একটি খোরমাই তাঁদের জন্য যথেষ্ট ছিল। কোন কোন বর্ণনায় ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ অষ্টম হিজরীতে রজব মাসে রাসুল সা. আবু উবাইদার নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় কুরাইশদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য একটি বাহিনী পাঠান। কিছু খেজুর ছাড়া তাঁদের সাথে আর কোন পাথেয় ছিল না। সৈনিকদের প্রত্যেকের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ছিল মাত্র একটি খেজুর। এই একটি খেজুর খেয়েই তাঁর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত করেন। অবশেষে আল্লাহতায়ালা তাঁদের এ বিপদ দূর করেন। সাগর তীরে তাঁরা বিশাল আকৃতির এক মাছ লাভ করেন এবং তার ওপর নির্ভর করেই তাঁরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। হয়তো এ দুটি পৃথক পৃথক ঘটনা ছিল।
উহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা যখন পরাজয় বরণ করে এবং মুশরিকরা জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘মুহাম্মাদ কোথায়, মুহাম্মাদ কোথায়….’। তখন আবু উবাইদা ছিলেন সেই দশ ব্যক্তির অন্যতম যারা বুক পেতে রাসূলকে সা. মুশরিকদের তীর থেকে রক্ষা করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে দেখা গেল রাসূলুল্লাহর সা. দাঁত শহীদ হয়েছে, তাঁর কপাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে এবং গণ্ডদেশে বর্মের দুটি বেড়ী বিঁধে গেছে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক বেড়ী দু’টিকে উঠিয়ে ফেলার জন্য তড়িঘড়ি এগিয়ে এলেন। আবু উবাইদা তাঁকে বললেন, ‘কসম আল্লাহর! আপনি আমাকে ছেড়ে দিন।’ তিনি ছেড়ে দিলেন। আবু উবাইদা ভয় করলেন হাত দিয়ে বেড়ী দু’টি তুললে রাসূল সা. হয়ত কষ্ট পাবেন। তিনি শক্তভাবে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে প্রথমে একটি তুলে ফেললেন।
কিন্তু তাঁরও অন্য একটি দাঁত ভেঙ্গে গেল। তখন আবু বকর রা. মন্তব্য করলেনঃ ‘আবু উবাইদা সর্বোত্তম ব্যক্তি।’ খন্দক ও বনী কুরাইজা অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক চুক্তিতে তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেন। খাইবার অভিযানে সাহস ও বীরত্বের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। ‘জাতুস সালাসিল’ অভিযানে হযরত আমর ইবনুল আসের বাহিনীর সাহায্যের জন্য দু’শ’ সিপাহীসহ রাসূল সা. আবু উবাইদাকে পিছনে পাঠান। তাঁরা জয়লাভ করেন। মক্কা বিজয়, তায়িফ অভিযানসহ সর্বক্ষেত্রে আবু উবাইদা শরীক ছিলেন। বিদায় হজ্জেও তিনি রাসূলুল্লাহর সা. সফরসংগী ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহর সা. জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আবু উবাইদা সর্বক্ষেত্রে ছায়ার ন্যায় সর্বদা তাঁকে অনুসরণ করেন।
সাকীফায়ে বনী সায়েদাতে খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে তুমুল বাক-বিতণ্ডা চলছে। আবু উবাইদা আনসারদের লক্ষ্য করে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিলেন। তাদের সতর্ক করে দিয়ে বললেনঃ ‘ওহে আনসার সম্প্রদায়! তোমরাই প্রথম সাহায্যকারী। আজ তোমরাই প্রথম বিভেদ সৃষ্টিকারী হয়োনা।’ এক পর্যায়ে হযরত আবু বকর আবু উবাইদাকে বলেন, আপনি হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার হাতে বাইয়াত করি।
আমি রাসূলকে সা. বলতে শুনেছিঃ ‘প্রত্যেক জাতিরই একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছে, তুমি এ জাতির সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তি।’ এর জবাবে আবু উবাইদা বললেনঃ ‘আমি এমন ব্যক্তির সামনে হাত বাড়াতে পারিনা যাকে রাসূল সা. আমাদের নামাযের ইমামতির আদেশ করেছেন এবং যিনি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ইমামতি করেছেন।’ একথার পর আবু বকরের হাতে বাইয়াত করা হল। আবু বকরের খলীফা হবার পর সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সর্বোত্তম উপদেষ্টা ও সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেন ।আবু বকরের পর হযরত উমার খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আবু উবাইদা তাঁরও আনুগত্য মেনে নেন।
হযরত আবু বকর রা. খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর হিজরী ১৩ সনে সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেন। আবু উবাইদাকে হিমস, ইয়াযিদ বিন আবু সুফিয়ানকে দিমাশ্ক, শুরাহবীলকে জর্দান এবং ’আমর ইবনুল আসকে ফিলিস্তীনে যাত্রার নির্দেশ দিলেন। সম্মিলিত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করলেন আবু উবাইদাকে। দিমাশ্ক, হিমস, লাজেকিয়া প্রভৃতি শহর বিজিত হয় আবু উবাইদার হাতে। ইয়ারমুকের সেই ভয়াবহ যুদ্ধ তিনিই পরিচালনা করেন। ’আমর ইবনুল ’আসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বায়তুল মাকদাস বিজয়ে শরীক হন। বায়তুল মাকদাসবাসীরা খোদ খলীফা ’উমারের সাথে সন্ধির ইচ্ছা প্রকাশ করলে আবু উবাইদাই সে কথা জানিয়ে খলীফাকে পত্র লেখেন। সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য খলীফা ‘জাবিয়া’ পৌঁছলে আবু উবাইদাহ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। হিজরী ১৭ সনে হযরত খালিদ সাইফুল্লাহকে দিমাশ্কের আমীর ও ওয়ালীর পদ থেকে অপসারণ করে খলীফা উমার আবু উবাইদাকে তাঁর স্থলে নিয়োগ করেন। হযরত খালিদ সাইফুল্লাহ লোকদের বলেন, ‘তোমাদের খুশী হওয়া উচিত যে, আমীনুল উম্মাত তোমাদের ওয়ালী।’
আবু উবাইদার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী সিরিয়ায় একের পর এক বিজয় লাভ করে সিরিয়ার সমগ্র ভূখণ্ড দখল করে চলেছে। এ সময় সিরিয়ায় মহামারী আকারে প্লেগ দেখা দেয় এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তার শিকারে পরিণত হয়। খলীফা হযরত উমার রা. নিজেই খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য রাজধানী মদীনা থেকে ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌঁছুলেন। অন্য নেতৃবৃন্দের সাথে আবু উবাইদা সেখানে খলীফাকে অভ্যর্থনা জানালেন। প্রবীণ মুহাজির ও আনসারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করলেন। সবাই একবাক্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের স্থান ত্যাগের পক্ষে মত দিলেন। হযরত উমার সবাইকে আহ্বান জানালেন তাঁর সাথে আগামী কাল মদীনায় ফিরে যাওয়ার জন্য। তাকদীরের প্রতি গভীর বিশ্বাসী আবু উবাইদা বেঁকে বসলেন।
খলীফাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘আ ফিরারুম মিন কাদলিল্লাহ- একি আল্লাহর তাকদীর থেকে পলায়ন নয়?’ খলীফা দুঃখ প্রকাশ করে বললেনঃ ‘আফসুস! আপনি ছাড়া কথাটি অন্য কেউ যদি বলতো! হাঁ, আল্লাহর তাকদীর থেকে পালাচ্ছি। তবে অন্য এক তাকদীরের দিকে। আবু উবাইদা তাঁর বাহিনীসহ সেখানে থেকে গেলেন। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার মদীনা পৌঁছে দূত মারফত আবু উবাইদাকে একখানা পত্র পাঠান। পত্রে তিনি লিখেনঃ ‘‘আপনাকে আমার খুবই প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরীভাবে আপনাকে আমি তলব করছি। আমার এ পত্রখানি যদি রাতের বেলা আপনার কাছে পৌঁছে তাহলে সকাল হওয়ার পূর্বেই রওয়ানা দেবেন। আর যদি দিনের বেলা পৌঁছে তাহলে সন্ধ্যার পূর্বেই রওয়ানা দেবেন।’’ খলীফা উমারের এ পত্রখানি হাতে পেয়ে তিনি মন্তব্য করেনঃ ‘আমার কাছে আমীরুল মুমিনীনের প্রয়োজনটা কি তা আমি বুঝেছি।
যে বেঁচে নেই তাকে তিনি বাঁচাতে চান। তারপর তিনি লিখলেনঃ ‘‘আমীরুল মু’মিনীন, আমি আপনার প্রয়োজনটা বুঝেছি। আমি তো মুসলিম মুজাহিদদের মাঝে অবস্থান করছি। তাদের ওপর যে আপতিত হয়েছে তা থেকে আমি নিজেকে বাঁচানোর প্রত্যাশী নই। আমি তাদেরকে ছেড়ে যেতে চাইনা, যতক্ষণ না আল্লাহ আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন। আমার এ পত্রখানি আপনার হাতে পৌঁছার পর আপনি আপনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন এবং আমাকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দান করুন।’’
হযরত উমার এ পত্রখানি পাঠ করে এত ব্যাকুলভাবে কেঁদেছিলেন যে, তাঁর দু’চোখ থেকে ঝর ঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর এ কান্না দেখে তার আশেপাশের লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলঃ ‘আমীরুল মু’মিনীন, আবু উবাইদা কি ইনতিকাল করেছেন?’ তিনি বলেছিলেনঃ ‘না। তবে তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।
হযরত উমারের ধারণা মিথ্যা হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্লেগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে উপদেশমূলক একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। তিনি বলেনঃ ‘‘তোমাদেরকে যে উপদেশটি আমি দিচ্ছি তোমরা যদি তা মেনে চলো তাহলে সবসময় কল্যাণের পথেই থাকবে। তোমরা নামায কায়েম করবে, রমাদান মাসে রোযা রাখবে, যাকাত দান করবে, হজ্জ ও উমরা আদায় করবে, একে অপরকে উপদেশ দেবে, তোমাদের শাসক ও নেতৃবৃন্দকে সত্য ও ন্যায়ের কথা বলবে, তাদের কাছে কিছু গোপন রাখবে না এবং দুনিয়ার সুখ সম্পদে গা ভাসিয়ে দেবে না।
