নূরানী স্কুল
ইমেইলঃ nuranischool@gmail.com
ফেসবুকঃ fb/NuraniSchoolPAGE
ইউটিউবঃ Nurani School
সম্পাদকঃ ওমর ফারুক

Header Ads

Wednesday, September 11, 2019

জিব্রাইল আঃ এর গল্প

আপনি কীভাবে জিব্রাইল আঃ এর নাম বলেন, কীভাবে উচ্চারণ করেন তার নাম? জিব্রীল, জিব্রাই–ল, জিব্রাইল, জিব্রাই’ল, জিব্রিইল এই পাঁচ ভাবে তার নাম উচ্চারণ করা হয়। আর এটা বিভিন্ন কিরাতের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বার বার কি শোনা যাচ্ছে? ই-ল। ই-ল মানে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা। এ নিয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। জিবরা মানে বান্দাহ, দাস। তাহলে জিব্রাইল অর্থ- আল্লাহর দাস। সুতরাং এটা হলো তার নাম এবং নামের অর্থ।

রাসূল সঃ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিভাবে তাঁকে সম্বোধন করতেন? এটা আসলেই একটা মজার বিষয়। যখন আমি এই বিষয়ে গবেষণা করা শুরু করলাম, প্রথম দিন এটা দেখে খুব অবাক হলাম যে- কারণ আমি বুখারি শরীফ থেকে শুরু করেছিলাম। আমি বুখারি শরীফ থেকে জিব্রাইল আঃ সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদিস সংগ্রহ করলাম। প্রথম যে হাদিসে জিব্রাইল আঃ এর নাম উল্লেখ আছে, রাসুল সঃ বলেন, জিব্রিল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা সাধারণত জিব্রিলকে আলাইহিস সালাম হিসেবে সম্বোধন করি। যার অর্থ তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হউক। কিন্তু রাসুল সঃ তাঁর উপর সালাওয়াত ও পেশ করলেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে। রাসুল সঃ এটা করলেন জিব্রাইল আ এর উচ্চ মর্যাদার কারণে।

আরেকটা ব্যাপার, রাসুল সঃ প্রায়ই তাঁর নাম বলে তাঁকে সম্বোধন করতেন না। জানেন, কিভাবে করতেন? তিনি বলতেন, যিনি আমার রবের নিকটে থাকেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিভিন্ন উপায়ে তাঁকে সম্বোধন করতেন। সব গুলো আমার পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এটা আরেকটা বিশাল অধ্যয়নের ব্যাপার। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। তবে সবচেয়ে কমন যে বিষয়টি আপনি পাবেন তা হলো ‘রুহ’ শব্দটি, আত্মা, স্পিরিট। আল্লাহ তাঁকে বলেন আর রুহুল কুদুস(পবিত্র আত্মা), আর রুহুল আমিন(বিশ্বাসী আত্মা), রুহানা(আমাদের আত্মা), আল্লাহ তাঁকে আরও ডাকেন ‘রাসুলুন কারীম (সম্মানিত বার্তাবাহক) বলে। সর্বশেষ আর একটি নাম বলেই আমরা অগ্রসর হব, সময় স্বল্পতার কারণে। এই নামটি আল্লাহ বা রাসূল সঃ এর পক্ষ থেকে নয় বরং ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের কাছ থেকে, যিনি ছিলেন খাদিজা রা এর চাচাতো ভাই। ওয়ারাকা বলেছিলেন, ইনি হলেন ‘আন নামুস’, যাকে মূসা আঃ এর কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল।

জিব্রাইল আঃ দেখতে কেমন ছিলেন?
তিনি দেখতে কেমন ছিলেন? জিব্রাইল আঃ বিভিন্ন রকম আকৃতি ধারণ করতেন। তিনি মানুষের আকৃতি ধারণ করতেন। আবার কখনো কখনো তিনি ফেরেশতার আকৃতিও ধারণ করতেন কিন্তু সেটা তাঁর পূর্ণাঙ্গ আকৃতি ছিল না। রাসূল সঃ বলেন, আমি জিব্রাইল আঃ কে দেখেছি আর তাঁর ছিল ৬০০ ডানা। রাসূল সঃ বলেন, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত একটি বিশাল সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে ফেলতেন। রাসূল সঃ আরও বলেন, ঐ ৬০০ ডানা শুধু ছড়ানোই থাকতো না, তাঁর ডানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত মনি মুক্তা ঝরতে থাকতো। আর তাঁর ডানার রং ছিল সবুজ, তাঁর পায়ের পাতার রং ও ছিল সবুজ। ফেরেশতার আকৃতিতে তাঁকে এমন দেখাতো, আর তিনি হলেন অন্য সকল ফেরেশতাদের চেয়ে আলাদা।

মনুষ্য আকৃতিতে তাঁকে কেমন দেখাতো? জিব্রাইল আ কয়েকজন মানুষের আকৃতি ধারণ করতেন। তাঁকে বিভিন্ন রকম দেখাতো। কিন্তু যখন তিনি রাসূল সঃ এর নিকটে আসতেন তিনি সুনির্দিষ্ট একটি রূপ নিয়ে আসতেন। রাসূল সঃ বলেন, জিব্রিল আ কে দিহইয়াহ ইবন খালিফা আল কালবি রা এর মত দেখাতো। দিহইয়াহ রা কে বলা হতো বনু কালবের ইউসুফ। ইউসুফ আ সম্পর্কে মহিলারা কি বলেছিল – ইনি একজন সুন্দর ফেরেশতা। তো দিহইয়াহ কে বলা হতো বনি কালবের ইউসুফ। মহিলারা দিহইয়াহকে পছন্দ করতো।

জিব্রিল আ এর সাথে নবী রাসুলদের সম্পর্ক।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং জিব্রিল আ এর সম্পর্ক কেমন? প্রথমত- তিনি হলেন ‘কালিমুল্লাহ মিনাল মালাইকা’। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে যার সাথে আল্লাহ কথা বলেন তিনি হলেন জিব্রিল আ। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন আল্লাহ কি সকল ফেরেশতার সাথে কথা বলেন না? উত্তর হলো – না। মানুষের মাঝ থেকে যেমন নির্দিষ্ট কয়েকজনের সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেন ঠিক তেমনি ফেরেশতাদের মাঝ থেকেও নির্দিষ্ট কয়েকজনের সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলে থাকেন। আল্লাহ চারজন ফেরেশতার সাথে কথা বলে থাকেন। ‘মুকাসসিমাতে আমরা’ যারা আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশের বাস্তবায়ন ঘটান, এই চারজনের সাথে আল্লাহর সরাসরি কথা বলার বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ সবসময় সরাসরি জিব্রিল আ এর সাথে কথা বলে থাকেন। এমন একজন নবীর কাহিনী আপনি পাবেন না যেখানে জিব্রিল আ এর আলোচনা নেই। আপনি যদি ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ পড়েন প্রত্যেক নবীর আলোচনায় কোন না কোন ভাবে জিব্রাইল আ এর নাম উঠে আসবেই। তাঁর উল্লেখ থাকবেই। 