কোন ব্যক্তি যদি হাজার বছরও জীবন লাভ করে, আজ আমার পরিণতি তোমরা দেখতে পাচ্ছ তারও এই একই পরিণতি হবে।’’ সকলকে সালাম জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। অতঃপর মুয়াজ ইবন জাবালের দিকে তাকিয়ে বলেনঃ ‘মুয়াজ! নামাযের ইমামতি কর।’ এর পরপরই তাঁর রূহটি পবিত্র দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরম সত্তার দিকে ধাবিত হয়। মুয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে সমবেত সকলকে লক্ষ্য করে বলেনঃ লোক সকল! তোমরা এ ব্যক্তির তিরোধানে ব্যথা ভারাক্রান্ত। আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যক্তির থেকে অধিক কল্যাণদৃপ্ত বক্ষ, পরিচ্ছন্ন হৃদয়, পরকালের প্রেমিক এবং জনগণের উপদেশ দানকারী আর কোন ব্যক্তিকে জানিনা। তোমরা তাঁর প্রতি রহম কর, আল্লাহও তোমাদের প্রতি রহম করবেন। এটা হিজরী ১৮ সনের ঘটনা।
এরপর লোকেরা সমবেত হয়ে আবু উবাইদার মরদেহ বের করে আনলো। মুয়াজ বিন জাবালের ইমামতিতে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হল। মুয়াজ বিন জাবাল, আমর ইবনুল আস ও দাহ্হাক বিন কায়েস কবরের মধ্যে নেমে তাঁর লাশ মাটিতে শায়িত করেন। কবরে মাটিচাপা দেওয়ার পর মুয়াজ এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তাঁর প্রশংসা করে বলেনঃ ‘‘আবু উবাইদা, আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন! আল্লাহর কসম! আমি আপনার সম্পর্কে যতটুকু জানি কেবল ততটুকুই বলবো, অসত্য কোন কিছু বলবো না। কারণ, আমি আল্লাহর শাস্তির ভয় করি। আমার জানা মতে আপনি ছিলেন আল্লাহকে অত্যধিক স্মরণকারী, বিনম্রভাবে যমীনের ওপর বিচরণকারী ব্যক্তিদের একজন। আর আপনি ছিলেন সেইসব ব্যক্তিদের অন্যতম যারা তাদের ‘রবের’ উদ্দেশ্যে সিজদারত ও দাঁড়ানোর অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে এবং যারা খরচের সময় অপচয়ও করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে থাকে। আল্লাহর কসম; আমার জানা মতে আপনি ছিলেন বিনয়ী এবং ইয়াতিম-মিসকীনদের প্রতি সদয়। আপনি ছিলেন অত্যাচারী অহংকারীদের শত্রুদেরই একজন।’
খাওফে খোদা, ইত্তেবায়ে সুন্নাত, তাকওয়া, বিনয়, সাম্যের মনোভাব, স্নেহ ও দয়া ছিল তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একদিন একটি লোক আবু উবাইদার বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পেল, তিনি হাউমাউ করে কাঁদছেন। লোকটি জিজ্ঞেস করলোঃ ব্যাপার কি আবু উবাইদা, এত কান্নাকাটি কেন? তিনি বলতে লাগলেনঃ ‘‘একবার রাসূল সা. মুসলমানদের ভবিষ্যত বিজয় ও ধন-ঐশ্বর্যে্যর আলোচনা প্রসঙ্গে সিরিয়ার প্রসঙ্গ উঠালেন। বললেনঃ ‘আবু উবাইদা তখন যদি তুমি বেঁচে থাক, তাহলে তিনটি খাদেমই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। একটি তোমার নিজের, একটি পরিবার-পরিজনের এবং অন্যটি তোমার সফরে সংগী হওয়ার জন্য।
অনুরূপভাবে তিনটি বাহনও যথেষ্ট মনে করবে। একটি তোমার, একটি তোমার খাদেমের এবং একটি তোমার জিনিসপত্র পরিবহনের জন্য।’ কিন্তু এখন দেখছি, আমার বাড়ী খাদেমে এবং আস্তাবল ঘোড়ায় ভরে গেছে। হায়, আমি কিভাবে রাসূলুল্লাহকে সা. মুখ দেখাবো? রাসুল সা. বলেছিলেনঃ সেই ব্যক্তিই আমার সর্বাধিক প্রিয় হবে, যে ঠিক সেই অবস্থায় আমার সাথে মিলিত হবে যে অবস্থায় আমি তাকে ছেড়ে যাচ্ছি।’’
খলীফা হযরত উমার সিরিয়া সফরের সময় দেখতে পেলেন, অফিসারদের গায়ে জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক-পরিচ্ছদ। তিনি এতই ক্ষেপে গেলেন যে, ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন এবং তাদের দিকে পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করতে করতে বললেনঃ তোমরা এত তাড়াতাড়ি অনারব অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছো কিন্তু আবু উবাইদা একজন সাদামাটা আরব হিসেবে খলীফার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। গায়ে অতি সাধারণ আরবীয় পোশাক, উটের লাগামটিও একটি সাধারণ রশি। খলীফা উমার রা. তাঁর বাসস্থানে গিয়ে দেখতে পেলেন, সেখানে আরো বেশী সরল-সাদাসিধে জীবনধারার চিহ্ন। অর্থাৎ একটি তলোয়ার একটি ঢাল ও উটের একটি হাওদা ছাড়া তাঁর বাড়ীতে আর কিছু নেই। খলীফা বললেনঃ আবু উবাইদা, আপনি তো আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের ব্যবস্থা করে নিতে পারতেন।’ জবাবে আবু উবাইদা বললেনঃ আমীরুল মুমিনীন, আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
একবার হযরত উমার রা. উপঢৌকন হিসেবে চারশ’ দীনার ও চার হাজার দিরহাম আবু উবাইদার নিকট পাঠালেন। তিনি সব অর্থই সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। নিজের জন্য একটি পয়সাও রাখলেন না। হযরত ’উমার একথা শুনে মন্তব্য করেনঃ ‘আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামে এমন লোকও আছে।’
তিনি এতই বিনয়ী ছিলেন যে, সিপাহসালার হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ সৈনিকদের থেকে তাঁকে পৃথক করা যেত না। অপরিচিত কেউ তাকে সিপাহসালার বলে চিনতে পারতো না। একবার তো এক রোমান দূত এসে জিজ্ঞেস করেই বসে, ‘আপনাদের সেনাপতি কে? সৈনিকরা যখন আঙ্গুর উঁচিয়ে তাঁকে দেখিয়ে দিল, তখন তো সে সেনাপতির অতি সাধারণ পোশাক ও অবস্থান দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।
উৎস: আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
স্বামীকে খুশি রাখার ও শুধু নিজের করে রাখার জন্য কার্যকারী টিপসঃ-
১) স্বামীর ঘুম থেকে উঠার আগে নিজে উঠে পরিপাটি হয়ে নেওয়া যাতে স্বামী আপনাকে সকাল বেলাই অপরিপাটি না দেখে। তার সাথে সুগন্ধি ব্যবহার করুন। যাতে সকালে আপনাকে দেখেই আপনার স্বামীর মন ভরে যায়।
২) তার ঘুম যেভাবে ভাঙ্গালে সে পছন্দ করবে, সেভাবে তাকে ঘুম থেকে জেগে তুলুন।
৩) তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে তবেই অন্য কাজে যাবেন। এবং সে তার কাজে যাওয়ার সময় কপালে আর বুকে দুইটা......... দিয়ে দিন।
৪) সে কখন বাসায় আসতে পারে তা অনুমান করে পরিপাটি হয়ে থেকে তার অপেক্ষা করুন এবং সে ডাকার সাথে সাথে দরজা খুলে দিন এক মুচকি হাসি দিয়ে। এবং তার সাথে কথা বলার সময় সর্বদা হাসি মুখে কথা বলুন।
৫)তার সামনে কখনো গন্ধ নিয়ে যাবেন না। সবসময় একটা সুঘ্রাণ রাখুন নিজের শরীরে।
৬) পরিপূর্ণ পর্দা করুন।
৭)স্বামীকে তাহাজ্জুদ এবং ফজরের নামাজের জন্য ডেকে দিন। আল্লাহর তরফ হতে স্বামীর হৃদয়ে আপনার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা জন্ম নিবে।
৮) স্বামীর মনে কখনো আঘাত দিয়ে কথা বলবেন না।
৯) কখনো স্বামীকে নিজের উপর রাগ হতে দিবেন না বরং স্বামী যে ইশারায় চালাতে চায় সে ইশারায় চলুন( নাফরমানীর কাজ ব্যতিত)।
১০)স্বামী কোন কাজ করতে আদেশ করলে সাথে সাথে হাসি ও খুশির সহিত কাজ করে দিন।
১১)স্বামীর কাছে থাকাকালীন তার অনুমতি ব্যতিত কোন নফল ইবাদাত করবেন না। স্বামীর খেদমত অন্যান্য নফল ইবাদাত থেকেও উওম।
১২)পৃথিবীর কোন মানুষের গিবত না করা।
১৩)স্বামীর হুকুম ছাড়া স্বামীর মাল থেকে কাউকে দান বা হাওলাত না করা। এটা জায়েজ নেই।
১৪)স্বামীর কোন দোষের কথা পৃথিবীর কোন মানুষকে না বলা। বরং স্বামীর মাথা যখন একদম ঠান্ডা থাকবে তখন স্বামীকে হাসিমুখে বিনয়ের সহিত তার ভুল ধরিয়ে ও সুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা।
১৫)স্বামীর কোন কাজ নিজের মতের বিরুদ্ধে হলেও তর্ক না করা।
১৬)স্বামী যা আনুক তা ১ টাকার হলেও এমন একটা ভাব করুন যেন এটা আপনার কাছে ভিষণ পছন্দ হয়েছে। এতে পুরুষেরা স্বস্তি পায়।
১৭)স্বামীর বাড়িতে যতই কষ্ট থাকুক, স্বামীর সাথে সমাধামের চেষ্টা করুন। তবে হাই হতাশা করে স্বামীকে কষ্ট দিবেন না।
১৮)স্বানীর মেজাজ বুঝে ব্যবহার। তার মুখে হাসি থাকলে আপনিও হাসুন। আর তার মন কোন কারণে খারাপ থাকলে আপনিও তার মন খারাপের ভাগিদার হোন, মন খারাপের সময় হেসে এটা প্রকাশ করবেন না যে তার মন খারাপে আপনার কিছু যায় আসে না। আর মেজাজ খারাপ থাকলে একদম চুপ থাকবেন।
১৯)স্বামী আপনাকে যে টাকা দিবে তা ১০০% তাকে হিসাব দিয়ে দিন।আপনার ওপর একটা অন্যরকম বিশ্বাস সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ।
২০)শশুড়-শাশুড়ির সেবা করুন। এবং শশুড় বাড়ীর সকলকে ভালোবাসুন।
২১)স্বামীকে মনের ভুলেও কাজ করতে দিবেন না। বরং তাকে ঠিক কাচের পুতুলের মতো রাখার চেষ্টা করুন।
২২)ঘরের কাজ কারো জন্য ফেলে রাখবেন না।
২৩)স্বামী বাবা-মা এর কাছে টাকা দিলে তা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। তাদের ছেলের টাকা তারা নিবে না তো কে নিবে?
২৪) স্বামী কোন সফর থেকে ফিরলে তাকে খেদমত করুন, প্রশ্ন করুন পরে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোনদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন.....আমীন!
সাহাবীদের ঘটনা শুনলে সত্যি চোখে পানি এসে যায়…..........