কারণ তাঁকে এক লাখ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। মুসনাদে ইমাম আহমাদের একটি হাদিসে এক লাখ চব্বিশ হাজার নবীর কথা উল্লেখ আছে। তাঁদের মাঝে তিনশত পঞ্চাশ জন ছিলেন রাসূল। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে জিব্রিল আ কে পাঠানো হয়েছিল তাঁদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য, গড়ে তোলার জন্য, সমর্থন দেয়ার জন্য, প্রতিরক্ষার জন্য। তিনি প্রথম থেকেই তাঁদের সাথে ছিলেন। তাঁর আরেকটি উপাধি কি ছিল? নাসুরুল আম্বিয়া। তিনি ছিলেন নবীদের সাহায্যকারী। জিব্রাইল আঃ ই ইব্রাহীম আঃ কে শয়তানের প্রতি পাথর ছুঁড়তে বলেছিলেন। আর আমরা সেই ঘটনার স্মরণে শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করি। সুব হানাল্লাহ! দেখুন, সেই ঘটনার কত চমৎকার ঐতিহ্য আমাদের! জিব্রাইল আঃ ই ইব্রাহীম আঃ কে হজ্বের নিয়ম কানুন শিখিয়েছিলেন।

কখনো কখনো জিব্রাইল আঃ এর ভূমিকাকে স্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হয় না। ইয়ুসুফ আঃ এর গল্পে কখনো কি জিব্রাইল আঃ এর উল্লেখ পেয়েছেন? আপনি ইয়ুসুফ আঃ এর উপর বিশাল আলোচনা শুনতে পারেন, সেখানে হয়তো জিব্রাইল আঃ এর কথা কখনো বলা হয় না। কিন্তু তিনি সেখানে আছেন।

আয়াত —–
যখন তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হলেন তখন আমরা তাঁকে প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান দিয়েছি। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তাঁর নবুয়ত অনেক কম বয়সে শুরু হয়। আল্লাহ এবং জিব্রাইল আঃ এর সাথে তাঁর সম্পর্ক অনেক কম বয়স থেকে শুরু হয়। জিব্রাইল আঃ এর সাথে হযরত ইউসুফের কখন প্রথম দেখা হয়? যখন তাঁর ভাইরা তাঁকে সেই কূপে নিক্ষেপ করেছিল, আর তিনি কূপের তলায় পড়তে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এমন এক লোকের হাতের উপর ল্যান্ড করেন যাকে তিনি আগে কখনো দেখেননি। তিনি ছিলেন জিব্রিল আ। জিব্রিল তাঁকে ধরে ফেলেন যেন ইউসুফ আ পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পান। সুবহান আল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন। ইবনেল কাইয়েম র এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এই ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে যে- কোন সৃষ্টি আল্লাহর রজ্জু ধারণ করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকেও ধারণ করেন, তিনি আপনাকে পড়ে যেতে দিবেন না। তিনি আপনাকে নষ্ট হয়ে যেতে দিবেন না।
মাঝে মাঝে এই উল্লেখটা খুবই সূক্ষ্ম। আপনি হয়তো কোন লক্ষণীয় উল্লেখের কথা শুনেন না। এখানে জিব্রাইল আঃ এর ভূমিকাটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইয়সুফ আঃ যেন পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পান সে জন্য আল্লাহ তাঁকে পাঠালেন ধরে ফেলার জন্য।

কখনো কখনো বর্ণীত গল্পের নবীর সাথে নয় বরং নবীর শত্রুদের সাথে জিব্রিল আঃ এর উল্লেখ পাওয়া যায়। তো মূসা আঃ এর ঘটনায় তিনি মূসা আঃ এর সাথে বহুবার ছিলেন। কিন্তু মূসা আঃ এর ঘটনায় আমরা জিব্রিল আঃ এর উল্লেখের যে সহিহ বর্ণনা পাই, তা আসলে তাঁর শত্রু ফেরাওনের সাথে। তিরমিজি শরীফের একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে- জিবরাইল আঃ নবী করিম সঃ এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে বললেন, ”ফেরাওনের মৃত্যুর দিন যদি আপনি আমাকে দেখতেন! সে যখন সমুদ্রের তলায় ডুবে মারা যাচ্ছিল, আমি গিয়ে তাকে পেলাম এবং তার মুখে কাদা নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে সে হয়তো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ফেলবে আর ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” কারণ আমি ভয় পাচ্ছিলাম সে হয়তো অনুশোচনা করে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ফেলবে আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জিব্রিল আ এর চেয়ে বেশি কে চেনে? জিব্রিল আ জানেন, আল্লাহ এতোই দয়ালু যে এমনকি ফেরাওনের মত পাপিষ্ঠরও সুযোগ আছে। আর তিনি আশংখা করছিলেন যে, ফেরাওনের এক মুহূর্তের অনুশোচনা তার হয়তো সারা জিন্দেগীর অপরাধ মুছে দিতে পারে। জিব্রিল আ চিন্তিত ছিলেন যে, ফেরাউনের জন্য হয়তো একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। এখন, জিব্রিল আ কি ফেরাউনের ভাগ্য নষ্ট করে দিলেন? না। এরপর, আল্লাহ জিব্রিল আঃ কে বলেন, হে জিব্রিল! আমার ইজ্জত এবং গৌরবের কসম! যদি সে আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চাইতো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিতাম! তার মুখে তোমার কাদা নিক্ষেপ কোন কাজে আসতো না। আমি তবু তাকে ক্ষমা করে দিতাম! এখন দেখুন, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, মুখে কাদা মারার কারণ কি? যখন কোন পাপি ব্যক্তি মারা যায়, ফেরেশতারা তার মুখে আঘাত করতে থাকে। জিব্রিল আঃ কেন ফেরাউন কে এত ঘ্রণা করতেন? তিনি বলেন, আমি সে দিন থেকে তাকে ঘৃণা করতাম যেদিন সে বলেছিল- আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রভু। হাদিসে আমরা জিব্রাইল আঃ এর একটা বিষয় দেখতে পাই, মাঝে মাঝে যখন জিব্রিল আঃ রাসূল সঃ এর কাছে আসতেন তিনি বলতেন না- আল্লাহ এটা বলেছেন। বরং তিনি বলতেন, আল আ’লা (সর্বোত্তম প্রভু)বলেছেন। এতে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি জিব্রিল আ এর অপরিসীম শ্রদ্ধার প্রকাশ পায়।

পরিশেষে, ইমরানের পরিবারের সাথে। কোন কোন সময় জিব্রিল (আঃ) কে নবীর সাথে উল্লেখ না করে নবীর পরিবারের সাথে উল্লেখ করা হয়। তো, আমরা মারিয়াম (আঃ) এর ঘটনা জানি। মারিয়াম (আঃ) মসজিদের বাইরে পূর্বে দিকের কোন এক স্থানে যেতেন ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﺷَﺮْﻗِﻴًّﺎ
। তিনি মাসে একবার মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের কোন এক জায়গায় যেতেন। অনেক আলেমের মতে, সেটা ছিল সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখতেন আর আল্লাহর জিকর করতেন। তিনি সেখানে মাটিতে দুটি লাঠি গেঁড়ে পর্দা টাঙিয়ে দিতেন, যেন এই খোলা জায়গায় মানুষ বুঝতে পারে এটা তাঁর বসার জায়গা। কেউ যেন এটার নিকটে না আসে।

তিনি অল্প বয়স্ক মেয়ে ছিলেন, ১৪- ১৮ বছর বয়সের। মোটকথা তিনি একজন টিনেজার ছিলেন। আর তিনি একা আল্লাহর উপাসনা করছেন, আল্লাহকে একা একা স্মরণ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ﻓَﺄَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺭُﻭﺣَﻨَﺎ আমরা তাঁর কাছে আমাদের রুহকে (জিবরাইল আঃ ) পাঠালাম। ﻓَﺘَﻤَﺜَّﻞَ ﻟَﻬَﺎ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺳَﻮِﻳًّﺎ জিব্রিল (আঃ) তাঁর নিকট একজন সুন্দর পুরুষের আকৃতিতে আবির্ভূত হলেন। জিব্রিল (আঃ) মুখ খুলে কিছু বলার আগেই মারিয়াম (আঃ) তাকে দেখে বললেন, ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﺎﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﻣِﻨﻚَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺖَ ﺗَﻘِﻴًّﺎ ”আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর কোন ভয় থেকে থাকে।”

মানে – যদি তোমার নূন্যতম কোন শালীনতা থেকে থাকে ভাগ এখান থেকে। কোন কথা বলতে যেও না। মনে কর যে এটা কখনো ঘটে নি। যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাই প্রিয় বোনেরা, যদি কোন ভাই আপনার নিকট এগিয়ে আসে, তাদের সাথে এভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে দেখুন(আরবিতে এই কথাটা বলেন)। দেখুন, কি ঘটে। যদি তিনি আরবি নাও বুঝেন তিনি ভাববেন, না এই আপুর থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আমরা এই গল্পে যদি আবার ফেরত যাই, তাহলে দেখবো যে মারিয়াম (আঃ) জিবরাইল (আঃ) এর সাথে পরে কথা বলেছিলেন। কিন্তু কেন? কারণ মারিয়াম (আঃ)এর এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলা দেখে জিবরাইল (আঃ) সাথে সাথে মনুষ্য আকৃতি থেকে ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করেন। তিনি তাঁর মনুষ্য আকৃতি ত্যাগ করেন এবং ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করেন। আর সেটা ৬০০ ডানার পূর্ণ আকৃতি ছিল না। ছোট-হালকা কণ্ঠসহ বা অন্য কোন রূপ যেটাই হউক সে আকৃতি ধারণ করে তিনি কথা চালিয়ে যান।

আমি আল্লাহর একজন দূত। আপনার নিকট একজন পবিত্র সন্তানের সুসংবাদ নিয়ে এসেছি। আল্লাহ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং ﻛَﺬَٰﻟِﻚِ এটা ইতিমধ্যে করা হয়েছে । ﻭَﻟِﻨَﺠْﻌَﻠَﻪُ ﺁﻳَﺔً ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ﻣِّﻨَّﺎ ‘’আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই।’’ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣَّﻘْﻀِﻴًّﺎ আর এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে ‘কাদা’ মানে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। আর ‘কানা আমরান মাকদিইয়া’ মানে আপনি ইতিমধ্যে গর্ভবতী হয়ে গেছেন। ﻓَﺤَﻤَﻠَﺘْﻪُ অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন ﻓَﺎﻧﺘَﺒَﺬَﺕْ ﺑِﻪِ ﻣَﻜَﺎﻧًﺎ ﻗَﺼِﻴًّﺎ ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন। গর্ভকালীন পুরো সময়টা তিনি লুকিয়ে থাকলেন। আর যখন সন্তান জন্ম দানের সময় আসলো… মনে রাখবেন, তিনি ছিলেন একজন অনভিজ্ঞ তরুণী। তাঁর পাশে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। তিনি পূর্বে কখনো সন্তান জন্ম দেন নি। প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!
যেহেতু মারিয়াম (আঃ) এর গর্ভ ধারণ বা সন্তান জন্ম দানের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। আর গর্ভ ধারণ এবং সন্তান জন্ম দান একজন মেয়েকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। মহিলারা যারা শুনছেন তারা হয়তো ভাবছেন- হ্যাঁ, আমরা জানি। কিন্তু আমাদের পুরুষদের এ বিষয়ে কোন ধারনাই নেই। আমরা শুধু দেখতে পাই। যেহেতু গর্ভ ধারণ এবং সন্তান জন্ম দান একজন মেয়েকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়, মারিয়াম (আঃ) মনে করছিলেন তিনি মারা যাচ্ছেন।

আর ঠিক এমন সময়ে কে তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করলো? ﻓَﻨَﺎﺩَﺍﻫَﺎ ﻣِﻦ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﺤْﺰَﻧِﻲ জিব্রিল (আঃ) তাঁকে বললেন, দুঃখ পাবেন না, – জিব্রিল (আঃ) এই সময়টাতে তাঁকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। আপনি মনে করছেন যে মানুষ আপনাকে নিয়ে কুৎসা রটনা করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো – একসময় মানব জাতির কাছে ওহী পাঠানো হবে আর তাতে উল্লেখ থাকবে যে, ﻭَﺍﺫْﻛُﺮْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻣَﺮْﻳَﻢَ এ কিতাবে (উল্লেখিত) মারিয়ামের কাহিনী বর্ণনা করুন। আর দেখ ﻗَﺪْ ﺟَﻌَﻞَ ﺭَﺑُّﻚِ ﺗَﺤْﺘَﻚِ ﺳَﺮِﻳًّﺎ তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন। ﻭَﻫُﺰِّﻱ ﺇِﻟَﻴْﻚِ ﺑِﺠِﺬْﻉِ ﺍﻟﻨَّﺨْﻠَﺔِ আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, ﺗُﺴَﺎﻗِﻂْ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﺭُﻃَﺒًﺎ ﺟَﻨِﻴًّﺎ তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে’। ﻓَﻜُﻠِﻲ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑِﻲ ﻭَﻗَﺮِّﻱ ﻋَﻴْﻨًﺎ ”অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও।” তোমার বাচ্চা তোমার চক্ষু শীতলকারী হওয়ার কথা। তোমার বাচ্চার দিকে তাকাও, কষ্টের দৃষ্টিতে নয়, বরং সুখের দৃষ্টিতে।

অতঃপর দ্বিতীয় পরীক্ষা আসলো, যখন তোমার সম্প্রদায় তোমার সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে তখন তুমি নিজের সমর্থনে কোন কথা বলতে পারবে না। ইতিমধ্যে, মারিয়াম (আঃ) এর পূর্ণ বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেল যে আল্লাহর সাহায্য তাঁর সাথে রয়েছে। তাই মারিয়াম (আঃ) যখন তাঁর সম্প্রদায়ের সম্মুখীন হলেন – তিনি জানতেন না যে আল্লাহ কিভাবে তাঁকে রক্ষা করবেন, তিনি জানতেন না আল্লাহ কি করতে যাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁকে সঠিক উপায়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, আল্লাহর উপর তাঁর নির্ভরতা চূড়ান্ত রূপে আবির্ভূত হলো। তিনি ভাবলেন, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

আর ঠিকই আল্লাহ সুবহা হানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে পুরস্কৃত করলেন। তাঁর সমর্থনে তাঁর নতুন জন্ম গ্রহণ করা সন্তান ঈসা (আঃ) কথা বললেন। এখানে জিবরাইল (আঃ) ঈসা (আঃ) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালা বলেন, আমরা তাঁকে পবিত্র আত্মার (জিব্রিল আঃ) মাধ্যমে সাহায্য করেছি। এমনকি আল্লাহ এটাকে ঈসা আঃ এর প্রতি একটি অনুগ্রহ হিসেবেও উল্লেখ করেন। ”আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য করেছি।” ঈসা আঃ কে জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তাঁর সারা জীবন জুড়ে সাহায্য করা হয়। আর শুধু এটা নয়, বরং আলেমদের মতে, একমাত্র ফেরেশতা যিনি কোন নবীকে আকাশে নিয়ে যেতে পারেন তিনি হলেন জিব্রিল (আঃ) ।