Wednesday, July 8, 2020
ইউসুফ আ. বন্দিজীবনের গল্প ও যেভাবে কারামুক্তি পেলেন জেনে নিন
বাদশাহ নিজ স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে আশ্বস্ত হলেন এবং ইউসুফ আ. এর জ্ঞান গরিমায় বিমুগ্ধ হয়ে আদেশ দিলেন যে, তাকে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এসো। আদেশের সাথে সাথে বাদশাহর জনৈক দূত এ বার্তা নিয়ে কারাগারে পৌঁছলো।
ইউসুফ আ. এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন
অতঃপর হযরত ইউসুফ আ. পিতা-মাতাকে নিয়ে রাজসিংহাসনে বসালেন। এ সময় পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা সবাই ইউসুফ আ. এর সামনে সিজদা করলেন। তখন ইউসুফ আ. ইয়াকুব আ. কে বললেন, আব্বাজান! এটাই আমার সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা, যা আমি দেখেছিলাম যে, এগারেটি তারা এবং সূর্য চন্দ্র আমার জন্য সিজদা করছে। পবিত্র কুরআনে এ সম্বন্ধে ইরশাদ হয়েছে,
وَرَفَعَ اَبَوَیْهِ عَلَی الْعَرْشِ وَخَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا ۚ وَقَالَ یٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاْوِیْلُ رُءْیَایَ مِنْ قَبْلُ ۫ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّیْ حَقًّا
অর্থঃ এবং তিনি পিতা-মাতাকে সিংহাসনের উপর বসালেন। তখন সবাই তার সামনে সিজদাবনত হলেন। ইউসুফ আ. বললেন, হে আমার আব্বাজান! এ হলো আমাদের আগেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আমার পালনকর্তা তাকে সত্যে পরিণত করেছেন। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০০)
উপরোল্লিখিত আয়াতে اَبَوَیْهِ বলে পিতা-মাতা উভয়জনের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ইউসুফ আ. এর মাতা তাঁর শৈশবেই ইন্তিকাল করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তারপর ইয়াকুব আ. ইউসুফ এর মাতার বোন লায়্যাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি ইউসুফ আ. এর খালা হওয়ার দিক দিয়ে মায়ের মতোই ছিলেন, আবার পিতার বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার দিক দিয়েও মাতাই ছিলেন। তাই আয়াতে তাদেরকে اَبَوَیْهِ (মা-বাবা) বলা হয়েছে।
وَخَرُّوْا لَهٗ سُجَّدًا “
সবাই হযরত ইউসুফ আ. এর সামনে সিজদা করলেন” আয়াতে বর্ণিত উক্ত সিজদা সম্পর্কে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এ সিজদাটি ছিল কৃতজ্ঞতাসূচক। আর এটা ইউসুফ আ. এর জন্য নয়, বরং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল।
কেউ কেউ বলেন, উপাসনামূলক সিজদা প্রত্যেক পয়গাম্বরের শরী‘আতেই আল্লাহ ছাড়া কারো জন্যেই বৈধ ছিল না। কিন্তু তা‘জীমী বা সম্মানসূচক সিজদা পূর্ববর্তী পয়গাম্বরগণের শরী‘আতে বৈধ ছিল। সেই হিসেবে এটা তাঁর জন্য সম্মানসূচক সিজদাও হতে পারে। তবে শিরকের সিঁড়ি হওয়ার কারণে ইসলামী শরী‘আতে তাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এরপর ইউসুফ আ. পিতা-মাতার সামনে কিছু অতীত কাহিনী বর্ণনা করতে শুরু করলেন।
এখানে এটা অনুধাবনযোগ্য যে, যতটুকু দুঃখ-কষ্ট হযরত ইউসুফ আ. এর উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে, ততটুকু দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন যদি কেউ হয় এবং লম্বাদিনের বিচ্ছেদ ও নৈরাশ্যের পর পিতা-মাতার সাথে মিলন ঘটে, তাহলে সে পিতা-মাতার সামনে নিজের কাহিনী কিভাবে বর্ণনা করবে, আর কতটুকু কাঁদবে এবং কাঁদাবে তা সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু এখানে উভয়পক্ষই হচ্ছেন আল্লাহ পাকের পয়গাম্বর ও রাসূল। তাঁদের কার্যপদ্ধতি অনুপম আদর্শে ভাস্বর। তাই তো ইয়াকুব আ. এর লম্বা বিরহী প্রিয় ছেলে হাজারো দুঃখ-কষ্টের প্রান্তর অতিক্রম করে যখন পিতার সাথে মিলিত হলেন, তখন তিনি বললেন, “আল্লাহ তা‘আলা আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমাকে জেল থেকে বের করেছেন এবং আপনাদের সবাইকে গ্রাম থেকে মিসরে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দেওয়ার পরেও।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০০)
হযরত ইউসুফ আ. এর দুঃখ-কষ্ট যথাক্রমে তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত ছিল: এক. ভাইদের অত্যাচার ও উৎপীড়ন এর দুঃখ-কষ্ট।
দুই. পিতা-মাতার কাছ থেকে লম্বাদিনের বিচ্ছেদ এর দুঃখ-কষ্ট।
তিন. কারাগারের কষ্ট।
আল্লাহ তা‘আলার এ বিশিষ্ট পয়গাম্বর স্বীয় বিবৃতিতে প্রথমে ঘটনাবলীর ধারাবাহিকতা পরিবর্তন করে কারাগার প্রসঙ্গ থেকে কথা শুরু করেছেন।
কিন্তু এতেও কারাগারে প্রবেশ করা এবং সেখানকার কষ্ট ক্লেশের বর্ণনা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। বরং জেলখানা থেকে অব্যহতির কথা আল্লাহর কৃতজ্ঞতাসহ বর্ণনা করেছেন। তাতে এ কথা অনায়াসে ফুটে উঠেছে যে, তিনি কারাগারে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়েছেন।
এখানে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, ইউসুফ আ. কারাগার থেকে বের হওয়ার কথা তো উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ভাইয়েরা যে তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করেছিল, তা এদিক দিয়েও উল্লেখ করেননি যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ঐ কূপ থেকে বের করেছেন। কেননা, ভাইদের অপরাধ তো আগেই মাফ করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।” তাই কোনোভাবে কূপের কথা উল্লেখ করে ভাইদেরকে লজ্জা দেওয়া সমীচীন মনে করেননি।
এরপর ছিল পিতা-মাতা থেকে সুলম্বা বিচ্ছেদ ও তার প্রতিক্রিয়াদি বর্ণনা করার বিষয়। তিনি এসব বিষয় থেকে পাশ কাটিয়ে শুধু শেষ পরিণতি ও পিতা-মাতার সাথে সাক্ষাতের কথা আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতাসহ উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ পাক আপনাদেরকে গ্রাম থেকে মিসর শহরে এনে দিয়েছেন।
এখানে এই নি‘আমতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইয়াকুব আ. এর বাসভূমি ছিল গ্রামে, সেখানে জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা কম ছিল। আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁকে শহরে রাজকীয় সম্মানের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন।
এখন শুধু প্রথম অধ্যায়টি অবশিষ্ট রইলো অর্থাৎ ভাইদের অত্যাচার ও উৎপীড়ন প্রসঙ্গ। একেও শয়তানের ঘাড়ে চাপিয়ে এভাবে চুকিয়ে দিলেন যে, আমার ভাইয়েরা এরূপ ছিল না, কিন্তু মালা‘উন শয়তান তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে কলহ সৃষ্টির এ কাজটি করিয়েছে।
Wednesday, November 27, 2019
হযরত মুসা (আঃ) একদিন স্রষ্টার কাছে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
সবচেয়ে বড় পাপি?"
স্রষ্টার উত্তরঃ "যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম এই পথ অতিক্রম করবে, সে ব্যক্তি-ই হলো তোমার অনুসারীদের মধ্যে বড় পাপি" স্রষ্টার কথানুযায়ী হযরত মুসা (আঃ) বসে দেখছেন, কিছুক্ষণ পর দেখলেন এক ব্যাক্তি ছোট একটি ছেলেকে কোলে করে পথ অতিক্রম করছে।
মুসা(আঃ) বুঝে ফেললেন এই সেই বড় পাপি মুসা(আঃ) স্রষ্টাকে বললেনঃ "প্রভু, এখন আমাকে সবচেয়ে নেকী মানুষটিকে দেখান।"
স্রষ্টার উত্তরঃ "সূর্য্য ডুবার সাথে সাথে যে লোকটি তোমার পূর্বস্থান দিয়ে চলে যাবে সেই হইলো সবচেয়ে নেকী"
মুসা(আঃ) সূর্য ডুবার বেশ আগের থেকে বসে রইলেন যেই সূর্য্য ডুবছিলো দেখলেন সে সকালের ব্যাক্তি-ই ছোট ছেলেকে কোলে করে ফিরে যাচ্ছে। মুসা(আঃ) হতভম্ব হয়ে স্রস্টাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
"প্রভু একই ব্যক্তি মহা পাপি আবার মহা নেকী" .
স্রষ্টা বললেনঃ "হে- মুসা! সকালে যখন এই ব্যাক্তি ছেলেকে সাথে নিয়ে তোমাকে অতিক্রম করে জঙ্গলে প্রবেশ করলো, তখন কোলের ছেলেটি বাবাকে প্রশ্ন করে ছিলো, বাবা! এই জঙ্গল কতবড়?
বাবা উত্তরে বলেছিলো,অনেক বড়। ছেলে আবার প্রশ্ন করলো, বাবা! জঙ্গল থেকে কি বড় কোনো কিছু আছে? তখন বাবা বলেছিলো, হ্যাঁ বাবা! ঐ পাহাড়গুলো জঙ্গল থেকে বড়। ছেলে পুনরায় প্রশ্ন করলো,পাহাড় থেকে কি বড় কিছু আছে? বাবা বললো, আছে, এই আকাশ। ছেলে আবার প্রশ্ন করলো, আকাশ থেকে কি বড় কিছু আছে? সেই ব্যক্তি বললো, হ্যাঁ, আমার পাপ এই আকাশ থেকেও বড়।
ছেলে বাবার এ উত্তর শোনে বললো, বাবা! তোমার পাপ থেকে বড় কি কোনো কিছু নেই? তখন বাবাটি চিৎকার দিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো আমার পাপ থেকেও অনেক অনেক বড় আমাদের স্রস্টার রহমত হে-মুসা! এই ব্যক্তির পাপের অনুভূতি ও অনুশোচনা আমার এতো পছন্দ হয়েছে যে সবচেয়ে পাপি ব্যক্তিকে সবচেয়ে' নেকী ব্যক্তি বানিয়ে দিয়েছি। মনে রাখবা আমার শাস্তির হাত থেকে ক্ষমার হাত বহুগুন বড়।
হে প্রভু আপনি আমাদের সকলকে পিছনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে সামনের দিনগুলোতে সত্যপথে চলার তৌফিক দান করুন... আমিন
আল্লাহর ৯৯ টি নাম অর্থ ও ফজিলত
এছাড়াও ঈমান তথা সৃষ্টিকর্তার একাত্ববাদে বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপুর্ণ দিক হলো তার গুনবাচক নাম ও বৈশিষ্টের বিষয়ে একত্বের স্বিকৃতি দেওয়া। সুতরাং আল্লাহর গুনবাচক নামসমুহ ও তার অর্থ জানা একজন ঈমানদারের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আজকাল আমরা অনেক মুসলিম অতি আধুনিকতা বা অজ্ঞতাবশত: আল্লাহকে গড বা খোদা নামে সম্বোধন করে থাকি, যা অনুচিত।
তাই নিন্মে আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের তালিকা দেওয়া হলো।
মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন। উৎস এবং ইতিহাস::
ইসরাঈল আয়াত ১১০। ”
“ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻤْﺮٌﻭ ﺍﻟﻨَّﺎﻗِﺪُ، ﻭَﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ
ﺣَﺮْﺏٍ، ﻭَﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻋُﻤَﺮَ، ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻋَﻦْ
ﺳُﻔْﻴَﺎﻥَ، - ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻟِﻌَﻤْﺮٍﻭ - ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ
ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ ﺑْﻦُ ﻋُﻴَﻴْﻨَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ
ﺍﻟﺰِّﻧَﺎﺩِ، ﻋَﻦِ ﺍﻷَﻋْﺮَﺝِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ
ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﻟِﻠَّﻪِ ﺗِﺴْﻌَﺔٌ ﻭَﺗِﺴْﻌُﻮﻥَ
ﺍﺳْﻤًﺎ ﻣَﻦْ ﺣَﻔِﻈَﻬَﺎ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭِﺗْﺮٌ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮَ " . ﻭَﻓِﻲ
ﺭِﻭَﺍﻳَﺔِ ﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻋُﻤَﺮَ " ﻣَﻦْ
ﺃَﺣْﺼَﺎﻫَﺎ " ”