তো, যখন ঈসা (আঃ) কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়, তখন তাঁকে জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নেয়ার জন্য একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। আর ঈসা আ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আকাশে অপবস্থান করবেন। কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহর হকুমে তাঁকে আবার পৃথিবীতে পাঠানো হবে। আর সে ফেরেশতা ছিলেন জিব্রিল (আঃ)। আমি এর তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে, কেন আল্লাহ এই কথাটি কেন সূরা মারিয়ামে বলেছেন, ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻚَ ”(জিব্রাইল বললঃ) আমি আপনার পালনকর্তার আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না।” এই আয়াতটি আসলে কি সম্পর্কে? বেশ কিছু দিনের জন্য জিব্রিল আঃ দেখা না দিলে রাসূল (সঃ) মনে মনে দুঃখ পেতেন।

আর তাই জিব্রিল আ রাসূল (সঃ) কে বললেন, দেখুন, আল্লাহর নির্দেশ পেলেই কেবল আমরা আপনার কাছে আসি। আমরা নিজেদের ইচ্ছামত আসতে পারি না, আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর এই কথাটি খুবই ব্যক্তিগত শোনায় যে, জিব্রিল (আঃ) বলছেন- ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺘَﻨَﺰَّﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺭَﺑِّﻚَ
কেন সূরা মারিয়মে? ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, এই সূরায় বর্ণিত প্রত্যেক নবীর ঘটনায় জিব্রিল আ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চিন্তা করে দেখুন, জাকারিয়া, মারিয়াম থেকে ঈসা, ইব্রাহীম, মূসা, ইদ্রিস, ইসমাইল (আঃ) – ওনাদের সবার জীবনে জিবরাইল (আঃ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এই সূরাতেই রাসূল সঃ কে বলা হয়েছে, দেখুন, আমরা শুধু আল্লাহর হুকুমেই অবতরণ করি, জ্ঞান নিয়ে। আর তখন জিব্রিল (আঃ) এর আগমনে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথী ফেরেশতাদের মাঝে যিনি রাসূল (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন, যিনি রাসূল (সঃ) কে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ছিলেন জিব্রিল আঃ। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সঃ) আরও বলেছেন, …… প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা দুনিয়া থেকে দুইজন এবং আকাশ থেকে দুইজন মন্ত্রী দান করেছেন। আমাকে দেয়া আকাশের দুইজন মন্ত্রী হলেন – জিব্রিল এবং মিকাল।

আর দুনিয়া থেকে প্রদত্ত দুইজন হলেন- আবু বকর এবং ওমর (রা)। জিব্রিল আ এবং রাসূল সঃ এর প্রথম সাক্ষাৎকারটি কেমন ছিল? আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) এর ছেলেবেলায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন, দৌড়াদৌড়ি করছিলেন – ঠিক সকল বাচ্চার মত। হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। তিনি রাসূল (সঃ) কে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার কাছে দৌড়ে চলে গেল আর বলতে লাগলো – মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। অন্য বাচ্চারা যখন দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল (সঃ) দেখছিলেন যে এই লোকটি তাঁকে কি করতে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, তিনি আমার বুক কেটে ফেললেন, তিনি আমার বুক খুলে ফেললেন।

তিনি রাসূল (সঃ) এর হার্ট ধরলেন এবং তা থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন আর বললেন- এটা হলো তোমার অন্তরের শয়তানের অংশ। তারপর তিনি এটাকে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সোনালি বর্ণের একটি পাত্রে রাখা জমজমের পানিতে আমার হার্ট ধুয়ে ফেললেন। আর এই বাচ্চাবস্থায় রাসূল (সঃ) সবকিছু অবলোকন করছেন। এরপর রাসূল (সঃ) এর হার্টকে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। অন্য বাচ্চারা ফিরে এসে দেখল যে রাসূল (সঃ) এর বুক সেলাই করে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করলো। রাসূল (সঃ) এর হার্ট বের করে পবিত্র করা হলো। সে সময় তিনি এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন না। তিনি এই ঘটনায় চরম কষ্ট পেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না যে এটা কি হল!!

ঠিক ৩৪ বছর পর, তিনি যখন ৪০ বছর বয়সে পদার্পণ করেন- আয়েশা রা বলেন, তিনি (সঃ) সত্য ভাল স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। এটা তিনি একাধারে ৬ মাস যাবত দেখতে লাগলেন। তিনি রাতে যা স্বপ্নে দেখতেন তাই দিনের বেলায় সত্যে পরিণত হতো। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এ থেকে আমরা কিছুটা বুঝতে পারি যে, কেন হঠাৎ করে রাসূল (সঃ) গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি এবং খাদিজা (রা) বুঝতে পারলেন যে, অতি প্রাকৃতিক কিছু ঘটছে। ঐশ্বরিক কেউ একজন তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। কোন এক ধরণের বিশেষ সৃষ্টি তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। এ অবস্থা ৬ মাস যাবত চলল।

আয়েশা (রা) বলেন, তারপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নির্জনতাকে রাসূল (সঃ) এর নিকট প্রিয় করে দিলেন। হঠাৎ করেই তিনি একা থাকতে পছন্দ করা শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেরা গুহায় আরোহণ করতেন। হেরা গুহায় আরোহণ করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আপনারা যদি কখনো হেরা গুহায় উঠেন তাহলে সম্পূর্ণ মক্কাকে দৃষ্টি সীমায় দেখতে পাবেন। সুবহান আল্লাহ! আপনি সবকিছু দেখতে পাবেন।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) দিনের পর দিন, কখনো পুরো সপ্তাহ জুড়ে, অবশেষে পুরো রমজান মাস সেখানে অবস্থান করেন। তিনি সেখানে দ্বীনে হানিফ তথা ইব্রাহীম আঃ এর শেখানো পন্থায় এক আল্লাহর ইবাদাত করতেন। অর্থাৎ তিনি সেখানে গিয়ে যেভাবে পারতেন আল্লাহর ইবাদাত করতেন, সুশৃঙ্খল কোন নামাজের নিয়ম তখন জানা ছিল না। তিনি ইব্রাহীম আঃ এর রেখে যাওয়া নিয়মে আল্লাহকে ডাকতেন, ঠিক এটাই বর্ণিত আছে। তো, হঠাৎ করে একদিন তিনি জিব্রিল আঃ কে দেখতে পান। আপনাদের কি মনে হয়, তখন জিব্রিল আঃ কি ফেরেশতার আকৃতিতে দেখা দেন, না মানুষের আকৃতিতে? মানুষের আকৃতিতে।

আপনারা হয়তো ভাবছেন, রাসূল (সঃ) তাহলে ভয় পেলেন কেন? চিন্তা করে দেখুন, আপনি হয়তো দুই ঘণ্টা ধরে সেখানে অবস্থান করছেন, আশে পাশে কেউ নেই। তারপর আচমকা গুহার মুখে এক অপরিচিত লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন, আর সে লোকটি আপনার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো, কোন কথা বলছে না। আপনি যদি রাসূল (সঃ) এর জায়গায় থাকতেন, আপনি কি ভাবতেন? তাছাড়া পরবর্তী কালের বর্ণনা থেকে আমরা ধারণা পাই তখন কি ঘটেছিল রাসূল (সঃ) এর প্রতি? রাসূল (সঃ) যখন খাদিজা (রা) এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, তিনি বলেন- ”যাকে আমি স্বপ্নে দেখি সে আমার নিকট এসেছিল।”

সুতরাং আমরা আরও বুঝলাম যে, রাসূল (সঃ) ইতিমধ্যে জিব্রিল (আঃ) কে স্বপ্নে দেখেছিলেন। তো, তিনি চিন্তা করছিলেন – আজব তো, আমি তো এখন ঘুমাচ্ছি না। আমি তো স্বপ্নে নই, বাস্তবে!! এর থেকে জিবরাইল (আঃ) কেন রাসূল (সঃ) কে জড়িয়ে ধরেছিলেন তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ‘ইকরা’ পড়ুন। পড়ুন, আপনি কল্পিত কিছু দেখছেন না। এটা কল্পিত কোন ছায়ামূর্তি নয়। আমি বাস্তবেই আপনার সামনে। আমি আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছি শুধু আমার বাস্তবতা বুঝাতে নয়, ﺇِﻧَّﺎ ﺳَﻨُﻠْﻘِﻲ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﺛَﻘِﻴﻠًﺎ যে ওহী আপনার উপর নাযিল হতে যাচ্ছে তা হবে অত্যন্ত ভারী।
এ বাণী ধারণ করার জন্য আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে। অতঃপর তিনি তাঁকে আদেশ করলেন, পড়ুন। তারপর রাসূল সঃ কে ছেড়ে দিলেন।

রাসূল (সঃ) বললেন – আমি পড়তে জানি না। জিব্রিল (আঃ) তাঁকে আবার আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন- পড়ুন। রাসূল (সঃ) বললেন – আমি পড়তে জানি না। জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) কে তৃতীয়বারের মত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। (পরবর্তী কালে রাসূল সঃ বর্ণনা করেন) জিব্রিল (আ) আমাকে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন যে আমি মনে করছিলাম আমি মারা যাবো। তিনি বললেন- পড়ুন। রাসূল (সঃ) বললেন- কি পড়বো? ঠিক তখন জিব্রিল (আঃ) বললেন- ﺍﻗْﺮَﺃْ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﻋَﻠَﻖٍ যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ‘আলাকা’ থেকে। ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺭَﺑُّﻚَ ﺍﻟْﺄَﻛْﺮَﻡُ পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। রাসূল (সঃ) যখন ওহী গ্রহন করছিলেন- জিব্রিল (আঃ) তাঁকে আর জড়িয়ে ধরলেন না। আবার চলেও গেলেন না। রাসূল (সঃ) গুহা ত্যাগ করে তাড়াতাড়ি নেমে গেলেন।

খাদিজা (রা) বলেন- কি হয়েছে? এখন দেখুন, রাসূল (সঃ) যখন তাঁকে বললেন কি ঘটেছে খাদিজা (রা) সহজেই তাঁকে বলতে পারতেন- আপনি ঐ গুহায় যাওয়া বন্ধ করুন। আপনার মনে হয় বাসায় থাকা উচিত। ভুলে যান সবকিছু। আপনি ঘরের ঐ কোণায় ধ্যান করতে পারেন। কেউ আপনাকে ডিস্টার্ব করবে না। ইনশাআল্লাহ, এ রকম কিছু আর ঘটবে না। কিন্তু তিনি এসবের কিছুই বললেন না। দেখুন, কেমন চমৎকার ছিলেন তিনি। সুব হানাল্লাহ! রাসূল সঃ নিজে নিজের উপর বিশ্বাস করার আগে খাদিজা তাঁর উপর বিশ্বাস করেন। সত্যিই। তিনিই রাসূল সঃ কে বলেন …… আল্লাহ কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না।

তিনি আমাদের রাসূল সঃ এর গত ১৫ বছরের জীবনী বর্ণনা করতে লাগলেন। আপনি এমন মানুষ যিনি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন। আপনি এতিমদের, গরীবদের যত্ন নেন। আপনি আপনার প্রতিবেশী এবং মেহমানদের প্রতি উদার। কেউ কোন সমস্যায় পড়লে আপনি তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। আল্লাহ কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না।

খাদিজা (রা) বললেন – চলুন, ওয়ারাকার কাছে যাই। তো, তাঁরা তার নিকট গেলেন। রাসূল (সঃ) যা দেখলেন তা ওয়ারাকার নিকট বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা সাথে সাথে বলে উঠলেন – ”ইনি নামুস! (আপনিই সেই রাসূল যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।) এই ফেরেশতাই (নামুস বা জিব্রিল) মূসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। ইস! আমি যদি যুবক হতাম! তাহলে আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনার বিরোধিতা করবে।”

এরপর কি ঘটেছিল? আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন – এরপর বহুদিন যাবত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। রাসূল (সঃ) অপেক্ষা করতে লাগলেন যেন সেই ফেরেশতা আবার দেখা দেন। রাসূল (সঃ) আবার ওইসব পাহাড়ে ঘুরতে লাগলেন। রাসূল (সঃ) নিজের ভাষায় তা এভাবে বর্ণনা করেন যে, ”(তাঁর মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে) তিনি যেন চাইতেন নিজেকে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে!” তিনি স্পষ্টরূপে জানতে চান কি ঘটছে! প্রতিবার রাসূল (সঃ) পাহাড়ে গেলে জিব্রিল (আঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেতেন। ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এতে রাসূল (সঃ) কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন।

এরপর পরবর্তীতে তিনি শুধু যে ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এ কথা বলতেন তা নয়, তিনি আরও বলতেন – ”আর আমি জিব্রিল”। তো, তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকট বিষয়টা পরিষ্কার করলেন যে তিনি জিব্রিল (আঃ)। কিন্তু তবু কোন কুরআন বা ওহী অবতীর্ণ হয়নি। অবশেষে, অন্য একদিন রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন – আর এবার ‘ইয়া মুহাম্মাদ ইন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কা’- ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল” এ বাক্য নয়। বুখারি শরীফে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন তারপর হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন – জিব্রিল আলাইহিস সালাম তাঁর পরিপূর্ণ ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে আছেন, সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে আছেন।

আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন – ﺫُﻭ ﻣِﺮَّﺓٍ ﻓَﺎﺳْﺘَﻮَﻯٰ প্রজ্ঞার অধিকারী, সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল। জিব্রিল (আঃ) পুরো আকাশ জুড়ে আবির্ভূত হলেন। রাসূল (সঃ) জিব্রিল (আঃ) কে তাঁর সকল ডানা সমেত, পরিপূর্ণ আকৃতিতে দেখতে পেলেন। ﺛُﻢَّ ﺩَﻧَﺎ ﻓَﺘَﺪَﻟَّﻰٰ তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকটবর্তী হতে লাগলেন। তিনি রাসূল (সঃ) থেকে মাত্র দুই ধনুকের দূরত্বে ছিলেন। তিনি রাসূল (সঃ) এর কাছাকাছি আসলেন। রাসূল (সঃ) জমিনে পড়ে গেলেন। তিনি নিজেই বলেছেন যে – ”তিনি আমার অতি নিকটবর্তী হওয়াতে আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।”
রাসূল (সঃ) দ্রুত বাড়িতে ফিরে গেলেন আর খাদিজা (রা) কে বলতে লাগলেন – আমাকে ঢেকে দাও, আমাকে ঢেকে দাও। আর ঠিক তখন পরবর্তী ওহী অবতীর্ণ হয় – ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺪَّﺛِّﺮُ – ﻗُﻢْ ﻓَﺄَﻧﺬِﺭْ – ﻭَﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﻜَﺒِّﺮْ – ﻭَﺛِﻴَﺎﺑَﻚَ ﻓَﻄَﻬِّﺮْ
হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন। সুবহানাল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন, প্রথম ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন আর দ্বিতীয়বার তিনি যখন খাদিজা (রা) কাছে ছিলেন তখন ওহী অবতীর্ণ হয়। ”হে চাদরাবৃত! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন।” মূর্তি পরিত্যাগ করুন। এই হলো প্রথমদিকের ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনা। আয়েশা (রা) বলেন- এর পর থেকে একটির পর একটি ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। অর্থাৎ দীর্ঘ বিরতির পর আসে সূরা মুদ্দাসসির, সূরা মুজ্জাম্মিল, সূরা দোহা এবং আরও অনেক সূরা ক্রমাগত রাসূল (সঃ) এর নিকট অবতীর্ণ হতে থাকে। এভাবেই শুরু।

রাসূল (সঃ) এখন বুঝতে পারলেন কি ঘটছে, তিনি বুঝতে পারলেন যে তিনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল (সঃ) এখন আর জিব্রিল (আ) এর উপস্থিতিকে ভয় পান না। বিষয়টা তাঁর (সঃ) কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।

জিব্রীল (আ) এবং রাসূল (সঃ) এর মাঝে ব্যক্তিগত কথোপকথন। জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) এর ঘরে বহুবার এসেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলতেন। বিভিন্ন সময় কোন কোন সাহাবী তাঁকে দেখতে পেতেন আবার কেউ কেউ দেখতে পেতেন না। একদিন আব্বাস (রা) তার সন্তান আব্দুল্লাহ (রা) কে নিয়ে রাসূল (সঃ) এর সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। আব্বাস (রা) রাসূল (সঃ) কে সম্বোধন করে কথা বলছিলেন, কিন্তু তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন না। রাসূল (সঃ) কোন কথা না বলাতে আব্বাস (রা) চলে যান। চলার পথে আব্বাস (রা) আব্দুল্লাহ (রা) কে বললেন, তোমার চাচাতো ভাই কেন আমার সাথে কথা বলল না। তিনি মনে হয়ে যেন আমাকে দূরে ঠেলে দিলেন! আব্দুল্লাহ (রা) বললেন – আপনি কি দেখেন নি যে রাসূল (সঃ) তাঁর সামনে বসা এক লোকের সাথে কথা বলছিলেন।

আব্বাস (রা) বললেন- কোন মানুষ? আমি তো কাউকে দেখলাম না। তো, আব্বাস (রা) আবার রাসূল (সঃ) এর কাছে ফিরে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- তখন কেউ কি আপনার সাথে কথা বলছিল? রাসূল (সঃ) বললেন- আপনি কেন এটা জিজ্ঞেস করছেন? আব্বাস (রা) বললেন- কারণ আব্দুল্লাহ তাঁকে দেখতে পেয়েছিল। রাসূল (সঃ) বললেন- ‘রাআ’- সে দেখেছে? আব্বাস (রা) বললেন- জী, দেখেছি। তারপর রাসূল (সঃ) আব্দুল্লাহ (রা) এর জন্য দোয়া করেন যেন আল্লাহ তাঁর জ্ঞান বাড়িয়ে দেন।

তো, রাসূল (সঃ) এর সাথে জিব্রিলের ব্যক্তিগত কথোপকথন টা কেমন ছিল? রাসূল (সঃ) জিব্রিল (আ) কে বললেন – আল্লাহ বলেছেন যে – আমি আপনাকে (রাসূল সঃ কে) সকল জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন- আমার রহমতের কোন অংশ কি আপনার পর্যন্ত পৌঁছেছে? মানে, আপনিও তো জগতের অংশ, আপনি ফেরেশতাদের জগত থেকে, কোন রহমা কি আপনার পর্যন্ত পৌঁছেছে? জবাবে জিব্রিল (আ) বললেন- ”আল্লাহর শপথ! ও মুহাম্মাদ! আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় নবী।” মানে, আমাকে আজ পর্যন্ত এমন কারো কাছে পাঠানো হয়নি, যাকে আমি আপনার থেকে বেশি ভালবাসি। তিনি আরও বললেন- ”আপনার মাধ্যমেই আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি।” এটা দ্বারা তিনি আসলে কি বুঝালেন? তিনি বললেন- আমি আমার ভাগ্য নিয়ে চিন্তায় থাকতাম, যতক্ষণ না আপনার নিকট এই আয়াত অবতীর্ণ হলো – ﺫِﻱ ﻗُﻮَّﺓٍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻱ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﻣَﻜِﻴﻦٍ – যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন, প্রতিষ্ঠিত।

জিব্রিল (আঃ) রাসূল (সঃ) কে ক্রমাগত আশ্বস্ত করতে লাগলেন। মাদানী জীবনের অনেক ব্যক্তিগত আলোচনায় জিব্রিল (আঃ) বারবার রাসূল (সঃ) কে আশ্বস্ত করার ব্যাপারটা দেখা যায়। কেন? কারণ, দেখুন, রাসূল (সঃ) জানলেন যে, তিনি এবং বিশ্বাসীরা নিরাপদ। কিন্তু রাসূল (সঃ) এখন কাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন? আমাদের নিয়ে – যারা পরবর্তীতে আসবে। তাই তিনি উম্মাতি, উম্মাতি বলে কাঁদতেন। তাই, আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) কে পাঠালেন। জিব্রিল (আঃ) বললেন- ইয়া, মুহাম্মাদ! আমরা আপনার উম্মাতের বিষয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দিব, আমরা আপনাকে হতাশ করবো না। আপনার উম্মত ঠিক থাকবে।

তিনি মদিনায় রাসূল (সঃ) কে বার বার নিশ্চয়তা দিতেন। কারণ রাসূল (সঃ) পরবর্তীতে আসা উম্মাত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। সাহাবীরা নিরাপদ। কিন্তু যারা পরবর্তীতে আসবে তাদের কি হবে? আরেকবার, ওমার (রা) বলেন, আর এটা বুখারিতে বর্ণিত আছে- আমি একবার মদিনাতে রাসূল (সঃ) এর সাথে হাঁটছিলাম, হাঁটতে হাঁটতে আমরা মদিনার ‘হাররা’ নামক এক জায়গায় উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এখানে বসতে বললেন। হঠাৎ তিনি হাঁটতে লাগলেন, আর তখন স্পষ্টত তিনি জিব্রিল (আ) এর সাথে কথা বলছিলেন। আমি আপনাদের বলতে পারি তিনি জিব্রিল (আঃ) এর সাথে কথা বলছিলেন। তারা কিছুক্ষণের জন্য হাঁটলেন আর আমি বসে থাকলাম। আর এই হাটাবস্থায় রাসূল (সঃ) বলছেন- ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ ‘ও ইন যানা ওয়া সারাক’ এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? আর ওমর (রা) উত্তর শুনতে পাচ্ছিলেন না। তো, ওমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ঐটা কি ছিল? রাসূল (সঃ) বললেন, তিনি ছিলেন জিব্রিল (আঃ)। তিনি এসেছিলেন আমাকে সুসংবাদ দিতে যে, এই উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই রাসূল (সঃ) বললেন, এমনকি যদি সে জিনা করে বা চুরি করে? – হ্যাঁ, এমনকি যদি জিনা বা চুরি করে। অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তো, তিনি রাসূল (সঃ) কে এভাবে সান্ত্বনা দিলেন।