সংখ্যাকে ভালোবাসেন। আর ইবনে উমরের বর্ণনায় এসেছে যে, (শব্দগুলো হলো) "যে ব্যক্তি সেগুলোকে পড়বে"। ” ক্বুরআনের বর্ণনায় আল্লাহ'র গুণবাচক নামসমূহকে "সুন্দরতম নামসমূহ" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (নিম্ন-বর্ণিত দেখুন সূরা আল আরাফ ৭:১৮০ , বনী- ইসরাঈল 17:110 , ত্বোয়া-হা 20:8 , আল হাশ্র 59:24 )।
মহানুভব! হে চিরঞ্জীব ও সর্ব সত্তার ধারক!- আপনার কাছে জান্নাত চাচ্ছি এবং মুক্তি চাচ্ছি জাহান্নাম
থেকে। ” মুহাম্মাদ (সাঃ) এ প্রার্থনা শুনে তার সাহাবীদের বললেন: “ তোমরা কি জানো, সে কি দিয়ে দুআ করেছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন: সে আল্লাহর মহান নাম দিয়ে দুআ করেছে। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে দুআ করবে তার দুআ তিনি কবুল করবেন। (অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, ইসমে আজম দিয়ে দুআ করেছে) অপর এক হাদিসে তিনি বলেন:
ﻓﻲ ﺑﻄﻦ ﺍﻟﺤﻮﺕ، (ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ
ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺇﻧﻲ ﻛﻨﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﻈﺎﻟﻤﻴﻦ )
ﻟﻢ ﻳﺪﻉ ﺑﻬﺎ ﺭﺟﻞ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ
ﺷﻲﺀ ﻗﻂ ﺇﻻ ﺍﺳﺘﺠﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ . )
ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺻﺤﺤﻪ
ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ) ”
নেই তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমালংঘনকারী। যে কোনো মুসলিম এ কথা দিয়ে প্রার্থনা করবে
তার প্রার্থনা আল্লাহকবুল করবেন। তবে হাদিসসমূহে সুনির্দিষ্ট করে কোন একটি নামের কথা উল্লেখ করা হয় নি, যার কারনে ঠিক কোন নামটি সেই ইসমে আজম, সেটা নিয়ে ইসলামী ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের ভিতরে ব্যপক মতভেদ আছে। কারো কারো মতে, যেহেতু এই নামটি দুআ' কবুলের ব্যপারে খুবই শক্তিশালী (অর্থাৎ, ব্যক্তিবিশেষ অসৎ উদ্দেশ্যে সেটা ব্যবহার করতে পারে), তাই আল্লাহ তাআলা নিজে (এবং সেইঅনুযায়ী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও) এই নামটি জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি।
না, বরং "মালিক" রাখা যেতে পারে। এটা এই বিশ্বাসের কারণে যে, কোনো সৃষ্টি, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ'র সমকক্ষ হতে পারে না। তাই নামগুলো ব্যবহার করা যাবে; কিন্তু "আল-" শব্দাংশ-সহ ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যক্তির নাম হিসেবে নিষিদ্ধ হলেও "আব্দুল খালিক্ব" (অর্থাৎ "সৃষ্টিকর্তার গোলাম") নামটি খুবই গ্রহণযোগ্য এবং মুসলমান সমাজে প্রচলিত।
Thursday, November 7, 2019
পুরো কুরআন হাতে লিখলেন বরিশালের হুমায়ুন
মাদ্রাসায় না পড়েও প্রবল ইচ্ছা শক্তির জোরেই বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বারড়িয়া গ্রামের হুমায়ুন কবির সুমন আরবি শিখে ৩ বছরে পুরো কুরআন হাতে লিখেছেন।
১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করার পর হুমায়ুন কুরআনুল কারিম লেখার উদ্দেশ্যে আরবি লেখা শেখেন। অতঃপর ২০০৭ সালে পবিত্র কুরআন হাতে লেখা শুরু করেন। ৩ বছরের ব্যবধানে ২০১০ সালে পুরো কুরআন লেখা সম্পন্ন করেন হুমায়ুন।
সম্পূর্ণ নিজ ইচ্ছায় আরবি লেখা শিখে কুরআন লেখা এবং পৃষ্ঠা বিন্যাস ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্যালিওগ্রাফিও ব্যবহার করেছেন তিনি। বরিশালের তরুণ প্রতিভা হুমায়ুন বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতে লেখা কুরআনে পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে চান তিনি।
হুমায়ুন কবির সুমন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বারড়িয়া গ্রামের মো. রজব আলী শিকদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটের একটি শোরুমের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Wednesday, September 11, 2019
জিব্রাইল আঃ এর গল্প
মাঝে মাঝে এই উল্লেখটা খুবই সূক্ষ্ম। আপনি হয়তো কোন লক্ষণীয় উল্লেখের কথা শুনেন না। এখানে জিব্রাইল আঃ এর ভূমিকাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইয়সুফ আঃ যেন পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পান সে জন্য আল্লাহ তাঁকে পাঠালেন ধরে ফেলার জন্য।
কখনো কখনো বর্ণীত গল্পের নবীর সাথে নয় বরং নবীর শত্রুদের সাথে জিব্রিল আঃ এর উল্লেখ পাওয়া যায়। তো মূসা আঃ এর ঘটনায় তিনি মূসা আঃ এর সাথে বহুবার ছিলেন। কিন্তু মূসা আঃ এর ঘটনায় আমরা জিব্রিল আঃ এর উল্লেখের যে সহিহ বর্ণনা পাই, তা আসলে তাঁর শত্রু ফেরাওনের সাথে। তিরমিজি শরীফের একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে- জিবরাইল আঃ নবী করিম সঃ এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে বললেন, ”ফেরাওনের মৃত্যুর দিন যদি আপনি আমাকে দেখতেন! সে যখন সমুদ্রের তলায় ডুবে মারা যাচ্ছিল, আমি গিয়ে তাকে পেলাম এবং তার মুখে কাদা নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে সে হয়তো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ফেলবে আর ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” কারণ আমি ভয় পাচ্ছিলাম সে হয়তো অনুশোচনা করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ফেলবে আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জিব্রিল আ এর চেয়ে বেশি কে চেনে? জিব্রিল আ জানেন, আল্লাহ এতোই দয়ালু যে এমনকি ফেরাওনের মত পাপিষ্ঠরও সুযোগ আছে। আর তিনি আশংখা করছিলেন যে, ফেরাওনের এক মুহূর্তের অনুশোচনা তার হয়তো সারা জিন্দেগীর অপরাধ মুছে দিতে পারে। জিব্রিল আ চিন্তিত ছিলেন যে, ফেরাউনের জন্য হয়তো একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। এখন, জিব্রিল আ কি ফেরাউনের ভাগ্য নষ্ট করে দিলেন? না। এরপর, আল্লাহ জিব্রিল আঃ কে বলেন, হে জিব্রিল! আমার ইজ্জত এবং গৌরবের কসম! যদি সে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চাইতো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিতাম! তার মুখে তোমার কাদা নিক্ষেপ কোন কাজে আসতো না। আমি তবু তাকে ক্ষমা করে দিতাম! এখন দেখুন, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, মুখে কাদা মারার কারণ কি? যখন কোন পাপি ব্যক্তি মারা যায়, ফেরেশতারা তার মুখে আঘাত করতে থাকে। জিব্রিল আঃ কেন ফেরাউন কে এত ঘ্রণা করতেন? তিনি বলেন, আমি সে দিন থেকে তাকে ঘৃণা করতাম যেদিন সে বলেছিল- আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রভু। হাদিসে আমরা জিব্রাইল আঃ এর একটা বিষয় দেখতে পাই, মাঝে মাঝে যখন জিব্রিল আঃ রাসূল সঃ এর কাছে আসতেন তিনি বলতেন না- আল্লাহ এটা বলেছেন। বরং তিনি বলতেন, আল আ’লা (সর্বোত্তম প্রভু)বলেছেন। এতে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি জিব্রিল আ এর অপরিসীম শ্রদ্ধার প্রকাশ পায়।
পরিশেষে, ইমরানের পরিবারের সাথে। কোন কোন সময় জিব্রিল (আঃ) কে নবীর সাথে উল্লেখ না করে নবীর পরিবারের সাথে উল্লেখ করা হয়। তো, আমরা মারিয়াম (আঃ) এর ঘটনা জানি। মারিয়াম (আঃ) মসজিদের বাইরে পূর্বে দিকের কোন এক স্থানে যেতেন ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﺷَﺮْﻗِﻴًّﺎ
। তিনি মাসে একবার মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের কোন এক জায়গায় যেতেন। অনেক আলেমের মতে, সেটা ছিল সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখতেন আর আল্লাহর জিকর করতেন। তিনি সেখানে মাটিতে দুটি লাঠি গেঁড়ে পর্দা টাঙিয়ে দিতেন, যেন এই খোলা জায়গায় মানুষ বুঝতে পারে এটা তাঁর বসার জায়গা। কেউ যেন এটার নিকটে না আসে।
তিনি অল্প বয়স্ক মেয়ে ছিলেন, ১৪- ১৮ বছর বয়সের। মোটকথা তিনি একজন টিনেজার ছিলেন। আর তিনি একা আল্লাহর উপাসনা করছেন, আল্লাহকে একা একা স্মরণ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻓَﺄَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺭُﻭﺣَﻨَﺎ আমরা তাঁর কাছে আমাদের রুহকে (জিবরাইল আঃ ) পাঠালাম। ﻓَﺘَﻤَﺜَّﻞَ ﻟَﻬَﺎ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺳَﻮِﻳًّﺎ জিব্রিল (আঃ) তাঁর নিকট একজন সুন্দর পুরুষের আকৃতিতে আবির্ভূত হলেন। জিব্রিল (আঃ) মুখ খুলে কিছু বলার আগেই মারিয়াম (আঃ) তাকে দেখে বললেন, ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﻣِﻨﻚَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺖَ ﺗَﻘِﻴًّﺎ ”আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর কোন ভয় থেকে থাকে।”
মানে – যদি তোমার নূন্যতম কোন শালীনতা থেকে থাকে ভাগ এখান থেকে। কোন কথা বলতে যেও না। মনে কর যে এটা কখনো ঘটে নি। যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাই প্রিয় বোনেরা, যদি কোন ভাই আপনার নিকট এগিয়ে আসে, তাদের সাথে এভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে দেখুন(আরবিতে এই কথাটা বলেন)। দেখুন, কি ঘটে। যদি তিনি আরবি নাও বুঝেন তিনি ভাববেন, না এই আপুর থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আমরা এই গল্পে যদি আবার ফেরত যাই, তাহলে দেখবো যে মারিয়াম (আঃ) জিবরাইল (আঃ) এর সাথে পরে কথা বলেছিলেন। কিন্তু কেন? কারণ মারিয়াম (আঃ)এর এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলা দেখে জিবরাইল (আঃ) সাথে সাথে মনুষ্য আকৃতি থেকে ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করেন। তিনি তাঁর মনুষ্য আকৃতি ত্যাগ করেন এবং ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করেন। আর সেটা ৬০০ ডানার পূর্ণ আকৃতি ছিল না। ছোট-হালকা কণ্ঠসহ বা অন্য কোন রূপ যেটাই হউক সে আকৃতি ধারণ করে তিনি কথা চালিয়ে যান।
আমি আল্লাহর একজন দূত। আপনার নিকট একজন পবিত্র সন্তানের সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। আল্লাহ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং ﻛَﺬَٰﻟِﻚِ এটা ইতিমধ্যে করা হয়েছে । ﻭَﻟِﻨَﺠْﻌَﻠَﻪُ ﺁﻳَﺔً ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﻣِّﻨَّﺎ ‘’আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই।’’ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣَّﻘْﻀِﻴًّﺎ আর এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে ‘কাদা’ মানে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। আর ‘কানা আমরান মাকদিইয়া’ মানে আপনি ইতিমধ্যে গর্ভবতী হয়ে গেছেন। ﻓَﺤَﻤَﻠَﺘْﻪُ অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন ﻓَﺎﻧﺘَﺒَﺬَﺕْ ﺑِﻪِ ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﻗَﺼِﻴًّﺎ ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন। গর্ভকালীন পুরো সময়টা তিনি লুকিয়ে থাকলেন। আর যখন সন্তান জন্ম দানের সময় আসলো… মনে রাখবেন, তিনি ছিলেন একজন অনভিজ্ঞ তরুণী। তাঁর পাশে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। তিনি পূর্বে কখনো সন্তান জন্ম দেন নি। প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!
অতঃপর দ্বিতীয় পরীক্ষা আসলো, যখন তোমার সম্প্রদায় তোমার সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে তখন তুমি নিজের সমর্থনে কোন কথা বলতে পারবে না। ইতিমধ্যে, মারিয়াম (আঃ) এর পূর্ণ বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেল যে আল্লাহর সাহায্য তাঁর সাথে রয়েছে। তাই মারিয়াম (আঃ) যখন তাঁর সম্প্রদায়ের সম্মুখীন হলেন – তিনি জানতেন না যে আল্লাহ কিভাবে তাঁকে রক্ষা করবেন, তিনি জানতেন না আল্লাহ কি করতে যাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁকে সঠিক উপায়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, আল্লাহর উপর তাঁর নির্ভরতা চূড়ান্ত রূপে আবির্ভূত হলো। তিনি ভাবলেন, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
আর ঠিকই আল্লাহ সুবহা হানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে পুরস্কৃত করলেন। তাঁর সমর্থনে তাঁর নতুন জন্ম গ্রহণ করা সন্তান ঈসা (আঃ) কথা বললেন। এখানে জিবরাইল (আঃ) ঈসা (আঃ) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালা বলেন, আমরা তাঁকে পবিত্র আত্মার (জিব্রিল আঃ) মাধ্যমে সাহায্য করেছি। এমনকি আল্লাহ এটাকে ঈসা আঃ এর প্রতি একটি অনুগ্রহ হিসেবেও উল্লেখ করেন। ”আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য করেছি।” ঈসা আঃ কে জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তাঁর সারা জীবন জুড়ে সাহায্য করা হয়। আর শুধু এটা নয়, বরং আলেমদের মতে, একমাত্র ফেরেশতা যিনি কোন নবীকে আকাশে নিয়ে যেতে পারেন তিনি হলেন জিব্রিল (আঃ) ।
তো, যখন ঈসা (আঃ) কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়, তখন তাঁকে জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়ার জন্য একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। আর ঈসা আ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আকাশে অপবস্থান করবেন। কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহর হকুমে তাঁকে আবার পৃথিবীতে পাঠানো হবে। আর সে ফেরেশতা ছিলেন জিব্রিল (আঃ)। আমি এর তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে, কেন আল্লাহ এই কথাটি কেন সূরা মারিয়ামে বলেছেন, ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻚَ ”(জিব্রাইল বললঃ) আমি আপনার পালনকর্তার আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না।” এই আয়াতটি আসলে কি সম্পর্কে? বেশ কিছু দিনের জন্য জিব্রিল আঃ দেখা না দিলে রাসূল (সঃ) মনে মনে দুঃখ পেতেন।
আর তাই জিব্রিল আ রাসূল (সঃ) কে বললেন, দেখুন, আল্লাহর নির্দেশ পেলেই কেবল আমরা আপনার কাছে আসি। আমরা নিজেদের ইচ্ছামত আসতে পারি না, আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর এই কথাটি খুবই ব্যক্তিগত শোনায় যে, জিব্রিল (আঃ) বলছেন- ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻚَ
কেন সূরা মারিয়মে? ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, এই সূরায় বর্ণিত প্রত্যেক নবীর ঘটনায় জিব্রিল আ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চিন্তা করে দেখুন, জাকারিয়া, মারিয়াম থেকে ঈসা, ইব্রাহীম, মূসা, ইদ্রিস, ইসমাইল (আঃ) – ওনাদের সবার জীবনে জিবরাইল (আঃ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এই সূরাতেই রাসূল সঃ কে বলা হয়েছে, দেখুন, আমরা শুধু আল্লাহর হুকুমেই অবতরণ করি, জ্ঞান নিয়ে। আর তখন জিব্রিল (আঃ) এর আগমনে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথী ফেরেশতাদের মাঝে যিনি রাসূল (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন, যিনি রাসূল (সঃ) কে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ছিলেন জিব্রিল আঃ। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সঃ) আরও বলেছেন, …… প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা দুনিয়া থেকে দুইজন এবং আকাশ থেকে দুইজন মন্ত্রী দান করেছেন। আমাকে দেয়া আকাশের দুইজন মন্ত্রী হলেন – জিব্রিল এবং মিকাল।
আর দুনিয়া থেকে প্রদত্ত দুইজন হলেন- আবু বকর এবং ওমর (রা)। জিব্রিল আ এবং রাসূল সঃ এর প্রথম সাক্ষাৎকারটি কেমন ছিল? আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) এর ছেলেবেলায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন, দৌড়াদৌড়ি করছিলেন – ঠিক সকল বাচ্চার মত। হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। তিনি রাসূল (সঃ) কে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার কাছে দৌড়ে চলে গেল আর বলতে লাগলো – মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। অন্য বাচ্চারা যখন দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল (সঃ) দেখছিলেন যে এই লোকটি তাঁকে কি করতে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, তিনি আমার বুক কেটে ফেললেন, তিনি আমার বুক খুলে ফেললেন।
তিনি রাসূল (সঃ) এর হার্ট ধরলেন এবং তা থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন আর বললেন- এটা হলো তোমার অন্তরের শয়তানের অংশ। তারপর তিনি এটাকে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সোনালি বর্ণের একটি পাত্রে রাখা জমজমের পানিতে আমার হার্ট ধুয়ে ফেললেন। আর এই বাচ্চাবস্থায় রাসূল (সঃ) সবকিছু অবলোকন করছেন। এরপর রাসূল (সঃ) এর হার্টকে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। অন্য বাচ্চারা ফিরে এসে দেখল যে রাসূল (সঃ) এর বুক সেলাই করে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করলো। রাসূল (সঃ) এর হার্ট বের করে পবিত্র করা হলো। সে সময় তিনি এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন না। তিনি এই ঘটনায় চরম কষ্ট পেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না যে এটা কি হল!!
ঠিক ৩৪ বছর পর, তিনি যখন ৪০ বছর বয়সে পদার্পণ করেন- আয়েশা রা বলেন, তিনি (সঃ) সত্য ভাল স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। এটা তিনি একাধারে ৬ মাস যাবত দেখতে লাগলেন। তিনি রাতে যা স্বপ্নে দেখতেন তাই দিনের বেলায় সত্যে পরিণত হতো। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এ থেকে আমরা কিছুটা বুঝতে পারি যে, কেন হঠাৎ করে রাসূল (সঃ) গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি এবং খাদিজা (রা) বুঝতে পারলেন যে, অতি প্রাকৃতিক কিছু ঘটছে। ঐশ্বরিক কেউ একজন তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। কোন এক ধরণের বিশেষ সৃষ্টি তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। এ অবস্থা ৬ মাস যাবত চলল।
আয়েশা (রা) বলেন, তারপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নির্জনতাকে রাসূল (সঃ) এর নিকট প্রিয় করে দিলেন। হঠাৎ করেই তিনি একা থাকতে পছন্দ করা শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেরা গুহায় আরোহণ করতেন। হেরা গুহায় আরোহণ করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আপনারা যদি কখনো হেরা গুহায় উঠেন তাহলে সম্পূর্ণ মক্কাকে দৃষ্টি সীমায় দেখতে পাবেন। সুবহান আল্লাহ! আপনি সবকিছু দেখতে পাবেন।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) দিনের পর দিন, কখনো পুরো সপ্তাহ জুড়ে, অবশেষে পুরো রমজান মাস সেখানে অবস্থান করেন। তিনি সেখানে দ্বীনে হানিফ তথা ইব্রাহীম আঃ এর শেখানো পন্থায় এক আল্লাহর ইবাদাত করতেন। অর্থাৎ তিনি সেখানে গিয়ে যেভাবে পারতেন আল্লাহর ইবাদাত করতেন, সুশৃঙ্খল কোন নামাজের নিয়ম তখন জানা ছিল না। তিনি ইব্রাহীম আঃ এর রেখে যাওয়া নিয়মে আল্লাহকে ডাকতেন, ঠিক এটাই বর্ণিত আছে। তো, হঠাৎ করে একদিন তিনি জিব্রিল আঃ কে দেখতে পান। আপনাদের কি মনে হয়, তখন জিব্রিল আঃ কি ফেরেশতার আকৃতিতে দেখা দেন, না মানুষের আকৃতিতে? মানুষের আকৃতিতে।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, রাসূল (সঃ) তাহলে ভয় পেলেন কেন? চিন্তা করে দেখুন, আপনি হয়তো দুই ঘণ্টা ধরে সেখানে অবস্থান করছেন, আশে পাশে কেউ নেই। তারপর আচমকা গুহার মুখে এক অপরিচিত লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন, আর সে লোকটি আপনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো, কোন কথা বলছে না। আপনি যদি রাসূল (সঃ) এর জায়গায় থাকতেন, আপনি কি ভাবতেন? তাছাড়া পরবর্তী কালের বর্ণনা থেকে আমরা ধারণা পাই তখন কি ঘটেছিল রাসূল (সঃ) এর প্রতি? রাসূল (সঃ) যখন খাদিজা (রা) এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, তিনি বলেন- ”যাকে আমি স্বপ্নে দেখি সে আমার নিকট এসেছিল।”
সুতরাং আমরা আরও বুঝলাম যে, রাসূল (সঃ) ইতিমধ্যে জিব্রিল (আঃ) কে স্বপ্নে দেখেছিলেন। তো, তিনি চিন্তা করছিলেন – আজব তো, আমি তো এখন ঘুমাচ্ছি না। আমি তো স্বপ্নে নই, বাস্তবে!! এর থেকে জিবরাইল (আঃ) কেন রাসূল (সঃ) কে জড়িয়ে ধরেছিলেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ‘ইকরা’ পড়ুন। পড়ুন, আপনি কল্পিত কিছু দেখছেন না। এটা কল্পিত কোন ছায়ামূর্তি নয়। আমি বাস্তবেই আপনার সামনে। আমি আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছি শুধু আমার বাস্তবতা বুঝাতে নয়, ﺇِﻧَّﺎ ﺳَﻨُﻠْﻘِﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﺛَﻘِﻴﻠًﺎ যে ওহী আপনার উপর নাযিল হতে যাচ্ছে তা হবে অত্যন্ত ভারী।
এ বাণী ধারণ করার জন্য আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে। অতঃপর তিনি তাঁকে আদেশ করলেন, পড়ুন। তারপর রাসূল সঃ কে ছেড়ে দিলেন।
রাসূল (সঃ) বললেন – আমি পড়তে জানি না। জিব্রিল (আঃ) তাঁকে আবার আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন- পড়ুন। রাসূল (সঃ) বললেন – আমি পড়তে জানি না। জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) কে তৃতীয়বারের মত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। (পরবর্তী কালে রাসূল সঃ বর্ণনা করেন) জিব্রিল (আ) আমাকে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন যে আমি মনে করছিলাম আমি মারা যাবো। তিনি বললেন- পড়ুন। রাসূল (সঃ) বললেন- কি পড়বো? ঠিক তখন জিব্রিল (আঃ) বললেন- ﺍﻗْﺮَﺃْ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﻋَﻠَﻖٍ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘আলাকা’ থেকে। ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺭَﺑُّﻚَ ﺍﻟْﺄَﻛْﺮَﻡُ পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। রাসূল (সঃ) যখন ওহী গ্রহন করছিলেন- জিব্রিল (আঃ) তাঁকে আর জড়িয়ে ধরলেন না। আবার চলেও গেলেন না। রাসূল (সঃ) গুহা ত্যাগ করে তাড়াতাড়ি নেমে গেলেন।
খাদিজা (রা) বলেন- কি হয়েছে? এখন দেখুন, রাসূল (সঃ) যখন তাঁকে বললেন কি ঘটেছে খাদিজা (রা) সহজেই তাঁকে বলতে পারতেন- আপনি ঐ গুহায় যাওয়া বন্ধ করুন। আপনার মনে হয় বাসায় থাকা উচিত। ভুলে যান সবকিছু। আপনি ঘরের ঐ কোণায় ধ্যান করতে পারেন। কেউ আপনাকে ডিস্টার্ব করবে না। ইনশাআল্লাহ, এ রকম কিছু আর ঘটবে না। কিন্তু তিনি এসবের কিছুই বললেন না। দেখুন, কেমন চমৎকার ছিলেন তিনি। সুব হানাল্লাহ! রাসূল সঃ নিজে নিজের উপর বিশ্বাস করার আগে খাদিজা তাঁর উপর বিশ্বাস করেন। সত্যিই। তিনিই রাসূল সঃ কে বলেন …… আল্লাহ কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না।
তিনি আমাদের রাসূল সঃ এর গত ১৫ বছরের জীবনী বর্ণনা করতে লাগলেন। আপনি এমন মানুষ যিনি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন। আপনি এতিমদের, গরীবদের যত্ন নেন। আপনি আপনার প্রতিবেশী এবং মেহমানদের প্রতি উদার। কেউ কোন সমস্যায় পড়লে আপনি তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। আল্লাহ কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না।