রাসূল ﷺ যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন জিব্রিল কিভাবে সান্ত্বনা দিতেন? রাসূল ﷺ যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিনি বলেন, জিব্রিল আমার কাছে আসলেন এবং বললেন- ও মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? আমি বললাম – হ্যাঁ। তখন জিব্রিল তাঁর হাত দিয়ে আমার মুখমণ্ডল এবং বক্ষ মুছে দিলেন এবং বললেন- ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা’। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি সবকিছু থেকে যা আপনার ক্ষতি করছে – ”মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন, আও হা-সিদ।” সকল খারাপ জিনিস থেকে অথবা বদ নজর থেকে বা হিংসা থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি।

সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ, ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে।
  • ১। আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে রাখবেন যে আপনি একদিন মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। একদিন আপনি মরবেনই।
  • ২। তিনি আরো বলেন, আপনি যাকে খুশি ভালোবাসেন। কিন্তু মনে রাখবেন যে একদিন আপনি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
  • ৩। আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। কিন্তু একথা স্মরণে রাখবেন যে, আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনাকে প্রতিফল দেয়া হবে। প্রতিদান আখিরাতেই পাবেন। এর মানে কি? মানে হলো, প্রত্যেকটি বিষয় আখিরাতে আসবে, প্রত্যেকটি পুরষ্কারই আখিরাতে দেওয়া হবে। আপনি যা করেন তা করতে থাকুন আর মনে রাখবেন যে এর বদলা আখিরাতে পাবেন।
  • ৪। জেনে রাখুন, একজন বিশ্বাসীর জন্য সত্যিকারের আভিজাত্য রাত্রি বেলা নামাজে দাঁড়ানোর মাঝে।
  • ৫। আর তার প্রকৃত মর্যাদা আত্মনির্ভরশীলতার মাঝে।

আর্থিকভাবে, আবেগের দিক থেকে, মানসিকভাবে বা শারীরিকভাবেই হোক, একজন মানুষ হিসেবে আপনার সম্মান ও মর্যাদা অন্য মানুষের উপর নির্ভর না হওয়ার প্রচেষ্টার মাঝে। যে কোন ব্যাপারেই হোক না কেন নিজেকে মানুষের প্রয়োজন থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
এরপর রাসূল ﷺ জীবনের অন্তিম সময় অনুভব করতে থাকেন। আর যখন অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে… আবু সাইদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করে বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের মাঝে অবস্থান করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব সাধারণভাবে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর এক বান্দাকে এ এখতিয়ার দিয়েছেন যে বান্দাহ হয় দুনিয়ার শান শওকত থেকে পছন্দ করবে অথবা যা কিছু আল্লাহর কাছে রয়েছে তা থেকে পছন্দ করতে পারবে। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়িতে সবাই কাঁদছিল, কারণ সবাই জানতো যে রাসূল ﷺ এর অন্তিম সময় চলে এসেছে, তিনি শেষ সময়ের নিটকবর্তী হয়েছেন। বিশেষ করে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) ভীষণভাবে বিধ্বস্ত হলেন।
তাঁর কন্যা, উম্মু আবিহা, তাঁর পিতার মা, (বাবারা নিজ কন্যাদের আদর করে মা বলে ডাকেন) সর্বদা তাঁর ﷺ সাথে ছিলেন ঐ সময়ে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি ভালবাসা দেখালেন, মমতা দেখালেন। এমনকি যখন তিনি কোনোরকমভাবে কথাও বলতে পারছিলেন না, তখনও তিনি হাতের ইশারায় ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-কে ডাকলেন। ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কাছে আসলেন, রাসূল ﷺ তাকে আরো নিকটে আসতে বললেন এবং চুপিসারে তার কানে কিছু বললেন। ফলে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) আরো বেশি কাঁদতে লাগলেন। রাসূল ﷺ তাকে পুনরায় কাছে আসতে বললেন এবং চুপিসারে আরো কিছু কথা বললেন। এবার একথা শুনে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হাসিতে ফেটে পড়লেন! আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এগুলো দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন যে একবার ফাতিমা কাঁদলো আবার হঠাৎ করেই হাসিতে ফেটে পড়লো! সুতরাং তিনি ফাতিমা কে চাপাচাপি করছিলেন যে- বলো না কি বলেছেন তিনি? বলছো না কেন?! কি বলেছেন তিনি? শেষে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)জোরারোপের কারণে বলতে বাধ্য হলেন যে, তিনি বলেছেন, জিব্রীল সাধারণত প্রতি রামাদানে আমাকে নিয়ে পুরো কুরআন একবার ঝালিয়ে নেন। আর এই বছর রামাদানে তিনি দুইবার পুন:পাঠ করেছেন। তাঁর মানে হলো, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) ওহীকে শক্তিশালী করে দিলেন। আর আমার মনে হয় না আমি আর রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারবো।


আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল ﷺ – কে যেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দৃঢ় হতে সাহায্য করেন আর এমতাবস্থায় রাসূল ﷺ তার শরীরে হেলান দিয়ে আছেন। তাঁর দৃষ্টি পড়লো আব্দুর রাহমান ইবনে আবু বাকার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর ওপর, যিনি আয়েশার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর ভাই। তিনি দেখলেন তার পকেটে একটি মিসওয়াক রয়েছে এবং আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন যে আমি বুঝতে পারছিলাম যে রাসূল ﷺ এটি পেতে চাচ্ছেন। আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল ﷺ কে বললেন, আপনি মিসওয়াক চান? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা নাড়িয়ে স্বীকৃতি জানালেন। আব্দুর রাহমান তাঁর অব্যবহৃত মিসওয়াকটি আয়েশা(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কে দিলেন। তিনি এটাকে চিবিয়ে নরম করলেন এবং রাসূল ﷺ এর মুখে পুরে দিলেন। এর সাংকেতিক অর্থ হলো, রাসূল ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে মিসওয়াক করতেন। কারণ তিনি চাইতেন যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকালে যেন তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস বিশুদ্ধ থাকে, প্রতিদিনই ৫ বার। তিনি বললেন, তিনি এটিকে ফরজ করতে পারতেন, যদি উম্মাতের জন্য কষ্টকর না হতো। তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে প্রত্যেকবারই মিসওয়াক করতেন।
আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন তিনি মিসওয়াক করা সমাপ্ত করলেন, তখনই জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আমাদের মাঝে প্রবেশ করলেন। তিনি (আয়েশা) রাসূল এর দিকে তাকালেন আর দেখতে পেলেন তাঁর চেহারা আলোয় উদ্ভাসিত হলো। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম); যিনি নবীকে ওপরের উপদেশগুলো দিয়েছিলেন, তিনি নবী ﷺ কে বললেন, শুনুন, আমি আপনাকে একটি বিষয়ে পছন্দ করতে বলবো। হয়তো আপনি আপনার সাহাবীদের সাথে থাকবেন এবং সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করবেন অথবা আপনি “সর্বোচ্চ” (আল-আ’লা); আল্লাহ এর সাহচর্যে থাকবেন। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) যখন এই কথাটি বললেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তরে বললেন, ‘বালা, রাফিকিল আ’লা’, ‘আল্লাহুম্মা রাফিকিল আ’লা’- ওহ আল্লাহ, আমি সর্বোচ্চ (আল্লাহ) এর সাহচর্য কামনা করি। আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন তিনি ‘আর রাফিকিল আ’লা’ বলছেন, তিনি যেন তাঁর সমস্ত শরীরকেই ছেড়ে দিচ্ছেন! ”ওহ আল্লাহ, আল্লাহর সাহচর্য!” বলতে বলতে তাঁর হাত পড়ে গেলো এবং নবী ﷺ মৃত্যুবরণ করলেন।