খাদিজা (রা) বললেন – চলুন, ওয়ারাকার কাছে যাই। তো, তাঁরা তার নিকট গেলেন। রাসূল (সঃ) যা দেখলেন তা ওয়ারাকার নিকট বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা সাথে সাথে বলে উঠলেন – ”ইনি নামুস! (আপনিই সেই রাসূল যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।) এই ফেরেশতাই (নামুস বা জিব্রিল) মূসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। ইস! আমি যদি যুবক হতাম! তাহলে আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনার বিরোধিতা করবে।”
এরপর কি ঘটেছিল? আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন – এরপর বহুদিন যাবত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। রাসূল (সঃ) অপেক্ষা করতে লাগলেন যেন সেই ফেরেশতা আবার দেখা দেন। রাসূল (সঃ) আবার ওইসব পাহাড়ে ঘুরতে লাগলেন। রাসূল (সঃ) নিজের ভাষায় তা এভাবে বর্ণনা করেন যে, ”(তাঁর মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে) তিনি যেন চাইতেন নিজেকে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে!” তিনি স্পষ্টরূপে জানতে চান কি ঘটছে! প্রতিবার রাসূল (সঃ) পাহাড়ে গেলে জিব্রিল (আঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেতেন। ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এতে রাসূল (সঃ) কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন।
এরপর পরবর্তীতে তিনি শুধু যে ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এ কথা বলতেন তা নয়, তিনি আরও বলতেন – ”আর আমি জিব্রিল”। তো, তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকট বিষয়টা পরিষ্কার করলেন যে তিনি জিব্রিল (আঃ)। কিন্তু তবু কোন কুরআন বা ওহী অবতীর্ণ হয়নি। অবশেষে, অন্য একদিন রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন – আর এবার ‘ইয়া মুহাম্মাদ ইন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কা’- ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল” এ বাক্য নয়। বুখারি শরীফে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন তারপর হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন – জিব্রিল আলাইহিস সালাম তাঁর পরিপূর্ণ ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে আছেন, সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে আছেন।
আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন – ﺫُﻭ ﻣِﺮَّﺓٍ ﻓَﺎﺳْﺘَﻮَﻯٰ প্রজ্ঞার অধিকারী, সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল। জিব্রিল (আঃ) পুরো আকাশ জুড়ে আবির্ভূত হলেন। রাসূল (সঃ) জিব্রিল (আঃ) কে তাঁর সকল ডানা সমেত, পরিপূর্ণ আকৃতিতে দেখতে পেলেন। ﺛُﻢَّ ﺩَﻧَﺎ ﻓَﺘَﺪَﻟَّﻰٰ তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকটবর্তী হতে লাগলেন। তিনি রাসূল (সঃ) থেকে মাত্র দুই ধনুকের দূরত্বে ছিলেন। তিনি রাসূল (সঃ) এর কাছাকাছি আসলেন। রাসূল (সঃ) জমিনে পড়ে গেলেন। তিনি নিজেই বলেছেন যে – ”তিনি আমার অতি নিকটবর্তী হওয়াতে আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।”
রাসূল (সঃ) দ্রুত বাড়িতে ফিরে গেলেন আর খাদিজা (রা) কে বলতে লাগলেন – আমাকে ঢেকে দাও, আমাকে ঢেকে দাও। আর ঠিক তখন পরবর্তী ওহী অবতীর্ণ হয় – ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺪَّﺛِّﺮُ – ﻗُﻢْ ﻓَﺄَﻧﺬِﺭْ – ﻭَﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﻜَﺒِّﺮْ – ﻭَﺛِﻴَﺎﺑَﻚَ ﻓَﻄَﻬِّﺮْ
হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন। সুবহানাল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন, প্রথম ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন আর দ্বিতীয়বার তিনি যখন খাদিজা (রা) কাছে ছিলেন তখন ওহী অবতীর্ণ হয়। ”হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন।” মূর্তি পরিত্যাগ করুন। এই হলো প্রথমদিকের ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা। আয়েশা (রা) বলেন- এর পর থেকে একটির পর একটি ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। অর্থাৎ দীর্ঘ বিরতির পর আসে সূরা মুদ্দাসসির, সূরা মুজ্জাম্মিল, সূরা দোহা এবং আরও অনেক সূরা ক্রমাগত রাসূল (সঃ) এর নিকট অবতীর্ণ হতে থাকে। এভাবেই শুরু।
রাসূল (সঃ) এখন বুঝতে পারলেন কি ঘটছে, তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সঃ) এখন আর জিব্রিল (আ) এর উপস্থিতিকে ভয় পান না। বিষয়টা তাঁর (সঃ) কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।
জিব্রীল (আ) এবং রাসূল (সঃ) এর মাঝে ব্যক্তিগত কথোপকথন। জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) এর ঘরে বহুবার এসেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলতেন। বিভিন্ন সময় কোন কোন সাহাবী তাঁকে দেখতে পেতেন আবার কেউ কেউ দেখতে পেতেন না। একদিন আব্বাস (রা) তার সন্তান আব্দুল্লাহ (রা) কে নিয়ে রাসূল (সঃ) এর সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। আব্বাস (রা) রাসূল (সঃ) কে সম্বোধন করে কথা বলছিলেন, কিন্তু তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন না। রাসূল (সঃ) কোন কথা না বলাতে আব্বাস (রা) চলে যান। চলার পথে আব্বাস (রা) আব্দুল্লাহ (রা) কে বললেন, তোমার চাচাতো ভাই কেন আমার সাথে কথা বলল না। তিনি মনে হয়ে যেন আমাকে দূরে ঠেলে দিলেন! আব্দুল্লাহ (রা) বললেন – আপনি কি দেখেন নি যে রাসূল (সঃ) তাঁর সামনে বসা এক লোকের সাথে কথা বলছিলেন।
আব্বাস (রা) বললেন- কোন মানুষ? আমি তো কাউকে দেখলাম না। তো, আব্বাস (রা) আবার রাসূল (সঃ) এর কাছে ফিরে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- তখন কেউ কি আপনার সাথে কথা বলছিল? রাসূল (সঃ) বললেন- আপনি কেন এটা জিজ্ঞেস করছেন? আব্বাস (রা) বললেন- কারণ আব্দুল্লাহ তাঁকে দেখতে পেয়েছিল। রাসূল (সঃ) বললেন- ‘রাআ’- সে দেখেছে? আব্বাস (রা) বললেন- জী, দেখেছি। তারপর রাসূল (সঃ) আব্দুল্লাহ (রা) এর জন্য দোয়া করেন যেন আল্লাহ তাঁর জ্ঞান বাড়িয়ে দেন।
তো, রাসূল (সঃ) এর সাথে জিব্রিলের ব্যক্তিগত কথোপকথন টা কেমন ছিল? রাসূল (সঃ) জিব্রিল (আ) কে বললেন – আল্লাহ বলেছেন যে – আমি আপনাকে (রাসূল সঃ কে) সকল জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- আমার রহমতের কোন অংশ কি আপনার পর্যন্ত পৌঁছেছে? মানে, আপনিও তো জগতের অংশ, আপনি ফেরেশতাদের জগত থেকে, কোন রহমা কি আপনার পর্যন্ত পৌঁছেছে? জবাবে জিব্রিল (আ) বললেন- ”আল্লাহর শপথ! ও মুহাম্মাদ! আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় নবী।” মানে, আমাকে আজ পর্যন্ত এমন কারো কাছে পাঠানো হয়নি, যাকে আমি আপনার থেকে বেশি ভালবাসি। তিনি আরও বললেন- ”আপনার মাধ্যমেই আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি।” এটা দ্বারা তিনি আসলে কি বুঝালেন? তিনি বললেন- আমি আমার ভাগ্য নিয়ে চিন্তায় থাকতাম, যতক্ষণ না আপনার নিকট এই আয়াত অবতীর্ণ হলো – ﺫِﻱ ﻗُﻮَّﺓٍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﻣَﻜِﻴﻦٍ – যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, প্রতিষ্ঠিত।
জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) কে ক্রমাগত আশ্বস্ত করতে লাগলেন। মাদানী জীবনের অনেক ব্যক্তিগত আলোচনায় জিব্রিল (আঃ) বারবার রাসূল (সঃ) কে আশ্বস্ত করার ব্যাপারটা দেখা যায়। কেন? কারণ, দেখুন, রাসূল (সঃ) জানলেন যে, তিনি এবং বিশ্বাসীরা নিরাপদ। কিন্তু রাসূল (সঃ) এখন কাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন? আমাদের নিয়ে – যারা পরবর্তীতে আসবে। তাই তিনি উম্মাতি, উম্মাতি বলে কাঁদতেন। তাই, আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) কে পাঠালেন। জিব্রিল (আঃ) বললেন- ইয়া, মুহাম্মাদ! আমরা আপনার উম্মাতের বিষয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দিব, আমরা আপনাকে হতাশ করবো না। আপনার উম্মত ঠিক থাকবে।
তিনি মদিনায় রাসূল (সঃ) কে বার বার নিশ্চয়তা দিতেন। কারণ রাসূল (সঃ) পরবর্তীতে আসা উম্মাত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। সাহাবীরা নিরাপদ। কিন্তু যারা পরবর্তীতে আসবে তাদের কি হবে? আরেকবার, ওমার (রা) বলেন, আর এটা বুখারিতে বর্ণিত আছে- আমি একবার মদিনাতে রাসূল (সঃ) এর সাথে হাঁটছিলাম, হাঁটতে হাঁটতে আমরা মদিনার ‘হাররা’ নামক এক জায়গায় উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এখানে বসতে বললেন। হঠাৎ তিনি হাঁটতে লাগলেন, আর তখন স্পষ্টত তিনি জিব্রিল (আ) এর সাথে কথা বলছিলেন। আমি আপনাদের বলতে পারি তিনি জিব্রিল (আঃ) এর সাথে কথা বলছিলেন। তারা কিছুক্ষণের জন্য হাঁটলেন আর আমি বসে থাকলাম। আর এই হাটাবস্থায় রাসূল (সঃ) বলছেন- ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? আর ওমর (রা) উত্তর শুনতে পাচ্ছিলেন না। তো, ওমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঐটা কি ছিল? রাসূল (সঃ) বললেন, তিনি ছিলেন জিব্রিল (আঃ)। তিনি এসেছিলেন আমাকে সুসংবাদ দিতে যে, এই উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই রাসূল (সঃ) বললেন, এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? – হ্যাঁ, এমনকি যদি জিনা বা চুরি করে। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তো, তিনি রাসূল (সঃ) কে এভাবে সান্ত্বনা দিলেন।
রাসূল ﷺ যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন জিব্রিল কিভাবে সান্ত্বনা দিতেন? রাসূল ﷺ যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিনি বলেন, জিব্রিল আমার কাছে আসলেন এবং বললেন- ও মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? আমি বললাম – হ্যাঁ। তখন জিব্রিল তাঁর হাত দিয়ে আমার মুখমণ্ডল এবং বক্ষ মুছে দিলেন এবং বললেন- ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা’। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি সবকিছু থেকে যা আপনার ক্ষতি করছে – ”মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন, আও হা-সিদ।” সকল খারাপ জিনিস থেকে অথবা বদ নজর থেকে বা হিংসা থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি।
সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ, ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে।
- ১। আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে রাখবেন যে আপনি একদিন মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। একদিন আপনি মরবেনই।
- ২। তিনি আরো বলেন, আপনি যাকে খুশি ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন যে একদিন আপনি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
- ৩। আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। কিন্তু একথা স্মরণে রাখবেন যে, আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনাকে প্রতিফল দেয়া হবে। প্রতিদান আখিরাতেই পাবেন। এর মানে কি? মানে হলো, প্রত্যেকটি বিষয় আখিরাতে আসবে, প্রত্যেকটি পুরষ্কারই আখিরাতে দেওয়া হবে। আপনি যা করেন তা করতে থাকুন আর মনে রাখবেন যে এর বদলা আখিরাতে পাবেন।
- ৪। জেনে রাখুন, একজন বিশ্বাসীর জন্য সত্যিকারের আভিজাত্য রাত্রি বেলা নামাজে দাঁড়ানোর মাঝে।
- ৫। আর তার প্রকৃত মর্যাদা আত্মনির্ভরশীলতার মাঝে।
আর্থিকভাবে, আবেগের দিক থেকে, মানসিকভাবে বা শারীরিকভাবেই হোক, একজন মানুষ হিসেবে আপনার সম্মান ও মর্যাদা অন্য মানুষের উপর নির্ভর না হওয়ার প্রচেষ্টার মাঝে। যে কোন ব্যাপারেই হোক না কেন নিজেকে মানুষের প্রয়োজন থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
এরপর রাসূল ﷺ জীবনের অন্তিম সময় অনুভব করতে থাকেন। আর যখন অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে… আবু সাইদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করে বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের মাঝে অবস্থান করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব সাধারণভাবে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর এক বান্দাকে এ এখতিয়ার দিয়েছেন যে বান্দাহ হয় দুনিয়ার শান শওকত থেকে পছন্দ করবে অথবা যা কিছু আল্লাহর কাছে রয়েছে তা থেকে পছন্দ করতে পারবে। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়িতে সবাই কাঁদছিল, কারণ সবাই জানতো যে রাসূল ﷺ এর অন্তিম সময় চলে এসেছে, তিনি শেষ সময়ের নিটকবর্তী হয়েছেন। বিশেষ করে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ভীষণভাবে বিধ্বস্ত হলেন।
তাঁর কন্যা, উম্মু আবিহা, তাঁর পিতার মা, (বাবারা নিজ কন্যাদের আদর করে মা বলে ডাকেন) সর্বদা তাঁর ﷺ সাথে ছিলেন ঐ সময়ে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি ভালবাসা দেখালেন, মমতা দেখালেন। এমনকি যখন তিনি কোনোরকমভাবে কথাও বলতে পারছিলেন না, তখনও তিনি হাতের ইশারায় ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে ডাকলেন। ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কাছে আসলেন, রাসূল ﷺ তাকে আরো নিকটে আসতে বললেন এবং চুপিসারে তার কানে কিছু বললেন। ফলে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) আরো বেশি কাঁদতে লাগলেন। রাসূল ﷺ তাকে পুনরায় কাছে আসতে বললেন এবং চুপিসারে আরো কিছু কথা বললেন। এবার একথা শুনে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হাসিতে ফেটে পড়লেন! আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এগুলো দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন যে একবার ফাতিমা কাঁদলো আবার হঠাৎ করেই হাসিতে ফেটে পড়লো! সুতরাং তিনি ফাতিমা কে চাপাচাপি করছিলেন যে- বলো না কি বলেছেন তিনি? বলছো না কেন?! কি বলেছেন তিনি? শেষে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)জোরারোপের কারণে বলতে বাধ্য হলেন যে, তিনি বলেছেন, জিব্রীল সাধারণত প্রতি রামাদানে আমাকে নিয়ে পুরো কুরআন একবার ঝালিয়ে নেন। আর এই বছর রামাদানে তিনি দুইবার পুন:পাঠ করেছেন। তাঁর মানে হলো, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) ওহীকে শক্তিশালী করে দিলেন। আর আমার মনে হয় না আমি আর রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারবো।
আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল ﷺ – কে যেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দৃঢ় হতে সাহায্য করেন আর এমতাবস্থায় রাসূল ﷺ তার শরীরে হেলান দিয়ে আছেন। তাঁর দৃষ্টি পড়লো আব্দুর রাহমান ইবনে আবু বাকার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর ওপর, যিনি আয়েশার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর ভাই। তিনি দেখলেন তার পকেটে একটি মিসওয়াক রয়েছে এবং আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন যে আমি বুঝতে পারছিলাম যে রাসূল ﷺ এটি পেতে চাচ্ছেন। আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল ﷺ কে বললেন, আপনি মিসওয়াক চান? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা নাড়িয়ে স্বীকৃতি জানালেন। আব্দুর রাহমান তাঁর অব্যবহৃত মিসওয়াকটি আয়েশা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কে দিলেন। তিনি এটাকে চিবিয়ে নরম করলেন এবং রাসূল ﷺ এর মুখে পুরে দিলেন। এর সাংকেতিক অর্থ হলো, রাসূল ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে মিসওয়াক করতেন। কারণ তিনি চাইতেন যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকালে যেন তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস বিশুদ্ধ থাকে, প্রতিদিনই ৫ বার। তিনি বললেন, তিনি এটিকে ফরজ করতে পারতেন, যদি উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হতো। তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে প্রত্যেকবারই মিসওয়াক করতেন।
আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন তিনি মিসওয়াক করা সমাপ্ত করলেন, তখনই জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আমাদের মাঝে প্রবেশ করলেন। তিনি (আয়েশা) রাসূল এর দিকে তাকালেন আর দেখতে পেলেন তাঁর চেহারা আলোয় উদ্ভাসিত হলো। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম); যিনি নবীকে ওপরের উপদেশগুলো দিয়েছিলেন, তিনি নবী ﷺ কে বললেন, শুনুন, আমি আপনাকে একটি বিষয়ে পছন্দ করতে বলবো। হয়তো আপনি আপনার সাহাবীদের সাথে থাকবেন এবং সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করবেন অথবা আপনি “সর্বোচ্চ” (আল-আ’লা); আল্লাহ এর সাহচর্যে থাকবেন। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) যখন এই কথাটি বললেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তরে বললেন, ‘বালা, রাফিকিল আ’লা’, ‘আল্লাহুম্মা রাফিকিল আ’লা’- ওহ আল্লাহ, আমি সর্বোচ্চ (আল্লাহ) এর সাহচর্য কামনা করি। আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন তিনি ‘আর রাফিকিল আ’লা’ বলছেন, তিনি যেন তাঁর সমস্ত শরীরকেই ছেড়ে দিচ্ছেন! ”ওহ আল্লাহ, আল্লাহর সাহচর্য!” বলতে বলতে তাঁর হাত পড়ে গেলো এবং নবী ﷺ মৃত্যুবরণ করলেন।
যখন এই ঘটনা হলো, আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) চিৎকার করে উঠলেন। ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) যখন আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর চিৎকার শুনতে পেলেন, তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইয়া আবাতা, মান রাব্বিহি মা আদনা’ – হে আমার পিতা, আপনি আপনার রবের কতটা সন্নিকটে আছেন এখন! হে আমার পিতা, আমরা জিব্রীলের (আলাইহিস সালাম) এর নিকট আপনার মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা দিচ্ছি। ‘ইয়া আবাতা, জান্নাতুল ফিরদাউসি মা’ওয়া’ – হে আমার পিতা, জান্নাতই আপনার বর্তমান ঠিকানা! এবং একথাটিই তিনি বারবার বলতে থাকলেন, বলতেই থাকলেন, বলতেই থাকলেন। ”আপনি আপনার রবের কতটা নৈকট্যে আছেন, জিব্রীলের নিকট আপনার প্রস্থানের ঘোষণা দিচ্ছি এবং জান্নাতুল ফিরদাউস-ই আপনার আবাসস্থল।”
জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মৃত্যু।
সুবহানাল্লাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমনকি জিব্রীল-ও মৃত্যুবরণ করবে। চিন্তা করতে পারেন, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)- ও মারা যাবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর আল্লাহ যাদের চান তারা ছাড়া আর কেউ স্থির থাকতে পারবে না (অন্য সবাই মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবেন, তারা হলেনঃ জিব্রীল, ইস্রাফিল, মিকাল ও মৃত্যুর ফেরেশতা … যারা আল্লাহর আদেশ সমূহের বাস্তবায়ন করে থাকেন। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর কারা কারা বাকী আছে? মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনার সম্মানিত পবিত্র চেহারা (পূর্ণ সত্ত্বা), আপনার বান্দা আমি, আপনার বান্দা জিব্রীল, আপনার বান্দা মিকাল, আপনার বান্দা ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, মিকালের আত্মা নিয়ে নাও। তখন মিকালের আত্মা নিয়ে নেওয়া হবে। তখন আল্লাহ পূনরায় বলবেন, আর কে কে বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনি, আমি, জিব্রীল এবং ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, ইস্রাফিলের আত্মা নিয়ে নাও। ইস্রাফিলের আত্মা তাঁর থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ আবারও বলবেন, আর কারা বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওয়াজহুকাল বাকিল কারিম – ওহ আল্লাহ, আপনার পবিত্র চেহারা, আপনার এই বান্দা এবং আপনার বান্দা জিব্রীল। আমরা দুই বান্দা সবশেষে বাকী রয়েছি। আল্লাহ বলবেন, জিব্রীলের আত্মা নিয়ে নাও।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিব্রীল তাঁর চেহারা নিয়ে পতিত হবেন এমন অবস্থায় যে তাঁর ডানাগুলো বিস্তৃত অবস্থায় থাকবে আর সেগুলো আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। তিনি তাসবিহ (আল্লাহর প্রশংসা)-রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁর চেহারা নিম্নে পতিত হবে এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসারত থাকবেন। এরপর আল্লাহ বলবেন, আর কে বাকী আছে? তখন মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ইয়া আল্লাহ, কেবল আপনি আর আমিই বাকী আছি। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে আদেশ করবেন মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর মৃত্যুর ফেরেশতা মারা যাবেন। আর আল্লাহ বলবেন, “কুল্লু মান আলাইহা ফান, প্রত্যেক ব্যক্তিই ধবংসপ্রাপ্ত হবেন, ওয়া ইয়াবকা ওয়াজহু রাব্বিকা জুলজালালি ওয়াল ইকরাম”- আর কেবল আপনার মহাসম্মানিত রবের চেহারাই (পূর্ণ সত্ত্বা) বাকী থাকবে” (সূরা আর-রাহমান)। আল্লাহ নিজেকেই তখন জিজ্ঞেস করবেন, ‘লিমানিল মুলকিল ইয়াউম’ – আজকের রাজত্ব কার? আল্লাহ নিজেকেই প্রতিউত্তরে বলবেন, ‘লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার’- “কেবলই অদ্বিতীয় নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর”।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন আখিরাতে আমরা সবাই হাজির হবো, তখন সমস্ত জমিন আল্লাহর আনুগতের প্রশংসায় একদম সমতল হবে। তিনি বলেন, হাশরের ময়দানে প্রত্যেকেই যে জায়গায় রয়েছে সে জায়গা থেকে একটুও নড়তে পারবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর নিকট আমাকেই প্রথম আহবান করা হবে। অতএব তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এর নিকটে প্রবেশ করবেন। ”আমি সিজদায় পড়ে যাবো।” তিনি বলেন, অতঃপর আমি আমার মস্তক উত্তোলন করবো এবং আকস্মিকভাবে আমি সর্বোচ্চ দয়াময় (আল্লাহ) এর ডান পাশে জিব্রীলকে দেখতে পাবো! নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে বলেন, আল্লাহর কসম, ইতোপূর্বে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা-কে কোনো দিনই দেখেনি! জিব্রীল আল্লাহকে আগে কখনই দেখেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিব্রীলের দিকে ইশারা করে বলবেন, হে আমার রব, এই ব্যক্তি আমাকে বলেছিলো যে আপনিই তাকে আমার নিকটে পাঠিয়েছিলেন। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি সত্য বলেছো।
.একইভাবে জিব্রীল-ও নবীকে বলবেন, আপনি সত্য বলেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেন প্রতিদান দিবসে এই বিষয়টি করতে পছন্দ করলেন? তিনি কেন এটি ইচ্ছা পোষণ করলেন? কারণ হলো, প্রতিদান দিবসের দিন প্রত্যেক নবী-রাসূলকেই জিজ্ঞেস করা হবে যে সে (জিব্রীল) কি নবুওয়াতের বার্তাকে ঠিক মতো পৌছে দিয়েছে কিনা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিব্রিলের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই তিনি নিজেই বললেন যে, উনি বলেছেন যে তাঁকে আপনি আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন? তিনি তাঁর কাজ ঠিকমত করেছিলেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি সত্য বলেছো।
কুর’আনের অর্থ না বুঝার কারণে আপনি প্রতিদিন যে ১০টি জিনিস হারাচ্ছেন
আপনি যদি কুর’আনের অর্থ না বুঝেই কেবল উচ্চারণ করে পড়তে থাকেন, তাহলে কুর’আন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
“এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে”। সূরা সা’দ ২৯
কিভাবে এই উদ্দেশ্য আমাদের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে যদি আমরা কুর’আন কি বলছে তা বুঝতে না পারি!