যখন এই ঘটনা হলো, আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) চিৎকার করে উঠলেন। ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) যখন আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর চিৎকার শুনতে পেলেন, তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইয়া আবাতা, মান রাব্বিহি মা আদনা’ – হে আমার পিতা, আপনি আপনার রবের কতটা সন্নিকটে আছেন এখন! হে আমার পিতা, আমরা জিব্রীলের (আলাইহিস সালাম) এর নিকট আপনার মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা দিচ্ছি। ‘ইয়া আবাতা, জান্নাতুল ফিরদাউসি মা’ওয়া’ – হে আমার পিতা, জান্নাতই আপনার বর্তমান ঠিকানা! এবং একথাটিই তিনি বারবার বলতে থাকলেন, বলতেই থাকলেন, বলতেই থাকলেন। ”আপনি আপনার রবের কতটা নৈকট্যে আছেন, জিব্রীলের নিকট আপনার প্রস্থানের ঘোষণা দিচ্ছি এবং জান্নাতুল ফিরদাউস-ই আপনার আবাসস্থল।”
জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মৃত্যু।

সুবহানাল্লাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমনকি জিব্রীল-ও মৃত্যুবরণ করবে। চিন্তা করতে পারেন, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)- ও মারা যাবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর আল্লাহ যাদের চান তারা ছাড়া আর কেউ স্থির থাকতে পারবে না (অন্য সবাই মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবেন, তারা হলেনঃ জিব্রীল, ইস্রাফিল, মিকাল ও মৃত্যুর ফেরেশতা … যারা আল্লাহর আদেশ সমূহের বাস্তবায়ন করে থাকেন। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর কারা কারা বাকী আছে? মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনার সম্মানিত পবিত্র চেহারা (পূর্ণ সত্ত্বা), আপনার বান্দা আমি, আপনার বান্দা জিব্রীল, আপনার বান্দা মিকাল, আপনার বান্দা ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, মিকালের আত্মা নিয়ে নাও। তখন মিকালের আত্মা নিয়ে নেওয়া হবে। তখন আল্লাহ পূনরায় বলবেন, আর কে কে বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনি, আমি, জিব্রীল এবং ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, ইস্রাফিলের আত্মা নিয়ে নাও। ইস্রাফিলের আত্মা তাঁর থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ আবারও বলবেন, আর কারা বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওয়াজহুকাল বাকিল কারিম – ওহ আল্লাহ, আপনার পবিত্র চেহারা, আপনার এই বান্দা এবং আপনার বান্দা জিব্রীল। আমরা দুই বান্দা সবশেষে বাকী রয়েছি। আল্লাহ বলবেন, জিব্রীলের আত্মা নিয়ে নাও।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিব্রীল তাঁর চেহারা নিয়ে পতিত হবেন এমন অবস্থায় যে তাঁর ডানাগুলো বিস্তৃত অবস্থায় থাকবে আর সেগুলো আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। তিনি তাসবিহ (আল্লাহর প্রশংসা)-রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁর চেহারা নিম্নে পতিত হবে এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসারত থাকবেন। এরপর আল্লাহ বলবেন, আর কে বাকী আছে? তখন মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ইয়া আল্লাহ, কেবল আপনি আর আমিই বাকী আছি। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে আদেশ করবেন মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর মৃত্যুর ফেরেশতা মারা যাবেন। আর আল্লাহ বলবেন, “কুল্লু মান আলাইহা ফান, প্রত্যেক ব্যক্তিই ধবংসপ্রাপ্ত হবেন, ওয়া ইয়াবকা ওয়াজহু রাব্বিকা জুলজালালি ওয়াল ইকরাম”- আর কেবল আপনার মহাসম্মানিত রবের চেহারাই (পূর্ণ সত্ত্বা) বাকী থাকবে” (সূরা আর-রাহমান)। আল্লাহ নিজেকেই তখন জিজ্ঞেস করবেন, ‘লিমানিল মুলকিল ইয়াউম’ – আজকের রাজত্ব কার? আল্লাহ নিজেকেই প্রতিউত্তরে বলবেন, ‘লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার’- “কেবলই অদ্বিতীয় নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর”।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন আখিরাতে আমরা সবাই হাজির হবো, তখন সমস্ত জমিন আল্লাহর আনুগতের প্রশংসায় একদম সমতল হবে। তিনি বলেন, হাশরের ময়দানে প্রত্যেকেই যে জায়গায় রয়েছে সে জায়গা থেকে একটুও নড়তে পারবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর নিকট আমাকেই প্রথম আহবান করা হবে। অতএব তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এর নিকটে প্রবেশ করবেন। ”আমি সিজদায় পড়ে যাবো।” তিনি বলেন, অতঃপর আমি আমার মস্তক উত্তোলন করবো এবং আকস্মিকভাবে আমি সর্বোচ্চ দয়াময় (আল্লাহ) এর ডান পাশে জিব্রীলকে দেখতে পাবো! নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে বলেন, আল্লাহর কসম, ইতোপূর্বে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা-কে কোনো দিনই দেখেনি! জিব্রীল আল্লাহকে আগে কখনই দেখেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিব্রীলের দিকে ইশারা করে বলবেন, হে আমার রব, এই ব্যক্তি আমাকে বলেছিলো যে আপনিই তাকে আমার নিকটে পাঠিয়েছিলেন। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি সত্য বলেছো।

.একইভাবে জিব্রীল-ও নবীকে বলবেন, আপনি সত্য বলেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেন প্রতিদান দিবসে এই বিষয়টি করতে পছন্দ করলেন? তিনি কেন এটি ইচ্ছা পোষণ করলেন? কারণ হলো, প্রতিদান দিবসের দিন প্রত্যেক নবী-রাসূলকেই জিজ্ঞেস করা হবে যে সে (জিব্রীল) কি নবুওয়াতের বার্তাকে ঠিক মতো পৌছে দিয়েছে কিনা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিব্রিলের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই তিনি নিজেই বললেন যে, উনি বলেছেন যে তাঁকে আপনি আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন? তিনি তাঁর কাজ ঠিকমত করেছিলেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি সত্য বলেছো।

0 coment�rios:

Post a Comment