কোন ব্যক্তির পক্ষে কি সর্বদা অনুবাদ বহন করা সম্ভব, কিংবা সালাতে যখন কুর’আন তিলাওয়াত করা হয় তখন কি আমাদের পক্ষে কুর’আনের অনুবাদ বহন করা সম্ভব?.
আমাদের মন যেন একটি সজ্জিত উদ্যান। আর সেই উদ্যানে যদি আমরা কোন গাছ না লাগাই, তাহলে সেখানে জন্মাবে আগাছা। এমনকি যদি আমরা ফুলের গাছ লাগাই, কিন্তু পরিচর্যা না করি তাহলেও সেখানে আগাছা জন্মাতে থাকবে। আমাদেরকে সর্বদাই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, কেবল তখনই আমরা আমাদের উদ্যানের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারব।
মনের ফুল হচ্ছে হেদায়াত,আল্লাহর বাণী,আল্লাহর দেখানো পথ, আর আগাছা হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা, কুচিন্তাসমূহ। প্রতিবার যখন আমরা কুর’আন তিলাওয়াত শুনি সালাতে কিংবা অন্যত্র তখন আমাদের মনে একটি ভালো অনুভূতি জন্ম নেয়, আমরা যদি সেই আয়াতসমূহের প্রতি মনোযোগ না দেই, কি বলা হচ্ছে তা বুঝার চেষ্টা না করি, আল্লাহর আয়াত-নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করি তাহলে তা হবে ফুল গাছ লাগানো বাগানে পানি না দেওয়ার মত, সেখানে জন্মাবে আগাছা আর সেই উদ্যান নষ্ট হয়ে যাবে।
কুর’আন পাঠের পাঁচটি উদ্দেশ্য হতে পারে
১) আল্লাহর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ
২) ইলম অর্জন
৩) আল্লাহ যা করতে বলছেন তা বাস্তবায়িত করা
৪) আমাদের মন ও অন্তরের আরোগ্য-শিফা
৫) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে কথোপকথন .
অর্থ না বুঝার কারণে আপনি এ সকল উদ্দেশ্য থেকে উপকার লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
আমরা সবাই জানি ফযরের সালাত আদায় করা ফরয। কিন্তু এরপরেও খুব অল্প কিছু মানুষ মসজিদের জামাতে অংশ নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু কেন? এমন নয় যে, তারা এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়, মূল কারণ হচ্ছে আমাদের অন্তর রুগ্ন ও ব্যধিগ্রস্ত, মরিচা ধরা ।
অধিকাংশ লোকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কুর’আন শুধুমাত্র একটি আদেশ-নিষেধের কিতাব।
কি করা যাবে, আর কি করা যাবে না ; সে বিষয়ের কিতাব।
অথচ বিধি-নিষেধের আলোচনা করা হয়েছে এমন আয়াতের সংখ্যা মোট আয়াতের শতকরা ১০ ভাগেরও কম !
বাকি ৯০ ভাগেরও বেশি আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে এমন বিষয় সম্পর্কে যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কের খোরাক, এগুলো আমাদের মনকে সতেজ ও পুষ্ট রাখে। আমাদের অন্তর দুর্বল ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে আমাদের পাপের কারণে। কাজেই এই মরিচা পড়া অন্তরে ঘষা মাজা এবং মজবুত করতে চাই কুর’আন।
আদম আলাইহি সালাম কে নিষেধ করা হয়েছিল তিনি যেন নিষিদ্ধ গাছের নিকটবর্তী না হন। আল্লাহ বলেন, “আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি”। ত্বহা ১১৫ ।আমরা মানুষ, আর আমাদের রয়েছে নানাবিধ দুর্বলতা। আমাদের চারপাশে আছে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষা। কাজেই এগুলো থেকে বাঁচতে আমাদের সদা সর্বদা তাযকিরাহ ( এমন উপদেশ যা আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) ও সতর্কবাণী মনে রাখা প্রয়োজন, যা আমরা লাভ করতে পারি দৈনিক তিলাওয়াত এর মাধ্যমে।
আল্লাহ এ কারণেই বলছেন,
“হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য”। [ইউনুস ৫৭]
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত…”।ইসরা ৮২
অন্তরের ব্যধি থেকে মুক্তির এর চেয়ে ভালো ঔষধ আর কে দিতে পারে, আল্লাহ ছাড়া?
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুর’আন একবারে নাযিল হয়নি, বরং তা ২৩ বছর সময় ধরে ধীরে ধীরে নাযিল হয়েছে।
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর প্রতি সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন? আমি এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে”।ফুরকান ৩২
অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও সতর্কতার খবর লাভ করে, ঈমান বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ বলেন,
“আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সূরা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো? অতএব যারা ঈমানদার, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে”। তাওবা ১২৪
প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে সালাতে কিংবা কিরাতে অর্থ বুঝে কুর’আন তিলাওয়াত ও আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর চিন্তা গবেষণা দ্বারা আমাদের অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে। অর্থ বুঝে কুর’আন তিলাওয়াত না করে আপনি এ সু্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।
৬-প্রতিদিন সালাতে আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সুযোগ হারাচ্ছেন !
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুর’আনের আয়াতের সাথে যেন কথা বলতেন !
প্রিয় পাঠক ! ভেবে দেখুন, আমরা যখন আমাদের প্রিয়জনদের কাছাকাছি থাকি, তখন কি আমরা মিনিট পাঁচেকের জন্যেও কথা না বলে চুপ করে থাকতে পারি? আর আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে হতে পারে?
তিনি আমাদেরকে আমাদের আপন মায়ের চেয়েও সত্তর গুণ বেশি ভালোবাসেন।
এরপরও আমরা জানার প্রয়োজন মনে করি না, আজকে সালাতে কি তিলাওয়াত করা হল!
আল্লাহ কি বিষয়ে কথা বলেছেন!
এমনকি কিছুমাত্র অর্থ না বুঝে আমরা কাটিয়ে দেই পুরো রামাদানের তারাবীহ’র সালাত !
আমরা যখন কুর’আন পাঠ করি কিংবা এর তিলাওয়াত শুনে থাকি তখন আমরা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারি,পথ চলার বাতি লাভ করি। হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি।
“এবং যে আমার স্মরণ (কুর’আন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,
তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো (দুনিয়াতে) চক্ষুমান ছিলাম।
আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল,
অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব”। ত্বহা ১২৪-১২৬
“…আমি আমার কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ।
যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন বোঝা বহন করবে”। ত্বহা ৯৯-১০০
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে- তাঁর প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, তাঁর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে স্মরণ করা সরাসরি কিংবা যখন আমরা তাঁর কোন আয়াত তথা সৃষ্টি নিদর্শন দেখতে পাই, তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা, তাঁর গুণবাচক উত্তম নামসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় রয়েছে। এই সম্পর্ক কেবল সময়ের সাথে সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আর এজন্য প্রয়োজন অল্প করে হলেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দৈনন্দিন কিছু না কিছু আল্লাহর কালামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “কুর’আনই হল আল্লাহর রাসূল(সা) এর আখলাক” ।
কুর’আন যদি হয় তত্ত্বকথা (থিওরি) তাহলে তার ব্যবহারিক হাতে কলমে প্রদর্শনী দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সমগ্র জীবনের মাধ্যমে। আমাদের উচিত নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জীবনীগ্রন্থ পাঠ করা এবং সেই ঘটনাপ্রবাহের সাথে আয়াতসমূহের মিল খুঁজে বের করা।
যেমন, হিজরতের সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একান্ত মনে নিবিষ্ট চিত্তে, নির্ভাবনায় সাথে পাঠ করে যাচ্ছিলেন একটি আয়াত, অপরদিকে সাথী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সংগীর নিরাপত্তা চিন্তায় উদ্বিগ্ন। সেটি হল,
“…হে আমার রব! (আমাকে যেখানেই নিয়ে যাও না কেন) তুমি আমাকে সত্যের সাথে নিয়ে যেও এবং (যেখান থেকেই আমাকে বের করো না কেন) সত্যের সাথেই বের করো এবং দান করো আমাকে তোমার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য”। [ইসরা ৮০]
এ পৃথিবী একটি মায়ার জগত, যেন এক মস্ত কুহেলিকা আর ধোঁকা, যার অন্তরে কুর’আন নেই তার অন্তর একটি শূণ্য ঘরের মত যে ঘরে কোন আসবাব নেই। কুর’আনের শিক্ষা না থাকার কারণে সে দুনিয়ার জগতকেই বড় ও আসল বলে মনে করে, ফলে সে পরকালের প্রতি হয়ে পড়ে উদাসীন। এরূপ ব্যক্তির জীবন যতই সুখকর হোক না কেন তা শুধুই স্বপ্নের মত, যা ঘুম ভেঙ্গে গেলে হারিয়ে যায়।
যখন একজন ডাক্তারের কাছে এসে কোন রোগী নিজের সমস্যা ও অসুস্থতার বর্ণনা দিতে থাকে তখন অভিজ্ঞ ডাক্তার সেই লক্ষণসমূহ শুনতে থাকেন এবং রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন, পরিশেষে তিনি নিরাময়ের জন্য ঔষধ কিংবা পরামর্শ দান করেন। একইভাবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিচিত্র ঘটনার সামনে এসে দাঁড়াই।
আমাদের উচিত আমরা যেন সেই সমস্যাগুলোর সমাধান আল্লাহর কালামের কাছ থেকে নেয়ার মত সক্ষমতা অর্জন করি। এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন আমরা নিয়মিতভাবে কুর’আনের অর্থ শিক্ষা লাভ করব এবং সেই শিক্ষার সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতির মিল খুঁজে বের করতে পারব।
-
১।ঘুমাতে যাওয়ার সময় দোয়া উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া-আহ'ইয়া। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরন করি,আবার তো...
-
স্বাভাবিকত বিপদ বা সঙ্কটে পড়লে মানুষ হতবিহ্বল হয়ে যায়, হওয়াটাও কিন্তু স্বাভাবিক। কারন বিপদ বলে-কয়ে আসে না, যদিও বিপদ-আপদ মানুষের নিত্যসঙ্গ...
-
হযরত সাদ সালামি আল্লাহরনবীর একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত গরীব সাহাবী ছিলেন। গায়ের রং ছিল খুবই কালো এবং মুখের মধ্যে ছিল বসন্তের দাগ| একদি...
-
তিরমিযী শরীফের এক হাদীসে রয়েছে, মিসওয়াকসহ যে নামায পড়া হয় তা বিনা মিসওয়াকের নামাযের চেয়ে ৭০গুণ বেশী ফজীলত রাখে। মসজিদে জামাতের সাথে ফরজ না...
-
★ জান্নাতী_রমণী জান্নাতি মহিলারা তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা হবে। জান্নাতে প্রবেশকারী মহিলাদের আল্লাহ নতুন ভাবে সৃষ্টি করবেন আর তারা কুমারী অ...
-
হযরত আলী (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর চাচাত ভাই ও জামাতা এবং চতুর্থ খলীফা হচ্ছেন হযরত আলী (রাঃ) । তার পিতা আবু তাল...
-
বাদশাহ নিজ স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে আশ্বস্ত হলেন এবং ইউসুফ আ. এর জ্ঞান গরিমায় বিমুগ্ধ হয়ে আদেশ দিলেন যে, তাকে কারাগার থেকে বাইরে নিয়ে এসো। আদ...
-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হল। এ...
-
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের উচিত মেসওয়াকের ব্যবহার করা, যদিও বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষের দেখা যায় দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ...
-
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব তার পিতা মুসাইয়্যাব (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, যখন আবূ ত্বালিব মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হ’লেন, রাসূল (সাঃ) তার নিকট গেলেন...